somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজেকে মানুষ ভাবতে ভালো লাগছে আজ

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সন্ধ্যায় নাস্তা করার জন্য একটা ফাস্টফুডে গিয়েছিলাম । রিক্সা থেকে নেমেই দেখি একটা বাচ্চা , বয়স খুব বেশি হলে ৯-১০ বছর হবে । এই শীতে আমি যেখানে জ্যাকেট , জুতা – মোজা পড়ে অস্থির সেখানে এই বাচ্চাটি কেবল একটা হাফ গেঞ্জি আর একটা ময়লা হাফ প্যান্ট পড়ে আছে । প্যান্টটা অগোছালোভাবে তার পেটের নিচের দিকে কোন ময়লা ফিতা দিয়ে বাধা । সে শীতে কাঁপছে আর ক্রমাগত চেষ্টা করছে তার প্যান্টটাকে টেনে একটু বড় করতে , যাতে শীত একটু কম করে । তার দৃষ্টি ফাস্টফুডের স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল ভেদ করে সুন্দরী ললনার ধোঁয়া তোলা ফ্রাইড চিকেনের দিকে । নিজের ভেতরে এক সূক্ষ্ম অপরাধবোধ কাজ করলো , বাচ্চাটার জন্য সত্যিই খারাপ লাগছিল । মাথায় একটা লাইনই ঘুরছিল – “ জন্ম আমার আজন্ম পাপ “ ; হয়তো এই বাচ্চাটিরও তাই মনে হচ্ছিল ।
বাচ্চাটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম – “ কি নাম তোর ? “
বাচ্চাটি প্যান্ট টেনে বলল – “ অপু “
আমি বললাম – “ অপু বিশ্বাস? ঠান্ডা লাগে না তোর , নাকি তুই অপু বিশ্বাসের জিরো ফিগার দেখাচ্ছিস ?”
ও বলল – “ হুম শীত লাগে কিন্তু কাপড় নাই “
সত্যিই শুনে খুব খারাপ লাগলো । যে দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরই পরিবারের চার সদস্যের জন্য চারটা গাড়ি লাগে সেখানে একই দেশের নাগরিক হয়ে এই বাচ্চাটির শীত থেকে বাঁচার জন্য সামান্য একটা গরম কাপড় নেই ।
আমি বাচ্চাটিকে বললাম – “ এখানে কি করস ?”
বাচ্চাটি কিছু বলল না ( তার দৃষ্টি তখনো সুন্দরীর চিকেনের দিকে )
জিজ্ঞেস করলাম – “ দুপুরে খাইছিস ?”
- “না”
- “ক্যান বাসায় রান্না হয় নাই?”
- “না , বাসা নাই”
- “ঘুমাস কই ,তোর মা – বাবা কই থাকে”
- “মা ভিক্ষা করে , বাপ কই থাকে জানি না আর ঘুমাই বাসস্টান্ডের বেচ্চিতে “
আমার কিঞ্চিৎ সন্দেহ হল এই বাচ্চার বাবা আরেকটা বিয়ে করে ভাগছে তাই সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম । বাচ্চাটি কোন উত্তর দিল বা । বুঝলাম সে এই প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যেতে চায় । তাকে আর এই ব্যাপারে ঘাটলাম না ।
-“টাকা আছে তোর কাছে?”
-“আছে” বলে সে কিছু খুচরা টাকা পকেট থেকে বের করলো ।
-“টাকা আছে তো দুপুর থেকে না খ্যায়া আছিস ক্যান?”
-“রাতে শীত করে তাই একটা কম্বল কিনমু”
-“এখানে কেউ খেতে দেয় না?”
-“না , খালি পিপসির ( পেপসির ) খালি বোতল দেয় , ওইখানে যা থাকে তাই খাই”
-“কেউ আর কিচ্ছু দেয় না !!!”
-“না”
-“চাইছিলি?”
-“হুম , উই আফার কাছে চাইছিলাম”
তার আঙ্গুল সেই সুন্দরীর দিকে
-“কি কয়?”
-“কইছে মাফ কর”
হঠাৎ করে জানিনা কেন মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল । আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে ভেতরে গেলাম । বাচ্চাটাকে দেখার সাথে সাথে একজন বয় এগিয়ে এসে বাচ্চাটিকে ধমকাতে লাগলো । আমি বললাম- “ও আমার সাথে এসেছে”
বয় বলল – “সারাদিন এরা জ্বালায় মারে , এদের জন্য কাস্টমার আমাদের সাথে রাগ করে “
আমি বললাম –“এখন ও আমার সাথে এসছে , ও আমার গেস্ট আর আপনি বা আপনারা তার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে পারেন না । আমি নিশ্চয় আপনাদের কাছে টাকার বিনিময়ে খাবো আর এও খাবে ।“
আমি বাচ্চাটিকে সেই সুন্দরীর পাশে বসালাম আর আমি পাশের টেবিলে । সুন্দরী যেন ভুত দেখছে এভাবে তাকালো আর বাচ্চাটিকে বলল – “ এই সর সর ...”
