somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব চায়ের সমাহার (২) - সাই আদানি

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের কোন এক শনিবার রাত। ঠান্ডা বেশ জাকিয়ে বসেছে। শনিবার দিন আমাদের অফিস ছুটি থাকলেও আমি মাঝে মধ্যে ঐদিন ওভারটাইম করি। মূলত অফিস থেকে কাউকে না কাউকে প্রতি শুক্র-শনি ওভারটাইম নিয়ে কাজ করতেই হয়।


এইদিন দুইটিতে কাজ করার অন্যতম শর্ত হচ্ছে দুজন ক্লিনার আছে, তাদেরকে তাদের ভিলায় নামিয়ে দিয়ে আসতে হবে। কাজ শেষ হতে হতে রাত ১০টা, তাদের নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১২:৩০ বেজে যায়, তাদের ভিলা শহরের বাইরে। অন্য অনেক দিনের মত ঐ দিনও তাদের নামিয়ে ফিরছি, হাইওয়েতে তেমন গাড়ি নাই। স্পিড লিমিট ১২০ থাকলেও আমি গাড়ি চালাচ্ছি ১৪০+ এ, এ রাস্তায় সব গুলি ক্যামেরা আমার জানা, ফাইন খাওয়ার সুযোগ কম।

হাইওয়ের পাশে একটা ট্রাককে কফি/চা শপে পরিনত করা হচ্ছিলো গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই, আজকে সেটা দেখলাম চালু হয়েছে; অনেক গাড়ি দাড়িয়ে আছে। ঝিম ঝিম ধরেছিলো, চা খাওয়ার দরকার ছিলো। তাই আমিও গাড়ি পার্ক করে হাত ঘসতে ঘসতে হাজির হলাম দোকানে। চা বিক্রেতা শ্রীলংকান। হিন্দিতেই জিজ্ঞাসা করলাম কি কি চা আছে। সে এক নাগাড়ে ৫/৬ রকমের চায়ের নাম বললো, শেষে বললো সাই আদানি (আদানি চা)।

আমি তখন সৌদীতে বেশ নতুন। এখানে এসে বিভিন্ন রকম চায়ের নাম শুনেছি। কিন্তু আদানি চায়ের নাম প্রথম শুনলাম। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর গরম গরম এক কাপ সাই আদানি হাজির হলো। চুমুক দিয়েইতো আমার চোখ খুলে গেলো। এ কি! বাংলাদেশে হয়ত আমরা এটাকা মসলা চা বলতাম; তবে এটার স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

দ্রুত ফোন দিলাম আমাদের টোটোকম্পানির সদস্যদের। মজার এই চায়ের নাম তারা আগে থেকেই জানে, তবে সবখানে মজার চা বানায় না। আমার যেহেতু ভালো লেগেছে, তাই তাদেরও ভালো লাগবে এই ভরসায় সবাই ৩০/৩৫ মিনিটের মধ্যে এসে হাজির।

বছর খানেক পর্যন্ত এই চায়ের দোকানটি থেকে আমি ও আমরা চা খেতাম। আমাদের ৬ সদস্যের টোটোকম্পানির সবাই এই দোকানের চা পছন্দ করতো। এক ইয়েমেনির সাথে এই দোকানদারের পরিচয় করিয়ে দিলাম। ঐ ইয়েমেনির স্ত্রী সুন্দর মামুল বানায়। মামুল হচ্ছে বিস্কুটের মধ্যে খেজুরের পেষ্ট। সে আর এক দুর্দান্ত খাবার।

ঐ ইয়েমেনি বাসায় তৈরী মামুল এখানে রেখে যেতো, বিক্রি হলে পয়সা নিয়ে যেতো, আর লাভ ভাগাভাগি করে নিতো।

যাই হোক, সাই আদানি বা আদানি চা আমার এখনও খুব পছন্দের। যেহেতু চিনি ছাড়ান দিয়েছি, তাই রাস্তায় আর তৈরী করা হয়না। ঘরেই করি। রেসিপি ইন্টারনেটে একটু ঘাটলেই পাবেন। তাছাড়া এখানে বেশ কয়েকটা কম্পানি প্যাকেট করে বিক্রি করে, বাসায় গিয়ে গরম পানিতে ছেড়ে দিয়ে গুলিয়ে নিলেই হয়। তবে আমার এগুলি ভালো লাগে না।

বহুদিন থেকেই আমার পরিচিত সবাই জানেন যে এলাচি আমার একদম পছন্দ না। কিন্তু আদানি চা খাওয়ার পর থেকে আমি এখন বলি, আস্ত এলাচি আমার আর পছন্দ না। দিলে গুড়া করে দিতে হবে।

সৌদী আরবে এসে চা এবং কফির নতুন নতুন ধরণের সাথে পরিচিত হয়েছি। একটা দোকানে দেখেছিলাম ৮৫ রকমের চা বিক্রি করে। মূলত ভাওতাবাজি, একটা সাধারণ চায়ের মধ্যে একটা তেজপাতা ছেড়ে দিলও ওদের হিসাবে ঐটা নতুন এক রেসিপি। ওদের মূল রেসিপি মাত্র ৭রকমের।

রিয়াদে দুই-তিনটা রেস্টুরেন্টে আদানি চা খেয়ে খুব ভালো লেগেছে। এখানে নতুন কেউ আসলে তাদের ঐ রেষ্টুরেন্ট গুলির একটায় নিয়ে যাই। বাংলাদেশী-ভারতীয়-পাকিস্তানিরা খুব বেশী পছন্দ করে এই চা।

ছবিঃ Talabat

আরব চায়ের সমাহার (১) - হাবাক চা!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:১০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×