আমি কখনও কোন সমস্যায় পড়লে প্রথমেই সেটার সমাধান ইন্টানেটে খোঁজার চেষ্টা করি। মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করতে আমার লজ্জা লাগে। এর দুইটা কারণ হতে পারেঃ ১. আমি একটা জিনিষ জানি না, এই লজ্জা; ২. আমার কেন যেন ধারণা যে মানুষ অন্যকে সহজে শিখাতে চায় না
ইচ্ছা না থাকলেও আমাকে প্রায়সই মানুষের কাছে বিভিন্ন জিনিষ জিজ্ঞাসা করতে হয়। আমাকে এটা নিয়ে হতাশ হতে হয় প্রায়ই। কারণ যা যেটা কাজ, সে সেটা সম্পর্কেই জানে না। কয়েকটা উদাহরণ দেইঃ
১. গত বছর একটা পোষ্ট করেছিলাম আমার পরিবারের সৌদী আরবে আসা নিয়ে। সৌদী আরবে রেসিডেন্সি কার্ড করতে হয়, সেটাকে ইকামা বলে। আমার পরিবারের সদস্যরা আসবার পর আমার অফিস ট্রাই করেছিলো ইকামা বের করতে, তারা পারে নি। তাদের মিনিষ্ট্রি থেকে বলে দিয়েছে আমাকে পাসপোর্ট অফিসে যেতে, ওখান থেকে হবে। গেলাম মূল পাসপোর্ট অফিসে। ওখানে ৩/৪টা কাউন্টার ঘোরার পর জানলাম অন্য এক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। গেলাম, সেখান থেকে আর এক অফিসে, সেখান থেকে আর এক অফিসে। এভাবে ৫টা পাসপোর্ট অফিস ঘোরার পর একজন বললো, আরে, অনলাইনে ওমুক জায়গা থেকে রিকোয়েষ্ট পাঠাও, ওরা তোমাকে পেমেন্ট করতে বলবে, তখন পেমেন্ট করে দিলেই সাথে সাথে হয়ে যাবে। আর ইকামা কার্ড ঘরে বসেই পেয়ে যাবে, যাষ্ট ডেলিভারি চার্জ দেওয়া লাগবে।
এই কথা শোনার আগ পর্যন্ত অন্তত ২০জন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি, যাদের কাজই হচ্ছে ইকামা ইস্যু করা। কিন্তু কেউ প্রসেস জানে না!শেষ পর্যন্ত যার কাছে শুনলাম, তার মূল কাজ অন্য ডিপার্টমেন্টে!
২. আমার গাড়ি ৬০ কিলোমিটার স্পিডে উঠে আর সহজে স্পিড বাড়তে চায় না। এক্সেলেটর চেপে ধরে থাকলেও স্পিড বাড়ে না। যার কাছে যাই, সে বলে গিয়ার নষ্ট হয়ে গেছে! ঠিক করতে ২৫০০-৩৫০০ রিয়াল লাগবে। এদিকে আমার গাড়ির দামও এত নাই! অনলাইনে ঘেটেঘুটে পেলাম যে স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করতে হবে। টয়টা বা হায়ুন্দাই হলে নিজেই করে নিতে পারতাম। ফোর্ড গাড়ির স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করতে ম্যাকানিক লাগে। গেলাম ম্যাকানিকের কাছে, সে হেসে উড়িয়ে দিলো। বললো ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা, আর আপনি আসছেন ইউটিউব ভিডিও নিয়ে। উনাকে বললাম যে যা হয় হবে, আপনি চেঞ্জ করে দেন। চেঞ্জ করে দিলেন, গাড়ি ৪বছর হয় এখনও চলছে দুর্দান্ত ভাবে। গিয়ারে কোন সমস্যা নাই।
৩. নতুন অফিসে জয়েন করেছি। আমাদের শতখানেক ওয়েব পোর্টাল আছে। যার এক একটায় এক এক কাজ। কিছু কাজ আছে চরম ভ্যাজালের। এক কলিগ এই কাজ গুলি করছে গত ৪ বছর ধরে। যেহেতু কাজ চরম ভ্যাজালের, ম্যানেজার আমাকে বললো শিখে নিতে, এবং ঐ কলিগের সাথে সাথে করতে। কলিগ আমাকে কি কি ভূগোল পড়িয়ে কাজ দেখিয়ে দিলো। আমি মাথা নেড়ে বললাম এর থেকে সহজ সিষ্টেম অবশ্যই আছে। সে হেসে বলে নাই। কয়েক মাস পর সে ছুটিতে, আমি তখন ফুল কন্ট্রোল পেলাম। ৩দিনের মধ্যে সিষ্টেম বের করে ফেললাম যাতে ৩দিনের কাজ মাত্র ২ ঘন্টায় করা যায়, এবং নির্ভূল ভাবে!
