somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: আক্রোশ - ০৭

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





----তাহের, তোমার সত্যি বয়স হয়ে গেছে। আজকাল অনেক কিছুই ভুলে যাও তুমি।

তারপর তপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
----তাহের ও ফারুক। তা ও ফা। একসাথে মিলিয়ে তাওফা। এতে অত প্যাঁচানোর কিছু নেই ভাই। সহজ হিসাব।
----কিন্তু আমি যদ্দুর জানি এই কোম্পানিটা আপনারা তিন বন্ধু মিলে শুরু করেছিলেন। ওসমান নামে একজন বন্ধু ছিল আপনাদের। তাওফার "ও" টা উনার নামেরই আদ্যক্ষর। সত্যিকার অর্থে এই কোম্পানিতে উনার অবদানটাই বেশি। যে জুসটা দিয়ে এই কোম্পানিটা প্রথম শুরু হয়েছিল সেই জুসটা তিনিই উদ্ভাবন করেছিলেন। আর সেই জুসের কল্যাণেই এই কোম্পানির খ্যাতি রাতারাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এবার ফারুক আহমেদের কপালেও মৃদু ঘাম জমতে শুরু করেছে। তিনি আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলেন না। ভীত, উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন,
----কী বলছেন এসব আপনি। আপনাকে কিছুটা সময় দিয়েছি কথা বলার তাই বলে আপনি যা তা বলে যাবেন। আপনি এখন যেতে পারেন। আমাদের জরুরী কাজে বাইরে যেতে হবে।
----ভয় পেয়েছেন মনে হচ্ছে।
বলে একটু হাসলো তপু।
----ভয় পেতে যাবো কেন?
নার্ভাস হাসি হেসে বললেন ফারুক আহমেদ। তাহের মাহমুদ চুপ করে রয়েছন। বুঝাই যাচ্ছে কোন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন উনি।
----যদি ভয় না পেয়ে থাকেন। যদি আপনারা কোন অপরাধ নাই করে থাকেন তবে যা জিজ্ঞেস করছি তার ঠিক ঠাক জবাব দিন।
ফারুক আহমেদ একটু চুপ করে রইলেন। সামলে নিলেন নিজেকে এবং সেই সাথে সাজিয়ে নিলেন কী বলবেন।
----ঠিক আছে বলছি। আজ থেকে আটাশ বছর আগে আমরা দুই বন্ধু মিলে একটি জুস উদ্ভাবন করি। দেখলাম যে সেই জুসটা সবাই খুব পছন্দ করছে। তখন সেই জুসের একটা কোম্পানি আমরা শুরু করি। ওসমান ছিল আমাদের বন্ধু। ওর একটা চাকরি খুব প্রয়োজন ছিল। আমরা আমাদের সহকারী হিসেবে ওকে চাকরিতে নিয়োগ দিলাম। ও কেবল আমাদের সহকারি ছিল। আমাদের ব্যবসার কোন অংশীদার ও ছিল না। ও কোন টাকা ইনভেস্ট করেনি এই ব্যবসায়। তারপর হঠাৎই একদিন কেউ ওকে খুন করে নদীতে ফেলে দেয়।
----কিন্তু উনার স্ত্রী তো বলছেন উনি এই ব্যবসায় সমান টাকা ইনভেস্ট করেছিলেন। আর যে জুসটা দিয়ে আপনারা কোম্পানিটা শুরু করেছিলেন সেই জুসটা উনিই উদ্ভাবন করেন। তারপর একদিন আপনাদের মধ্যে খুব বেশি মত বিরোধ দেখা দেয়। আপনারা দুজন জুসে ক্ষতিকর ক্যামিকেল মিশিয়ে অধিক মুনাফা কামাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু ওসমান আহমেদ কিছুতেই এর পক্ষপাতি ছিলেন না। এক সময় সেই মত বিরোধ তুঙ্গে পৌছায়। আর ঠিক সেই সময়ই উনাকে খুন করা হয়।
----এই সবই বানোয়াট গল্প। আমাদের ব্যবসায় ভাগ বসানোর মতলব।
----কিন্তু উনি তো আপনাদের বন্ধু ছিলেন। শুধু বন্ধু না খুব কাছের বন্ধু। সেই বন্ধুকে নির্মমভাবে খুন করা হলো আর আপনারা চেয়ে চেয়ে দেখলেন। কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না। খুনিকে বের করার চেষ্টা করলেন না। বিষয়টি একটু গোলমেলে না?
----তখন আমাদের বয়স খুবই অল্প। আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ঐসব খুনখারাবির ব্যাপারে নিজেদের জড়াতে চাইনি।
একটু বাঁকা হেসে তপু বলল,
----বাহ! এই না হলে বন্ধু!

