চায়ের নেশা কখনোই ছিলো না। এখনও নাই। তবে রেগুলার চা খাই; হঠাৎ চা খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও সমস্যা হয় না।
কি অবাক বিষয়, আমরা বাংলাদেশীরা তরল জিনিষও খাই, কঠিন জিনিষও খাই, সিগারেটও খাই......! পান করা বলতে খালি মদটাকেই বোঝায়!
যে কথায় ছিলাম, সৌদী আরব আসবার পর মূলত আমার চা খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এখানে বাংলাদেশের মত অলিগলি-প্রতি রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকান নাই; তবে এরা চা খায় প্রচুর।
সৌদী আরবে এসে প্রথম যে চা মুখে নিয়েছিলাম, পুরাই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম! এই চায়ের বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে, সাধারণ চায়ের মধ্যে বুনো একটা পাতা দেওয়া হয়, যার নাম হাবাক। অসাধারণ একটা ফ্লেভার ছড়িয়ে পড়ে।
নানা নামে আরও একটা পাতা দেওয়া হয়, সেটাও বুনো, তবে সেটা মূলত মিন্ট। সেটাও সুন্দর।
তবে আমি প্রেমে পড়েছি হাবাকের। ইউরোপ আম্রিকার দেশ গুলায় যেমন মানুষ কফি দিয়া দিন শুরু করে, আমি প্রায়সই দিন শুরু করি হাবাক চা দিয়ে। দূরে কোথাও গেলে হাবাক চায়ের কোন বিকল্প নাই।
২০১৮ এ অনেক দূরের একটা শহর থেকে রিয়াদে এসেছিলাম পুরাটা গুগল ম্যাপ দেখে। গুগল সর্টকাটের নামে এমন রাস্তায় ঢুকায় দিলো যেখানে সামনে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে কিছু নাই; এবং এই কিছু নাইয়ের শুরুতে কোন সাইনও নাই যে সামনে এমন!
পুরা রাস্তা একটু পরপর গাড়ির ড্যাশবোর্ডে তাকাচ্ছি, ভয় পেট্রোল না শেষ হয়ে যায়। আর ডানে কাপ হোল্ডারটার দিকে তাকাচ্ছি, আমার হাবাক চায়ের মজুদ শেষ!
২০০ কিলোমিটার পর প্রথম যখন গ্যাস স্টেশন মিললো, পেট্রোলের পরিবর্তে আগে চা কিনলাম! চা খেলাম, চিন্তা মাথা থেকে নামিয়ে তারপর পেট্রোল।
এই হাবাকের একটা জিনিষ আমাকে অবাক করে।
মার্কেট থেকে কিনে এনে রোদে শুকিয়ে গুড়া করে রেখে দেই, কখনও বা আস্ত পাতাই রেখে দেই। শুকিয়ে কালো কুচকুচে হয়ে যায়। কিন্তু গরম চায়ের মধ্যে দেওয়ার সাথে সাথেই পাতা আবার সবুজ; এতটাই সবুজ, মনে হয় যেন এই মাত্রই ছিড়ে আনা হয়েছে।
একবার গভীর জঙ্গলে থাকা অবস্থায় হাবাকের ঘ্রাণে পাগল হবার দশা। একটু বাতাশ বয়, অমনি হাবাকের ঘ্রাণ। বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, হাবাকের ঘ্রাণ আসে কোথা থেকে। তিনি কিছু না বলে আমার মাথাটা একটু ডানে/বামে ঘুরিয়ে দিলেন। তখনই প্রথম জানলাম যে হাবাক মূলত চাষ করা পাতা নয়, বুনো পাতা।
কাপের পর কাপ হাবাক দেওয়া চা থাকলে আমি মোটামুটি একটানা ৪০০-৫০০ কিলোমিটার রাস্তা কোন রকম ঘুমের কথা চিন্তা না করেই চালিয়ে যেতে পারি।
দেশে হাবাক পাঠিয়েছি; এক ভাই আছেন, যিনি এগুলি চাষ করার একটা পদ্ধতি খুঁজতেছেন। আমার আসলেই চিন্তা হয় দেশে গেলে হাবাক কোথায় পাবো। সাথে করে নিয়ে যেতে ভয় লাগে। সৌদী এয়ারপোর্টে কোন সমস্যা না; দেশের এয়ারপোর্টে দেখা গেলো কি না কি বলে জেলে পুরে দিলো।
মনে আছে, ২০১৯ এ মেয়ের জন্য অলিভ অয়েল নিয়ে গিয়েছিলাম; দেশে কাষ্টমস কর্মকর্তা কোন ভাবে দেখতেও চায় না, শুনতেও চায় না..... বলে ২০০০ টাকা না দিলে মদ এনেছি বলে জেলে ঢুকিয়ে দিবে! হাবাক নিয়ে গেলেতো দেখা গেলো মাদক কেসে ভরে দিলো!
হাবাক নিয়ে আমি একলাই এমন পাগল? না, আরও বহু পাগল আছে। নেট ঘাটলে বেশ তথ্য পাবেন। এর উপকারীতাও অনেক। তবে সেগুলি অন্য গল্প।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