somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল-সবুজে বন্দি আমাদের দেশপ্রেম ও অন্যান্য

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাপারটা মাথায় ঘুরছে সেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় থেকেই। বিশ্বকাপ উপলক্ষে মিরপুরের আশে পাশের অনেক বিল্ডিং, রেস্তোরা, দোকানের সাটার ইত্যাদি লাল-সবুজ রং এ রাঙিয়ে ফেলা হল। ব্যাপারটার নান্দনিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে (পরিকল্পিত ভাবে করলে সুন্দর হতে পারতো অনেক), কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসাটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই আমার।

বেশ কয়েক বছর হল ফেসবুকেও লাল-সবুজে রাঙিয়ে তোলার একটা ক্যাম্পেইন শুরু হয় যখন স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসের মতো কোনো দিবস আসে সামনে। আমি নিজেও একাধিক বার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলের ছবিটা বদলে দিয়েছি লাল-সবুজে এই ক্যাম্পেইনের সাথে একাত্মটা প্রকাশ করতে গিয়ে।

না, আমার কোনো আপত্তি নেই এই লাল-সবুজে রাঙিয়ে তোলা ফেসবুক বা পথঘাট নিয়ে। এই দেশপ্রেম নিয়ে "শো-অফ" করা হচ্ছে টাইপ কট্টরপন্থী চিন্তা ভাবনাও আমার নেই।

আমার বক্তব্য অন্য জায়গায়। সেটা হল আমাদের দেশপ্রেম কি শুধু লাল-সবুজে পথ-ঘাট-ফেইসবুক রাঙানো বা নিজের পোষাকে ধারণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে? যার যার অবস্থান থেকে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে কতটুকু ভূমিকা রাখছি? না, সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে না গরীব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বা বানাতে হবে না হাসপাতাল-স্কুল। শুধু এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের নূন্যতম যতোটুকু সভ্যতার (হ্যাঁ, সভ্যতা) পরিচয় দেওয়া উচিৎ সেটুকু কি আমরা সবাই, অন্তত যতজন নিজেদের সচেতন দাবী করি কিংবা ব্লগে বা বন্ধু মহলে দেশের নানান সমস্যা নিয়ে ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখি, তারা কি সেই দায়িত্ব পালন করছি বা করি?

আমরা মেয়রকে গালি দেই রাস্তার পাশে ময়লা জমে থাকার জন্য, আবার নিজের ঘরের সমানের রাস্তাতেই ময়লা ফেলি। নিজের বাড়ির সামনের রাস্তাকেই আমরা "নিজের" ভাবতে পারছি না, কিভাবে এই দেশকে নিজের ভাববো? দেশ কি শুধু সরকারের? পৃথিবীর কোন দেশের সরকার পারবে প্রতি বাড়ির সামনে থেকে ময়লা নিয়ে যেতে? কে আপনাকে রুখতে পারবে যদি আপনি পার্কে বাদাম খেয়ে বাদামের খোসাগুলো ফেলেন সেখানেই? সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে এতো সুন্দর একটা স্বাধীনতা স্তম্ভ বানিয়ে দেওয়া হলো, তার জলাধারটা আমরাই নোংরা করেছি-করছি তাই ওখানে এখন পানি নাই, অনেক ময়লা আছে! আমরাই আবার সেটা নিয়ে হাউকাউ করি কিন্তু কখনো দাবী করি না আমি সঠিক স্থানে ময়লা ফেলতে চাই, সব পার্কে ডাস্টবিন বসিয়ে দাও! ওয়ার্ল্ড কাপের সময়ও দেখেছি প্রচুর মানুষ মিরপুর স্টেডিয়ামের চারপাশে জড় হচ্ছে লাল-সবুজ গায়ে চড়িয়ে আর বাদামের খোসা, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি ফেলে ফেলে পুরো স্টেডিয়াম এলাকা ময়লা করছে যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষ জড় হবে ক'দিন বাদেই আর দেখবে কি দারুণ দেশপ্রেম আমাদের ও একই সাথে কি "সভ্য" আমরা!

আমাদের নিত্য দিনের অভিযোগ ট্রাফিক জ্যাম। কিন্তু আমরা যারা গাড়ির মালিক তারা কে কবে নিজের গাড়ির ড্রাইভারকে বলেছি সিগন্যাল ও অন্যান্য ট্রাফিক আইন মানতে? ধরে নেওয়া যেতে পারে এই প্রাইভেট কার গুলোর অধিকাংশের মালিক শিক্ষিত উচ্চবিত্ত মানুষ, শিক্ষিত এসব মানুষের সচেতনতার লেভেলটাই যদি হয় এই তাহলে কিভাবে আমরা আশা করি বাস চালক সিগন্যাল মানবে বা লেন ধরে গাড়ি চালাবে? সব প্রাইভেট কার যদি আজ থেকে এক লেনে চলে, অন্য গাড়ি বাধ্য হয়ে আরেক লেনে লেন মেনেই চলবে- চেষ্টা করেই দেখেন! আর আমরা যারা বাসে চড়ি, তারা বাস ড্রাইভারকে লেন ধরে চললে বা সিগন্যাল মানলেই বরং গাল দেই- "অমুক বাসটা আগে চইলা গেলো, তুমি কি বা* ফেলাও মিয়া?!"।

চাইলে এমন আরো অনেক কিছু উল্লেখ করা যায়। তাতে শুধুই লেখার দৈর্ঘ্য বাড়বে। আসল কথা হলো দেশকে বদলে দেওয়ার জন্যে শুধু সরকার বা রাজনীতিবিদদের গালি না দিয়ে আমরা কে কি করছি একটু ভেবে দেখা প্রয়োজন। প্রত্যেকটা মানুষকে জনসেবামূলক কাজে বা দেশসেবামূলক কাজে আলাদা ভাবে এগিয়ে আসার দরকার নেই। শুধু যার যেই কাজটা যেভাবে করা উচিৎ সেটুকুই করি না কেন? আর কিছু পাগলাটে মানুষতো সব সময়ই থাকবে যারা দেশের জন্যে আরো বেশি করবে, নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়াবে। আমরা সবাই সেই পাগলাটে মানুষ হতে পারবো না, কিন্তু সবাই দেশকে এগিয়ে নিতে শুধু নিজের দায়িত্ব যা সেটুকু পালন কিন্তু চাইলেই করতে পারবো। আসুন আমাদের দেশপ্রেম শুধু লাল-সবুজে রাঙিয়ে তোলায় সীমাবদ্ধ না রেখে সুনাগরিক হওয়ার চেষ্টা করি।


------------------------------------------------------------
Also posted in: My personal blog

উপযুক্ত লিঙ্ক ও ক্রেডিট সহ লেখাটি যেকোনো জায়গায় প্রকাশ/প্রচার করা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×