ডানা
মাঝে মাঝেই বাহারী মাছ কিনে নিয়ে আসে, বাসায় ছোট্ট কাচের জারে রাখে। আমার খারাপ লাগে যে মাছ গুলিকে বন্দী করে রাখা ঠিক না। আমি ওদের মাঝে মাঝে খাবার দেই। মাছ গুলি এগিয়ে আসে, মাঝে মাঝে কাছে গেলে মনে হয় খাবার চাইছে।
মাছের সমস্যার নিয়ে কিছু ভিডিও দেখতে দেখতে ইউটিউবে একুয়াস্কেপিং এর ভিডিও দেখলাম। একুরিয়ামে বাহারী গাছের মাঝে বাহারী মাছ দেখতে খুবই ভালো লেগে গেলো।
ঠিক করলাম ডানার জন্য একটা বড় একুরিয়াম বানাতে হবে। কিন্তু কিনতে অনেক খরচ। বড় একটা একুরিয়াম বানাতে এখানে ১৫০০-২০০০ দিরহামের ( ৩৫-৫০ হাজার টাকা) মতন খরচ পড়ে যায়।
সালাউদ্দিন ভাই বড় ঠিকাদার এখানে। শারজায় এলুমিনিয়ামের জানালা দরজা তৌরির কারখানা আছে, তার কাছে সাহাজ্য চাইলাম যে তার মিস্ত্রিরা একটা কাচের একুরিয়াম বানিয়ে দিতে পারবে কি না। তিনি বড় একটা একুরিয়াম বানিয়ে দিলেন 50 cm x 50 cm x40 cm, নিজে এসে অফিসে দিয়ে গেলেন। টাকার কথা জিঙ্গাসা করতেই বললো কিসের টাকা । বড় ধন্যবাদ দিলাম ভাইকে।
আমার ৫০০-৭০০ দিরহাম বাইচা গেলো
একুরিয়ামের ট্যাংক এর পরে আসল কাজ। কি মাছ রাখবো আর কি রকমের ডিজাইন হবে। বাপ বেটি দুইজনে মিলা ডিজাইন করতে উপুড় হইয়া শুইয়া কাজ সুরু করলাম।
ফলাফল দাড়াইলো নিজের ছবির মতন।
এখন একুরিয়ামের সাজ সজ্জার জিনিস পত্র কেনার পালা। সব মিলিয়ে ৫৮৫ দিরহাম প্রায় ১৪ হাজার টাকার জিনিস পত্র।
* কাঠের টুকরো ২ টা - দেখতে সুন্দর লাগার জন্য।
* একুয়া সলেল (মাটি) ৬ কেজি- দানাদার মাটি, আস্তে আস্তে গাছের জন্য প্রয়োজনী পুস্টি দেবে।
* সাদা বালি ১ কেজি- সামনে দেখতে ভালো লাগা জন্য।
* পানির ফিলটার ১টা - ঘন্টায় ২০০ লিটার পানি ফিল্টার করতে পারে। শব্দহীন।
* পানির হিটার ১টা- ২৮ ডিগ্রি সে তাপে মাছ ভালো থাকবে তাই সব সময় চলবে হিটার।
* গাছ লাগানোর জন্য চিমটা ১ টা - লম্বা আকৃতির।
* ভালো ব্যাক্টেরিয়া তৌরির জন্য মিশ্রন ১ বোতল- ১০ মিলি প্রতি ২৫ লিটার পানির জন্য।
* এলইডি লাইট ১ টা - রং বদলানো যায় উপরে লাগানোর জন্য।
* সুপার গ্লু ( একুরিয়ামের জন্য আলাদা পাওয়া যায়) ১ টা।
মানুষের সাথে খাতির থাকলে অনেক কাজে লাগে। একুরিয়াম দোকানের লোকের সাথে খাতিরের জন্য প্রায় ৩০০০ টাকা ছাড় দিলো জিনিসের গায়ে লেখা দাম থেকে। আবার ৩ রকমের গাছ ফ্রি দিয়ে দিলো।
এবার সবকিছু সেটআপ করার পালা। প্রথমে ভেতর বাইরে কাচের দেয়ার গুলি ভালো করে পরিস্কার করে নিলাম। গাছের টুকরো গুলি মাঝ খানে রাখলাম। কাঠির টুকতো যেন ভেসে না জায় তাই পাথরের টুকরা সুপার গ্লু দিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে। আমি প্রথমে লাগাইনি তাই পানি দেবার পরে একটুকরা ভেসে উঠিছিলো পরে সুপার গ্লু কিনে এনে পরের দিন লাগিয়েছিলাম।
আমাদের করা ডিজাইনের মতন কাঠ পেলাম না, যেটা কাছাকাছি আসলো সেটাই নিলাম।
তারপরে একুয়াসয়েল দিয়ে মেঝেটা বানাতে হবে, আমি দুটা পাহাড়ের মতন উচু করেছি, পেছনে একটু বেশি মাটি দিয়েছি গাছ লাগানোর হন্য। সামনে কম দিয়েছি যেখানটাতে ফাকা থাকবে।
ফিল্টার, হিটার লাগিয়ে আস্তে আস্তে পানি দিয়ে ভরতে হবে। পুরো ভরে নিয়ে ভালো ব্যাক্টেরিয়ার মিশ্রন ২০ মিলি দিয়ে দিলাম।
তারপরে ২৪ ঘন্টা পরে পানি পরিস্কার হতে শুরু করলে ডানা আর শারমিন মাছ এই একুরিয়ামে দেবার জন্য অস্থির হয়ে গেলো।
তারপরে প্রথমে একটা ব্যেটা ফিস দিলাম, বেচারা খুবই খুশি, আগের কাচের জারে চুপচাপ থাকতো, এখানে সব জায়গা ঘুরে দেখতে লাগলো।
কয়েক ঘন্টা পরে বাকি মাছ গুলি দিয়ে দিলাম। গাপ্পি এবং টেরা আর সাকার ফিস দিয়ে দিলাম।
আপাতত কাজ শেষ, গাছ, মাছগুলি পুরোপুরি সেট হতে কয়েক মাস সময় লাগবে।
ইনিস্টাগ্রাম ভিডিও:-
https://www.instagram.com/reel/Ce3C4BzDd4e/?utm_source=ig_web_copy_link
বছর খানেক পরের ভিডিও
https://www.instagram.com/p/CrGJkLqOrnt/
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