somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম বিমান ভ্রমনের স্মৃতিঃ কিছুটা সুখ পুরাটায় দুখ।

১০ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশ ছেড়েছি প্রায় মাস তিনেক হল। দেশের বাইরে থেকে সত্যিকার অর্থেই বোঝা যায় আসলে নিজের দেশ কি জিনিস। দেশকে খুব বেশি মিস করি এখন। মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক, তখন মার্চ মাসের শেষের দিক, ভিসা পেয়েছিলাম তারও আগে, সুতরাং মোটামোটি সিওর ছিলাম যে দেশ ছেড়ে বিদেশে যাচ্ছি পড়ালেখার উদ্দেশ্যে। B-)

মার্চ মাস দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল, কখন যে মার্চ মাসে শেষের দিলে চলে এসেছিল নিজেও টের পাইনি। যখন দেখলাম আমার আর অফিসে যেতে হবে না, যখন দেখলাম আমার সেই প্রান প্রিয় স্টুডেন্টদের সাথে আর দেখা হবে না, হবে না আর ক্লাসে বসে তাদের সাথে গল্প করা, তখন বুকের মধ্যে একটা মোচর দিয়ে গেল না, এখনি মনে হয় দেশ ছেড়ে যেতে হবে। শত কষ্ট থাকা সত্তেও বিদেশ যাব এই আনন্দে ততটা মনে দাগ কাটতে পারেনি। এপ্রিলের ১ তারিখে সব গুছিয়ে চট্রগ্রাম থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম দেশের বাড়ি সাতক্ষিরার উদ্দেশ্যে, সারা রাত বাসে ঘুমাতে পারিনি। সারাটা রাত ধরে কত চিন্তা করেছি, পজেটিভ নেগেটিভ দুইটায়। কিন্তু সেই দিন সেই চিন্তার শেষ হয়নি। খুজে পাইনি কোন ঠিকানা। শুধু ছিল মনের মধ্যে একটা অজানা আনন্দ আর একটা চাপা কষ্ট। বরাবরই আমি একটু চাপা স্বভাবের, নিজের কষ্ট গুলো কখনো কাউকে বুঝতে দেই না। :((:((

খুব সকালে বাসায় পৌছেছিলাম, বাসায় যেয়ে যখন বাবা, মায়ের পায়ে সালাম করেছিলাম কেউ কান্না থামাতে পারেনি। আমার বাবা মা যেভাবে কেদেছিল আমিও ঠিক ছোট্র বাচ্চাদের মত ভেউ ভেউ করে কেদেছি। :((:((:((

যাক পরের দুইদিন খুব ভাল ভাবে কেটে গেল, বাসায় অনেক মানুষ সবার সাথে মজা করতে করতে দুইদিন কেটে গেল। দুইদিন পরে যখন মনে হল আমাকে এই সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট গুলো নতুন করে কষ্ট দিতে লাগল। এই কষ্ট এতটা প্রখর আমি আপনাদের বুঝাতে পারবনা। হয়ত সবাই এইরকম করে, হয়তা বা আমিই এই রকম করি, কিন্তু যাই করি না কেন, সেটার পিছনে যুক্তিত থাকতে হবে।/:)/:) সংসারের হাল ধরেছিলাম অনেক আগে থেকেই, যখন আমি সবে মাত্র প্রথম বর্ষে। বাবা মাকে মাঝে মাঝে টাকা দিয়ে বেশি কিছু কিনে দিতে না পারলেও মাসের চাল কেনার টাকা যোগার করে দিতাম। আর আমার পাস করার পরে, যখন পুরাপুরি সংসারের হাল ধরেছি তখন কিভাবে এই দুইটা মানুষকে একা শুন্য হাতে ছেড়ে যাব। :|:|

এইধরনের নানা চিন্তা মাথার মধ্য সারাক্ষন ঘুরপাক খেতে খেতে বাসা ছাড়ার সময় হয়ে এল। আসার সময় নিজের কান্নাটাকে আর আটকাতে পারিনি। সারা গ্রামের মানুষ এসে জড় হয়েছিল, সবারই এক কথা আমরা আছিনা। আমরা দেখে রাখব তোর বাবা মাকে। :-/:-/

বিদায়ের পালা শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম, ঢাকায় এসে পৌছালাম সকালেই। সারাদিন পুরা দৌড়ের উপর ছিলাম, কারন তখনও আমার কেনাকাটার অনেক বাকি আছে।/:)/:)

সকালের নাস্তা সেরে চলে গেলাম ঢাকা কলেজের অপজিটে যেখানে ঠান্ডার কাপড় পাওয়া যায়। সারাদিন ঘুরে ফিরে যা বাকি ছিল কিনে নিয়ে বাসায় পৌছাইতে বেযে গেল ১১টা। আমাকে বাসা থেকে বের হতে হবে ২টায় আমার ফ্লাইট ছিল ভোর ৫টায়। সুতরাং ঘুম বাদ দিয়ে ল্যগেজ গোছানোর কাজে লেগে গেলাম। খেতে যেন একদমই ইচ্ছা করছিল না। মনে হচ্ছিল দেশের মায়া আর ভালবাসায় আমার পেট পুরা ভরে আছে। /:)/:)


