বর্ণি আজ স্কুলে যায়নি। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা। বাবা প্রথমে ভেবেছিলেন ওসব অভিনয়। যে কারণে কয়েক দফা ধমকও শুনতে হয়েছে বর্ণিকে। কিন্তু একটু পর যখন ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠতে লাগল এবং মা পানি ঢালতে লাগলেন তখন অবশ্য বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না। বর্ণির কুঁকানো চলল ঘণ্টাখানেকের মত। এর মধ্যে বাবা বাড়ি ছেড়েছেন। ১০ টায় অফিস। ব্যথা কমলেও ও শুয়েই থাকল। পুরোপুরি ভালো হল তুতুল ফেরার পর। তুতুল ওর দুই বছরের ছোট। সব সময় কালোমুখ করে থাকা যার স্বভাব। তবে আজকে ব্যতিক্রম। হাসি হাসি মুখ। এসেই মাকে বড় বড় করে কি যেন বলল। বর্ণির কৌতূহল অনেক। বিছানা ছেড়ে তুতুলের কাছে এল। জানতে চাইল স্কুলে আজ কি হয়েছে। কেন সে আজ এত খুশি খুশি। তুতুল অবশ্য এত সহজে বলতে চাইল না। বর্ণির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল পুকুর পাড়ে। তারপর কতণ অভিনয় করে বলল আজ অসুখের ভান করে বড় একটা জিনিস মিস করেছিস। আজ যদি তুই স্কুলে থাকতি তবে তোর মনটাও খুশিতে ভরে ওঠত। ধমকে ওঠল বর্ণি, বাজে বকবি না একদম। কি হয়েছে সেটাই বল? ধমক শুনে তুতুল বলতে শুরু করল, সামনের শুক্রবার হেড স্যারের ছোট মেয়ের বিয়ে। স্যার চাচ্ছেন ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের বিয়েতে নিবেন। কিন্তু ভালোদের বাছাই করা হবে কিভাবে! সিদ্ধান্ত হল দৌড় প্রতিযোগিতা হবে। মেয়েদের দু’টি গ্রুপ। ছেলেদের দু’টি। দুই গ্রুপ থেকে মোট ১২ জন বাছাই করা হবে। এই বারজন হেড স্যারের স্পেশাল গেস্ট। আজ স্কুলে সারাদিন চলল এসব আয়োজন। আর সেই বারজন স্পেশাল গেস্টের একজন সদস্য আমি। তুতুলের শেষের বাক্য এমন গর্বের শোনাল যেন এইমাত্র ও স্বর্ণের খনিতে লাফিয়ে পড়েছে। বর্ণিকে কতণ জিনের রুগীর মত দেখাল। তার পর একটা স্মৃতির অতলে হারিয়ে গেল। গত বছর ১৬ ডিসেম্বরের দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সে ফাস্ট হয়েছিল। শুধু ফাস্ট হয়েছিল বললে ভুল হবে। ২য় জনকে প্রায় ১০ হাত দূরে রেখেই সে সীমানা ছুঁয়েছিল। বিকেলে মঞ্চে তার গলায় মেডেল তুলে দেয়ার সময় হেডস্যার সবাইকে ল করে বলছিল, বর্ণি একদিন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে দৌড়াবে এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করে দেখাবে। সেদিন যে ওর কি ভালো লেগেছিল। অথচ আজ স্কুলে না যাওয়াতে কত বড় একটা ইভেন্ট মিস হয়ে গেল। শুধুু কি তাই যে কারণে আজকে স্কুলে যাওয়া হয়নি সেটিতো পরদিনের জন্য ঝুলেই রইল।
বর্ণির মাথা নিচু। তুতুলের মুখ হাসি হাসি। যেন রাজ্য জয়ের আনন্দ। বর্ণির চুল টেনে বলল তুতুল, কিরে জ্যোতিষি চণ্ডাল হয়ে গেলি নাকি? কিছু কি ভাবছিস? বর্ণির চোখ-মুখ শক্ত। মাথাটা কোনোমত নাড়াল। হ্যাঁ ভাবছি। ভাবছি আর অভিনয় করে স্কুল মিস দেব না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:১২