somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুডিং খোরের মৃত্যু!

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভার্সিটিতে আমার এক ক্লাসমেট ছিলো, আহসান নাম। তার সাথে প্রথম পরিচয় হয় মোতালিব প্লাজার সামনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে পড়ে এক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো, কিন্তু মেয়ে এখন আর রাজি না। তাকে কি বুঝাবে সেজন্য অপেক্ষা করছিলো।



আহসান কোন ধরণের পাগলামী করতে পারে এই সন্দেহে তার আরও কয়েকজন বন্ধু আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো। আমি যাকে চিনি না, তাকে পাগলামী থেকে দূরে রাখার জন্য আমাকে নিয়ে যাওয়াটা ঐ মুহুর্তে আমার কাছে বড় পাগলামী মনে হচ্ছিলো; কিন্তু ইন্টারেষ্টিং কিছু হতে পারে এই আশায় চলে গেলাম।

মেয়ে আসার সাথে সে এক ধুন্ধুমার অবস্থা। মেয়ে ছেলে দুইজনই দুইজনকে কিল ঘুষি মেরে একাকার। মোতালিব প্লাজার বাইরেই পুলিশের গাড়ি থামানো, অর্থাৎ আশে পাশেই কোথাও পুলিশ ভাইয়েরা আছেন। এই ভয়ে আমি দ্রুত আহসানকে টেনে হিচড়ে এলাকা ছাড়া করালাম। রিক্সায় ধানমন্ডির পথ ধরলাম।

আহসান সবেমাত্র ঢাকায় এসেছে তখন, সে শুধু ঝিগাতলা চিনে, আর চিনে ভার্সিটির ক্যাম্পাস। তাকে ঝিগাতলায় তার মেসে নিয়ে গেলাম।সারা দিন ও রাতভর চলল নানান নাটক।

রাত ১০টায় বাসায় ফিরতে না ফিরতেই আহসানের রুমমেট কল দিলো, বললো আহসান ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে। আবার ফিরলাম তার মেসে। জানলাম ২টা ট্যাবলেট খেয়েছে, বাকি ১৮টা ট্যাবলেট তার তোষকের তলে লুকানো ছিলো! কিন্তু তার ধারণা সে মারা যাচ্ছে। তাকে আস্তে আস্তে বললাম, মরার আগে কি খেত চাও? উত্তর আসল "পুডিং"।

মেসের বাকি সবাই তখন ঘুমানোর তোড়জোড় করছে। রাত ১১টার সময় কোথাও পুডিং পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ ছিলো, কিন্তু ঝিগাতলার মোড়ের সুনামি রেষ্টুরেন্টে পাওয়া গেলো। পুডিং খেয়ে আহসান পুরাই সুস্থ। এমনকি ঐ মেয়েকেও ভুলে গেছে! সে রাতে আহসানের রুমমেট আমকে ছাড়লো না। যদি পাছে অন্য কোন সমস্যা করে বসে।

ফাস্ট ফরোয়ার্ড, আমি তখন আহসানদের মেসে থাকা শুরু করেছি। পুডিং বানানোও শিখে গেছি! কারণ এই জিনিষ দিয়ে আহসানকে করানো যায় না এমন কাজ কম আছে।

আমি খুব একটা কারও সাথে মিশি না, তার উপরে বেশী মানুষের গ্যাদারিং আমার ভালো লাগে না। এছাড়া আমার দিন শুরু হয় রাত ১০টায়। অর্থাৎ আমি ঘুরতে বের হতাম সাধারণত রাত ১০টার পর। সব সময় একলা বের হতে ভালো লাগতো না, তাই আহসানকে সাথে নিতে পুডিং ব্যবহার করা লাগতো।

ওর পুডিং প্রিতির কিছু উদাহরণ দেই।

ঘটনা ১ঃ একদিন ওর রুমমেট ওকে ক্লাসের পর কোথাও যেতে বললো, সে কোন ভাবেই যাবে না। রুমে ফিরেই ঘুম। আমি বিষয়টা জানতে পেরে বললাম, আরেহ, ও তো তোকে ঐখানে যাওয়ার পর পুডিং খাওয়াবে! ব্যাস, আহসান ২মিনিটে রেডি।

ঘটনা ২ঃ এক লোকের কাছে কিছু টাকা পাবো, তার ওয়েবসাইট ডিজাইন করেছিলাম। কিন্তু তিনি টাকা নিয়ে চরম ঘুরান ঘুরাইতেছেন। আবার তিনি তার এলাকার খুব প্রভাবশালী লোক। ওয়ার্ক অর্ডার পাবার পর যতদিনই তার অফিসে গিয়েছি, উনি প্রতিবারই টেবিলে বড় একটা ছুরি রেখে কথা বলেছেন। আহসানকে অনুরোধ করলাম আমার সাথে যেতে; সে কিছুতেই যাবে না। তাকে বললাম ঐ এলাকায় একটা রেষ্টুরেন্ট আছে, ওখানে খুব মজার পুডিং বানায়। তাও সে যাবে না! আশ্চার্য! আমি একলা যাবো ঠিক করে বাথরুমে গেছি, ফিরে এসে দেখি সে রেডি।

ঘটনা ৩ঃ একটা মেয়ের সাথে তার পরিচয় হয়েছে, ভালো ভাবও হয়েছে। ঐ মেয়েকে নিয়ে সে গেছে একটা রেষ্টুরেন্টে। কিন্তু আহসান যেই পুডিং অর্ডার করেছে, মেয়েটা ফিচ করে হেসে দিয়েছে। আহসান তার অপমান সহ্য করতে পারে, কিন্তু পুডিং এর অপমান কক্ষনো না। সম্পর্ক কাট। মেয়েেটা বর্তমানে মডেলিং করে বলেই জানি।

আহসানের বিয়ের দাওয়াত পেলাম। বিয়ের দিন কি গিফট নিয়ে যাওয়া যায় ভাবছি, বউ যেহেতু তার সম্পর্কে জানে তাই বললো পুডিং বানিয়ে নিয়ে যেতে। শেষে তাই করলাম। বিয়ের স্টেজে বসে তাকে পুডিং খাওয়ালাম। তার ভালো পরিচিত লোকজন বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও অন্যেরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো যে বর স্টেজে বসে পুডিং খাচ্ছে!

বিয়ের প্রায় বছরখানেক বাদ ঢাকায় তার বাসায় গেলাম বেড়াতে। আমার হাতে পুডিং। দরজা খুলতেই সে বললো, ভাই লুকান এইটা!

- মানে কি? পুডিং লুকাবো কেন?

- আমার বউ পুডিং সহ্য করতে পারে না!

- তো তুই ওকে সহ্য করিস কি করে?

- হয় ভাই, বিয়ে থা করলে সবই হয়!

বহু আগে "পাঠকের মৃত্যু" নামে একটা গল্প পড়েছিলাম। সেটার কথা মনে পড়ে গেলো। সে অনুযায়ীই এই লেখাটার টাইটেল দিলাম পুডিং খোরের মৃত্যু!

Photo by Jojo Yuen (sharemyfoodd) on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×