অনেকদিন কিছু লেখা হয়না বলে লেখার দিন ফুরিয়ে গেছে...এমনতো নয়! দিন ফুরিয়ে যায়নি বটে.... তবে লেখার বিষয় কুড়িয়েও পাচ্ছিনা...লেখার ফ্লো যে স্লো হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।তবুও লিখতে বসেছি অস্বাভাবিক ভাবাবেগে তারিত হয়ে..... অবধারিত জেনে যে, সামুর সেই সে'দিনের প্রিয় মুখগুলোর অনেকেই এখন আর সামুতে উঁকিটিও মারেন না... হয়তো পারেননা সময় দিতে... নয়তো সময় ভাল যাচ্ছেনা...যেমন সময় ভাল যাচ্ছেনা আমাদের এই প্রিয়তম দেশটির।তবে আজ সে কথা থাক.......যাক, ভেসে যাক সব অশুভ শক্তি....যাক, খাক হয়ে যাক সব ক্ষমতালিপ্সু অপশক্তি! জনগণই যদি সকল ক্ষমতার উৎস, তবে কেন এই বিভৎস রক্ত হোলি খেলা ?!....মেলা হয়েছে... ঝামেলা আর নয়...দোহাই লাগে, এবার ক্ষান্ত দাও...শান্ত হও!!
এবার কাজের কথায় আসি.....আসি আমার ফিরে আসায়। আশায় আশায় ফিরে আসা, যদি আবারও মন পবনের নাও ভাসাতে পারি!.. ভাসা ভাসা কথা আর নয়! পরিস্কার করেই বলি....... 'পরিস্কার' শব্দের আগে এবং পরের 'প' এবং 'র' বাদ দিলে যা দাঁড়ায়...সেই 'রিস্কা'-ই আমার আজকের বিষয়, এই বেতাল হরতালে রিস্ক-ফ্রি বাহন 'রিক্সা' শব্দের প্রচলিত অপভ্রংশ! কুড়িয়ে পাওয়া সাবজেক্ট.....অবজেক্ট কিছু একটা লেখা....অনেকদিনের জড়তা কাটিয়ে বেরিয়ে আসা!
রিক্সা, পরিবেশ সম্মত বাহন..... বায়ু দুষণকারী কোন এগজস্ট নেই....জাস্ট এটুকু বল্লেই সব বলা হয়ে যাবেনা..... একদা সেই সুদূর জাপান দেশে আবিস্কৃত আমাদের একান্ত আপন এই রিক্সা এখন আর নিতান্ত সেই সে সেদিনের নিরীহ রিক্সা-টি আর নেই! রিক্সার এই নবরূপের মাহাত্ম আবিস্কার করলাম চলমান হরতাল-অবরোধে। প্রাজ্ঞ দেশীয় কারীগরদের বিজ্ঞ উদ্ভাবনে অধুনা রিক্সা হয়েছে মটর চালিত 'অটোরিক্সা' !দ্যা ফ্যাক্ট ইস...দিস স্যুড বি দা পারফেক্ট নেইমিং...'অটোরিক্সা । এতদিন যে বাহনগুলিকে আমরা 'অটোরিক্সা' বলতাম...সে'গুলি মোটেই কোন রিক্সা নয়.....সেগুলি ছিল থ্রি-হুইলার বেবী ট্যাক্সি! 'অটোরিক্সা' শব্দটি এই নবরূপ ব্যাটারী চালিত রিক্সার সাথেই অধিক মানানসই বটে। অধুনা এসেছে সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলার.... কিন্তু টু-স্ট্রোক উঠে গিয়ে ফোর-স্ট্রোক সিএনজি'র আগমনেও এই বঙ্গদেশে আমরা রিক্সা'র সঙ্গ এখনও ছাড়তে পারিনি... বরং ঢাকা শহরে আপ্ত করেছি পর্যাপ্ত ব্যাটারী চালিত 'অটোরিক্সা'....সারভাইবেল অফ দ্যা ফিটেস্ট! ডারউইনের থিউরির যুৎসই উদাহারণ.....সময়ের সাথে সার্থক অভিযোজন।
সহজ প্রযুক্তি, নির্মাণ ব্যয় কম.....আয় ভাল। গতি বেশ, বেশ আয়েশ করে অনায়েশে চালানো যায়। চালক দক্ষ হলে বক্ষ টান করে কম সময়ে আপনাকে পৌঁছে দেবে লক্ষ্যে। শুধু সওয়ারী নয়, সহীসও বেশ পায়ের উপর পা তুলে সব ভুলে দিব্যি হাওয়া খেতে খেতে আনন্দ ভ্রমণ! চালকের কস্ট কমেছে.. স্ট্যাটাসও বেড়েছে। লাগসই প্রযুক্তি বটে!....আর যুক্তি দিতে হবেনা বোধকরি।
তবে ঘটা করে না বললেও সহজেই অনুমেয়.... দূর্ঘটনা ঘটার শংকা বেড়েছে বইকি।আগে রিক্সা দূর্ঘটনায় বড়জোর হাটু-টাটু ছিলে যাবার আশংকা ছিল, কিন্তু এই দেশীয় 'অটোরিক্সা' দূর্ঘটনায় অস্থি-টস্থি টুটে যে যাবেনা..এমন স্বস্তিকর কথা হলপ করে বলা যাবেনা। 'সময়ের চেয়ে অস্থির মূল্য বেশী'....অস্বস্তি কাটিয়ে হুড তুলে মুড নিয়ে শক্ত করে বসুন....ভাড়া বেশী দিলেও ভাল, চালককে তাড়া দেবেননা মোটেই।
সেই ছোটবেলায় রাজ্জাক-কবরীর রংবাজ ছবির রঙিন ছবিওয়ালা রিক্সার কথা মনে পড়ে। সেখানে এখন সাকিব-শাবনূর! ৪০ বছর সময়ের আবর্তে পরিবর্তন কিছু হয়নি।কিন্তু হওয়া উচিত ছিল।ম্যানুয়াল বাহন এখন পাওয়ার 'অটোরিক্সা'.... সেই সাথে চাওয়া পাওয়ার-ও পরিবর্তন হওয়া উচিত। এ্যন্জেলিনা জোলী বা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-এর ছবি দিলে অপ্রিয় কিছু হবে কি?!
