somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হিজাব" নিয়ে তুলকালাম, ধারাবাহিকতা আর এর পেছনে কি স্বার্থ

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা করছি না, শুরু করছি নিকটবর্তী বছরগুলোতে হিজাব/বোরখা/ধর্মীয় পোষাক পড়ায় বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব উল্লেখযোগ্য বাঁধার সম্মুখীন হওয়ার সংবাদগুলোঃ


জুলাই ৩, ২০১২ --


চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে হিজাব নিয়ে তুলকালাম এমনকি নামাজ ঘরে তালা


২০১০ সালের ৩ এপ্রিল --


রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি ক্লাসে ‘মধ্যযুগীয় পোশাক বোরকা’ পরা যাবে না এবং এটি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো পোশাক হতে পারে না বলে ফতোয়া জারি করেন।


মার্চ ২, ২০১২ --


বোরকা পরে ক্লাসে আসার অপরাধে এক ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে দেননি উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার গোলাম হোসেন। আরো পাঁচ ছাত্রীকে গেটে দাঁড় করিয়ে রাখেন। অধ্যক্ষ বোরকাকে ‘অড’ বা দৃষ্টিকটু ড্রেস উল্লেখ করে বলেন, ‘একটা মেয়ে পায়ের নখ পর্যন্ত বোরকা পরে এসেছে এটা দৃষ্টিকটু। আমরা এটা এলাউ করতে পারি না। তাই তাকে ক্লাসে ঢুকতে দেয়া হয়নি।’


সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৩ --


২৯শে আগস্ট ক্লাসরুমে বিশ্বনাথ দ্বি-পাক্ষিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রভাংশু শেখর তালুকদার ৯ম শ্রেনীর ছাত্রীদের বোরখা পড়া নিয়ে কটুক্তি করেন।


মে ২৩, ২০১৩ --


উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ও ও শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর স্ত্রী মাহবুবা খানম কল্পনা শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে বুধবার অর্ধশত ছাত্রীর জামার হাতা কেটে দিয়েছেন। এর আগেও তিনি ছাত্রীদের বোরকা পরা নিয়ে হুমকি দেয়ার কথা জানা গেছে। তিনি আরো বলেছেন " “উদয়ন একটা মর্ডান স্কুল। ঢাকা শহরে পর্দা করার বহু স্কুল আছে,কারো পর্দা করার দরকার হলে তারা সেখানে যাবে।”


এরকম আরো কিছু বাজে ঘটনা আছে, সব উল্লেখ না করে কতিপয় উদাহরণ দিলাম মাত্র।এবার মূল প্রসঙ্গে আসি যেটা গতকালকের আলোচিত খবর "হিজাব পড়ায় ব্র্যাকের ছাত্রী বহিষ্কার" ; এটা নিয়ে অনলাইন আর পোর্টালগুলোতে অনেক আলোচনা চলছে তাই সেদিকে যাচ্ছিনা। আমার এই লেখার অবতারণা ধারাবাহিকতার সম্পর্ক খোঁজায় ... উপরের যেসব ঘটনা দিলাম তার সাথে এই ঘটনার একটা স্পষ্ট সংযোগ আছে, আর সেটা হচ্ছে একজন মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং চলাফেরার স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ ।


এবার প্রশ্নে প্রশ্নে উত্তরের পালাঃ


১) আমাদের সমাজে ভারতীয় সংস্কৃতি আর পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ক্রমাগত প্রবেশ এবং আবেশের কারণে আমাদের সমাজে তার প্রভাব পড়ছে, জীবনধারণের সাথে সাথে চাল-চলন-আচার-আচরণেও সেই প্রভাব পড়েছে, প্রশ্ন হচ্ছে , সে ব্যাপারে আমরা কতটুকু সচেতন ?
২) আধুনিক ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায় কিংবা ঈদের সময়ের শপিং মলে কিংবা পত্রিকা মারফত বিভিন্ন বার ,সীসার লাউঞ্জ কিংবা ডিজে পার্টির মত অনুষ্ঠানে যখন নারীদের পোষাকগুলো আমাদের সংস্কৃতির দীর্ঘদিনের শালীনতাকে অপমান করে দাম্ভিকতার সাথে তাল মিলায় তখন আমাদের সচেতনতা কিংবা কোনরূপ প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ কি চোখে পড়ে?
৩) যেই বাংলাদেশে নববর্ষের মতন ঘরোয়া সংস্কৃতি এতো ঝাকঝমক আর আভিজাত্যের সাথে পালন হয় সেই বাংলাদেশে বেহায়পনার চরম নিদর্শন হিসেবে থার্টি ফার্স্ট নাইট কিংবা হ্যালোয়িন পার্টির উদ্‌যাপন কতটুকু মানানসই?


এবার সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ দুটো প্রশ্নঃ


৪) কেন শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের একটি নির্দিষ্ট রীতির ক্ষেত্রে এই ধরনের আচরণ? তাও তথাকথিত প্রগতিশীলদের তরফ থেকে নয় বরং পুরো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ? কেন?


