somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ নাগরদোলা!

০৩ রা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক.

তিতু আর ইতু...... দু'জনার পুতুপুতু প্রেম!

সারাদিন তিতুর অন্ততঃ এক ডজন এসএমএস না পেলে ইতু গাল ফুলিয়ে হোপ! মাঝ রাতে মোবাইলের নেটওয়ার্ক বিজি পেলে রাগে মোবাইল-টাই ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করে তিতুর। এমনিতেই রাতে না ঘুমানোর ব্যমো ইতুর!.....রাতে তিতুর সাথে মোবাইলে ইটিশ-পিটিশ গল্প করতে না পারলে ছটফট করতে থাকে ইতু!

অনেকদিন থেকেই ফোনাফুনি চলছে। "ফুল সুন্দর, পাখি সুন্দর..... তোমার হাসি সুন্দর" এই জাতীয় পুতুপুতু কথা অনেক হয়েছে.... এখনও হয়েই যাচ্ছে, কিন্তু দু'জনার দেখা হয়নি এখনও....

- তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। তুমি নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী!..
- থাক, আর বলতে হবেনা। আমাকে দেখলে তুমি ভিমরী খাবে...না দেখাই ভাল!

দু'জনার আর দেখা করা হয়না। ইতুর সাথে দেখা করার আগ্রহটা দিন দিন বাড়তেই থাকে তিতুর।

- আমাদের দেখা হবে কবে?.... তিতুর প্রশ্ন।
- হবে কোন একদিন।...... ইতুর জবাব।
- কোন একদিন না, কবে?
- হবে বাবা, হবে...... তুমি এত অস্থির কেন বলতো?!
- বাহ্ রে.... তোমার সাথে এতদিন ধরে ফোনে ইটিশ-পিটিশ প্রেম করছি... আর দেখা হবেনা?!
- যতদিন এই ইটিশ-পিটিশ প্রেম করবে, ততদিন দেখা হবেনা... যেদিন বুঝবো তুমি আমাকে সত্যিই ভালবাস... সেদিন আমি নিজে গিয়ে তোমার সাথে দেখা করে আসবো।

বেচারা তিতুর অপেক্ষার প্রহর বাড়তেই থাকে... ফোনালাপ চলতেই থাকে দিনের পর দিন.... কিন্তু ইতুর দেখা করার সময়ই হয়না।

- পার্কে আজকাল কি বাজে পরিবেশ... যত্তসব ভবঘুরে আজেবাজে লোকের আড্ডা... পার্কে নয়!
- রেস্টুরেন্টে?....
- থাক বাবা, তুমি যা কিপ্টে! বিল বেশী আসবে বলে রাত বারোটার আগে ভুলেও রিং দাওনা!... রেস্টুরেন্টে গিয়ে তোমাকে আর এমব্যরাস করতে চাইনা!
- টিএসসি-তে?
- তাহলেই হয়েছে... আমার ক'টা কাজিন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে জানো?.... আর মম পাঁজিটার চোখে যদি একবার ধরা পড়ে যাই, তাহলে আর রক্ষে নাই! ও সোজা এসে মা'র কাছে বলে দেবে!......

বেচারা তিতু! ইতুর অজুহাতের যেন শেষ নেই!




দুই.

সেই তিতু আর ইতুর দেখা হবে আজ। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে, অনেক প্রেমের পরীক্ষা দিয়ে.... তবেই ইতুকে রাজী করিয়েছে তিতু! পার্কে নয়, রেস্টুরেন্টে নয়, ক্যাম্পাসেও নয়..... তবে কোথায়?! দেখা হবে ডবল ডেকার ভলবো বাসের দোতলায়! ডবল ডেকারের দোতলার একেবারে সামনের সীটে পাশাপাশি বসবে দু'জন.... বাদাম খেতে খেতে গুলিস্থান থেকে যাবে উত্তরা। দেখা হবে... কথা হবে দু'জনায়।

আজ দিনটা চমৎকার! ভলবোর দোতলা থেকে ঢাকা-কে দেখতে বড্ড ভাল লাগছে তিতুর। পাশেই বসে আছে ইতু। কত কথা বলবে আজ দু'জনে, রাজ্যের যত কথা আছে... সব! কিন্তু দু'একটা কথা বলেই আটকে যাচ্ছে তিতু। শাহবাগের শিশুপার্ক, সোনারগাঁ মোড়ের সার্ক ফোয়ারা.... সব যেন কেমন নতুন নতুন লাগছে....বাহ্, আগেতো কখনও এত সুন্দর লাগেনি! আজ দিনটাই যে সুন্দর!

