আজ আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস।
আমি নিজে একজন স্বেচ্ছাসেবী বলে আমার কাছে এ দিনটি স্পেশাল। স্বেচ্ছাসেবী কাজ বলতে আমরা সাধারণত স্বার্থহীন কাজকে বুঝি যা একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো আর্থিক বা সামাজিক লাভের জন্য করে না বরং অন্যান্য ব্যক্তি বা দল বা সংস্থার সুবিধাৰ্থে করে, তাদের কল্যাণে করে। আধুনিক সমাজের একটি গুণ হলো মানুষের একে অপরকে সাহায্য করা; স্বেচ্ছাসেবা কাজের দ্বারা শুধু অন্যদের সহযোগিতা করা হয় না, বরং তা স্বেচ্ছাসেবা দেয়া ব্যক্তিটির ব্যক্তিগত পর্যায়ে সুবিধা পৌঁছে দেয়।
যুক্তরাজ্য কর্পোরেশন ফর ন্যাশনাল অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস অনুসারে (২০১২) প্রায়, ৬৪.৫ মিলিয়ন আমেরিকান বা ২৬.৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, ৭.৯ বিলিয়ন ঘণ্টা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করেছে যার মূল্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলার! হিসাব করলে দাঁড়ায়, প্রতিজন স্বেচ্ছাসেবক প্রতি সপ্তাহে ৩ ঘণ্টা, প্রতি বছর প্রায় ১২৫-১৫০ ঘণ্টা সময় দিচ্ছেন। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে স্বেচ্ছাসেবার এই হার অনেক কম। আমরা বরং উল্টো। কেউ স্বেচ্ছাসেবায় যুক্ত হলে আমরা তার পেছনে লেগে যাই। মনে মনে ভেবে নেই সে স্বেচ্ছাসেবা করে না জানি কী করছে। ধর শালারে ভাব নিয়ে তার পেছনে লেগে থাকি।
আনন্দের কথা হলো এই সব নেগেটিভ মানুষের মাঝেও বর্তমানে বাংলাদেশেও অনেক তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাসেবায় সময় শ্রম ও মেধা ব্যয় করছেন। পাশে দাঁড়াচ্ছেন অসহায় দুস্থ মানুষের। হয়ে উঠছেন তাদের সহায়। এটা আনন্দ ও গর্বের। এটি আশাবাদী হবার মতোন বিষয়, আমি তরুণ তরুণী দের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। একই সাথে মনে হয় আমাদের দেশেই আরো যাদের পক্ষে এই স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিবেদিত হবার সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল তাদের উপস্থিতি যেন কিছুটা কম। অথচ যদি তা হতো তবে ভাল হতো। একসাথে আমরা যে বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখি তা বাস্তবে পরিণত হতে সকলের সম্মিলিত যূথবদ্ধ হয়ে চলাটা জরুরী ছিল।
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আমার রয়েছে নানা অভিজ্ঞতা। এর মাঝে আনন্দেরই বেশি। তৃপ্তির, শিশুর হাসির কথাই মনে আসে আগে। আর টুকটাক বিপদে যে পরিনি তা নয়। সে সব নিয়েও আছে অম্ল-মধুর স্মৃতি। তবে সব ছাপিয়ে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে মনের গহীনে যে শান্তি ও সুখানুভূতি মেলে সেটাকেই আমি বড় করে দেখি। এই প্রাপ্তির কোন তুলনা হয় না।
সামহোয়্যার ইনের ব্লগাররাও যুক্ত ছিল নানাবিধ স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমে। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে-
দেশের ইমার্জেন্সি রেসপন্সে আমরা ব্লগাররা যুক্ত ছিলাম। যেমন বন্যার্তদের সহায়তায়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা সহায়তায়, নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের সহায়তায়। এ ছাড়া আইলা বিদ্ধস্ত এলাকায় ও আমরা ত্রাণ সহায়তা করেছিলাম। শীতার্তদের সহায়তা কম্বল বিতরণ করা হয়েছে একাধিকবার। রুশান এর চিকিৎসা সহায়তা থেকে অসংখ্য মানুষের চিকিৎসা, রক্ত যোগার ইত্যাদিতে যুক্ত ছিলাম আমরা ব্লগাররা। লেখালিখির মাধ্যমে শিশুদের প্রতি সবাইকে যত্নশীল করার চেষ্টা করেছি। মানবিক সামাজিক কাজে যুক্ত করার চেষ্টা করেছি। ঝড় বন্যা আইলা আগুন যাই হোক মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি এবং তা সকলে মিলে। সম্মিলিতভাবে। এই বোধ ছড়িয়ে দিতে ব্লগারদের সাথে ছিলাম আমিও।
আজ আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবসে সকল স্বেচ্ছাসেবকদের জানাই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আসুন এই পৃথিবী বদলে দেবার মিশনে সবাই একযোগে কাজ করে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৮