৫) ঘটনাপ্রবাহের সময়কাল খেয়াল করলেই দেখা যায় যে এসব ঘটনা বর্তমান সরকারের আমলেই ঘটেছে যার অধিকাংশ ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থার কোন সরকারি উদ্যোগ কিংবা আদৌ কোন নিষ্পত্তি ই হয়নি । তাহলে কি সরকারের বালখিল্যতায় কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম পালনের প্রতি নিদারুণ উদাসীনতা ই কি দায়ী নয়? নাকি ঘটনাগুলো রাষ্ট্রের "ধর্মনিরপেক্ষতার" জ্বলন্ত প্রমাণ ?


প্রশ্ন পর্ব শেষ, উত্তর পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম, আমি একটু অন্যদিকে মোড় নিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় গত নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশে আশংকাজনক হারে ইসলামের উত্থানে শংকা প্রকাশ করে হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশন্যাল রিভিউ পত্রিকায় Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। নিবন্ধে বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে ৫০০% বোরকা বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। হ্যাঁ , আমার সন্দেহ টা এই জায়গায়। তাহলে কি "ধর্মনিরোপেক্ষ" মতবাদ চাপিয়ে দেয়া নাকি ইসলাম ফোবিয়ায় আক্রান্ত সরকার? নাকি ধর্মীয় ইস্যুকে আঘাত করে মানুষকে উস্কে দিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের জনক 'আমেরিকা' এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রতি একধরনের অশনি সংকেত পাঠানো হচ্ছে?



বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সচরাচর যথেষ্ট স্ববিরোধিতায় ভুগেন। তাদের মসজিদ ভালো লাগে না, কিন্তু গির্জা অথবা মন্দিরের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন। আজানের শব্দে বিরক্ত হন; কিন্তু উলু অথবা ওঙ্কার ধ্বনিতে উদ্বেলিত হয়ে উঠেন। "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" উচ্চারণ শুরু করলে তাদের ভ্রু কুঞ্চিত হয় অথচ মঙ্গল প্রদীপ জ্বলে অনুষ্ঠান শুরুর করার রেওয়াজ তাদের কাছে বাঙ্গালিয়ানা বলে প্রতিভাত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের "পরম দয়ালু আল্লাহর নামে" তাদের পীড়া দেয় অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাইবেল হাতে শপথ গ্রহণ এরা মুগ্ধ নয়নে মাতোয়ারা হন। এই গোষ্ঠী প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরোপেক্ষতার লেবাসে ইসলামবিরোধী শক্তি ব্যতীত আর কিছু নয়।


ওহ আরেকটি কথা, মিতা হকদের অসার "বাঙ্গালিয়ানা" তত্ব আর তসলিমা নাসরিনের " বোরখা একটা হাস্যকর পোশাক ছিল" ধাঁচের বক্তব্য ই আমাদের বর্তমান তথাকথিত প্রগতিশীল নারীবাদের পরিচায়ক, অথচ বাংলাদেশের নারী জাগরণীর অগ্রদূত বেগম রোকেয়া তাঁর অসাধারণ একটি লেখায় ইসলামের এই ধর্মীয় পোষাককে বর্ণনা করেছেন অত্যন্ত সাবলীলতার সাথে,


" অবরোধ প্রথা স্বাভাবিক নহে-নৈতিক। কেননা পশুদের মধ্যে এ নিয়ম নাই। মনুষ্য ক্রমে সভ্য হইয়া অনেক অস্বাভাবিক কাজ করিতে শিখিয়াছে। যথা- পদব্রজে ভ্রমণ করা স্বাভাবিক, কিন্তু মানুষের সুবিদার জন্য গাড়ী, পাল্কী প্রভৃতি নানাপ্রকার যানবাহন প্রস্তুত করিয়াছে। সাঁতার দিয়া জলাশয় পার হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু মানুষে নানাবিধ জলযান প্রস্তুত করিয়াছে।- তাহার সাহায্যে সাঁতার না জানিলেও অনায়াসে সমুদ্র পার হওয়া যায়। ঐরুপ মানুষের "অস্বাভাবিক" সভ্যতার ফলেই অন্তঃপুরের সৃষ্টি। পৃথিবীর অসভ্য জাতীরা অর্দ্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় থাকে। ইতিহাসে জানা যায়, পূর্বের অসভ্য ব্রিটনেরা অর্দ্ধনগ্ন থাকিত। ঐ অর্দ্ধনগ্ন অবস্থার পূর্বের গায় রঙ মাখিত! ক্রমে সভ্য হইয়া তাহারা পোষাক ব্যবহার করিতে শিখিয়াছে। ... ... ... ... "




এখানেই সমাপ্তি টানছি, তবে... লেখাটির কোথাউ কোন প্রশ্নের উত্তর দেই নি। কেননা, উত্তরগুলো চিন্তার; ব্যক্তিবিশেষের নয়। আর শেষমেষ খুব পছন্দের কটা লাইন উদ্ধৃত করছি, Pastor Martin Niemoller এরঃ


"First they came for the Communists
And I did not speak out
Because I was not a Communist
Then they came for the Socialists
And I did not speak out
Because I was not a Socialist
Then they came for the trade unionists
And I did not speak out
Because I was not a trade unionist
Then they came for the Jews
And I did not speak out
Because I was not a Jew
Then they came for me
And there was no one left
To speak out for me"


---------------------------------------------------------------------------------------------------
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×