চোখে দূরবীণ লাগিয়ে চুপি চুপি অন্যের অন্দরমহলে নজর রাখা নিশ্চয়ই ভাল কোন কাজ নয়। অন্যায় বটে! কিন্তু কিশোর ছেলেটি মাঝ রাতে ব্যালকনিতে বসে সেই গর্হিত কাজটিই করছে এবং খুব মজা পাচ্ছে!
দূরে একটি এ্যপার্টমেন্ট ভবনের ছ'তলায় একটা জানালায় আলো দেখা যাচ্ছে....একটি মেয়ে ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে গেল...তারপর পাঁচ মিনিট আর তার দেখা নেই! তার পাশের বিল্ডিং-এর এক মাঝবয়সী মহিলা মশারী টাঙানোর কাজটি করছেন..... বুকের আচঁলটি যথাস্থানে নেই!...নিজের শোবার ঘরে আঁচল ঠিক রাখার প্রয়োজনই বা কি! পাশের একটি ভবনের চার তলায় বাথরুমে এই মাঝরাতে কেউ একজন শাওয়ার নিচ্ছে...কিন্তু পুরুষ কি মহিলা, সেটা বাথরুমের ছোট ঘুলঘুলি দিয়ে দেখার উপায় নেই!
নীচে সরু গলিপথটায় সিটি কর্পোরেশনের একটা বাতি মৃদু জ্বলছে বটে....তবে সেটা আঁধার দূর করবার ব্যর্থ প্রয়াস মাত্র! দু'জন লোক হেঁটে যাচ্ছে দ্রুতপদে...এত রাতে কিসের তাড়া কে জানে! তাদের পিছনে একটি নেড়ী কুত্তা ন্যাজ নাড়তে নাড়তে ফলো করছে, তবে তার কোন তাড়া আছে বলে মনে হচ্ছেনা...লোক দু'টোকে ফলো করাই যেন তার কাজ!
১৮০ ডিগ্রী পর্যবেক্ষণের পর আবার সেই প্রথম জানালাটায় এসে আটকে গেল দুরবীণের চোখ। ঘরের ভিতর মেয়েটার ছায়া দেখা যাচ্ছে এবার। এখন জানালার পর্দাটা টানা.....হালকা পর্দাটা ভেদ করেও আলো-ছায়ার নড়াচড়া বোঝা যাচ্ছে! । হঠাৎ ঝপাৎ করে ভারী কিছু একটা ঝুলে পড়লো মনে হলো.....বাতাসের ঝাপটায় পর্দার মাঝ বরাবর খানকিটা ফাঁকা হয়ে দৃষ্টি চলে গেল ঘরের অভ্যন্তরে..... গলায় ওড়না পেঁচানো মেয়েটার শরীর একবার ঝাঁকি খেল কি!..... তারপর.... নিঃসার ঝুলে রইল সিলিং ফ্যনটার সাথে!
দুই.
সমুদ্র দেখার খুব শখ! বিশাল সমুদ্র কাছ থেকে দেখবে সে......বারো বছরের এক কিশোর। অনেক কৌতুহল নিয়ে বাবার সাথে সে এসেছে সাগর দেখতে...জীবনে প্রথমবার!
ছেলেটি বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে সমূদ্র তীরে।
হু হু করে বাতাসের ঝাপটা এসে লাগলো চোখে মুখে!.... আকাশ কালো করে সাত সমূদ্র তের নদীর ওপার থেকে তেড়ে আসছে আগুনমুখো কোন বিশাল দৈত্য.....সেই সাথে অনেক দূর থেকে ধেয়ে আসছে তার গর্জন ! ছোটবেলায় দিদার কাছে আগুনমুখো দানবের গল্প শুনেছে সে। যেই দেশে কুচবরণ কন্যা-কে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে এক মায়াবী ডাকিনী!....আগুনমুখো দৈত্য রয়েছে তার পাহারায়! জান বাজী রেখে রাজকুমার পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চেপে উদ্ধার করতে গেছে সেই রাজকুমারীকে....
পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত ভিজিয়ে দিয়ে গেল সমূদ্রের ঢেউ! পায়ের তলার বালি সুরসুর করে সরে যাচ্ছে যেন! এই বুঝি নিঃশাসের সাথে সবকিছুর টেনে নিয়ে যাবে আগুনমুখো দৈত্য!
ভয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটি!....
ছেলেটি যে জন্মান্ধ্য!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১