২০০৮/৯ এর কথা। মেস এ থাকি। এই মেস এ উজ্বল নামে একজন ভাই ছিলেন, তিনি এখানে থাকেন তখন প্রায় ১২ বছর। ফলশ্রুতিতে তিনি এলাকায় পরিচিত। উনিই এই বাসাটা মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে আমরা ভাগেযোগে থাকি।
উনি বিয়ে করবেন বলে গ্রামে গিয়েছেন, দ্বায়িত্ব আমার হাতে। এর মধ্যে ২জন মেস ছেড়ে চলে যাবার কথা। ঝিগাতলায় বিজ্ঞাপন লাগিয়েছি। "সুন্দর মনোরম পরিবেশে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা"।
উজ্বল ভাই টাকা পয়সাওয়ালা মানুষ, ফলে উনি সংখ্যার থেকে কোয়ালিটিতে বিশ্বাসী বেশি। বেশ ঘটা করে ২/৩ জন মিলে ইন্টারভিউ নিয়েই তারপর মেসে কাউকে উঠানো হয়। ফলে মন মত মেস মেম্বার পাওয়া কঠিন। অনেকেই ফোন করে, ফোন রিসিভ করতে হয়, বাসা দেখাতে হয়, টার্মস এন্ড কন্ডিশনস বলতে হয়..... আরও কত কি।
কয়েকদিন যাবার পর রাত প্রায় ১টার দিকে একটা ফোন আসলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বেশ অল্প বয়সী একটা ছেলে জিজ্ঞাসা করলো, আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? তার গলাটা শুনে কেমন যেন লাগলো। ঐ সময় আমরা বাড়ির ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম, আড্ডা ছেড়ে অপরিচিত কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো না, কিন্তু কেন যেন কথা বললাম।
ছেলেটা প্রচন্ড একটা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সে মনে করছে সে বড় কোন একটা অপরাধ করে ফেলেছে। বড় কোন ভুল করে ফেলেছে। আত্মহত্যার দ্বারপ্রান্তে বলা চলে। তাকে মেন্টাল সাপোর্ট দেবারও কেউ নেই। আর্থিক অবস্থাও খারাপ। তাকে ফোন কাটতে বলে আমি কল ব্যাক করলাম। প্রায় সারারাত তার কথা শুনলাম। প্রায় ভোর যখন, তখন সে একটু শান্ত। তাকে বললাম উল্টা পাল্টা কিছু না করতে।
ইউল্যাবের বিবিএর ছাত্র সে। আমার বাসার কাছেই ক্যাম্পাস। তাকে বললাম দুপুরের খাবার আমার সাথে খেতে। রেষ্টুরেন্টে বসে খেতে খেতে হঠাৎই সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। আমি এসব সামাজিক সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করতে পারি না একেবারেই। যার কারণে কোন মৃতের বাড়িতেও আমি যেতে পারি না।
বেশ কষ্ট করে তাকে থামালাম। কয়েকদিন বসে ধীরে ধীরে তার সমস্যার সমাধান করলাম, আমার সধ্যের মধ্যে যতটুকু ছিলো।
আমি তখনই প্রথম আত্মহত্যা প্রবণতা নিয়ে কৌতুহলী হই। ঐ সময় বেশ লেখা পড়া করেছিলাম। একটা সংগঠনও তৈরী করেছিলাম আমরা। বেশ কিছু মানুষের সাথে ফোনে কথাবার্তা বলে তাদের কথা শুনতাম। কষ্টে থাকা মানুষের বেশীর ভাগই কারও সাথে শেয়ার না করতে পারার কষ্টে থাকে।
পরে ধানমন্ডির একজন ডাক্তার আমাদের ফোন করে কেস করার হুমকি ধামকি দিলে আমরা ঐ সংগঠনটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই।
--------------------
যাই হোক, আপনি কি কখনও এমন কোন ডিপ্রেসড মানুষের সাথে কথা বলেছেন? কথা না বলা মুখ নিয়ে শুধু শুনে যাওয়া কান নিয়ে শুনেছেন?
-------------------
আমাদের এলাকার এক বড় ভাই ছিলো, তাকে আমরা কি কারণে যেন "বল্লা" বলে ডাকতাম। ঐ ভাই আত্মহত্যা করেছিলেন। উনি আমার খুব প্রিয় মানুষ ছিলেন। তার আত্মহত্যায় আমি কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার আমি সেদিন মৃত মানুষকে হাঁটতে দেখেছিলাম! পোষ্টে বলা মেয়েটার বাড়ির বিপরীত দিকেই উনাদের বাড়ি ছিলো। আমার কেমন যেন মনে হতো উনি নিজের মনের কষ্ট গুলি কাউকে বলতে পারতেন না।
-------------------
আচ্ছা, আপনার কি কখনও এমন হয়েছে যে মনে হয়েছে যে আপনার মনের কথা না বলতে পারলে আপনি মরেই যাবেন। খুব করে খুঁজেছেন মনের কষ্টের কথা বলার জন্য একটা মানুষ, কিন্তু পাননি। হয়েছে কখনও?
Photo by Sharad Bhat on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:২৭