somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

⌂ ভ্রমণ » ক্যাম্পাস » রাজশাহী ■ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৬৭ পেরিয়ে ৬৮তে পদার্পন

০৭ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গতকাল ৬ জুলাই ছিল ৬৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস। নানান চড়াই - উৎরাই পেরিয়ে সোমবার (৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়টি ৬৮ বছরে পদার্পণ করেছে। উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র শাহ মখদুমের স্মৃতিবিজড়িত গঙ্গা-পদ্মা বিধৌত রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল ব্রিটিশ শাসনামলের শেষদিক থেকেই। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়।
এ ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার পুরোভাগে ছিলেন আলহাজ আবদুল হামিদ, ইদরিস আহমদ, প্রভাস চন্দ্র লাহিড়ী, খোরশেদ আলম, আনসার আলী, আবদুল জব্বার প্রমুখ। আন্দোলন ক্রমে জোরদার হতে থাকে।


সুর্বণ জয়ন্তী টাওয়ার ১৯৫৩ – ২০০৩

তীব্র আন্দোলনের একপর্যায়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ জন ছাত্রনেতা। সরকার তখন বাধ্য হয়ে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় প্রেরিত ডেলিগেশনের সঙ্গে সংলাপ করতে বাধ্য হয়। ডেলিগেশন সদস্যদের মধ্যে আবুল কালাম চৌধুরী ও আবদুর রহমান ছিলেন উল্লেখযোগ্য।


ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কিছুটা ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। এ সময় আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ। ১৯৫৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভুবন মোহন পার্কের জনসভার বক্তব্যে মাদার বখশ সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা না হলে উত্তরবঙ্গকে স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে বাধ্য হব আমরা। সারা দেশে এ বক্তব্যে তোলপাড় পড়ে যায় এবং সরকারেরও টনক নড়ে।


অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। একই বছরের ৬ জুলাই প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ১৬১ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ১৯৫৩-৫৪ সেশন থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রথমে ক্লাস শুরু হয় রাজশাহী কলেজে। দাফতরিক কাজ শুরু হয় পদ্মাতীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক নীলকুঠির উপরতলায়। রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে ছাত্রাবাস ও লালকুঠি ভবনে ছাত্রীনিবাস স্থাপন করা হয়।


বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

বর্তমান কাম্পাসের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৫৮ সালে এবং ১৯৬৪ সালের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিস ও বিভাগ মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। সাড়ে তিন বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে নয়নাভিরাম এ ক্যাম্পাস গড়ে ওঠে অস্ট্রেলীয় স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়।


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঘাতক বাহিনীর হাতে প্রাণ দেওয়া শহীদদের গণকবর

পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শোষণ-নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে যখন পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল, সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনরত ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ থেকে ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই বর্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমান, মীর আবদুল কাইয়ুম, সুখরঞ্জন সমাদ্দার। স্বাধীন বাংলাদেশেও সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।


১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। ১০টি অনুষদের অধীনে ৫৯টি বিভাগ, অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪১টি এবং উচ্চতর গবেষণা ইন্সটিটিউট ৫টি। ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল ১১টি আর ছাত্রীদের জন্য ৬টি। আন্তর্জাতিক মানের একটি ডরমেটরি আছে উচ্চতর গবেষণারত শিক্ষার্থীদের জন্য। জ্ঞান সৃজন ও বিতরণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরন্তর অবদান রেখে চলুক প্রাণের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এটাই প্রত্যাশা।


সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন, রাখছেন। দীর্ঘ এ সময়ে রাবি তৈরি করেছে ভাষা বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ আবদুল করিম, তাত্ত্বিক ও সমালোচক বদরুদ্দীন উমর, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, মাসুম রেজা ও জাতীয় ক্রিকেটার আল আমিন হোসেনদের মতো অসংখ্য গুণীজনকে।



বিরূপ আবহাওয়ায় ছাতা নিয়ে সবুঝ ক্যাম্পাসে ঘুড়াঘুড়ির স্পৃহা


সাবাশ বাংলাদেশ ভাষ্কর্য


শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন


স্ফুলিঙ্গ (শহীদ শামসুজ্জোহা স্মৃতি ভাষ্কর্য)


কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশ গেইট


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন


একনজরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানচিত্র

রাজশাহী ভ্রমণের অন্য দর্শনীয় স্থান সমুহঃ
কারুকাজময় প্রাচীন গোবিন্দ মন্দির
সুলতানি স্থাপ্যতের রত্ন
এশিয়ার বৃহত্তম কানসাট আম বাজার
পতিসর রবীন্দ্র কুঠি বাড়ী
কবি গুরুর নাগর নদী
নাটোরের চলন বিল

তথ্যসুত্রঃ ইন্টানেট
শেষ থেকে সাতটি ছবি ইন্টারনেট থেকে বাকি গুলো নিজের তোলা।


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৫৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×