-------

চৌধরী বাড়ির বিশাল লনের এক পাশে বাংলো টাইপের সুন্দর একটা ঘর আছে। সেই ঘরটাতেই এম পি বোরহান উদ্দিন বাড়ি এলে সব রাজনৈতিক আলোচনা থেকে শুরু করে সব রকম কাজকর্ম সমাবেশ হয়ে থাকে। বোরহান উদ্দিন মোহনপুরে এসেছেন সে খবর মোহনপুর থেকে শুরু করে আশপাশের শহর গ্রামেও পৌছে গেছে। দলে দলে তাই বারো রকমের লোক ভীড় করছে বাড়ির বাইরে। সেখান থেকে বাছাই করে ত্রিশ চল্লিশজনকে ভেতরে ঢুকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেই ত্রিশ চল্লিশজনের সমাগম ঘটেছে বাংলো ঘরটাতে। তারা তীর্থের কাকের মত বসে এম পি সাহেবের প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছে। প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে গেলো তারা এইভাবে বসে আছে। তবু কারো মুখে কোন বিরক্তির চিহ্ন নাই। তারা যে দেখা করার অনুমতিটা পেয়েছে সেটাই তো অনেক বড় ভাগ্য। সেটাই কজনের কপালে জোটে?

অবশেষে এম পি বোরহান উদ্দিন তার পদধূলি দিলেন বাংলো ঘরে। ঠোঁটে তার লেগে আছে পবিত্র স্নিগ্ধ অমলিন সেই হাসি। সবাই একসাথে উঠে দাঁড়ালো। বোরহান উদ্দিন সবাইকে হাত নেড়ে বসতে বলে ভেতরের ঘরে চলে গেলেন। পি এ আজাদ একজন একজন করে নাম ধরে ডাকতে লাগলো।

সিরাজ মিয়া। জীর্ণ শীর্ণ চেহারার এক কৃষক। দুই হাত দিয়ে কালো রঙের একটা ছাতা ঠিক বুকের কাছটায় ধরে রেখে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বোরহান উদ্দিনের সামনে।
----কী খবর সিরাজ মিয়া? কেমন আছ তুমি?
----সব আপনের দয়া সাব।
----কী ব্যাপার ভয়ে এত কাঁপছ কেন তুমি?
----কিছু না সাব।
----কী সমস্যা তোমার বলো তো?
----তিন হাল জমি আমার বড় ভাইয়ের কাছে বন্ধক রাখছিলাম সাব। এক লাখ টাকা নিয়া। সেই টাকা এখন সুদে আসলে তিন লাখ হইসে। তিন লাখ টাকা দিয়া হেই জমি এহন ছুটাইয়া আনা আমার দ্বারা সম্ভব না। তাই ভাইরে কইসিলাম আরো কিছু টাকা দিয়া জমিটা কিননা নিতে। টাকাটা আমার খুব বেশি দরকার সাব।
----হুম। বুঝলাম। তা তোমার ভাই এখন কী বলছে?
----হেয় খালি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবার চায়। কয় এর বেশি এক টাকাও দিবো না। অথচ আমার এই জমিনের দাম অহন বিশ লাখের উপরে অইবো সাব।
----ঠিক আছে তোমাকে দুই লাখ টাকা আমি দিবো। আরো তিন লাখ জমি ছুটানোর জন্য। এরপর জমি আমার। ঠিক আছে?
বড় উপকারী মানুষ এই বোরহান উদ্দিন। তাই তো ছুটি কাটাতে এসেও মানুষের উপকার করতে ভুলেন না। কিন্তু সেই সাথে বড় হিসেবীও তিনি। উপকারের দামটা সুদে আসলে আদায় করে নেন ঠিকঠাক। এতটুকু ছাড় দিতে তিনি রাজী নন।
----আফনের অনেক অনেক দয়া সাব। আল্লায় আফনেরে আরো বড় করুক।
----বাকি সব ব্যবস্থা আজাদ করবে। ওর সাথে কাল দেখা করবে তুমি। এখন যাও।

