Ayesha Sheela
প্রিয় মেজপু,
একটা খোলা চিঠি লিখলাম। চিঠিটা যাদের পড়তে মন চায় তারা পড়ে নিক আর যারা বিরক্ত হতে চায় তাদের একটু বিরক্ত করি কী বলিস?
অনেক কিছু লিখেছিলাম তোকে নিয়ে।সব মুছে গেল। মুছে যাওয়ার সাথে সাথেই তোকে একটা কমেন্ট করে হাসি দিলাম।তুই কি জানিস কেন হাসি দিলাম? এইজন্য যে মনে হল যা যা লিখেছি তা আসলে ভালো হয়নি তাই ও একা একা মুছে গেল।
আজকাল কী দুর্দান্ত ছবি তুলিস। খুব ভালো লাগে। তোর প্রতিটা ছবি ভীষণ প্রাণবন্ত। আমার বইটা নিয়ে তুই যা করলি।কত কত ছবি তুললি! অরণ্যের গুঞ্জন সাজাচ্ছিস না, মনে হচ্ছে সেই ছোট্ট বেলার মত তুই নীলাকে সাজিয়ে দিচ্ছিস বার বার। তোরা সবাই কেন আমাকে এত বেশি ভালোবাসিস বলতো? কারোর জন্য আমি কিছুই করতে পারি না।ভাই বোন হল আল্লাহর রহমত। আল্লাহ তা আলা রহমত আর আশীর্বাদ স্বরূপ তোদেরকে উপহার দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আজ দুপুরে বড়পাকে কী বলেছি জানিস? বললাম আপা আপনার হাতের মুরগী রান্না খেতে ইচ্ছে করছে। আপা বলে কি জানিস? আমার নীলাকে আমি এখন কই পাবো! এই দ্যাখ চোখ ভিজে গেছে।
জানিস, বড় আপা আমার স্ট্যাটাস দেখে তাও আবার ত্বসিন বাবার একাউন্ট থেকে। আমার এ কথা শুনে খুব ভালো লাগল।আমি ঢাকা চলে আসাতে আমাদের আর এক সাথে হওয়া হয়ে ওঠে না।বড়পা ভীষণ মিস করে।
তোরে কতদিন হল কত কথা বলা হল না। আমরা কি সময়ের কাছে হারিয়ে যাচ্ছি? রিকশায় করে ফিরছি তখন মনে হল টাকার কাছে সময় বেঁচে দিয়েছি। ব্যস্ততা ঘিরে ধরেছে। জানিস বইমেলার একটা গল্প বলা হয়নি। একটা স্টলে একজন অনেক বড় মাপের লেখক আছেন। সেখানে অনেক মানুষের ভিড়। আমি জানতাম না উনি আছেন। পরে বুঝলাম। একটা বাচ্চা মেয়ে তার বইটা নেবে। যে কিনে দিচ্ছে সে বলছে দেখ উনি বইটা লিখেছে। মেজপু বিশ্বাস কর লেখক বাচ্চাটার মুখের দিকে একবারও তাকাল না।এমনকি ওই মেয়েটির দিকেও। সবাই বুঝি বড় হয়ে গেলে এমন হয়ে যায় ? আমার খুব কষ্ট লেগেছে জানিস। আমি ওখান থেকে চলে এসেছি।আর আসতে আসতে ভেবেছি মানুষ এমন কেন?
এই একটা প্রশ্ন আমার সারাজীবন ধরে ঘুরবে আমি জানি। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে আমি হারিয়ে যাব এবং শেষত বুঝে যাব মানুষ এমনি! কিন্তু তারপরেও কিছু মানুষ আছে যারা মানুষ হিসেবে অসাধারণ। চলার পথে এদের সাথে পরিচয় না হলে জীবন অপূর্ণ থেকে যেত। তবে যাই বলিস না কেন পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই ভালো। হাতে গোনা কিছু মানুষ আছে যারা ভালো না কিন্তু ভালোর অভিনয় করে, আর কিছু আছে যারা ভালো দেখাতে গিয়েও নিজের রঙটা দেখিয়ে ফেলে। খারাপটাকে ভালো দিয়ে ঢাকতে পারে না। প্রকাশ হয়েই যায় তা অবশেষে।
শোন তোকে তো বলা হয়নি গত কয়েকদিন ধরে ভাবছিলাম একটা কথা -সেটা হল আমরা সবাই তুই, আমি,আপা,আব্বু,ফাহিম একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসেছি। ধর আমার ৩৫ বছর। এই নির্দিষ্ট সময়টা যেহেতু আমি জানি না তাই অনির্দিষ্টভাবে জীবনের ভোগ উপকরণে ব্যস্ত। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাকে সকল কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তার মানে বুঝতে পারছিস প্রতিটা সেকেন্ড এবং মিনিট কতটা গুরুত্বপূর্ণ! আমি যদি কারো সাথে গল্প করে সময় কাটায় তাহলে ৩৫ বছরের সময় থেকে বিয়োগ হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছিস কী পরিমাণ মূল্যবান সময়! আমার ধারণা আমি তোরে বোঝাতে পারছি না।উপলব্ধি তীব্র হোক তখন বোঝাব।
আজ সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকেই মনের আকাশে মেঘ। ব্যস্ততা যদিও ভুলিয়ে দিয়েছে তবুও একটা কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি।যখন কেউ লুকাতে চায় তখন তাকে লুকাতে দেয়া উচিত।
ঘুম আসছে। অনেক বকবক করলাম। তুই ভালো থাকিস। চিঠি দেখে ভয় পাস না যেন। লিখে আর এডিট করিনি।ত্রুটিগুলো ক্ষমা করিস।নিজের যত্ন নিস। আর শোন তোর লিপিস্টিক আর কাজল ফেলে গেছিস।আমি আজকে কিন্তু একটু কাজল দিয়েছিলাম।
©রুবাইদা গুলশান
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১:৩৭