somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাশে রূপবতী, হাতে চটের থলে (ঈদ স্পেশাল...) !

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড়ই প্রীত হইয়াছি-টাইপ দৃষ্টি নিয়ে নীশির দিকে তাকালাম । প্রীত হয়েছিতো বটেই । নীশি নাম্নী এই অতি রূপবতীর কথায় প্রীত না হয়ে উপায় কি ! আমিই না কেবল , যে কোন তরুণের সামনে গিয়ে, বিনে খরচার মধুর হাসি বিলিয়ে এ মেয়ে যদি বলে,-'ভাই শুনুন ! আমি একটি এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইছি। আমার হাতের এই ধারালো ছুরিটা আপনার বুকে চালিয়ে দেব আশা করছি , আপনি আমায় সাহায্য করতে পারেন ?' কোন এক অজানা কারণে ওই তরুণ মুখে হাসি ফুটিয়ে -With great pleasure- বলবে বলেই আমার ধারণা । নীশির মত রূপবতীর সামনে আমার গলায় কথা আটকে যায় । নিজের হৃত্তপিন্ডের ধুঁকপুকানির শব্দ নিজেই শুনতে পাই । তবু বাঁচোয়া, একই ছাদের নীচে আমাদের বসবাস । নীশি আমার কাজিন হবার সুবাদে কখনও সখনও তার সাথে আমার কিঞ্চিত বাত্তচিত হয় । যেমন আজ হয়েছে । ঈদের নামাজ পড়ে বাসায় আসতেই, সামনে দাঁড়িয়ে ও বলল,
-মদন কুমার ! আনন্দিত হবার মত একটি খবর তোমায় দিতে পারি !
-বলে ফেলুন, জনাবা !
-আজকের দিনটিতে আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়াবার সুবর্ণ সুযোগ তুমি পাবে !
চেহারায় বিমোহিত ভাব ফুটিয়ে ভাব নিয়ে চুর করে রইলাম । ও বলল,-মদন কুমার ! তুমি রাজি ?
টেনেটেনে বললাম- দে-খি !
-দেখাদেখি আবার কি ! হ্যাঁ অথবা না উত্তর বলো ।
-সারাদিন বন্ধুদের সাথে থাকার কথা ছিল ।
-বন্ধুদের ছেড়ে নীশির সাথে থাকলে সময় খারাপ কাটবে বলেতো মনে হয় না ।
-তোর সাথে থেকে কাজটা কি ?
-উহুঁ; নো কোশ্চেন, থাকবি ব্যাস ।
- ও !
-তার মানে থাকছিস ?
-তুই বললে...!
-ঝটপট বের হ তবে । হাতে সময় দশমিনিট ।

নয় মিনিটের মাথায় নীশিকে নিয়ে রাস্তায় নামলাম । এক সময় আবিস্কার করলাম,নীশির হাতে থাকা চটের ভারি থলেটা হাত বদলে এখন আমার হাতে (বোঝা বইবার জন্যই আমারে আনা । হায় !) পাশে রূপবতী হাতে চটের থলে ! বড়ই মনোহর দৃশ্য ! দেখার মত ( কে রে আমার এই অবস্থা দেইখা দাঁত কেলায় !) । আমার এই করুণ দশায় কেউ দন্ত বিকশিত করবেন না, প্লীজ ! আমার জন্য এ দৃশ্য তেতো । শুধু তেতো না, নিমতেতো ! চট করে রিক্সায় উঠলাম । অসম্মানজনক এ দৃশ্য যত কম মানুষে দেখবে, ততই মঙ্গল । রিক্সা সামনে এগুতেই নীশি বলল,-'মদন কুমার; আমার পাশে এইভাবে গুটিয়ে থাকার প্রয়োজনতো দেখিনা । আরাম করে বসো !' দিলে চোট পাইলাম, বারবার মদন কুমার সম্বোধনে মেয়েটা আমাকে অপমান করার চেষ্টা করছে । অন্যে বললে অন্য কথা ছিল । সে জানে, তার বলা মদন কুমার আমার কানে 'প্রেমকুমার' হয়ে বাজে ! আমাকে অপমান করার ওর ব্যর্থ প্রয়াসেই আমার দিলে চোট । দেখলাম চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে ও । সুধালাম,- 'এনিথিং রং ?'
-এই স্লিপারি পাঞ্জাবিটা কোন আক্কেলে পড়েছিস তুই ?
ফিক করে বোকার মত হেসে ফেললাম । স্লিপারি রোড হয় জানতাম । তাই বলে স্লিপারি পাঞ্জাবি ! এক্কেরে নতুন জিনিস ! ইচ্ছে হলো বলি,-'গত ঈদের পাঞ্জাবি এই ঈদেও পরার কারণতো তোমার জানার কথা, সোনা !' কিন্তু বলা হলো না । এই অহংকারী মেয়েটাকে ওরকম বলার মত যথেষ্ট সাহস আমার নেই বলেই জানি । পাশে থাকা মানবীকে তাই সাহসের অভাবে মুখে না বলে, কল্পণাতেই বলতে শুরু করলাম,-'নীশি সোনা !'
-উম্ ?
-এটা স্লিপারি পাঞ্জাবি ?
- হুঁ !
-কোন যুক্তিতে ?
-হিঃ হিঃ হিঃ !
-একটা প্রশ্ন করলে রাগ করবেনাতো ?
-না ।
- আমার ঈদ বাজেটটা নিয়ে কি করা হলো,জানতে পারি ?

হঠাত্ত হার্ড ব্রেক কষে রিক্সা থেমে যায় । এ রিক্সাওয়ালা উড়াল দিয়ে আসছিল এতক্ষণ । মেয়ে যাত্রী পেলেই এরা এটা করে । পাখির মত উড়ে যেতে চায় ! রিক্সার ঝাঁকুনিতে ঝাঁকি খায় আমার কল্পণা । থেমে যায় । চটের থলে নিয়ে নীশি নেমে যায় । এরপরের দৃশ্য আমার কাছে কেবলি বিস্ময়ের !

রাস্তার পাশে উদোম গায়ে কিছু একটা খুঁজছে একদল শিশু । কাছে গিয়ে হাত ইশারায় নীশি ওদের ডাকে । শিশুর দল নীশিকে ঘিরে দাঁড়ায় । পাঁচ শিশুর এই দলে আছে একজন কিশোরী । ওর গায়েই কেবল একটি পুরনো ময়লা জামা । চটের থলের মুখ খুলে নীশি বের করে আনে একটি সবুজ জামা । পরপর চারটি শিশুর হাতে শোভা পায় একই রঙ্গের সবুজ জামা । একমাত্র কিশোরীর জামার রং, লাল ! রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে নীশির দিকে চেয়ে আছে ওরা । পরীর মত একটি মেয়ে ওদের উপহার দিচ্ছে, এ-ই কি বিস্ময়ের কারণ !

ঈদ বাজেটের হিসেব পেয়ে যাই আমি । ফিরে এসে রিক্সায় বসে নীশি । আমার মনে হয়,উড়ালপঙ্ক্ষি গতীতে রিক্সাওয়ালা আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে । পাশে বসে থাকা অহংকারী মেয়েটার কাঁধে মাথা রাখতে ভীষণ ইচ্ছে করে আমার...।






সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ২:৪১
৩১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×