somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প : জোছনার ধবল গায়ে গ্রহণ লাগা চাঁদ

০৬ ই মে, ২০০৯ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

সে রাতে জোছনা ছিল না, অমাবস্যার অন্ধকার ছিল । সে রাতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, বৃষ্টি হয়েছিল, গুড়ুম গুড়ুম বাঁজ পড়েছিল, আমাদের শিল কড়ায় এর শীর্ষ ডালটা মড়াৎ শব্দে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়েছিল, আমাদের বারান্দার সামনের চালার এক পাটি টিন বাতাস উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সে রাতে আমার যখন জন্ম হয়েছিল, আমার বাবা তখন বাঈজি পাড়ায় ছিলেন, আমার মা যখন গোঙ্গাচ্ছিলেন, কাতরাচ্ছিলেন ভীষণ প্রসব ব্যথায় আমাদের ফলবতী লেবু গাছটা তখন নরম কোমল সুগন্ধ ছড়াচ্ছিল, ভয় ধরানো কর্কশ কন্ঠে পেঁচা ডাকছিল বাগান থেকে, আমার দাদিমার বুক ধক্ করে উঠেছিল, পেঁচার অশুভ ডাক হয়তো তীরের ফলার মতো তাঁর বুকে বিঁধেছিল, হয়তো বুকের কোথাও ক্ষতের মতো দাগ রেখে যেতে পেরেছিল ।

যখন মায়ের উদরের উষ্ণ আশ্রয় থেকে আমাকে ধূলিমাখা পথে অবতরণ করানো হলো যথেষ্ট সাবধানতায়, আনন্দের অতিশয্যে রাখাল চাচা যখন পশ্চিম ভেবে ভুল করে দক্ষিণ মুখে 'আল্লাহু আকবর' আযানের ধ্বনিতে আমার আগমনী বার্তা ছড়িয়ে দিলেন, সেই সময়ে পৃথিবীতে আমার আগমনী প্রথম কান্নার রেশ ধরে আমাদের পোষা বিড়ালটি, যেটি উচ্ছিষ্ট মাছের কাঁটা আর মওকা মত এমনকি আস্ত দু'এক পিস মাছ হাপিস করে দিতে পারার আনন্দে ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে ভদ্রলোকী চালে জাবর কাটতো, সেটি যখন 'ম্যাও' রবে তারস্বরে আমাকে পৃথিবীর আলো-বাতাসে অভ্যর্থনা জানালো, সেই মুহূর্তে সেই দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার অন্ধকার রাতে ধূপ-ধুম্রের গন্ধভরা ঘরের ভেতর অর্ধচেতন মায়ের পাশে বসে দাদিমা তখন তেমন কোন কার্যকারণ ছাড়াই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন আমার নাম রাখবেন,-জোছনা ! যেমন কার্যকারণ ছাড়া বাবা আমার অসুস্থ মায়ের পাশে না থেকে সেই রাতে বাঈজি পাড়ায় ছিলে, যেমন কার্যকারণ ছিল না, সে রাতে মোড়ল চাচা আমাদের বাড়িতে মায়ের সুস্থতার খবর নিতে আসার । হয়তো সেটি তার দায়িত্ব ছিল, পাড়ার মোড়ল হিসেবে পড়শির খোঁজ নেয়া, বিশেষতঃ রমণীকূলের সুস্থতা-অসুস্থতা, সুখ-দুঃখ, এমনকি তাদের হেঁশেলের কোন বাটিতে কই মাছের কতো ইঞ্চি ঝোল এইসব টুকিটাকি সুক্ষ্ম বিষয়ের খবর রাখার দায়িত্ব হয়তো মোড়লের ওপরই বর্তায় !