কলিগতো ছুটি ফিরে এসে মহা বিরক্ত। সে সারাদিন বসে বসে টুকটুক করে এই কাজ করতো। ৫ কর্ম দিবসের ৩কর্ম দিবস তার এতেই চলে যেতো। এখন নানান কাজ এসেছে। প্রথমে মনে করেছিলাম সে আসলে সহজ পদ্ধতিটা জানে। পরে আামাদের কয়েকটি দেশের টিমের সাথে কথা বলে জানলাম কেউই সহজ পদ্ধতিটা জানে না। সবাইকে ট্রেনিং দিয়ে বাগিয়ে নিলাম একটা বোনাস!
৪. কয়েকদিন আগে ওমরাহ করতে যাবো, এক ওমরাহ অপারেটরকে ফোন দিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কোন পারমিট লাগবে কি না। অনলাইনে মিশ্র উত্তর পাচ্ছিলাম, তাই কল করা। সে সরাসরি বলে দিলো কোন পারমিট লাগবে না। কেমন খটকা লাগলো। আর একটু ঘেটে নিজের সহ পরিবারের পারমিট নিয়ে ওমরাহ করে ফেললাম। মক্কায় ঢোকার মুখে পারমিট শো করা লেগেছিলো। শো না করতে পারলে ঢুকতে দেয় না। এদিকে ঐ ওমরাহ অপারেটরের বাস ভর্তি লোক আসলে পারমিট নিয়ে যাচ্ছে নাকি এমনিই ঢুকতে পারছে তা সে আসলে জানে না। বললো অফিসের অন্য কেউ হ্যান্ডেল করে!
৫. ইউটিউবে একটা সমস্যা ফেস করছিলাম, ওদের কাষ্টমার সার্ভিসে কথা বলার জন্য কল ব্যাক রিকোয়েষ্ট করলাম। মহিলাকে প্রথমেই বললাম সমস্যা সমাধানে আমি কি কি করেছি। সো আমাকে এগুলি না বলে অন্য কিছু বলো। বেচারি প্রায় ৩০ মিনিট ধরে ঘুরে ফিরে আমাকে ঐ গুলিই করতে বললো। আরও ১৫ মিনিট বকবক করলো আর হোল্ডে রাখলো। তার পরিস্থিতি দেখে তাকে বললাম তুমি একটা সাপোর্ট টিকিট তৈরী করো, যাতে অন্যরা সেটা দেখতে পারে। সে বলে সে জানে না কি করে সাপোর্ট টিকিট তৈরী করতে হয়!
আরও কতক্ষণ কথা বলার পর সে বললো সে সিষ্টেম খুঁজে পেয়েছে! জিজ্ঞাসা করলাম যে নতুন কি না, সে বললো সে নাকি "এক্সপার্ট এডভাইজর", মানে বহুদিন কাজ করছে!
৬. আমাদের একটা ওয়েব বেজড সফটওয়্যারে প্রতিদিন কিছু টিউনিং করা লাগে। এরজন্য একটা টিম আছে, তারা ইমেইল ছাড়া ডিল করে না। আর সমস্যা হচ্ছে এই টিউনিংটা প্রতিদিনই করতে হয়, ২৪ ঘন্টা আগে ছাড়া করা যায় না। ফলে আমরা কখনও ইমেইল দিতে ভুলে গেলে তারাও করে না! একবারে যদি বলে আগামী এক সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন এটা করো, তারা তা মানে না। ফলে অফিসে একটা ইমেইল থেকে ডিলে সেন্ড অপশন এনাবেল করে প্রতি মাসের ইমেইল এক সাথে দিয়ে রাখতে হয়। আমি বহুবার তাদের বলেছি যে এই টিউনিং কোথাও থেকে না কোথাও থেকে ডিফল্ট ভাবে সেট করতে পারার কথা। তারা বলে তেমন কোন অপশন নাই।
বছর খানেক পর আমি যখন ঐ সেকশনের ম্যানেজার হলাম, তখন একটু পাওয়ার আসলো। অফিসে বাজেট চাইলাম ঐ সফটওয়্যারের অপশন টিউনিং করতে কোড এডিট করবার জন্য। তখন জানা গেলো যে ডিফল্ট অপশন সেট করা যায়, এবং সেখানে ৩০ এর বদলে ৪২ লিখে দিলেই আমাদের আর কোন মেইল দিতে হয় না! কিন্তু গত ৪ বছর ধরে আমরা প্রতিদিন ইমেইল করে আসছি!
-----------------
চাকরীর জন্য মানুষ যোগ্য মানুষ খুঁজে। তবে সেই খোঁজাকেই প্রায়সই প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, আসলেই কি সঠিক লোক খোঁজা হচ্ছে?
Photo by 愚木混株 cdd20 on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:১৪