বোরহান উদ্দিনকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে গেলো লোকটা। আজাদও লোকটার সাথে বেরিয়ে গেলো। বাইরের রুমে গিয়ে লোকটার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলল,
----পঞ্চাশ আমার। মনে আছে তো।
----সে কী আর ভুলতে পারি সাব। আফনে না থাকলে তো আমার কামই হইতো না। সিরাজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডানে বামে তাকালো। যেনো কাউকে খুঁজছে। তখনো ভয়ে তার হাত পা কাঁপছিল। অদূরে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল তপু। তপুকে দেখতে পেয়ে সিরাজ সোজা হেঁটে তপুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর ছাতাটা এগিয়ে দিলো। তপু ছাতাটা থেকে স্পাই পেন হিডেন ক্যামেরাটা খুলে নিলো। খুব কায়দা করে কলম ক্যামেরাটা ছাতায় লাগাতে হয়েছে। যাতে বুঝা না যায় ছাতার ভেতরে কোন কলম ক্যামেরা লুকানো আছে।
----সাব আমার কোন ক্ষতি হইবো না তো?
কাঁপতে কাঁপতে বলল সিরাজ মিয়া।
----একেবারে নিশ্চিত থাকো। কিচ্ছু হবে না তোমার। তোমার কথা কেউ জানতেও পারবে না।
ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে হাসলো তপু। প্রযুক্তি আজ কোথা থেকে কোথায় গেছে। কেউ কি ভাবতে পারবে ছোট্ট একটা কলমের ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে ভিডিও ক্যামেরা!
---

----কেমন আছেন মাস্টার মশাই?
----এই তো আছি কোন রকমে বাবা।
----আপনার জন্যে কী করতে পারি বলেন।
----আমার নাতিডার স্কুলের চাকরিডা একটুর জন্যে আটকে আছে। তুমি যদি একটু সুপারিশ করো তাইলে......
----কোন স্কুলে?
----মোহনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
----হয়ে যাবে মাস্টার মশাই। শুধু চার লাখ টাকার ব্যবস্থা করেন।
----একটু কম হয় না বাবা? তুমি আমার ছাত্র আসিলা।
----এই জন্যই তো কম করে বলেছি মাস্টার মশাই। নইলে আরো বেশি বলতাম। তাও যখন বলছেন আপনার কথা তো আর ফেলতে পারি না। ঠিক আছে সাড়ে তিনই দিন। আমি আর এক সপ্তাহ আছি এখানে। এর মধ্যেই টাকাটা দিয়ে যাবেন। নয়তো আবার কবে আসবো তার তো ঠিক নেই। চাকরি তো আর ততদিন বসে থাকবে না।
-----হ, হ কাইল পরশুর ভিতরেই আমি টাকাটা দিয়া যামু বাপ। তাইলে এইবার আমি যাই।
মাস্টার মশাই বেরিয়ে গেলেন। যথারীতি আজাদও উনার সাথে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ ফিসফাস করে আবার ভেতরে এসে ঢুকলো।
মাস্টার মশাই চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে এগিয়ে গেলেন তপুর কাছে। বুক পকেট থেকে কলম ক্যামেরাটা বের করে দিলেন।
----