দুই


সেইসব খাঁ খাঁ নির্জন দুপুরে আমি দাদিমার মুখে এইসব গল্প শুনতাম, যখন দাদিমা স্মৃতি কাতর হতেন । যখন তাঁর মনে পড়তো এরকম নির্জন দুপুরগুলোতেই খাবার শেষে সুযোগ পেলে টুপ করে দাদাভাই তাঁর আঁচলে মুখ মুছতেন, দাদিমা কপট রাগে চোখ মটকাতেন, দাদাভাই তাঁর হাত ধরতেন, হাত ধরে বিছানায় গিয়ে বসতেন, পুঁথি পড়ে শুনাতেন, সেই বিছানায় যেখানে আমি আর দাদিমা তখন পাশাপাশি শুয়ে থাকতাম, এক বালিশে মাথা রাখতাম, দাদিমার বাহুতে নাক গুঁজে, নাক ঘঁষে ঘঁষে প্রিয় গন্ধ নিতাম, দাদিমা বলতেন,-
'এক তীরে তোর দাদাভাই জোরা শালিক মারতেন !'
'জানি !'
'আগে বলছিতো !'
'হুঁ !'
স্বামীর কৃতিত্বের কথা মনে করে দাদিমার চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠতে দেখতাম । যদিও এক তীরে জোরা শালিক মারার কৃতিত্বটা আমার কাছে নিষ্ঠুর মনো হতো, তবুও সেই মুহূর্তে সেই কথাটা আমি দাদিমাকে বলতাম না, যেমন বলতাম না, কখনই যেমন জানতে চাইতাম না, সেইসব খাঁ খাঁ নির্জন দুপুরে কেন আমরা এমন একা হয়ে যেতাম ; আমাদের বিরাট ঘরটাতে আমরা দু'জন মনুষ্য আর আমাদের পোষাপ্রাণীরা ছাড়া অন্য কোন প্রাণের পরশ, অন্য কোন মানুষের পদচারণা কেন ছিল না, মা'কে খুন করে বাবা কেন কারাবরণকেই বেছে নিয়েছিলেন; অনেক অনেকদিন পরেও কেন বাবা জেলখানা থেকে ফিরলেন না, কেন সেখানেই মরে পড়ে থাকলেন,- আমার নিঃশ্বাসেরা স্বাক্ষী সেইসব নির্জন দুপুরে এইসব অযাচিত প্রশ্নের জঞ্জাল আমি উত্থাপন করতাম না ।


'ভাদ্রমাসের পূর্ণিমায় একবার তোর দাদাভাইরে ভূতে পাইছিলো !' এভাবে গল্প বলে যেতেন দাদিমা ।
'কি ভূত ?'
'মাছের ভূত !'
'এই গল্পতো আগে শুনি নাই, দাদিমা !'
'শোন তাইলে ! নিশুত রাইতে উনি গিয়ে পূবের ঝিলে নামছিলেন !'
'তারপর ?'
'পানি শুকায়া পেক ভর্তি ঝিল তখন । পেকেরে ভিতর থপথপ আওয়াজ পাইয়া দেখতে গেছিলেন, কাছে গিয়া দেখেন মস্ত বোয়াল ; ওজন হইছিল পাঁচ সের ..!' মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমি সেইসব গল্প শুনে যেতাম, চোখের বিস্ময় লুকাতে পারতাম না, বড়বড় চোখ করে দেখতাম,- কাদামাটিতে থপথপ নৃত্য করছে বোয়াল মাছ, পাশে কুঁজো বুড়োটি পাকা শিকারীর মতন ওঁৎ পেতে আছেন ! দাদিমার কন্ঠ তখনও আমার কানে বাজতে থাকতো,- 'ঝিল থেকে ওইঠা তোর দাদাভাই পড়লেন বিপদে ! ঝিলের পারে ঘুইরা মরেন, বাড়ির পথ পান না ! ভূতে উনারে পথ ভুলাইছিলো; ফজরের আযান হইলে পরে দিশ পাইছিলেন !'

সেইসব বিষন্ন কোন কোন দুপুরে আমাদের বুলু নামের কুকুরটা কুঁ..উ..উ.. কুঁ..উ..উ... আর্তনাদে বাতাস ভারী করে তুলতো, আমার বুকের ঠিক মাঝখানটায় হৃদয় নামের বস্তুটা যেখানে চুপটি করে ঘাপটি মেরে থাকতো সেখানে তড়িৎ একটা কিছু ঘটে যেতো, আমি আরো ঘণ হয়ে দাদিমার শরীরে লেপ্টে যেতাম, তখন অকস্মিক এক ঝাঁক পাখি বাগান থেকে উড়ে যেতো ভীষণ যূথবদ্ধতায়, তখন হু হু করে উত্তুড়ে হাওয়া আমাদের দরজা-জানালা, এমনকি আমাদের রোমকূপ গলিয়ে হৃদয় শীতল করে দিতো, আমরা ঘুমিয়ে পড়তাম ।


