somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবে যাবো পাহাড়ে আহারে _ রাস আল খাইমা ভ্রমন ০২

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডানা এখনো বাংলা পুরোপুরি শিখে নি। সেদিন জিঙ্গাসা করে বাবা ১ সপ্তাহ মানে কয় দিন? বলি ৭ দিন, seven days. বাড়িতে আমরা ইংরেজী কথা বলিনা, তাই ডানার বাংলা বলতে পরে পুরোটাই কিন্তু এখনো কিছু কিছু শব্দ বুঝতে ইংরেজী অর্থ জিঙ্গাসা করে। ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা খেয়ে রওয়ানা দেবো কিন্তু ডানার নাস্তা খেতে দেরি হওয়ায় বের হতে হতে ১২টা বেজে গেলো।


রাস আল খাইমা যেতে ১ ঘন্টা ২০ মিনিটের মতন লাগে, দুবাই থেকে ৬১১নং রাস্তা ধরে ১৪০ কিমিতে গাড়ী চালানো যায়। কিন্তু ১৪১ কিমি হইলে ক্যামেরা ফোটুক তুইলা ফেলে আর খরচা ২০ হাজার টাকা। গত বছর ৩টা ফুটুক তুলছিলো আমার :((

আমিরাতের রাস্তায় লং ড্রাইভে গাড়ী চালানো খুবই মজা। ক্রুজ কন্ট্রলে দিয়ে বইসা থাকেন ঝামেলা নাই। চারপাশে মরুভুমি, দুরে পাহাড় দেখতে খুবই ভালো লাগে।




পথে শারজা যাত্রা বিরতি নিলাম, গাড়ীর হেডলাইট ঠিক করিয়ে আবার রওনা দিলাম। শারজাতে গাড়ীর গ্যারাজ ব্যবসা অনেকটাই বাংলাদেশীদের হাতে। খরচাও দুবাইয়ের চেয়ে অনেক কম। নয়শেদ ভাই বন্ধু মানুষ, তার গ্যারাজ থেকেই সব সময় কাজ করাই। উনার মতন মাইডিয়ার মানুষ আমিরাতে কমই পেয়েছি। পুরানো গাড়ী চালাই কিন্তু কাজের মধ্যে শুধুই ইন্জিন ওয়েল পাল্টানো ছাড়া অন্য কিছু খুব একটা করতে হয় না।

গাড়ীতে উঠে শারমিন দেয় লম্বা ঘুম, আমি আর ডানা গল্প করি আর গাড়ী চালাই। রাস্তার পাশে বিভিন্ন জিনিস দেখাই, আমি যা দেখি তুমি তা দেখো লেখি? নতুবা মোবাইলে গেম খেলতে চায়।

আমরা যেটা আমি যা দেখি তুমি তা দেখ? ওরা স্কুলে বলে... I Spy with my Little Eye... :)

উম্ম উল খইয়ন পার হবার পরে রাস্তায় পাশে অনেক উটের খামার আছে, ডানা খুবই খুশি উট চড়াতে দেখে...

হোটেলে পৌছাবার আগে পথে লাঞ্চ করলাম আল সাদ্দাহ রেস্টুরেন্টে :
মান্দি, আফগানী রুটি, ডাল...



মান্দি আমাদের বিরিয়ানির মতনই। কিন্তু কম মসলা দিয়ে করা। মান্দির সাথে যেই সুপ টা করে সেটা খুবই সুস্বাদু, মাংস রান্নার সময় যে স্টোক তৌরি হয় সেটা দিয়েই সুপ এবং মান্দি রাইস রান্না করা হয় বলে খুবই সুস্বাদূ হয়।

৩টার দিকে আমরা হোটেলে গিয়ে উপস্হিত হলাম। হোটেল একটা ক্যাম্পসাইটের মতন, বিভিন্ন রকমের তাবু আছে বিচের একদম পাড়ে। আমরা ফ্যামিলি ডিলাক্স তাবু নিলাম। ১৪ ডিসেম্বর তাই টুরিস্ট একটু কম। ২০ তারিখ থেকে সব হোটেলই পর্যটকে পূর্ন হয়ে যাবে। চেক ইন করার পরে আমাদের গল্ফ কার্ট দিয়ে আমাদের তাবুতে নিয়ে গেলো। পরিচয় হলো বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে, উনি আমাদের সব কিছু ঘুরে দেখালেন।


