somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ.....এলেবেলে রূপকথা!

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব বেশী দিনের কথা নয়...... ভীন গাঁয়ে বাস করতো এক গরীব চাষী আর তাঁর দুই বউ। সারাদিন মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চাষী.... মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলায়... তবেইনা দু'বেলা দু'মুঠো ভাত জোটে চাষীর!

একদিন সকালে চাষী গেছে জমিতে হাল চাষ করতে। হঠাৎ লাঙলের ফলা আটকে গেল শক্ত একটা কিছুর সাথে। চাষী অবাক হলো.... মোহরের কলসী নয়তো?! লাঙল ফেলে কোদাল হাতে নিল চাষী। উহু...মোহরের কলসী নয়, মাটি খুঁড়ে বের হলো বড়সড় একটা কাঠের বাক্স... কফিন! কফিনের উপর খোদাই করে লেখা আছে 'গণতন্ত্র'! সামান্য অক্ষরজ্ঞান আছে চাষীর....গণতন্ত্রের নামটা কোথায় যেন শুনেছে শুনেছে মনে হচ্ছে!...'' আহা, বেচারা কবে মারা গেল?!'' গণতন্ত্র শব্দটা পরিচিত হলেও গণতন্ত্রের মানে বোঝার ক্ষমতা নেই চাষীর..... খুব বেশী বোঝার তাগিদও নেই তাঁর! ভাল বীজ, সেচের পানি, সময়মত সার আর ফসলের ন্যায্য দাম পেলেই সে খুশী! .....সেই গতর খাটিয়েই-তো খেতে হবে তাঁকে!



কৌতুহল নিয়ে 'গণতন্ত্রের কফিন'-টা খুললো চাষী! দুমড়ানো মোচড়ানো একটা কংকাল.... শরীর থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে আছে! আহারে..... খুব কষ্ট পেয়ে মরেছে বেচারা! কিন্তু একি!....দ্যাখে, কংকালের কপালে লেখা আছে...." তোর কপালে আরও অনেক দুঃখ আছে।" খুব অবাক হয় চাষী.... এত কষ্ট পেয়ে মরার পরও আর কি দুঃখ থাকতে পারে এর কপালে?!... কংকালের মাথার খুলিটা গামছা দিয়ে মুড়িয়ে বাড়ী নিয়ে এলো কৌতুহলী চাষী.... ''দেখি, কপালে আর কি দুঃখ আছে বেচারার!'' বাড়ীর পেছনের ঝোপের মধ্যে গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে খুলিটা লুকিয়ে রাখলো সে।



আগেই বলেছি, চাষীর দুই বউ.... হাসু আর পুতুল। দু'জনের মধ্যে দা-কুমড়ো সম্পর্ক! পারলে একজন আরেক জনকে বাড়ী থেকে বের করে দেয় তো.... অন্যজন গ্রেনেড মেরে মেরেই ফেলতে চায় আরেকজনকে। দুই বউকে নিয়ে বড় অশান্তিতে আছে চাষী। দুই বউ-এর কেউ কাউকে বিশ্বাস করেনা। তাইতো কোন বউকে না জানিয়ে বাড়ীর পিছনে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে কংকালের খুলিটা..... আর প্রতিদিন মাঠ থেকে ফিরে সন্ধ্যার পর চুপি চুপি গিয়ে দেখে আসে কংকালের খুলিটার কপালে নতুন কিছু ঘটলো কিনা!



কিন্তু বড় বউ ব্যাপরটা টের পেয়ে গেল একদিন.... ''বাড়ীর পিছনের ঝোপে কিছু একটা লুকিয়ে রেখেছে মিনসে!'' নিশ্চয়ই ছোট বউ আর চাষী মিলে কিছু একটা গভীর ষড়যন্ত্র করছে তাঁর বিরুদ্ধে! ঠিকই ঝোপের ভিতর থেকে খুলিটা খুঁজে বের করলো বড় বউ!.... "মানুষের মাথার খুলি! নিশ্চয়ই আমাকে মেরে ফেলার জন্য কোন যাদু-টোনা করেছে ছোট বউ!''

রাগে বড় বউ প্রথমেই এক বাড়ি মেরে চার টুকরা করলো খুলিটা.... তারপর কোমরে শাড়ী গুঁজে যুদ্ধাংদেহী মূর্তিতে এসে দাঁড়ালো ছোট বউ-এর সামনে.... গামছায় প্যাঁচানো খুলির টুকরাগুলো তখনও তাঁর হাতে.....
''কই গেলি মাগি?! আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র?! আমাকে মেরে ফেলতে 'বান' মারছোস?! তোরে আজ আমি মাইরাই ফ্যালামু!'' ছোট বউ-ও কম যায়না....'' দাঁড়া মাগি, এত ত্যাজ?! আইজ তোর একদিন কি আমার একদিন!'' ব্যাস, দুই বউ-এ লেগে গেল যুদ্ধ! ততক্ষণে ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেছে ছোট বউ-এর কাছেও! ছোট বউ-ও নিশ্চিত যে... বড় বউ আর তাঁর স্বামী মিলে তাঁকে মেরে ফেলার জন্য কোন মন্ত্র-টন্ত্র করছে... তা না হলে মানুষের মাথার খুলিটা গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে ঠিক তাঁর ঘরের পিছনেই লুকিয়ে রাখা হবে কেন?!

দুই বউ-এ ধ্বস্তাধ্বস্তি... মারামারি... চুল টানাটানি! গামছায় প্যাঁচানো পুটলিটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলো ছোট বউ.... কিন্তু ধ্বস্তাধস্তিতে পুটলিটা গিয়ে পড়লো ঢেঁকির গর্তে! ছোট বউ দেখলো... আর নয়, বড় বউ-কে আর সুযোগ দেয়া যায়না!...এই যাদু-টোনা এখনই বিনাশ করতে হবে... ছোট বউ গিয়ে ঢেঁকিতে দিল পাড়! বড় বউ-ও দেখলো এই খুলি-ই তাঁর বিরুদ্ধে সর্বনাশের মূল ষড়যন্ত্র! সে-ও দিল ঢেঁকির আঙলা..... ব্যাস, ঢেঁকির দুই পাড়েই কংকালের খুলি গুড়া গুড়া!



সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরলো চাষী।.... কংকালের খুলিতো অনেক আগেই গুড়া গুড়া.... একবারে ছাতু! দুই বউ নিরন্তর ঝগড়া করেই চলেছে তখনও! ঢেঁকিঘরে গিয়ে কংকালের খুলি আর গামছার পুটলিটার অবস্থা দেখে চাষীর মনটা খু-উ-ব খারাপ হয়ে গেল... ''গণতন্ত্রের কপালে কি এতটাই খারাপ লেখা ছিল!?..... এত দুঃখ ছিল বেচারার কপালে!?'' বিষন্ন মনে কংকালের খুলিটার গুড়াগুলো গামছায় পেঁচিয়ে সে গেল নদীর ধারে.... নদীর জলে ছড়িয়ে দিল গুড়াগুলো.... হাঁটু গেড়ে বসে শ্রদ্ধাভরে প্রার্থনা করলো.... শান্তি পাক বিদেহী আত্মা!


(ইহা একটি শোনা গল্প কাস্টমাইজ করে চালিয়ে দেবার অপপ্রয়াস মাত্র।)

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×