খুব সম্ভবত ২০১০ এর দিকে বাংলাদেশে ডিএসএলআর ক্রেজ শুরু হয়। হাতে একটা ডিএসএলআর না থাকলে হয় না যেন! সবাই তখন ফটোগ্রাফার।

তো, আমাকে ঠেকালো কিসে? টাকায়! টাকা নাই, ক্যামেরা নাই। টিউশনি করতে ইচ্ছা করে না তেমন। যে কয়েকটা করেছি, ছাত্র/ছাত্রীদের মায়েদের অদ্ভুত আচরণে সবকটাই ছাড়তে হয়েছে হুটহাট করে!
তবুও ক্যামেরা কিনতে হবে বলে ধরলাম। গুলশানে একটা পিচ্চিকে পড়াতাম। মেয়েটা দামী স্কুলে পড়ে ঠিকই, কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না। বিশেষ করে ম্যাথে এক্কেরে কাঁচা! মাসে ৭,০০০ টাকা দিবে চুক্তিতে পড়াতে নিলাম। ৬মাস পড়িয়ে ৪২ হাজার টাকা, আর এক ভাই থেকে ৮হাজার টাকা ধার করে ক্যামেরা কিনে ফেললাম। পরের দু-মাস পড়িয়ে দেনা শোধ করে পড়ানো ছেড়ে দিলাম।
এরপর শুধু দিন রাত ঘুরি, ক্যামেরা হাতে বা ব্যাগে নিয়ে। যা পাই ছবি তুলি! মাত্র ৩/৪ মাসের মধ্যে ক্যামেরায় প্রায় ৭/৮ হাজার ছবি তুলে ফেললাম। প্রথম দিকের একটা ছবি একা একাই চরম সুন্দর হয়ে গেলো। সেটা বাঁধাই করে এক আপার কাছে বিক্রি করলাম, নগদ ৫হাজার টাকা! এরপর যা ছবি আসে, তার কোনটাই ভালো লাগে না।
অনলাইনে টিউটোরিয়াল দেখা শুরু করলাম, এর ওর সাথে বের হওয়া শুরু করলাম, প্রতিদিন কোন না কোন এক্সিবিশনে ঢু মারা শুরু করলাম। আরও কয়েক মাসের চেষ্টায় একটু জাতে ওঠা শুরু করলাম।
ফটোগ্রাফির একটা পর্যায়ে এসে আমি আবিস্কার করলাম যে বাংলাদেশে কেউ তেমন একটা প্যানিং ফটোগ্রাফী করে না। শুরু করলাম প্যানিং ফটোগ্রাফী। প্যানিং ফটোগ্রাফির জন্য ঢাকায় অন্যতম সুন্দর জায়গা হচ্ছে লেক রোড। লম্বা একটা রাস্তা, চওড়া, দ্রুত গতিতে গাড়ি যাওয়া আসা করে। ব্যাস, প্রতিদিন লেক রোডে যাওয়া শুরু হলো। প্রচুর প্রচুর প্যানিং ফটোগ্রাফী চলতে থাকলো।
তবে আমি যে সব ছবিকে বুকে জড়িয়ে আমার ফটোগ্রাফির দিন গুলির কথা স্বরণ করি, সেগুলির মধ্যে প্যানিং ফটোগ্রাফী নেই। কিন্তু প্যানিং ফটোগ্রাফীতে এক সময় এতই এক্সপার্ট হয়েছিলাম যে দেশের কয়েকজন নামকরা ফটোগ্রাফার আমাকে একটা ফটোগ্রাফী সেমিনারে প্যানিং ফটোগ্রাফির উপরে এক ঘন্টার লেকচার দিতে সুযোগ দিয়েছিলেন!
একটা সময় এসে মানুষ বা কোন প্রাণী আছে এমন ছবি তোলা বন্ধ করে দেই। ফলে প্যানিং বাদ পড়ে যায়। প্রাকৃতিক ছবিতে মন দেই। কিন্তু প্রথমে বিয়ে, পরে চাকরী-ব্যবসা আর শেষে সৌদী আরব আসবার পর ধীরে ধীরে ছবি তোলার হার কমতে কমতে একেবারে শূণ্যে পৌছে গেছে। ক্যামেরায় ময়লা পড়ে গেছে। আগে যেখানে ঘর থেকে বের হলেই ক্যামেরা নিয়ে বের হতাম, এখন সেখানে দূরে কোন ট্যুরে গেলেও ক্যামেরা নেওয়ার কথা মনে থাকে না।
আমি কখনোই খুব ভালো ছবি তুলি নাই। আমি খুব ভালো ছবি তুলতে পারি না। তবে ছবি থেকে ইনকাম হয়েছে অনেক। পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ক্যালেন্ডার সহ স্টক ফটোগ্রাফী থেকে বেশ ইনকাম হয়েছে; যার প্রায় সবটুকুই কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।
গত ৭মাস আগে আমি হিসাব করেছিলাম যে যদি মাসে অন্তত একটি ছবি না তুলি, এমন ভাবে মাত্র ৪মাস যায়, তাহলে ক্যামেরাটা বিক্রি করে দিবো। আজকে ৬মাস হলো ক্যামেরাটা কোথায় তাও ঠিক জানি না। জানি আলমারির মধ্যে কোন এক ড্রয়ারে আছে! এতটুকুই।
শখের মৃত্যু হয়েছে বলবো না। বলবো শখ পূরণের ইচ্ছার মৃত্যু হয়েছে। এবার ক্যামেরাটা বিক্রির পালা!
Photo by Hossein Moradi on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