বাচ্চাটি কি করবে বুঝতে পাড়ছে না ।
আমি বললাম –“ সিস্টার ও এখানেই বসবে । আপনি যেমন টাকা দিয়ে খেতে এসেছেন , ও ও এসেছে ; আপনি যত টাকা বয়কে বকশিস দেবেন , ও ও তাই দেবে ; হয়তোবা আপনার থেকে বেশিই দেবে “
সুন্দরী বলল – “ আজিব তো “
- “ হুম , আজিব “
সুন্দরী ম্যানেজার , বয় – টয় কে ডেকে অস্থির । তার কথা একটাই এই বাচ্চা তার পাশে বসবে না । আমারও জিদ আমি এই বাচ্চাকে এই মেয়ের পাশে বসাবোই । মানুষজন যোগার হয়ে গেল , সবাই আমার বিপক্ষে । তারা আমার কোন কথাই শুনবে না , পারলে বাচ্চাটিকে মেয়েটির পাশে বসাবার অপরাধে আমাকে গণধোলাই দেয় । সেই মুহূর্তে ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে বললাম রিপোর্টার । যারা যারা আমার বা এই বাচ্চাটির বিপক্ষে তারা তারা তাদের নাম ,পরিচয় বলে বলুন কি বলতে চান । পকেট থেকে মোবাইল বের করে রেকর্ডিং চালু করলাম , কয়েকটা ছবিও উঠালাম । এতে কাজ হল সবাই আমতা আমতা করছে । একজন জিজ্ঞেস করলো –“কোন পেপার?”
আমি একটা পেপারের নাম বললাম ( ফেসবুকে পেপারের নামটা বলছি না , এতে হয়তো সমস্যা হতে পারে) আর পেপারের নাম দিয়ে কি করবেন , পেপারে নিজের ছবি দেখলে এমনিতেই চিনবেন । একরকম বিদ্রোহ করেই বাচ্চাটিকে আমি ওই মেয়েটির পাশে বসালাম , বয়কে বললাম ওই আপু যা যা অর্ডার করেছে তাই এই বাচ্চাটাকে দাও । মেয়েটি চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল – “ হ্যালো মিস্টার এটা কি ঠিক হল ?”
আমি বললাম – “ আপনি যখন এই বাচ্চাটির সব কথা শোনার আগে “মাফ করো” বলে এসে খাওয়া শুরু করেছিলেন তখন কি সেটা ঠিক ছিল ?”
তারপর আর কোন ঝামেলা হয়নি । বাচ্চাটি অনেক তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছে । কোক খেয়ে ঢেঁকুর তুলতে গিয়ে চোখে পানি এসেছিল তার । নিজেকে আজ মানুষ ভাবতে খুব ইচ্ছা করছে । হয়তো আমি এটা করার জন্য মিথ্যা বলছি কিন্তু এই মিথ্যা বলার জন্য আমার মাঝে আজ সামান্য অপরাধবোধ নেই । খাওয়া শেষে আমি বাচ্চাটির মুখে যে হাসি দেখেছি তাতে মনেহচ্ছে এই জীবন আমার সার্থক । সত্যিই আজ নিজেকে অনেক বড় মনেহচ্ছে ।
আমার সামর্থ্য খুব সীমিত , আমি এই ধরনের বাচ্চাকে হয়তো একদিন খাওয়াতে পারি কিন্তু যাদের সামর্থ্য থাকার পরও সামান্য দুইটাকা দিতে বাধে আমি তাদের মানুষ বলি না আর বলবও না । আমার উদ্দেশ্য ছিলনা মেয়েটাকে এভাবে অপদস্ত করার কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম যাতে এই বাচ্চাটাকে মানুষ ভাবা হয় , এই বাচ্চাটাও তাদের কাতারে বসতে পারে এটা বুঝানোর , তাই মিথ্যা বলেছি । আমার মনেহয় আজ ওই ফাস্টফুডের সবাই এই জিনিসটা মাথায় রাখবে ।
সত্যি আজ যদি আমি গণধোলাই খেতাম তাহলে আমার এতটুকু খারাপ লাগতো না , হয়তোবা শারীরিক কষ্ট হতো কিন্তু মানসিকভাবে এতটুকু কষ্ট পেতাম না ।
সত্যিই নিজেকে মানুষ ভাবতে ভালো লাগছে আজ ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×