somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ অভ্যাস পরিবর্তন, ও তারপর।

০৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট থাকতে ধরে একটি কথা শুনেছি। মানুষ অভ্যাসের দাস। অর্থাৎ একটা জিনিষ অভ্যাস করে ফেললে মানুষ বারংবার সেটা করতে বাধ্য হয়।



ব্যবসার খাতিরে মিরপুরে এক ভাইয়ের অফিসে প্রায়ই যেতাম। প্রায়ই বললে আসলে ভুল হবে, সপ্তাহে ৭দিনের মধ্যে অন্তত ৫দিন যেতাম! উনার সাথে পরিচয় যখন, আমি থাকি কল্যানপুরে, আর উনার অফিস পশ্চিম আগারগাঁও। তখনও বিয়ে হয়নি, একটা ফ্লাট ভাড়া করে তিনজন থাকি, সবাই ছন্নছাড়া। আমার অফিস ছিলো মহাখালি ডিওএইচএস। অফিস থেকে ফেরার পথে উনার সাথে দেখা করতাম।

এরপর মিরপুর যখন শিফট করলাম, উনার অফিসও কাকতালীয় ভাবে আমার বাসার থেকে মাত্র ৫মিনিটের হাঁটা দুরত্ব চলে আসলো। যদিও ততদিনে বিয়ে করেছি, একটা ছেলে হয়েছে। তবে ছেলেকে প্রতিদিন বাইরে না নিয়ে গেলে প্রচুর কান্নাকাটি করে, তাই তাকে সাথে নিয়েই ঐ ভাইয়ের সাথে দেখা করতাম।

যাই হোক, উনার অভ্যাস ছিলো প্রচুর কোকাকোলা খাওয়া। পেপসি বা অন্য কিছু না, খালি কোকাকোলা। আমি আধাগ্লাস, একগ্লাস করে মাঝে মধ্যে খেতাম। একটা সময় বুঝতে পারলাম যে কোকাকোলা খাওয়া আমারও অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই বলে কয়েই যে কোন ধরণের সফট ড্রিংস ছাড়ান দিলাম।

৭মাস পর হঠাৎই কোন একটা অনুষ্ঠানে একজনের অনুরোধে সেভেনআপ মুখে নিলাম। মনে হলো গালের মধ্যে দুই চারটা বোমা ফুটলো! প্রচন্ড খারাপ লাগলো স্বাধটা। দুই/তিন ছোট চুমুক দিয়ে আর পারলাম। বাসায় ফেরার কি মনে করে কোকাকোলা কিনলাম, মুখে দিতেই একই রকম। যদিও আস্তে আস্তে এখন আবার ভালো লাগে, তবে সাধারণ মাসে একবারের বেশি খাই না। আর সৌদীতে আসার পরে কোকাকোলাতো খাওয়াই হয় না বলা চলে; এখানে পেপসি চলে।

---------------------

গত শুক্রবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম একটা সমস্যার জন্য। তিনি ব্লাড সুগার চেক করতে বললেন। চেক করে জানা গেলো সুগার লেভেল ১১৭। রিপোর্টে লেখা নরমাল রেঞ্জ হচ্ছে ৭৬-১৬০। ডাক্তার তবুও আমাকে বললেন সুগার কাট করতে। মাঝে একবার কিটো ডায়েট শুরু করবার পর থেকে আমি এমনেই সুগার খাই না; এমনকি সুগার আছে এমন জিনিষ বেছে বেছে চলার চেষ্টা করি। তবে প্রতিদিন সকালে আমার এককাপ কফি লাগে! তাছাড়া দিনের মধ্যে দু-চার কাপ তো খাই! অফিসে আবার চিনি ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই।

কফির অভ্যাসটা আমার এই অফিস থেকেই এসেছে। অফিসে কোনভাবে বেশ দামী একটা প্রোফেশনাল কোয়ালিটির কফি মেকার ছিলো (করনার সময় সরিয়ে ফেলেছে)। আমি আর আমার দুইজন কলিগ তাতে প্রতিদিন কফি কিনে এনে কফি বানাতাম। অফিসের কাছের স্টারবাকস এ যেখানে ১৬ রিয়ালে কফি মিলে, আমরা অফিসে ১ থেকে ১.৫ রিয়ালে তার এক কাপ কফি বানিয়ে ফেলি। সেখান থেকেই প্রতিদিন সকালে অফিসে গিয়ে কফি খাওয়ার অভ্যাস শুরু।

তো, ভাবলাম সুগার কাট করতে কফিই বাদ দিয়ে দেই। তো, গত ৬দিনে আমি আর কফি পান করি নাই (পান করি নাই বলাটা এখন কেমন অদ্ভুত লাগে, কফি খাই নাই বলাটাই সাধারণ লাগে)! সেপ্টেম্বরে আমি নতুন ডিপার্টমেন্টে মুভ করবার পর ওখানের সবাই জানে আমি কফি পছন্দ করি, তারা আমার হঠাৎ একদম কফি বাদ দেওয়ায় অবাক!

শুক্রবার ও শনিবার যেহেতু আমাদের বিভিন্ন সাইটে কিছু বাড়তি কাজ চলে, আমাকে মাঝে মধ্যে অডিটে যাইতে হয় (বাড়তি টাকা কামাইতে কার না ভালো লাগে?)। তো আজকেও গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় ফিরে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে মাথা চুলকাতে চুলকাতে রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে এনে টেবিলে রেখে কম্পিউটারের সামনে বসেছি।

ঘন্টা খানেক পরে বউ জিজ্ঞাসা করলো, তুমি আসলে কোন অভ্যাসের দাস? আমি না বুঝে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে বললো, কম্পিউটারের সামনে বসে কফি খাওয়া তোমার অভ্যাস, তুমি ঘুম থেকে উঠে কফি বানিয়েছো, অবাক হই নি। কিন্তু গত ৬দিনের কফি না খাওয়ার অভ্যাস অনুযায়ী তুমি কাপে একবারও চুমুক দাও নি, এটা বিশ্বাস করাও আমার জন্য কষ্টের!

খেয়ালে আসলো, কফি বানিয়ে টেবিলেই রেখে দিয়েছি; খাওয়া হয়নি। অনেকেই আছেন এমন, তবে আমার আসলে এমন হয়না কখনও। আমি বরং নিজের অজান্তে কখন খেয়ে ফেলি বুঝতে পারি না। বাসায় সাধারণত যে খাবার গুলি শেষ হচ্ছে না, আমার বউ তা আমার টেবিলে রেখে দেয়। আমি কম্পিউটারে কাজ করতে করতে নিজের অজান্তেই খেয়ে ফেলি।

-------------------------

আসলেই, আমি কোন অভ্যাসের দাস?

Photo by Clay Banks on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৩:১৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×