তাড়াহুরা করে ল্যাগেজ গুছিয়ে বাসা থেকে বের হলাম ২,৩০ এর দিকে। ঢাকা বিমানবন্দরে সেটায় ছিল আমার প্রথম ভিতরে যাওয়া। ভিতরে টুকিটাকি কাজ গোছানো হয়ে গেলে, সবার থেকে বিদায় নিয়ে পারি দিলাম অজানা উদ্দ্যেশ্যে। ঠিক তখনই মনে হল আমি সবার থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। :((:((

বুকের মধ্যে আরেকবার মোচর দিয়ে গেল, কিন্তু নিজেকে অনেক কষ্টে শক্ত করলাম, নিজেকে বুঝানোর বৃথা চেষ্টা করলাম। তার পরে বিমানে উঠলাম ঠিক টাইম মত। এরা সময়ের প্রতি এতটা যত্নবান, যে ঠিক সময়ে ঢাকা বিমান বন্দর থেকে প্লেন ছেড়ে দিল। কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি, বিমান ছিল কুয়েত এয়ারলাইন্সের। পথে যে এরকম বিপদ হবে সেটা কি বুঝতে পেরেছিলাম। কুয়েত-এ আমার ৩০ মিনিটের ট্রানজিট ছিল, কুয়েত নেমে প্লেন পরিবর্তন করতে যেয়েই বাদল যত ঝামেলা।:|:|X(X(

আমি আগেই বলেছি ট্রানজিট ছিল ৩০ মিনিটের। কুয়েত থেকে যে প্লেন হিথ্রু যাবে সেখানে অনেকেই আছে যারা উ এস এ যাবে, সুতরাং পেসেঞ্জার অনেক হওয়াতে বোর্ডিং পাস চেক করতে অনেক টাইম লাগার কথা। যখন আমি লাইনে দাড়িয়ে আমার বোর্ডিং বাস দিলাম, বিপত্তি বাধল সেখানেই।

দুইজন কুয়েতি মেয়ে বোর্ডিং পাস চেক করছিল, আমি বাঙ্গালী হওয়াতে আপত্তিটা অখানেই বাধল। আমাকে ভিএফএস অফিস থেকে যে খাম দিয়েছে সেটা দেখাতে বলে, আমি যথারীতি ফি এফ এস থেকে যা যা পেয়েছি সবই দেখেয়েছি। কিন্তু ওরা দেখতে চাই খাম। আর কিছু না। আমি সব পেপার দেখালাম কাজ হল না। আমি আজও জানি না কোন ধরনের খামের কথা বলেছিল। আর কি তারা চাচ্ছিল।X(X(X(X((X((

১০ মিনিট ধরে আমি আমার সব পেপার দেখালাম, কাজ হল না। আমাকে নিয়ে যাওয়া হল অন্য যায়গায়, আর আমাকে বলা হল, সেই খাম খুজে দেখতে। আমি তখন কি করব বুঝতে পারছি না। চোঁখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল অঝোরে। একা একা এরকম একটা জায়গায়, কি করব বুঝতে পারছি না। আবার ওরা আমাকে বুঝতেও পারছে না ওরা কি চায়। এদিকে টাইম নাই, টাইম শেষ। আমি তখন ভাবতে লাগলাম যে গুয়াতোনামা কারা গারের কথা। হঠাত করে আমার মনে পরে গেল একটা মুভির কথা, "দি রোড টু দ্যা গুয়াতোনামা" কয়েকদিন আগে দেখেছিলাম মুভিটা। কয়েক বন্ধু মিলে ঘুরতে যেয়ে কিভাবে আমেরিকান সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে কি ওসহনীয় জীবন যাপন করেছিল।X((X((

কান্না কাটি করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। আর এটাই ছিল আমার প্রথম দেশের বাইরে। কিংকর্তব্যবিমুর অবস্থায় বসে বসে নিরিবে চোঁখে পানি ফেলছি। হঠাত এনাউন্স করা হল, হিথ্রুগামী কুয়েত এয়ারলাইন্স টেকনিক্যল প্রব্লেমের জন্য নিদ্রিষ্ট সময়ে ছাড়তে পারছে না। কখন ছাড়বে পরে জানানো হবে। মনে তখন একটু আশা পেলাম না তা হলে মনে হয় কিছু হবে না। আমি মনে হয় যেতে পারব। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে সালার মাইয়া গুলা আবার আইয়া আমাকে সব পেপারস আবার দেখাইতে বলল। আমি একটা একটা করে সব পেপার দেখাতে লাগ্লাম। কিন্তু মাইয়া গুলা তাতে সনষ্টু হল না। এর পড়ে লাগাল ফোন, ফোনে একটা যায় আর ১০ মিনিট ধরে কথা বলে, আরবিতে কিছুই বুঝি না। পরে আরেকটা আসে সেও ফোন ধরে যথারীতি কথা চালাতে থাকে। প্রয় আধা ঘন্টা পড়ে আমাকে জানান হল যে। ওকে ইউ ক্যন গো। কিন্তু ওখান থেকে কোথায় যাব কিভেবে যাব কোন প্লেনে যাব কিছুই বলে নাই।

আমিও নতুন যারে জিগাই হেই বলে জানানো হবে। আমিও আশায় আশায় থাকলাম।

চলতে থাকবে...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৯:২৮
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×