হাতের বা দিকে আমাদের তাবু।

তাবু থেকে বিচ মাত্র ৫০ মিটার হবে।

Longbeach Campground এ সকালের নাস্তা সহ ৪৩০ দিরহাম ( ১৪৬২০টাকা) নিয়েছিলো।

আমরা তাবুতে ব্যাগ রেখে রওয়ানা দিলাম জাবেল জাইস পাহাড়ের দিকে।

জাবেল জাইস আরব আমিরাতের সবচেয়ে উচু পর্বত। ৬৩৪৫ ফুট উচু, দুবাইয়ে তাপমাত্রা যখন ৪৯ ডি:সে: থাকে ঐখানে তখন ১৫-২০ডি: । অনেক দিন থেকেই ইচ্ছা ছিলো জাবেল জাইসে যাবার। এখানে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীপ লাইন আছে ৯২৯১ ফুট লম্বা এবং সর্বচ্চ গতি ১৫০ কিমি: পযন্ত যায়। এর টিকিটের দাম ১৯০০০ টাকা। কিন্তু যেই দৃশ্য দেখা যায় তাতে অবশ্যই পয়শা উসুল হয়ে যায়।

হোটেল থেকে প্রায় ৬০ কিমি চুড়ায় কিন্তু ৩০ কিমি পাহাড়ের রাস্তা। পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ী আস্তে চালাতে হয়, সাবধানে চালাতে হয়। কিন্তু আমার চারপাশের পাহাড় দেখতে ইচ্ছা করে।



আমাদের গন্তব্য আমিরাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট 1848 by Puro, আগে থেকে বুকিং করে আসতে হয় নতুবা জায়গা পাওয়া যায না। অবশ্য ভীড় কমাতেই এই ব্যবস্থা করেছে বলেই আমার মনে হয়। ওদের ওয়েব সাইটে বলা আছে ২৫০ দিরহাম মিনিমান খরচা করতে হবে অর্থ ৮৫০০টাকা । ভাবলাম জীবনে একবার পুরো তে শখ পুরন না হয় করলাইমই।



দুবাইতে তাপমাত্রা ছিলো ২২-২৫ ডিগ্রী। রাস আল খাইমা শহরে ২১ ডিগ্রি। কিন্তু জাবেল জাইসে তখন সম্ভবত ১০ডিগ্রী। আমরা গাড়ী থেকে বের হওয়া মাত্রই সবাই প্রচন্ড ঠান্ডায় কাপতে শুরু করলাম। তাড়াতাড়ী গাড়ীর পেছনের রাখা ব্যাগ থেকে গরমের পোষাক, মাংকি টুপি পড়ে দৌড়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে গেলাম। এতো ঠান্ডা যে বাইরে বসা সম্ভবনা। আমরা জানলার পাশে বসলাম।
আমি আর ডানা বাইরে গিয়ে ছবি তুললাম, ভিডিও করলাম।



ইন্সটাগ্রামের ভিডিও দেখতে পারেন।
https://www.instagram.com/reel/C06p7PevPGF/?utm_source=ig_web_copy_link&igsh=MzRlODBiNWFlZA==

এতোই ঠান্ডা যে বাইরে বেশিক্ষন থাকার উপায় নাই। আমরা খাবার ওর্ডার দিলাম।


কালামারি/ স্কুইড রিং আর মিক্সড সী ফুড সুপ সাথে ডেট কেক।

খেতে খেতে মনে হলো বাইরে মেঘে সব কিছু ঢেকে যাচ্ছে। ভিডিওর শেষে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন যে একটা টাওয়ারের দিক থেকে মেঘ আসছে। ১০ মিনিটের মধ্যেই এই মেঘ আমাদের ঢেকে ফেললো। সব কিছুই অন্ধকার হয়ে এলো।

চারিদিকে কুয়াশার মতন, কিন্তু এটা মেঘ। একটু পরে শুরু হলো বৃস্টি। বড় বড় ফোটার বৃস্টি, প্রায় ১৫ মিনিট টানা বৃস্টির পরে থামলো।

বৃস্টিরপরে মেঘে ঢাকা সবকিছু।
https://www.instagram.com/reel/C07FGXIvAzG/?utm_source=ig_web_copy_link&igsh=MzRlODBiNWFlZA==

বৃস্টির কমার পরে নিচে নামার পালা। রেস্টুরেন্টের মানুষেরা বললো রাস্তায় বন্যার সমস্যা হবেনা। আমরা রওয়না হলাম।
নামার পথে জীবনের অন্য রকমের ড্রাইভিং এর অভিঙ্গতা হইলো। সেই গল্প সামনের পর্বে....

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২২
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×