somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সাহসী ছেলের গল্প - ১ম খণ্ড

১৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২য় ও শেষ খণ্ড - Click This Link

এক

আজ সপ্তম দিন। চুপিসারে বসে আছে সে ঘরের ভেতর। শুধু কালো মাথার ঝুটিটা একটু দেখা যায়। প্রথম তিনদিনে ঘরটির এক শতাংশও তৈরি হয়েছিল কিনা সন্দেহ। সদ্য কৈশোরে পা রাখা বাতাবিলেবু গাছটার কচি তিনটা ডালের সংযোগ স্থলে কয়েকটা খড় অবহেলায় পড়ে ছিল। হ্যাঁ, হঠাৎ কেউ দেখলে তাই ভাববে। অবহেলায় পড়ে থাকা উড়ে আসা কয়েকটা খড়। অথচ এই খড়কটাকে জুতসই করে ঐ জায়গায় স্থাপন করতে ওর তিনদিন লেগেছিল। ওর বলতে, ঐ বুলবুলিটার। কী যে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেছিল এই কটা দিন ধরে একটা ঘর বোনার জন্য।

পঞ্চমদিন খড়কুটো গুলো একটা মোটামুটি রূপ ধারণ করলো। একটা গোলাকার আদল। কী করে যে এই গোলাকার রূপ, বুলবুলিটা, ঐ খড়কুটো দিয়ে ধারণ করালো, তা দোলনের মাথায় কিছুতেই ঢুকছিল না। ওর তো কোন হাতপা নাই। আছে শুধু দুটো ডানা আর ঠোঁট। এইগুলো ব্যবহার করে সে ঠিকই একটা জুতসই ঘর বানিয়ে নিলো ধীরে ধীরে। ঠিক এই রকম একটা বেতের ঝুড়ি বানাতে কত না কারসাজি করতে হয় করিম চাচাকে। বেতগুলোকে চেঁছে ছিলে পাতলা করতে হয়। তারপর একটা একটা করে বেত দিয়ে, বুনন করে, কত সাবধানে একটা ঝুড়ি বানাতে হয়। এই কাজগুলো দুটি হাত ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। কিন্তু বুলবুলিটা ঐ একই কাজ কীভাবে যেন দুই ডানা ঠোঁট ব্যবহার করে ফেলল। কী যে অদ্ভুত কাণ্ড!

এই জানালার কাছটায় এসে দাঁড়ানো যেন একটা নেশায় রূপ নিয়েছে। দিনে অন্তত বার দশেক, দোলন, জানালার কাছটায় আসে, ঘরটার অগ্রগতি দেখার জন্য। তেমন কোন অগ্রগতি প্রথমে চোখে পড়তো না। তবু একটা খড় ঠোঁটে করে যখনই বুলবুলিটা বাতাবিলেবু গাছটার ডালে এসে বসে তখনই একটা আনন্দের ঝিলিকে দোলনের সারা মুখ ভরে ওঠতো।

বুলবুলিটা একা না। ওর একটা সাথিও আছে। বুলবুলিটা যখন ঘরের ভেতর বসে থাকে তখন সাথিটা একটু দূরেই ডালে বসে পাহারা দেয়। মাঝে মাঝে খাবার নিয়ে এসে ঘরে বসে থাকা বুলবুলিটার ঠোঁটে তুলে দেয়। ঘরে বসা বুলবুলিটা চুপচাপ বসেই থাকে। হয়তো এখন ওর ডিম পাড়ার সময়। কয়েকটা শকুনের চোখ পড়েছে ওদের ঘরটার দিকে। সেদিন শকুনগুলো নীড়টার খুব কাছাকাছি চলে আসে। বুলবুলিটার দিকে থাবা বাড়াতেই দুটি বুলবুলি এক হয়ে তেড়ে যায় শকুনগুলোর দিকে। আর সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় বুলবুলি দুটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে কয়েকটি ফিঙে। সবার তাড়া খেয়ে শকুনগুলো অবশেষে পালিয়ে যায়।

হি হি হি হি। দোলা আপুর হাসির শব্দে চমকে ওঠে দোলন। বাতাবিলেবু গাছটার নিচে কখন যে দোলা'বু এসে দাঁড়িয়েছে, দেখতেই পায়নি ও। চুলগুলো সব এলোমেলো। ওড়না নেই শরীরে। বুলবুলিটার দিকে তাকিয়ে অবিরত হেসে চলেছে। হাসতে হাসতে বলল, "শকুন খাইবো তোরে। শকুনগুলো সবাইরে খাইবো। এত্তগুলা শকুন। সব মরবে। সব মরবে।" আবার হি হি হি করে হাসতে হাসতে হাত তালি দিতে থাকলো দোলাবু। যেন ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে।