তিতু যেন আকাশ ছুঁয়েছে আজ.... সেই উচ্ছাসে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় ইতুর হাত..... আরও একটু ঘনিষ্ট হবার প্রয়াস পায় তিতু! ইতু চোখ রাঙিয়ে শাসন করে...... উহু.. এটা কি হচ্ছে?!... লক্ষ্মী ছেলের মত বসে থাকো.... আমাকে দেখতে চেয়েছো...দেখ!...বাট নো দুষ্টুমি!

অবাক হয়ে ইতুকে দেখতে থাকে তিতু! কি মিষ্টি হাসি... দুষ্টু দুষ্টু মিটি মিটি চাহুনী! কোন জড়তা নাই। কি স্বপ্রতিভ... কি স্বাবলিল! হাসলে গালে টোল পড়ে....

- অমন করে কি দেখছো?!
- তোমাকে
- আর দেখতে হবেনা। বাস থেকে নেমেই এক কাপ আদা চা খাওয়াবে... গলাটা খুশখুশ করছে!
- চা কেন? আগে একটু হেলভেশিয়াতে বসি.... তারপর চা।
- উহু, আগে চা। গলা শুনেও বুঝতে পারছোনা.... আমার ঠান্ডা লেগেছে! আজ এক কাপ চা-ই থাক! প্রথম দিন আর বেশী খসাবোনা।

স্বপ্নের নাগরদোলায় দুলতে দুলতে ওরা এগুতে থাকে গন্তব্যে......



তিন.

উত্তরায় নেমেই মত পাল্টায় ইতু। চায়ের দোকানে চা খাবেনা.... চা খাবে কোন এক আন্টির বাসায়। উত্তরা চার নম্বর সেক্টরে আন্টির ফ্ল্যাট। ছয় তলা এ্যপার্টমেন্টের তিনটা ফ্লোর আন্টির..... দু'টি ভাড়া। আন্টি একাই থাকেন। দুই ছেলে মেয়ে থাকেন মার্কিন মুলুকে!... আন্টি খুব ভাল.. আন্টি হ্যানো, আন্টি ত্যানো... সাত সতের!...বলেই চলেছে ইতু!

মনে মনে একটু বিরক্ত বোধ করে তিতু....
- হুট করে আবার আন্টি কেন?! উনি কি ভাববেন বলতো!
- ও নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা, আন্টি আমাকে খুব আদর করেন।

চমৎকার সাজানো গোছানো আন্টির ফ্ল্যাট!... ড্রইং রুমের সবটা জুড়ে রুচির ছাপ! পরিপাটি ঘরের সবকিছুর উপর নজর বুলাচ্ছে তিতু!.... পঞ্চাশোর্ধ এক মহিলাকে নিয়ে ড্রইং রুমে ঢোকে ইতু। ইতুর মুখে ঝুলে আছে সেই দুষ্টুমি হাসি.... মহিলার চোখে মুখেও একটা মার্জিত হাসি!

তিতু একটু অপ্রস্তুত....' স্লামালাইকুম আন্টি'।
হো হো করে হেসে ওঠে ইতু...' ইনিই আমার ইতি আন্টি... আপনার ফোনফ্রেন্ড ইতু। আর আমি মম।...... সারাটা পথ কেমন প্রক্সি দিলাম বলুন?!'

হতচকিত বিহবল তিতু অসহায় বোধ করতে থাকে.... বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল চেয়ে থাকে নিশ্চুপ! বিশ্বাসই করতে পারছেনা মম'র কথাগুলো। উল্টো-পাল্টা লাগছে সব.... যেন চোখের সামনে দুলতে থাকে এক অচেনা পৃথিবী!

তখনও দুষ্টুমি হাসি হেসেই চলেছে মম আর তাঁর ইতি আন্টি!


পরিশিষ্টঃ
আমার গল্প এখানেই শেষ... কিন্ত তিতু আর ইতুর জীবন-তো থেমে থাকেনি। থেমে থাকেনি তাদের ফোনালাপও। মম-কে মনে ধরেছিল বেচারা তিতুর। কিন্তু মম সামহয়্যার(ইন) এনগেজড। এক বছর পর ইতু চলে যায় ছেলে মেয়েদের কাছে স্টেটসে। উইল করে যায়... তাঁর মৃত্যুর পর একটা ফ্ল্যাট পাবে তিতু .... যে ছেলেটি একাকী জীবনের কিছুটা সময় সঙ্গ দিয়েছিল ফোনে..... আর ফাগুন ডেকেছিল নাগরদোলা মনে!

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:২৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×