তানভীর খানকে দেখলেই বুঝা যায় বড় ব্যবসায়ী মানুষ। বোরহান উদ্দিনকে সালাম জানিয়ে বললেন,
----কেমন আছ? চিনতে পেরেছ আমাকে?
বোরহান উদ্দিন একবার কাউকে দেখলে সহজে ভুলেন না। আর এই লোককে তো না চেনার কোন কারণ নেই। এ যে রজনীর ভাই! একে দেখেই বোরহান উদ্দিনের বুকের ভেতরটা একটু কেঁপে উঠলো। পুরোনো একটা ক্ষত যেনো হঠাৎই নাড়া খেলো। কিন্তু ঠোঁটের সেই স্মিত হাসির রেখার পরিধি এতটুকু তাতে কমলো না। কারণ একজন পাকা রাজনীতিবিদের অন্তরের প্রতিফলন চেহারায় পড়ে না। পড়তে নেই।
----না চেনার কোন কারণ নেই। আমি ভাল। তুমি কেমন আছ?
----ভাল আর থাকতে দিলো কই তোমার পার্টির লোকেরা।
----কেন? কী ব্যাপার?
----তোমাদের পার্টির আরিফ হাসান আমার পঞ্চাশ লাখ টাকার ডিলটা আটকে বসে আছে। তুমি একটু বললে ডিলটা ফাইনাল হয়ে যায়। আর এ কারণেই আমি আজ মোহনপুরে এসেছি। অনেক দিন পর আসলাম।
----ঠিক আছে হয়ে যাবে। আমি কত পাবো?
----কত চাও বলো?
----দশ।
----ঠিক আছে। আমি সাথেই নিয়ে এসেছি।
তানভীর খান একটা রেপিং করা রঙিন প্যাকেট এগিয়ে দিলেন বোরহান উদ্দিনের দিকে। বোরহান উদ্দিন আজাদকে ইশারা করতেই আজাদ প্যাকেটটা হাতে নিয়ে গুনতে শুরু করলো। গুনা শেষ হলে বলল,
----ঠিক আছে স্যার।
বোরহান উদ্দিন তানভীর খানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
----তোমার কাজ হয়ে যাবে।
----অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। তাহলে আসি এখন?
বোরহান উদ্দিন হেসে সায় দিলেন। তানভীর খান দরজার দিকে পা বাড়াতেই বোরহান উদ্দিন বলে উঠলেন,
----রজনীর কোন খবর কি আর পেয়েছিলে?
তানভীর খান বোরহান উদ্দিনের প্রশ্নে থমকে দাঁড়ালেন।
----সেদিনের পর ওদের আর কোন খবর পাইনি। আসলে খোঁজার চেষ্টাই করিনি।
তানভীর খান বেরিয়ে গেলেন। চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে কলম ক্যামেরাটা এগিয়ে দিলেন তপুর দিকে।
------
একদিন আগের ঘটনা। রাত নয়টা।
পল্লবের বাড়ির বসার ঘরে গোপণ বৈঠক চলছে। পল্লব, তপন, তানভীর খান, রফিক উদ্দিন মাস্টার আর সিরাজ মিয়া। তানভীর খানকে খবর দিয়ে এনেছে পল্লব। তানভীর খান পল্লবের মামা। বোনের সাথে যত মান অভিমান ছিল তা অনেক আগেই কেটে গেছে। মামা ভাগ্নের সম্পর্ক এখন বড়ই মধুর। তাই তো ভাগ্নের এক ডাকে ছুটে এসেছেন তিনি এখানে। আর রফিক উদ্দিন মাস্টার ও সিরাজ মিয়াকে নিয়ে এসেছে তপু। বোরহান উদ্দিন মোহনপুরে এলে চৌধুরী বাড়িতে ভীড় করে সবাই। এদের মধ্যে বাছাই করে কিছু লোককে দেখা করার অনুমতি দেয় পিএ আজাদ। এবার যারা অনুমতি পেয়েছে তাদেরই দুজন হলো এই রফিক উদ্দিন মাস্টার ও সিরাজ মিয়া।