মনটা বিষণ্নতায় ছেয়ে যায়। কে বলবে কটা দিন আগেও এমন ছিল না দোলা'বু। কী যে হাসিখুশি আর উচ্ছল ছিল! মাথার দুইপাশে দুই বিনুনি দুলিয়ে ডানাকাটা পরির মত এঘর সেঘর ঘুরে বেড়াতো। এই তো জুনের পনেরো তারিখে দোলাবু'র বিয়ের কথা ছিল সুজন ভাইয়ের সাথে। দোলাবু রোজ একটি চিঠি লিখতো। চিঠির ভেতর গোলাপের পাপড়ি ভরে নীলখামে ঢুকিয়ে দোলনের হাতে দিতো সুজন ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। দোলন চিঠিটা নিয়ে যাওয়ার সময় নীলখামটার গন্ধ শুকতো। গোলাপের ঘ্রাণে ওর উতলা মন তখন ভাবতো একদিন সেও এমন চিঠি পাবে কোন এক অজানা পরির কাছে থেকে। অজানা পরির কথা ভাবতে ভাবতে দোলন পৌঁছে যেতো সুজন ভাইয়ের কাছে। সুজন ভাইয়ের হাতে দোলাবু'র চিঠিটা দিতেই সুজন ভাইয়ের দুচোখ খুশিতে ঝলমল করে উঠতো। চিঠিটা হাতে নিয়ে পকেট থেকে দুটা টাকা বের করে দোলনের হাতে দিয়ে বলতো, শালাবাবু যা মন চায় খেয়ে নিও।

দোলাবু খুব সুন্দর গান গাইতে পারতো। সেই গানই যে দোলাবুর কাল হবে তা কে জানতো? দোলনের চোখের কোণে জল জমে উঠলো। আলনা থেকে একটা ওড়না হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে দোলাবুর কাছে যায় সে। ওড়নাটা দিয়ে শরীরটা ঢেকে দিয়ে ধরে ধরে ঘরে নিয়ে আসে।

দুই

স্কুল ব্যাগটা গুছিয়ে নেয় দোলন। পড়ার টেবিলের ড্রয়ারটা খুলে চুপি চুপি চিঠিটা বের করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যায় গণি ডাক্তারের বাড়ি। গণি ডাক্তারের হাতে চিঠিটা দিতেই, চিঠি পড়ে গণি ডাক্তার তিনটা প্রেসক্রিপশন লিখলেন। প্রেসক্রিপশনগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে দোলন রওয়ানা হয় বাজারের দিকে। পথের মাঝে দেখা হয়ে যায় কেরামত চাচার সাথে।

কী রে দোলন কই যাস? ইস্কুল পলাইয়া বাজারে আইসোস? দাঁড়া, তোর বাপরে কওন লাগবো।

দোলন কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যায় কী উত্তর দেবে। তারপর ঝটপট উত্তর তৈরি করে ফেলে।

কী যে বলেন চাচা। ইস্কুল ফাঁকি দিমু ক্যান। মাস্টার মশাইরে বইলাই আইসি। আসলে বাবার শরীরটা খারাপ। এদিকে ঘরে চাল ডাল কিছুই নাই। তাই কিছু বাজার কইরা নিয়া যাইতে মায় কইয়া দিসে।

ও আইচ্ছা, তাইলে ঠিক আছে। শোন, বাজার কইরা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিইরা যা। সময় ভালা না, জানোসই তো। তোর বইনের কী দশা হইলো দেখোস নাই?

আইচ্ছা চাচা।

কেরামত চাচা চলে গেলে দোলন সাবধানে ঔষধের দোকানটায় যায়। প্রেসক্রিপশনগুলো বাড়িয়ে দিতেই সাবধানী দোকানদার চারদিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়। যদিও তার সাবধান হওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ ঔষধ বিক্রি করাই তো তার কাজ। যেহেতু দোলন কাদের জন্য কাজ করছে সেটা তার জানা এবং সেও পরোক্ষভাবে তাদের সহায়তা করছে, তাই নিজের অজান্তেই অবচেতন মন সাবধানী হয়ে ওঠে। দোকানদার ঔষধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দোলনের ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়।

তারপর দোলন সোজা রওয়ানা হয় স্কুলের দিকে। স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছেই স্কুলে না গিয়ে স্কুল পেরিয়ে আরও হাঁটতে থাকে সে। হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলটার কাছে আসে। এদিকে লোকজন একদম নেই। তবু সাবধানের মার নেই। ভালো করে সব দিক দেখে নিয়ে যখন নিশ্চিত হয় কেউ ওকে দেখছে না, তখনই জঙ্গলের ভেতরে পা রাখে।

(প্রথম খণ্ড সমাপ্ত। গল্পটা একটু বড় হয়ে গেছে। তাই পড়ার সুবিধার্থে দুই খণ্ডে দিবো।)
ছবি: ইন্টারনেট

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:১৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×