somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি করলাম এইটা, প্রথম রোজাই মিস! (রোজা নিয়ে আমার কিছু স্মৃতির কথা)

১২ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে সারাদিন খুব খারাপ লেগেছে, খুব বলতে অনেক বেশি, কারন আজকে কানাডায় প্রথম রোজা হয়ে গেল, কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে আমার একটা রোজা মিস হয়ে গেল।

খারাপ লেগেছে এই জন্যই যে, যে দিন থেকে সত্যি রোজা রাখা শুরু করেছি (আমার মনে নাই কোন বয়স থেকে রোজা রেখেছি) সেই দিন থেকে আজকের আগ পর্যন্ত একটা রোজা মিস দেই নাই। কেমতে কি হইল বুঝতে পারলাম না। যখন বুঝতে পারলাম আজকেই পরথম রোজা তখন পেটের ফিতর ভাত আর গরুর মাংস পাকস্থলিতে চর্বিতচরন করিয়া একেবারে শেষ পর্যায় চলে গেছে।

গত রাতে রোজা থাকব বলে আমার বউ আর আমি মিলে গরুর মাংস রান্না করলাম। কারন এর আগে তেমন কিছু রান্না ছিল না, যা ছিল তা দিয়ে দুজনের পেট ভরে খাওয়া হত না। রান্না শেষে অনেকেই ফোন দিলাম, কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারল না। শেষে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে খেয়ে ল্যবে এসেছি। সন্ধ্যা হব হব ভাব(ইফতারির সময়) তখন আমার বউয়ের বান্ধবি মানে আমার শালিকা ফোন দিয়ে বলল তোমরা ইফতারি করবা না? তখন কই হায় হায় এইটা তুমি কি কউ? আমরা-ত রোজা না আজকে। কি আর করা মনটা খারাপ হয়েই থাকল।

এখন আসি রোজার স্মৃতি নিয়ে কিছু কথা বলি, কথাগুলো অনেকের কাছে ভাল নাও লাগতে পারে কিন্তু আমার কাছে সেগুলো আজও স্মৃতি।

খুব যখন ছোট্র ছিলাম বুঝতাম না তেমন কিছু, আব্বা আম্মা, ভাই বোনদের দেখতাম মাঝ রাতে উঠে খাওয়া দাওয়া করছে, ঠিক আস্তে আস্তে উঠে এসে বলতাম আমিও খাব, তোমরা এত রাতে ভাত খাচ্ছ কেন, আমাকেও দাও, বলত আচ্ছা খাও। কিন্তু সকালে উঠে যখন বলতাম ভাত খাব তখন বলত কিরে তুই না একটু আগে রোজার জন্য ভাত খাইলি এখন আবার কিসের ভাত? মনে মনে ভাবতাম সেইটা আবার কি জিনিস? আমি বলতাম ভাত-ত তোমরা খেয়েছো তাই আমিও খেয়েছি! আম্মা মুচকি হাসি দিয়ে বলত আচ্ছা আয় ভাত দিচ্ছি।

তার পর একটু একটু যখন বুঝতে শিখলাম যে রোজা থাকলে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়, তখন থেকে রোজা থাকার জন্য পাগল ছিলাম। আব্বা আম্মা উঠতে দিত না, শুনেছি তোমাদের রোজা রাখার সময় হয়নি, চুপিচুপি আব্বা আম্মা উঠে গিয়ে রান্না ঘরে খেতে বসত, তখন আমি গ্রামে থাকতাম, প্রতিদিন সেহেরির সময় একদল লোক মাইক নিয়ে সবাইকে ডেকে যেত, আমারও ঘুম ভেঙ্গে যেত, সজা উঠে রান্না ঘরে আমি ভাত খাব, বলে না তোমার রোজা থাকা লাগবে না, খেতে চাইলে এমনিতেই খাও, কিন্তু রোজা থাকা লাগবে না, আমি বলতাম না থাকব, পরে সকাল থেকে আস্তে আস্তে দুপুর হত আমার ক্ষিদা লেগে যেত মাকে বলতাম ক্ষিদা লাগছে কি করব, আম্মা আস্তে বলত আর একটু এইত একটু পরে অর্ধেক রোজা হয়ে যাবে তখন খাস।

