somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেঁটে চলি গহীন আঁধার পথে... হেঁটে চলি আলোর সন্ধানে...

২৮ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
আজকাল চারপাশে শুধু হাহাকার আর হাহাকার। দেশের কথা চিন্তা করলে আতঙ্কে কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কতগুলো কথা আমি নিজের মধ্যে লালন পালন করে চলেছি অনেকদিন ধরেই... কিন্তু আর পারলাম না কথাগুলো শুধুমাত্র নিজের করে রাখতে। বিবেকের তাড়নায় কলম ধরলাম... এবং একটু অন্যভাবে। এগুলো শুধুই আমার ব্যক্তিগত চিন্তাধারা। আমি হয়ত সঠিক নাও হতে পারি। এই পোস্ট শুধুমাত্র এক পিচ্চি ব্লগারের নিজস্ব চিন্তাধারা আর স্বপ্নের প্রকাশমাত্র।



২.

২০০৭ সালের ঘটনা। ডিজুস-প্রথম আলো কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। নাম ঘোষণার পর গুটি গুটি পায়ে মাথা নিচু করে মঞ্চে উঠে এলো চশমা পরা, দুই বেণি করা ছোট একটি মেয়ে।মাইক্রোফোনের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ... তারপর কথা বলতে শুরু করল...

মাত্র কিছুদিন আগেই মামার হাতে খুন হয়েছে মেয়েটির ব্যাচমেট ভিএনএসের প্রিয়াঙ্কা। বন্ধু হারানোর শোকে মেয়েটির মুখ পাথরের মতো শক্ত।দারিদ্র্য জয় করে তার বন্ধুরা গৌরবোজ্জ্বল ফলাফল করেছে। তাদের জন্য সে গর্বিত,শ্রদ্ধায় মাথা অবনত। পাথরের মতো শক্ত মুখ আর নত মস্তকে মঞ্চের মাঝে দাঁড়িয়ে উপস্থিত শিক্ষক, অভিভাবক আর হাজারো মেধাবি মুখগুলোকে মেয়েটি তন্ময় করে রাখল তার স্বপ্নের গল্প শুনিয়ে। কী স্বপ্ন দেখেছিলো মেয়েটি সেদিন??


৩.

সেদিন আমার মনে হয়েছিলো, একটি সার্টিফিকেট অর্জন যেন আমার কাঁধে অনেক খানি দায়িত্ব এনে দিয়েছে। মনে হয়েছিলো নিজের সুযোগ সুবিধার কথা, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কথা, শিক্ষা ব্যাবস্থার কথা, শিক্ষার হারের কথা। মিলনায়তন ভর্তি মানুষের কাছে আমি সেদিন আবেদন রেখেছিলাম- আমরা যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তাড়া কি পারি না অন্তত একটি নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দিতে?হোক না সে বাড়ির কাজের ছেলেটি, কিংবা বাড়ির পাশের বস্তির বুড়ো দাদুটি...... নিরক্ষরতা মুক্ত দেশ কি খুব দুরের পথ??

স্বপ্নটা আমি আজও দেখি, আশপাশের মানুষগুলোকে দেখাই। আমি আজ গর্ব করে বলতে পারি, ৭ জন পথশিশু আমার হাতে অক্ষরজ্ঞান পেয়েছে। এই গৌরবের অংশিদার ব্লগবাসিরা কেন হবেন না? আসুন না, আমাদের দেশটাকে গড়ার দায়িত্বটা আজ থেকে আমরা নিজেদের কাঁধেই তুলে নিই।



৪.
কাল রাতে ব্লগে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরতে ঘুরতে এক বাড়িতে দেখলাম ক্যানাডিয়ান প্রিন্সিপ্যাল দ্বারা পরিচালিত এক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বিজ্ঞাপন। সঙ্গত কারনেই তিনি দেশের স্কুলের সমালোচনা করেছেন ওই পোস্টে। এখন আমার প্রশ্ন,অন্য দেশের মানুষের দ্বারা পরিচালিত স্কুলে কি আমারা দেশপ্রেমের শিক্ষা পাবো??আমরা কেন ওই স্কুলে পড়ব?? আমরা কি পারি না, প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু শ্রম দিয়ে আমাদের স্কুলগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে??


৫.

আজকাল শিক্ষার্থীদের সাধারন প্রবণতা হল উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যাওয়া। আপনারা যান, আমি তাতে খারাপ কিছু দেখি না। আমি নিজেও যেতে চাই। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ফিরে আসার ইচ্ছেটা আপনাদের কত জনের আছে বলুনতো??আপনারা বলবেন এদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কম।আপনারা তো সেই সুযোগটা পাচ্ছেন, তাহলে কেন ফিরে এসে আপনাদের অনুজদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন না??বট ফল থেকে জন্ম নেয় মহীরুহ। ওই বট ফলের সমান চেষ্টা টুকু করতে কি আপনাদের খুব বেশী কষ্ট হয়??অন্য প্রতিষ্ঠানের কথা ঠিক জানি না,তবে আশা করি প্রায় সমানই হবে...আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিটি শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে ব্যয় করে পঁয়ষট্টি হাজার টাকা, অর্থাৎ চার বছরের শিক্ষাজীবনে দুই লক্ষ ষাট হাজার টাকা, যা কিনা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অনেক অনেক বেশী। বলাই বাহুল্য, এর পুরোটাই এদেশের সাধারন হতদরিদ্র জনগনের ট্যাক্সের টাকা। তাই আপনার শিক্ষার ওপর এদেশের সমস্ত মানুষের অধিকার আছে। আপনি তাদের বঞ্চিত করতে পারেন না। সেই অধিকার এদেশের মানুষ আপনাকে দেয় নি। ওই দুই লক্ষ ষাট হাজার টাকার হিসাব জনগণকে বুঝিয়ে দেবার দায়বদ্ধতাটুকু যদি আপনার না থাকে, আমি হলফ করে বলতে পারি, বিশ্বের সবচাইতে ধনি দেশের সবচাইতে বিলাসবহুল কবরস্থানে সবচাইতে দামি কফিনে শুয়েও আপনি শান্তি পাবেন না, যদি কিনা আপনি একজন হোমো স্যাপিয়েন্স হয়ে থাকেন।


দেশকে ভালোবেসে শুধু হাহুতাশ করাই সব কিছু নয়, এখনো সময় আছে, আসুন দেশের জন্য এবার সত্যি সত্যি কিছু করি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৩:৪২
৪৪টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×