বিতর্কের একটা বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে একটা সমাধানে আসা; হয়ত দু পক্ষই ১০০% মেনে নিবে না; তবুও যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে কোন একটা বিষয়ের ঠিক-বেঠিক নির্ধারণ করা।
কিন্তু দিন দিন আমরা কেমন যেন অস্থির হয়ে যাচ্ছি। ঘরে-বাইরে সবখানে আমরা তর্কজুড়ে দিতেই ওস্তাদ। কেউ অপরের কথাকে সম্মান দেখাতে জানি না। আমরা সবাই একএকজন মহা পন্ডিত! আমি যেটা বুঝি, সেটাই ঠিক; অন্যের কথার কোন দাম নাই।
এতে করে আমাদের নিজেদের মধ্যে যেন দুরত্বই বাড়ছে। লাভবান হচ্ছেনা কেউই।
স্বামী-স্ত্রীর তর্ক এর মধ্যে আমার কাছে সবচাইতে খারাপ লাগে। এতে করে সংসারের শান্তি নষ্ট হয়, নষ্ট হয় বাচ্চা-কাচ্চা! একটা ঘরে বাবা-মা যখন সারাদিন ঝগড়ার মনোভাবে থাকে, সন্তানও খিটখিটে হয়ে যায়। তারা মনে করে এটাই যেন ঠিক।
যাষ্ট একটা উদাহরণ দেখেন; সকালবেলা একজন ঘুম থেকে উঠে কোন একটা কারণে স্ত্রীর সাথে জুড়ে দিলো তর্ক; কোন সমাধানেতো কেউই পৌছাতে পারলো না বরং স্ত্রীর 'আমি বলে তোমার সাথে এখনও সংসার করতেছি' আর স্বামীর 'এই জন্যই পুরুষ মানুষ দুইটা বিয়ে করতে চায়; দুইটা বিয়ে করলে বউরা নিজেরা আপসে ঝগড়া করে, স্বামীর সাথে করে না' টাইপের কথাবার্তার ফল কি হয়?
ফল, ঐ লোক বাইরে বের হয়ে বাসের লাইনে দাড়িয়ে আরও বিরক্ত হন, বিরক্তি অন্য যাত্রীর উপরে ঝাড়েন, বাসের হেলপার কন্ট্রাক্টরের উপরে ঝাড়েন, অফিসে অধীনস্তের উপরে ঝাড়েন। এদিকে স্ত্রী যদি ঘরণী হন, তিনি ঝাড়েন সন্তানের উপরে, সন্তান হুদাকামে ঝাড়ি খেয়ে মেজাজ খিটখিটে করে স্কুলে সহপাঠির উপরে ঝাড়ে, এক-দু কথায় হাতাহাতি হয়, স্কুল টিচার বাবা-মাকে ফোনে ঝাড়ি দেন, আবার পোলাপাইন বাসায় ফিরে প্যাদানী খায়।
বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব কমে তর্কের কারণে। প্রতিটা ফ্রেন্ড সার্কেলে এমন একজন থাকে যে নিজের মতামত সবার উপরে চাপায়; কেউ তাকে ভুল প্রমান করতে পারে না। ফলে ঐ বন্ধু আস্তে আস্তে ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে বের হয়ে যায়। অন্যদের কাছে ঐ সার্কেলের কুৎসারটায়। আরও কত কি।
ব্লগ গুলিও কম না। এখানেও এমন লোক থাকেন, যারা নিজে যা বুঝেন, তাই প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্যের পোষ্টে গিয়ে হুদাই মন্তব্য করেন। নিজেই পন্ডিত অন্য সবাই গোয়ার-গাধা প্রমান করেন। ফলে, ব্লগ থেকে ভদ্র নিরিহ ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যান।
সেই ২০০৮-২০০৯ এ ব্লগ যেমন জমজমাট ছিলো, এখন তেমন নাই; কিন্তু হওয়ার কথা ছিলো উল্টা। যে সকল কারণে তা হয়নি, তার মধ্যে এই তর্কবাজ লোকের উপস্থিতি একটা অন্যতম কারণ।
তাই, আসুন, আমরা তর্ক না করে বিতর্ক করি; অন্যের কথার সম্মান দিতে শিখি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৫:০০