পল্লব তানভীর খানের দিকে তাকিয়ে বলল,
----কিন্তু মামা বোরহান উদ্দিন যখন আরিফ হাসানের সাথে যোগাযোগ করবে তখন তো সব ফাঁস হয়ে যাবে। আমি চাচ্ছি না ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি সে জানুক।
----জানতে পারবে না। আরিফ হাসানের সাথে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছাড়াও আরো একটি সম্পর্ক আছে। সে আমার বন্ধু। অন্য দিকে বোরহান উদ্দিন আর আরিফ একই পার্টির লোক হলেও ওদের মধ্যে একটা অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। যেহেতু বোরহান উদ্দিন এখন ক্ষমতায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার কথা আরিফকে রাখতেই হয়। আমি আরিফের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি এবং সব বুঝিয়ে দিয়েছি। সে আমাদের সাহায্য করতে রাজী আছে।
----ওহ তাই বলো। তাহলে তো সব সমাধান হয়েই গেলো।
তপু বলল,
----এই দুজনকে অনেক কষ্টে রাজী করিয়ে এখানে এনেছি। মোহনপুরের সবাই চায় চৌধুরীদের অনাচার থেকে মোহনপুর মুক্ত হোক। সবার মনেই এম পির বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ। ওরা লোকটার আরেক নাম দিয়েছে রক্তচোষা। গরীবের রক্ত পানি করা সব সম্পদ চোষে চোষে খায় লোকটা। কিন্তু কেউই লোকটার বিরুদ্ধে যেতে নারাজ। জমের মত ভয় পায় ওরা চৌধুরী বাড়ির লোকদের। ঐ বাড়ির প্রত্যেকটা লোক নাকি জমের চেয়েও ভয়ংকর। ওদের অত্যাচারের চিহ্ন নাকি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে মোহনপুরের অনেক মানুষ।
----ঠিকই শুনেছিস তুই। আর এই অত্যাচারীদের হাত থেকে আমি মোহনপুরকে বাঁচাতে চাই।
----হ্যাঁ, সেটা বুঝিয়ে বলতেই এই দুজন কোনরকমে রাজী হয়েছে কাজটা করার জন্য। এ হলো সিরাজ মিয়া। এর অনেক জমি ছিল। অভাবে পড়ে জমিগুলো বন্ধক রাখে সে। এখন তার সব জমিই ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে ঐ এম পির থলিতে। আর ঐ এম পির কাছে যাওয়া ছাড়া ওর অন্য কোন উপায়ও নেই। আর ইনি হলেন প্রাইমারী স্কুলের একজন রিটায়ার্ড শিক্ষক। উনার ছেলের চাকরিটা আটকে আছে। রিটেন ভাইভা সব ভালভাবে দেয়ার পরও। এম পি কে টাকা খাওয়ালে পরে চাকরিটা নিশ্চিত হতে পারে। তোর কথা বলতেই ওরা কাজটা করতে রাজী হলো। বলল, তুই সাথে থাকলে ওদের কোন ক্ষতি হবে না। এই মোহনপুরের লোকেরা সবাই তোকে খুব ভালবাসে। তোর উপর ওদের অটল বিশ্বাস।
----আমি যেন ওদের এই বিশ্বাসের মূল্য রক্ষা করতে পারি। কিন্তু খেয়াল রাখিস ওদের কোন ক্ষতি যেনো না হয়। ওরা যে আমাদের সাহায্য করছে তা যেনো কোনভাবেই এম পি জানতে না পারে।
----এম পি কিছুই বুঝতে পারবে না। তুই নিশ্চিত থাক।
----কিন্তু কাজটা এত গোপণে করবি কিভাবে?
তপু একটা কালো কলম ওর বুক পকেট থেকে বের করে পল্লবের সামনে রাখলো।
----এটা দিয়ে।
পল্লব বিস্মিত হয়ে বলল
----কলম দিয়ে?
----এই যে আমরা এতক্ষণ কথা বললাম তোর মনে আমার এই কলমটা নিয়ে কোন সন্দেহ হয়েছে?
----কী বলছিস এসব? সামান্য একটা কলম নিয়ে সন্দেহ হতে যাবে কেন?
----তাহলে ঐ বোরহান উদ্দিনেরও কোন সন্দেহ হবে না। এই ছোট্ট কলমের ভেতরেই লুকিয়ে আছে ছোট্ট একটা ক্যামেরা। বোরহান উদ্দিন বুঝতেও পারবে না সেই ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে তার সব কুকর্ম। একটা বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সাথে কথা হয়েছে আমার। ওরা আমাদের সাহায্য করবে। আর দৈনিক পত্রিকায়ও ফলাও করে সব ছাপা হবে। বোরহান উদ্দিন আর তাওফা ফুডের বারোটা এক রকম বেজে গেছে ধরে রাখ।
(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×