আমি এই মেয়েকে সব সময় এড়িয়ে চলি। এই মেয়েকে কোন মেইল পাঠালে তা খুব সাবধানে পাঠাই। আমার কোন কাজ এই মেয়ে পরে চেক করবে হিসাব করলে খুব সাবধানে সেই কাজ করি। আলহামদুলিল্লাহ গত ৪.৫ বছর আমি সুন্দর ভাবে কাজ করেছি, সে আমার কোন ভুল ধরতে পারেনি।
উপরের প্যারা পড়ে আপনার মনে হতে পারে যে মেয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রথম যে লাইন লিখেছি, তার সাথে দ্বিতীয় লাইন যায় না। তার ভয়ে তো মানুষ সোজা হয়ে চলছে। না, সবাই তা করে না। ৯৯% মানুষ গায়ে বাধায় না তাকে।
তাহলে আমি কেন এমন করি? সেটা বলছি, তার আগে প্রেক্ষাপট বলি।
ঐ মেয়ে কালে ভাদ্রে আমার কাজ ঠিক হলো কি না হলো এমন দেখার সুযোগ পায়, আর আমি প্রায় প্রতিদিনই তার কাজের কোয়ালিটি চেক করি। সে এত পরিমানে ভুল করে যা বলার বাইরে। তাকে আমি আলাদা ভাবে সুধরানোর চেষ্টা করি। তার ভুল হলে আমি মেইল করে সবাইকে জানাই না। তাকে আলাদা ডেকে বলি কি ভুল হয়েছে। এটা শুধু তার ক্ষেত্রে না, আমি অফিসের সবার জন্যই এটা করি।
কিন্তু, ঐ মেয়ে ছেড়েও দেয় না, ছাড়ও দেয় না। সে কারও ভুল পেলে সবাইকে মেইল করে এবং গল্পের মাধ্যমে বলে বেড়ায়।
এবার আসি কেন আমি ঐ মেয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকি। কারণ, সে যদি কখনও আমার বড় কোন ভুল ধরে, এবং তারপর আমি তার কোন ভুল ধরি, সে সবাইকে বলে বেড়াবে যে আমি ইচ্ছা করে তার পিছনে লেগেছি, কারণ সে আমার ভুল ধরেছিলো! জ্বী, এমনটা আগেও একাধিকবার হয়েছে।
আর আমিও আসলে কেউ আমার ভুল ধরলে তার ভুল ধরার বিষয়ে সতর্ক থাকি, কারণ ঐ মেয়ে শুধু না, সবাই প্রায় তাই মনে করে। তবে মেয়েটা বাড়াবাড়ি করে যে এই ধরণের ঘটনাকে সে এইচআর পর্যন্ত নিয়ে যেতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করে না।
একবার তার খুব ক্লোজ বান্ধবী বলেছিলো, ও আসলে নিজের দোষ ঢাকতেই অন্যের দোষ ধরে বেড়ায়।
--------------------
এবার আসি লেখার শিরোনামে, এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখি?
ভারত চাঁদে যান নামানোর পর থেকে পোষ্টের পর পোষ্ট আসছে। তাদের অভিন্নদন জানানো থেকে আমাদের স্পারসোর প্রধানকে কটাক্ষ করা থেকে নিয়ে কেন স্পারসো আলাদা থেকে নিয়ে আমরা যে কোনদিন চাঁদে যেতে পারবো না তা নিয়ে পর্যন্ত পোষ্ট আসছে।
এর মধ্যে দেখলাম দু-চারজন ব্লগার দাবী করেছেন যে আমাদের বিজ্ঞানীরা নাকি গোস্তের টুকরার মধ্যে আল্লাহর নাম দেখা, চাঁদে সাইদীকে দেখা ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত, বা ইত্যাদিই তাদের যোগ্যতার সর্বচ্চো মাপকাঠি।
আমি জীবনে প্রথম যেদিন গোস্তর টুকরায় আল্লাহর নাম লেখা আছে কথাটা শুনেছিলাম, সেটা একজন রিক্সাওয়ালার কাছ থেকে শুনেছিলাম। এরপরও জীবনে বহুবার শুনেছি, সবই প্রায় অশিক্ষিত বা অর্ধ শিক্ষিত জনগনের কাছে শুনেছি।
কিন্তু ঐ ব্লগারদের মন্তব্য পড়ে বেশ অবাক হলাম। এইযে প্রতি বছর বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, ঢাবি, চবি, জাবি ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে এত এত ছেলে-মেয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাপড়া করে বের হচ্ছে, তারা কি তাহলে শুধু গোস্তের টুকরায় আল্লাহর নাম আর চাঁদে সাইদীকে দেখা নিয়েই ব্যস্ত? তারা কি বিজ্ঞান ভিত্তিক অন্য কোন কাজ করছে না? তাদের কি কোন যোগ্যতা নাই? অন্তত ঐ ব্লগারদের লেখা পড়ে তেমনই মনে হচ্ছে! আর তাই আমার প্রশ্ন, এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখি?
নাকি আসলে আমাদের আসল বিজ্ঞানীরা (বা বিজ্ঞান পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা) তেমন উল্ল্যেখ যোগ্য কাজ করতে পারছে না দেখে ঐ মেয়ের মত নিজেদের দোষ ঢাকতে অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিতদের ননসেন্সকে বিজ্ঞানীর কথাবার্তা বানিয়ে দিচ্ছে?
আমার বিশ্বাস বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, ঢাবি, চবি, জাবি ইত্যাদি ইত্যাদি এর ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক কিছুই করেছে, আমাদের উচিৎ তাদের কাজ গুলিকে ফুটিয়ে তোলা, তাদের সহযোগীতা করা যাতে তারা আরও এগিয়ে যেতে পারে।
আর অশিক্ষিতরা কি বললো কি না বললো সেটা নিয়ে এখানে ওখানে ঘনঘন পোষ্ট আর কমেন্ট করা আসলে "অশিক্ষত"দের কাজ বলেই মনে করি।
আরও পড়ুনঃ বেজন্মাই অন্যকে বেজন্মা বলে গালি দেয়!
Photo by Ivan Diaz on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৮