সময়টা খুব সম্ভবত ১৯৯৫ এর মত হবে। ফায়ার সার্ভিসের এরিয়ার মধ্যে একটা পুকুর আছে; আমার জীবনে দেখা সব থেকে পরিস্কার ও স্বচ্ছ পানির পুকুর (একদম সুইমিং পুলের মত)।
বাহিরের মানুষের সেখানে গোসলের অনুমতি নাই। তবে আব্বা কিভাবে যেন সেখানে প্রতিদিনই গোসলে যান, এবং একদিন না গেলে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা বাড়িতে খবর নিতে আসে এমন অবস্থা।
আব্বা একদিন বললেন তার সাথে যেতে, সাতার শিখাবেন। ধৈর্য্য বলেতে যে একটা জিনিষ আছে, তা খুব সম্ভবত ঐ সময়ে আমার আব্বার যানা ছিলো না। উনি খুব দ্রুতই রেগে যেতেন। পরে অবশ্য আব্বা উল্টা মানুষ হয়েছেন; এখন তার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিতে গেলে আপনিই অধৈর্য্য হয়ে যাবেন!
তো আব্বার সাথে গেলাম; সাঁতার দূরে থাক, ডুবে যাওয়ার ভয়ে আমি তাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে আর চিল্লাতে চিল্লাতেই তাকে মারি মারি অবস্থা।
পরে হাল ধরলেন আমার আম্মার আপন চাচী। তো নানী কোথা থেকে যেন দুইটা শুকনা নারকেল যোগাড় করে দড়ির মত অংশ বের করে নারকেল দুইটাকে বাধলেন। নানী বাড়ির পুকুরে নামলাম সাঁতার কাঁটা শিখতে। প্রথম কয়েক মিনিট গেলো সুন্দর ভাবেই। কিন্তু হঠাৎই গিট ছুটে গেলো; নানিকে জড়িয়ে ধরলাম। তাকে প্রায় ডুবাই ডুবাই করতে করতে কোন রকমে তিনি বেঁচে আসলেন। তার মৃত্যুর দিন পযর্ন্ত এই ঘটনা মনে ছিলো।
এভাবে ১৯৯৭ সাল পযর্ন্তও আমার সাঁতার শেখঅ হলো না। এবার হাল ধরলেন মামাতো ভাই (মেঝ মামার ছেলে)। উনি কোথা থেকে ট্রাকের একটা টিউব জোগাড় করেছেন; সেটা ফুলিয়ে আমাকে তাতে চড়িয়ে দিলেন। ২/৩ দিন পুকুরে যাই, আর টিউবের উপরে শুয়ে পুকুরের ভিতরে ঘুরে বেড়াই; আর মাঝে মধ্যে উনার লেকচার শুনি কি করে সাতরাতে হয়। একদিন বললেন যে উনার সকালে সময় হবে না; দুপুর ২/৩টার দিকে যেতে।
ঐ সময় সাধারণত পুকুরে কেউ থাকে না। মফস্বল এরিয়া, দুপুরে মানুষ সাধারণত খাওয়ার পরে ঘুমায়।
তো আমি টিউবে চড়ে ঘোরার লোভে গেলাম। মাঝ পুকুরে গিয়ে উনি আমাকে বললেন যে বড় একটা নিশ্বাস নাও। নিলাম।
উনি এবার টিউবটা উল্টে আমাকে ফেলে দিলেন। এবং বললেন, এ কদিন যেভাবে বলেছি, সেভাবে সাঁতরাও। বলেই উনি টিউব নিয়ে হাওয়া!
আমি চিৎকার হাত-পা দাপাদাপি করতে করতে কখন ও কিভাবে যেন পুকুর পাড়ে চলে এলাম। এক গাদা পানি গিলে অবস্থা করুন!
আমি ঐ সময়ে কাউকে "শালা" বলেও গালি দিতাম না; এটার বাচ্চা ওটার বাচ্চা বলে গালি দেওয়াতো দূরের কথা। উনাকে ঐদিন মনে মনে অনেক গুলি জিনিষের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছিলাম। পরের কয়েকদিন আর পুকুরে যাই নাই।
২/৩দিন পর হঠাৎ আব্বার সাথে সাহস করে আবার সেই ফায়ার সার্ভিসের পুকুরে গেলাম, সাঁতরালাম। সেদিনই আবার বেলা ১২টার দিকে নানী বাড়ির পুকুরে গেলাম। এবং সাঁতরালাম।
এই ভাবে সাঁতার কাটা আমার জীবনে লার্নিং এর উপর একটা প্রভাব ফেলেছিলো। যেটা এখনও আছে। সেটার ব্যাখ্যা না হয় শেষ পর্বেই দিবো।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০৬