আমরা যারা ব্লগে লেখালিখি করেছি/করতাম/করি তাদের কাছে ব্লগ বিশেষ কিছু। ব্লগের প্রতিটি নিক আমাদের কাছাকাছি। নিকের পেছনে মানুষটিকে না চিনলে, না জানলেও তার লেখা এবং আমার লেখায় তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরেই তার সাথে আমাদের সম্পর্কে সূচনা হয়। তারপর দিনের পর দিন লেখালেখি মন্তব্য প্রতি মন্তব্যে একটি নিকের সাথে আমাদের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠে। দিনে দিনে ভার্চুয়াল গণ্ডী ছাড়িয়ে সেই সম্পর্ক আরও হৃদ্যতা পূর্ণ হয়ে উঠে। ব্লগের মাধ্যমে যাদের সাথে পরিচয় হয় ঘনিষ্ঠতা হয় সেখানে স্বার্থ নেই একেবারেই। জমিজমা নিয়েও নেই কোন বিরোধ; আমাদের সম্পর্কের সূচনাতেই ছিলো লেখালিখি, তাই অন্যান্য সকল সম্পর্কের তুলনায় ব্লগ থেকে পাওয়া মানুষগুলোর সাথে একেবারেই ভিন্ন আবহের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সৃজনশীলতা চর্চার ক্ষেত্রে যে আমার বন্ধু সে শুধুই বন্ধু নয় তারচেয়েও বেশী, এ কারণেই অজানা অচেনা একজন মানুষকেও যখন আমরা দেখি তাকে জড়িয়ে ধরতে আমাদের এক সেকেন্ড ভাবতে হয় না কারণ এই অজানা অচেনা মানুষটির লেখালিখি এবং মন্তব্য প্রতি মন্তব্যে আমরা আসলে শুধু ভার্চুয়াল সম্পর্কে থাকি না চলে আসি একে অন্যের আরও কাছাকাছি। আমার মনে আছে ২০১২ সালে আমি যখন প্রবাস থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম তারপর একদিন বিকেলে আমরা প্রায় ৩৬ জন অজানা অচেনা মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করেছিলাম। অথচ তাদের কাউকেই আমি আগে দেখিনি তাদের কারো সাথেই আমার আগে চেনা পরিচয় ছিলো না-
শুধুমাত্র লেখালেখির কারণেই এই টান, ভালোবাসা-
কাছে আসার গল্প নয়
আজ এসেছি ব্লগ দিবস নিয়ে কিছু বলতে। সে প্রসঙ্গে যাই -
ব্লগ দিবস একান্তই আমাদের দিন। বাংলা ব্লগের সকলের জন্য এই দিনটি আনন্দের। ব্লগের কল্যাণে আমরা নিজেরা যেমন লেখালেখি সৃজনশীলতা চর্চার সুযোগ পেয়েছি তেমনি ব্লগারদের নানা মানবিক কার্যক্রম উদ্যোগের ফলে উপকৃত হয়েছে দেশবাসী। অসহায় আর্তজনের পাশে ছিলেন এ দেশের ব্লগাররা। গুটি কয়েক ব্লগারের বিতর্কিত কিছু লেখায় কেউ কেউ কষ্ট পেয়েছেন, কেউবা এই ইস্যুকে ইন্ধন দিয়ে দেশে অরাজকতা তৈরির সুযোগ খুঁজেছেন সে সব এখন অতীত। সকল বাধা বিঘ্ন ঝড় ঝঞ্ঝা পেরিয়ে আজ নতুন আলোয় উদ্ভাসিত বাংলা ব্লগ। তাইতো নানা অপপ্রচারেও আমাদের ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। আলো নিয়েই সত্যাশ্রয়ী থেকেই আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। বেশ কয়েক বছর বিরতির পর এবারই আবার সাজ সাজ রব নিয়ে ব্লগ ডে পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কদিন আগে থেকেই।
ব্লগ ডে র আলোচনা, পরিচিত পর্ব, অনুভূতি প্রকাশ ইত্যাদির পাশাপাশি থাকছে ব্লগারদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত ব্লগ ম্যাগাজিনের প্রকাশনা আয়োজন, সেরা ব্লগার সম্মাননা সহ আরও নানাবিধ পুরস্কার। এ ছাড়া যথারীতি উপস্থিত ব্লগারদের জন্য মগ, টি-শার্ট থাকছে উপহার হিসেবে।
সব শেষে রাতে নৈশভোজ!
আমি শুনেছি খাবারের এলাহি আয়োজন করা হচ্ছে শাহী খানাদানা। জাদিদ থাকলে যা হয় আর কি।
এবার ২য় বারের মতন শুধু ব্লগ ডে কে কেন্দ্র করেই প্রকাশিত হচ্ছে একটি ব্লগ ম্যাগাজিন। যেখানে আগ্রহী ব্লগারদের নানা বিভাগের বেশ কিছু লেখাকে এক মলাটে দেখতে পাবেন সবাই। সংগ্রহে রাখতে পারবেন। আগত অতিথি/ব্লগারদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছে পদক্ষেপ। রেজিস্ট্রেশন চলছে। তথ্য রাখা হচ্ছে। শুধু এসব নয় এবারই প্রথম আয়োজনে যুক্ত করা হয়েছে সাংস্কৃতিক আয়োজন। শিল্পী নাচুনে কবিতা পাঠক সবাইকেই রাখা হচ্ছে সে আয়োজনে। তার মানে গান গল্প কবিতা সবই থাকবে।
পিঠা পুলির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বৈকালিক নাশতা হিসেবে। শিশুরা কেউ এলে তাদের জন্য থাকবে চকলেট, বেলুন। বুড়োরা কেউ এলে তার জন্য থাকবে পান সুপারি। বাদ যাবে না কেউ থিওরি নিয়ে কাজ চলছে। সুতরাং যারা যারা আসবেন ভেবেছেন তারা রেজিঃ করে ফেলুন এবং অতি অবশ্যই জোরেশোরে প্রস্তুতি নিন।
দেখা হবে বাংলা ব্লগ দিবসের আয়োজনে।
সুন্দর এই আয়োজন পুরোপুরি অর্থবহ আনন্দময় হয়ে উঠবে যদি আপনারা সকলেই আসেন, দেখা-সাক্ষাত হয়, কিছুক্ষণ গল্প আড্ডা হয়। যাদের সাথে ভার্চুয়ালি সময় কাটাই, লেখা নিয়ে থাকি, ভালো কাজে মন্তব্য পালটা মন্তব্য চালাচালি করি তারা সবাই এঁকে অন্যের পাশে বসে আছি এই দৃশ্যটাই হয়ে উঠুক পৃথিবীর সুন্দরতম একটি দৃশ্য।
চলে আসুন।
আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন জাদিদ এর দেয়া এই পোষ্ট ২টি
https://www.somewhereinblog.net/blog/mozaddid/30343611
https://www.somewhereinblog.net/blog/mozaddid/30343788#comments
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৯