ছোট থাকতে ধরে একটি কথা শুনেছি। মানুষ অভ্যাসের দাস। অর্থাৎ একটা জিনিষ অভ্যাস করে ফেললে মানুষ বারংবার সেটা করতে বাধ্য হয়।
ব্যবসার খাতিরে মিরপুরে এক ভাইয়ের অফিসে প্রায়ই যেতাম। প্রায়ই বললে আসলে ভুল হবে, সপ্তাহে ৭দিনের মধ্যে অন্তত ৫দিন যেতাম! উনার সাথে পরিচয় যখন, আমি থাকি কল্যানপুরে, আর উনার অফিস পশ্চিম আগারগাঁও। তখনও বিয়ে হয়নি, একটা ফ্লাট ভাড়া করে তিনজন থাকি, সবাই ছন্নছাড়া। আমার অফিস ছিলো মহাখালি ডিওএইচএস। অফিস থেকে ফেরার পথে উনার সাথে দেখা করতাম।
এরপর মিরপুর যখন শিফট করলাম, উনার অফিসও কাকতালীয় ভাবে আমার বাসার থেকে মাত্র ৫মিনিটের হাঁটা দুরত্ব চলে আসলো। যদিও ততদিনে বিয়ে করেছি, একটা ছেলে হয়েছে। তবে ছেলেকে প্রতিদিন বাইরে না নিয়ে গেলে প্রচুর কান্নাকাটি করে, তাই তাকে সাথে নিয়েই ঐ ভাইয়ের সাথে দেখা করতাম।
যাই হোক, উনার অভ্যাস ছিলো প্রচুর কোকাকোলা খাওয়া। পেপসি বা অন্য কিছু না, খালি কোকাকোলা। আমি আধাগ্লাস, একগ্লাস করে মাঝে মধ্যে খেতাম। একটা সময় বুঝতে পারলাম যে কোকাকোলা খাওয়া আমারও অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই বলে কয়েই যে কোন ধরণের সফট ড্রিংস ছাড়ান দিলাম।
৭মাস পর হঠাৎই কোন একটা অনুষ্ঠানে একজনের অনুরোধে সেভেনআপ মুখে নিলাম। মনে হলো গালের মধ্যে দুই চারটা বোমা ফুটলো! প্রচন্ড খারাপ লাগলো স্বাধটা। দুই/তিন ছোট চুমুক দিয়ে আর পারলাম। বাসায় ফেরার কি মনে করে কোকাকোলা কিনলাম, মুখে দিতেই একই রকম। যদিও আস্তে আস্তে এখন আবার ভালো লাগে, তবে সাধারণ মাসে একবারের বেশি খাই না। আর সৌদীতে আসার পরে কোকাকোলাতো খাওয়াই হয় না বলা চলে; এখানে পেপসি চলে।
---------------------
গত শুক্রবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম একটা সমস্যার জন্য। তিনি ব্লাড সুগার চেক করতে বললেন। চেক করে জানা গেলো সুগার লেভেল ১১৭। রিপোর্টে লেখা নরমাল রেঞ্জ হচ্ছে ৭৬-১৬০। ডাক্তার তবুও আমাকে বললেন সুগার কাট করতে। মাঝে একবার কিটো ডায়েট শুরু করবার পর থেকে আমি এমনেই সুগার খাই না; এমনকি সুগার আছে এমন জিনিষ বেছে বেছে চলার চেষ্টা করি। তবে প্রতিদিন সকালে আমার এককাপ কফি লাগে! তাছাড়া দিনের মধ্যে দু-চার কাপ তো খাই! অফিসে আবার চিনি ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই।
কফির অভ্যাসটা আমার এই অফিস থেকেই এসেছে। অফিসে কোনভাবে বেশ দামী একটা প্রোফেশনাল কোয়ালিটির কফি মেকার ছিলো (করনার সময় সরিয়ে ফেলেছে)। আমি আর আমার দুইজন কলিগ তাতে প্রতিদিন কফি কিনে এনে কফি বানাতাম। অফিসের কাছের স্টারবাকস এ যেখানে ১৬ রিয়ালে কফি মিলে, আমরা অফিসে ১ থেকে ১.৫ রিয়ালে তার এক কাপ কফি বানিয়ে ফেলি। সেখান থেকেই প্রতিদিন সকালে অফিসে গিয়ে কফি খাওয়ার অভ্যাস শুরু।
তো, ভাবলাম সুগার কাট করতে কফিই বাদ দিয়ে দেই। তো, গত ৬দিনে আমি আর কফি পান করি নাই (পান করি নাই বলাটা এখন কেমন অদ্ভুত লাগে, কফি খাই নাই বলাটাই সাধারণ লাগে)! সেপ্টেম্বরে আমি নতুন ডিপার্টমেন্টে মুভ করবার পর ওখানের সবাই জানে আমি কফি পছন্দ করি, তারা আমার হঠাৎ একদম কফি বাদ দেওয়ায় অবাক!
শুক্রবার ও শনিবার যেহেতু আমাদের বিভিন্ন সাইটে কিছু বাড়তি কাজ চলে, আমাকে মাঝে মধ্যে অডিটে যাইতে হয় (বাড়তি টাকা কামাইতে কার না ভালো লাগে?)। তো আজকেও গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় ফিরে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে মাথা চুলকাতে চুলকাতে রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে এনে টেবিলে রেখে কম্পিউটারের সামনে বসেছি।
ঘন্টা খানেক পরে বউ জিজ্ঞাসা করলো, তুমি আসলে কোন অভ্যাসের দাস? আমি না বুঝে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে বললো, কম্পিউটারের সামনে বসে কফি খাওয়া তোমার অভ্যাস, তুমি ঘুম থেকে উঠে কফি বানিয়েছো, অবাক হই নি। কিন্তু গত ৬দিনের কফি না খাওয়ার অভ্যাস অনুযায়ী তুমি কাপে একবারও চুমুক দাও নি, এটা বিশ্বাস করাও আমার জন্য কষ্টের!
খেয়ালে আসলো, কফি বানিয়ে টেবিলেই রেখে দিয়েছি; খাওয়া হয়নি। অনেকেই আছেন এমন, তবে আমার আসলে এমন হয়না কখনও। আমি বরং নিজের অজান্তে কখন খেয়ে ফেলি বুঝতে পারি না। বাসায় সাধারণত যে খাবার গুলি শেষ হচ্ছে না, আমার বউ তা আমার টেবিলে রেখে দেয়। আমি কম্পিউটারে কাজ করতে করতে নিজের অজান্তেই খেয়ে ফেলি।
-------------------------
আসলেই, আমি কোন অভ্যাসের দাস?
Photo by Clay Banks on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৩:১৩