আমাকে প্রায়ই নীলক্ষেত যেতে হয়! কাগজ কলম খাম সহ যাবতীয় স্টেশনারী, কম্পোজ ফটোকপি সাংগঠনিক নানা কাজের ব্যানার স্টিকার সহ রাজ্যের হাবিজাবি কাজ সেখান থেকেই করি আমরা। একদিন এমনই কিছু কেনাকাটার জন্য সেখানে গেলাম। যে দোকান থেকে নানা কিছু নিলাম, সে দোকানী বেশ কিছুক্ষণ ক্যালকুলেটর টিপে টিপে হিসাব করে জানালো, বিল হয়েছে ৭০০ এর মতোন। টুকিটাকি বেশ কয়েকটা আইটেম।
তারপর সে আমার কেনা জিনিসগুলো একটার পর একটা পলিথিনে ঢুকাচ্ছে আর বলছে,
এই যে দ্যাহেন এটা,
বলে সে একটা আইটেম দেখালো- আর বললো, এইটার দামি ধরসি ২০০ টাকা কিন্তু অন্যান্য সবাই আপনার কাছ থেকে নিবো ২৫০ টাকা।
এই যে এটা দেখেন, বলে আরেকটা জিনিস দেখিয়ে বললো-
এটা যদি কিনেন ১২ টাকা করে ৫টা ৬০ টাকা রাখবে। আমি রাখলাম ৫০ টাকা।
এভাবে সে সব জিনিস দেখিয়ে বলেছিল কোন আইটেম সে কত রেখেছে। সব আইটেমেই কিছু কম করে রাখা। সবশেষে আমি হিসাব করে দেখলাম সে প্রায় ১০০ এর উপর কম রেখেছে। ৭০০ টাকার জিনিস বিক্রিতে ১০০ টাকা কম রাখা এক হিসেবে অনেক!
আমি চিন্তা করলাম এই লোকের সমস্যা কি?
সবাই যদি এমন দাম রাখে সে কেন কম রাখছে?
আমি তারে বললাম, আপ্নে তাইলে কম রাখলেন ক্যান? আমিতো এগুলার কোনটার দাম কত তা জানতাম না। আপনে বেশি বা অন্যন্যরা যা রাখে তাই রাখতেন।
আমার কথা শুনে সে লোক দেখি হাসে।
আমি তারে কইলাম, হাসেন ক্যান?
সে হাসতে হাসতে বললো, ভাই আমি অনেক বছর দেশের বাইরে আছিলাম। দেশে ফিরা আইসা এখানে দুকান নিসি। নীলক্ষেতের লুকজনের মতোন অহনো তেমন ব্যবসায়ী হইতে পারি নাই। তাই কম রাখি।
ব্যবসা শিখে ফেললে আর রাখুম না!
তার মুখে মিটমিট হাসি।
পরে আমি তার সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বললাম। একসাথে চা খেলাম। কর্মসূত্রে আমি নিজেও দেশের বাইরে ছিলাম। প্রবাসের মানুষের সাথে আমার দ্রুত সম্পর্ক তৈরি হয়।
মনে হলো লুকজনের মাঝে এখনো তাইলে সারল্য ব্যাপারটা আছে!! চারপাশে ভাল মানুষ নেই তা ঠিক নয়, আছে তারাও—
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪২