somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাইরাসের সংক্রমণেই কি মৃত্যু হয়? অ্যান্টিবডি কিভাবে ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে?

২৮ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাইরাস সংক্রমিত হলে মৃত্যু হতেও পারে নাও হতে পারে তা নির্ভর করে ভাইরাসের ধরণের উপর আর মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষা কোষ অ্যান্টিবডির সক্ষমতার উপর। ভাইরাস এবং অ্যান্টিবডির যুদ্ধে যদি ভাইরাস জয়লাভ করে তাহলে মানুষের মৃক্তু ঘটার সম্ভাবনা থেকে থাকে, আর যদি অ্যান্টিবডি জয়লাভ করে তাহলে মানুষ আরোগ্য লাভ করবে। এই যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধক্ষেত্র, মানে মানুষের শরীর কিছুটা বা অনেকখানি অসুস্থ বোধ করে থাকে।

দুই দলের মধ্যে যখন যুদ্ধ হয় তখন কেউ জয়ী হয় আর কারো পরাজয় ঘটে, মাঝখান দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের একটু বিরক্তির কারণ ঘটে বা কষ্ট হয়। ধরি মানুষের শরীর একটি যুদ্ধক্ষেত্র, আর ভাইরাস এবং অ্যান্টিবডি হচ্ছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। এখানে অ্যান্টিবডি হচ্ছে পাহারাদার, যার কাজ হচ্ছে সবধরনের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণকে প্রতিহত করা। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া যখন আক্রমণ করে তখন অ্যান্টিবডির সাথে যুদ্ধ শুরু হয়, এই যুদ্ধ চলাবস্থায় মানুষ একটু খারাপ অনুভব করে, যেমন সর্দি কাশি, হাঁচি বা জ্বর ও হতে পারে। যখন অ্যান্টিবডি বিজয়ী হয়ে যায় তখন মানুষও সুস্থ অনুভব করে, আর ভাইরাস জয়ী হলে মৃত্যুবরণ করে বা শরীর আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে মানুষের শরীরও ততক্ষণ খারাপ থাকবে।

মানুষের শরীরে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঘটে থাকে, আর অ্যান্টিবডি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদেরকে কোষের ভেতরেই ঢুকতে দেয় না, বাহির থেকেই বিদায় করে দেয় বা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ভাইরাস যদি পূর্বপরিচিত থাকে, যদি আগে কখনো আক্রমণ করে থাকে তাহলে অ্যান্টিবডি বুঝে যায় আরে এতো পুরনো শত্রু, তখন ওইসব ভাইরাসকে ঢুকতেই দিবেনা। পরিচিত ভাইরাসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখে, যেমন গুটি বসন্তঃ একবার কারো হলে তার আর কখনোই হয় না। আবার অপরিচিত ভাইরাস যদি দুর্বল প্রকৃতির হয় তাহলেও অ্যান্টিবডির সাথে পেরে উঠে না, হয় ওই ভাইরাসকে ঢুকতে জায়গাই দিবে না অথবা একটু যুদ্ধ করেই শেষ করে দিবে, যার কারণে হয়ত একটু হাঁচি কাশি, শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু ভাইরাস যদি হয় সম্পূর্ণ অপরিচিত এবং শক্তিশালী, তখন সে আক্রমণ করবেই আর অ্যান্টিবডিরও একটু বেগ পেতে হয় যুদ্ধে জয়লাভ করতে। এমন একটি ভাইরাসই এই করোনাভাইরাস।

এই অ্যান্টিবডিই হচ্ছে মানুষের ইমিউন সিস্টেম, যার ইমিউন সিস্টেম যত শক্তিশালী ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হবার সম্ভাবনা তার তত বেশী। করোনাভাইরাসে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ বয়স্ক এবং অসুস্থরা মারা যাচ্ছে, কারণ হচ্ছে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম তাদের শরীরে নেই। আবার দেখা যাচ্ছে যে অনেকে ভালোও হচ্ছে, কারণ তাদের অ্যান্টিবডি ভাইরসকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে বলে। ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে সাধারণ ফ্লু ভাইরাসেও অনেকে মারা যায়। আমরা মাঝে মধ্যে দেখি সামান্য সর্দি কাশিতে অনেককে মারা যেতে, বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধদেরকে।

শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম ছাড়াও কারো যদি পূর্বে থেকেই শরীরে কোন রোগ ব্যাধি থেকে থাকে তাহলেও সমস্যা। যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধরত অবস্থায় যদি বাহির থেকে কেউ আক্রমণ করে তাহলে ওই যুদ্ধে জয়ী হওয়াটা কষ্টসাধ্য বা অনেকক্ষেত্রে অসম্ভব, কারণ সৈন্যরা এমনিতেই যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত, এর মধ্যে বাহিরের আক্রমণকে ট্যাকল দিতে পারে না
। তৃতীয় পক্ষ এক্ষেত্রে যদি পূর্ব পরিচিত অথবা দুর্বল প্রকৃতির হয় তাহলে হয়ত অসুবিধা হয় না। যেমন কারো ডায়াবেটিক বা হার্টের সমস্যা থাকাবস্থায় যদি ফ্লু ঘটিত সর্দি কাশি হয় তাহলে হয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকা যায় কিন্তু, করোনাভাইরাসের মত সম্পূর্ণ আনকোরা, দুর্বোধ্য প্রতিপক্ষ হলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পেলাই লাগে।

যুদ্ধে জয়ী হতে অনেকসময় বাহিরের সাহায্যের দরকার হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি অ্যান্টিবডিকে সহায়তা করার জন্য মাঝে মধ্যে বাহির থেকে সাহায্য প্রেরণ করা হয়। এই সাহায্যকে আমরা বলি অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিবায়োটিক। অনেক ভাইরাস একটু বেশিই শক্তিশালী যার কারণে অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিবায়োটিক এর এর দরকার পড়ে। আবার অনেক ভাইরাসের জন্য আগে থেকেই প্রতিরোধক সৈন্য বা দেয়াল করে রাখা হয় যাতে ভাইরাসকে কোষের ভেতরে আসার আগেই দূর করে দেয়া হয়, এই প্রতিরোধক সৈন্য বা দেয়ালই হচ্ছে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস বা ভ্যাকসিন কোনটাই এখনো না থাকার কারণেই এত দুশ্চিন্তা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×