তিন


সেই ভীষণ শ্রান্তির ঘুমে এখনও আমার চোখ লেগে আসছে, যখন অজস্র শীতল মেঘদলেরা আমাকে ঘিরে মিছিল করে চলেছে, যখন মেঘেরা আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে সপ্ত আসমানের ওপাড় । উড়তে উড়তে, অতল ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে অকস্মাৎ ঘাঁড় থেকে আলাদা করা মায়ের মাথাটা চোখের সামনে হুটোপুটি খায়, ফিনকি দেয়া রক্তের ফোয়ারা ছোটে, তারমধ্যে পাঁচসের ওজনের বোয়াল মাছ নৃত্য করে, অতঃপর সফেদ কফিনে আবৃত দাদিমা আমার গা ঘেঁসে ভেসে চলে যান ! ভীষণ একাকী অনুভবে বুকে কষ্টের মতো ব্যথা হলে, ক্রমশ ঘূর্ণিয়মান সেসব দৃশ্য থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলে আমি দেখতে পাই, মোড়ল চাচা তখনও বিস্পারীত ভীত চোখে আমাকে দেখছেন, যখন তার দেহটা নিথর আর কাটা ক্ষত থেকে টপাটপ লাল রঙ্গা পাপ ঝরে ঝরে পড়ছে, যখন দেহটির পতন ঘটেছে, তারও খানিক আগে যখন মোড়ল চাচা আজ আমার কাছে আসলেন, যখন দেহটির উত্থান ছিলো, যখন আমাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করতে যাবতীয় প্রস্তুতি তার সম্পন্ন হয়েছিল, নীল কৌটার তিন তিনটা ট্যাবলেট পরপর গিলে ফেলে যখন চলছিল তার উত্থিত হবার প্রাণান্ত কসরত, তার হাতের আঙ্গুলগুলো লিকলিকে সর্পিল জিভের মতো যখন ধেয়ে আসছিলে তীব্র বিষের ছোবল নিয়ে, তখন আমার ডান মুঠোয় লুকানো ছিলো একখানি কার্যকরী ধারালো ব্লেড !

তারও অনেকদিন আগে, দাদিমার মৃত্যুর পর যখন আমাদের বাড়িটা তার দখলে চলে গিয়েছিল, কোন এক মন্ত্রবলে আমাদের বাড়ির দলিলটাতে যখন সে নিজের নাম অঙ্কিত করতে সক্ষম হয়েছিল, সেইসময়ে যখন আমাকে হতে হয়েছিলো তার আশ্রিতা, যখন আমার ভরণ-পোষণ, পঠনের নিরবিচ্ছিন্ন ধারা অটুট রাখার কৃপাটুকু সে করেছিল, তখন একদিন গ্রামের পাঠ শেষে শহুরে পাঠে সমৃদ্ধ হতে যখন সে আমাকে শহরে রেখে গিয়েছিল, এইখানে এই শহুরে বদ্ধতায়, নিত্য নতুন চেহারার মানুষেরা যখন প্রতিদিন আমার কাছে আসতে থাকলো অভিন্ন বাসনায়, নিত্য নতুন শহুরে পাঠে যখন আমি জর্জরিত হতে থাকলাম, সেই থেকে আমি অর্হনিশ অপেক্ষায় থাকতাম, আজকের এই সময়টির অপেক্ষায়...।

আমার ডান মুঠোর ধারালো ব্লেডটি নিখুঁতভাবে মোড়ল চাচার উত্থিত উত্তেজনাকে এক লহমায় স্তিমিত করতে পেরেছিল !


চার


আমি মারা যাচ্ছি--'এ অনুভূতিটা বেশ অদ্ভুত' এভাবে বলতে পারলে বেশ হতো ! ভদ্রমহোদয়গণ; ক্ষমা করবেন, বিশ্বাস করুন ওভাবে বলতে গেলে তা নেহাৎ মিথ্যে করে বলা হয় । কৈশোরে আমার লাল ফ্রকের ভিতরে লাল পিঁপড়ের হুল ফুটানো ব্যথার মতো কিঞ্চিত ব্যথা, আর সেটা ততোটা ভয়াবহও নয়, যতোটা ভয়াবহ ছিল কৈশোরে মোড়ল চাচা কর্তৃক আমার প্রথম খুন হবার সময় ।

আমি মারা যাচ্ছি, বেশ তৃপ্তি সমেত মারা যাচ্ছি যখন আমার ফল কাটার ছুরিটা যথেষ্ট গভীর হয়ে আমার পেটে গেঁথে আছে, নিবিড় যত্নে যেটি আমি গেঁথে দিয়েছিলাম ।




.......................................
উৎসর্গ : আমি একজনকে চিনি, এমন একজন, কৈশোরে যে প্রথমবার খুন হয়েছিল । তার প্রতি খানিক শ্রদ্ধার প্রকাশ ।
.......................................
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১০ রাত ৮:৩০
৫৮টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×