পাওয়ার রিক্সার ডিজাইনেও কিছু পরিবর্তন জরুরী.... এর জন্য খুব বড় কিছু আয়োজনের প্রয়োজন নাই। অধিকতর পোক্ত কাঠামো...কিঞ্চিত শক্ত চাকা....মজবুত ব্রেক সিস্টেম.. সেই সাথে এক ঠ্যাং তুলে রাখা চালকের অলস পা রাখার জন্য একটি আসল পাদানি। তারপরও রিক্সার ডিজাইনের মূল ত্রুটিটা ভ্রুকুটি দেখিয়েই যাবে। সেই জাপান থেকেই রিক্সার অতি আপন এই 'ডিজাইন ফ্ল'-টা রয়েই গেছে। জাপানীরা ইচ্ছে করেই ডাইনামিক ডিজাইনের বদলে আদলটা ইকোনমিক রেখেছে। তিন চাকার রিক্সায় এক চাকায় পাওয়ার....শুধুমাত্র পিছনের বাম চাকায়। যে কোন রিক্সাচালককে জিজ্ঞেস করলেই ফস করে বলে দেবে..'' ডান চাকা হস''। . মানে ডান চাকা পাওয়ারলেস। ডান চাকা এক্সেলের সাথে বিয়ারিং দিয়ে যুক্ত, মুক্তভাবে ঘোরে...বাম চাকায় ফিক্সড জয়েন্ট। রিক্সাচালক স্যাডেলে বসে প্যাডেল ঘুরিয়ে শুধুমাত্র পিছনের বাম চাকা ঘোরায়। তাইতো ত্রি-চক্র বাহন বক্রপথে চলতে চায়....রিক্সা শাঁ করে ডানদিকে ঘুরে যেতে চায়। চালককে শক্ত হাতে হ্যান্ডেল সোজা রাখতে হয়। সমদ্বিবাহু ত্রিভূজাকার স্ট্রাকচার-এর পিছনের শুধুমাত্র বাম চাকা দিয়ে ত্রিভূজের ভুমির উপর লম্ব বরাবরে কাঠামোটিকে টানতে বা ঠেলতে হলে বলবিদ্যায় যা দাঁড়ায়..... বলের একটি উপাংশ কাজে লাগেনা....চালকের বেশ পরিমাণ শক্তি নস্ট হয়, ভাবতেও কষ্ট হয়। পিছনের দুই চাকা-ই এক্সেলের সাথে ফিক্সড থাকলে রিক্সার ডিরেকশনও ফিক্সড হয়ে যেত.... ডানে-বামে ঘুরতে পারতো না। এই সমস্যার সহজ সমাধানের প্রয়োজনেই পিছনের এক চাকায় শক্তি, মুক্ত অপর চাকা। চার চাকার গাড়ীর আকার সুবিধাজনক..... এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে জটিল ডিফারেন্সিয়াল গিয়ার সংযোজনের মাধ্যমে। রিক্সায় ডিফারেন্সিয়াল গিয়ার লাগালে.....নাগালে থাকবেনা নির্মাণ ব্যয়! জাপানীরা যে সমস্যার সহজ সমাধান বের করতে পারেনি......আমাদের সকল্ল্প দেশীয় কারিগররা যুৎসই একটা বিকল্প যে বের করতে পারবেননা....কি করে বলি?!
অনেকদিন পর রিক্সাযোগে আমার এই ফিরে আসা! এদেশের খেটে খাওয়া আম জনতাকে স্যালুট....ঘাম ঝরিয়ে গতর খাটিয়ে তারা দেশের চাকা এখনও সচল রেখেছে। যারা অচল করে দেবার প্রয়াসে...তাদের ধিক.....শত ধিক!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১