মাঝে মাঝে এমন-ও হয়েছে পুকুরে গোসল করছি হঠাত করে গলায় পানি চলে গেছে, আম্মাকে এসে বলতাম আম্মা সাতার দিতে গিয়ে গলায় পানি চলে গেছে এখন কি করব? আম্মা বলত না জেনে গেছে কিছু হবে না।(আমি সঠিক কিছু জানি না এই বিষয়ে) কিন্তু ছোট ছিলাম তাই হয়ত কান্না কাটি করব বলে আম্মা আমাকে বুঝ দিতেন, কারন এরকম হলে আমি অনেক কান্না কাটি করতাম আমার মনে হত আমার রোজা মনে হয় ভেঙ্গে গেল।

এভাবে বয়স বাড়তে থাকে আর আমার রোজার পূর্নতা আস্তে থাকে, বুঝতে শিখি কিভাবে রোজা রাখতে হবে, কিভাবে সঠিক উপায়ে আল্লাহর দেয়া আদেশ মেনে চলতে পারি।

এখন আসি কিছু মজার কথায়ঃ ছোট বেলায় মসজিদে ইফতারি দেয়া হত, গ্রামের প্রতি মসজিদে।ইফতারি-ও খারাপ হত না, প্রথম দিকে-ত ইফতারি খাওয়া লোভে রোজা ভাঙতে চাইতাম না, আম্মা কত বার করে বলত পারবি না আর তোর রোজা রাখার সময় হইনি, তখন মনে মনে চিন্তা করতাম রোজা না থাকলে ত আমাকে ইফতারি দিবে না তাহলে আমাকে রোজা রাখতেই হবে। এভাবে রোজা রাখা শুরু করি।

মসজিদে নামাজ পড়তে যাব, তারাবির নামায কয়েক বন্ধু মিলে মসজিদে সবার আগে হাজির, কি দুষ্টামিই না করেছি সেই সময় মসজিদে এখন মনে পড়লে হাসি পায়, কত বোকা না ছিলাম সেই সময়। যাই হোক নামাজে দাড়িয়েছি অমনি কয়েক বন্ধু মিলে দিল ধাক্কা সাথে সাথে পড়লাম সামনের সারিতে নামাজে দাড়িয়ে থাকা মুরুব্বিদের উপর, নামাজ হল না, নামাজ বাদ দিয়ে দিলাম দৌড় কারন নামাজ থেকে উঠেই আমাদের বকা দেওয়া শুরু করবে। আবার একটু পড়ে সবাই ভাল করে নামাজ পড়ার জন্য আসি মসজিদে, নামাজে দাড়ায় কিন্তু অদের দুষ্টামি আর কমে না। যে লাউ সেই কদু। এভাবে খুব ছোট বেলা মজে করেছি। বুঝতে শিখার পর অবশ্য এইগুলো আর করি নাই।

আর একটা জিনিস খুব বেশি মনে পড়ছে আজকে, একটু আগে বলেছিলাম না সেহেরির সময় এক গুচ্ছ মানুষ মাইক নিয়ে এলাকায় মাইকিং করত, তখন মাইক ছিল খুব কম, তবে দেখেছি আমার সেই সব ভাইরা মোটা কাগজ দিয়ে মাইক বানাত এটাকে কি বলা হয় আমি জানি না ভুলে গেছি, সবার হাতে একটা করে থাকত। আর সবাই বলত একসাথে,

নারাই তকবির,
আল্লাহু আকবর।

জাগো জাগো,
মুসলিম জাগো।
রোজার তরে সেহেরি করুন।

এই রকম আরো কত সুন্দর সুন্দর স্লোগান ছিল। অনেক ভাল লাগত সেই গুলো শুনতে। আজ এই কানাডায় বসে সারা দিন সেই সব দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে খুব বেশি। মনে হছে শত শত বৎসর পেরিয়ে আমরা এখন অনেক বুড়িয়ে গেছি। এখন আমাদের আর সেই সময় নেই। আমাদের সেই সময় আজ অন্যরা এসেছে এসেছে ব্যটারি চালিত মাইক, আজকে আর গলা ছেড়ে বলতে হয় না, সেই সব স্লোগান। মাইক ছেড়ে দিলেই বাজতে থাকে।

আর আমার মনে আজ সেই মাইকের মত বাজতে থাকে তোদের দিন শেষ, তোরা বুড়িয়ে যাচ্ছিস.....


বিঃদ্রঃ কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। লেখাটা পর্ব করে দিলে আরো মজার হত। কিন্তু আমি হইলাম গিয়ে আলসা তাই একটাতে দিয়ে জগা খিচুরি বানালাম। সময় সল্পতার কারনে অনেক বানান ভুলের জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ৮:৫৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×