দুপুরের নিস ব্ধতা ভেঙ্গে ঝিকঝিক শব্দে ছুটে চলছে ট্রেন। জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখছে ছেলেটি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীা দেবার জন্য খুলনা যাচেছ সে। ঝকঝকে রোদের মধ্যে অপরূপ সাজে সেজেছে আজ প্রকৃতি। চারিদিকে চোখে পড়ে অপ র্ব সবুজের মেলা। আর উপরে রয়েছে সুনীল আকাশ। জানালায় মাথা রেখে ছেলেটি ভাবে পৃথিবীটা কত সুন্দর। কত বৈচিত্রময়তা চারিদিকে। আর এই সুন্দর পৃথিবীর মানুষ গুলো বিচিত্র। কেউ আছে ভালোবাসার মধ্যে, আর কেউবা কষ্টের মধ্যে। এর মধ্যে কেউবা সুখী নতুবা দুঃখী। এসব কথা ভাবতে ভাবতে তার মনে পড়ে অতীতের সেই দিনগুলোর কথা। মনে পড়ে কিছু অতি প্রিয় মুখ। তাদের খুব ভালোবাসে সে। তাদের কাছ থেকে ভালোবাসা সঞ্চয় করে রেখেছিল সে হৃদয়ের ব্যাংকে। কিন্তু সবাই সেই সঞ্চয়টুকু তুলে নিয়ে গেছে। তবে শ ণ্য রেখে যায়নি। হৃদয়ের ব্যাংকে জমা শুধু কষ্ট। আর সব নীল কষ্টের চেক বই। মাঝে মাঝে তার ইচেছ হয় সব ছেড়ে ছুড়ে একদিন কোথাও চলে যেতে। আর কখনও ফিরবেনা সে। একটি ওয়ান ওয়ে টিকেট কিনে ট্রেনে উঠে পড়বে। পথে কত সুন্দর অসুন্দর স্টেশন পড়বে। কিন্তু একটিতেও সে নামবেনা। সে শুধু এগিয়েই যাবে . . . দুর অজানায়।
পরীা হলের দিকে যাচিছল ছেলেটি। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন ডাকলো তাকে। ফিরে দেখে একটি মেয়ে। সে তার রূম খুঁজে পাচেছনা, তাই সাহায্য চাইছে। মেয়েটিকে রূমে বসিয়ে দিয়ে নিজের রূমে গেল সে। মেয়েটি অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল। আর বলেছিল পরীা শেষে যেন অবশ্যই দেখা করে। মনে মনে হেসেছে ছেলেটি, মুখে কিছু বলেনি।
পরীা শেষে বের হল ছেলেটি। গেট থেকে বের হতেই দেখল মেয়েটি তার দিকে হাত নাড়ছে। না দেখার ভান করে এগিয়ে গেল সে। শেষ পর্যন মেয়েটিই কাছে এলো। ছেলেটি বলল যে সে তাকে দেখতে পায়নি। এরকম কিছু অপ্রাসাংগিক আলাপের পর মেয়েটি তার ঠিকানা জিজ্ঞেস করল। জবাবে ছেলেটি বলল বাংলাদেশ। তার হেঁয়ালী উত্তরে হেসেছিল মেয়েটি। শেষে ছেলেটি মিথ্যে করে বলল যে সে ঢাকায় থাকে, আর নিজের নাম বলল হাসান। অনেক আলাপের পর বর্ণা, ও বলা হয়নিত, মেয়েটির নাম বর্ণা। যাহোক বর্ণা তার ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দিল। বলল খুলনা এলে যেন দেখা করে, আর নিদেন প েমাসে যেন দুটো চিঠি লিখে। ছেলেটি ভদ্রতা করে বলেছিল বলেছিল চেষ্ঠা করবে। ঢাকাতে সে কি করে জিজ্ঞেস করেছিল বর্ণা। তখন ছেলেটি বলেছিল,
" দুঃখ ওড়াই এক তুড়িতে, স্বপ্ন পোড়াই যত্ন করে, চাঁদকে নাচাই হাতের উপর আর জোছনা ছড়াই ইচেছ মতন, এই শহরে আমি।"
শুনে হেসেছিল বর্ণা। কথাটির মানে জিজ্ঞেস করেছিল। ছেলেটি বলেছিল সব কথার অর্থ খুঁজতে যাওয়া বোকামী। সব কথার অর্থ থাকেনা। বর্ণা বলেছিল," তুমি খুব হেঁয়ালী গোছের ছেলে।" ছেলেটি মনে মনে বলেছিল ,"আমি যে কি রকম ছেলে তা তুমি বুঝতে পারনি, কোনদিন পারবেও না।" বিদায় ণে বর্ণা কিছু বলেনি, দু্রত চলে গিয়েছিল।
রাজশাহীতে ফিরছে ছেলেটি। এই কদিন খুলনাতে কি করেছে তাই চিন া করছিল। বর্ণার কথা মনে পড়ল। খুব মিষ্টি দেখতে মেয়েটা। এত সহজে আপন করে নিয়েছিল তাকে। পকেট থেকে তার দেয়া ঠিকানাটা বের করল। কিছুন তাকিয়ে থেকে মেয়েটির মুখ কল্পনা করল, তারপর ঠিকানাটি ছিড়ে ট্রেনের জানালা দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিল। দেখতে দেখতে অদৃশ্য হয়ে গেল কাগজের টুকরোগুলো। মনে মনে সে বলে, " বর্ণা, আমাকে তুমি মা করো। তোমার সাথে বন্ধুত্ব করা আমার প েসম্ভব নয়। আমি মানুষের কাছ থেকে পালিয়ে থাকতে ভালোবাসি। আমি পালিয়ে যেতে চাই কারন যদি তুমি আমাকে ভালোবাস। তোমার নয়, তোমাদের মত মেয়েদের সামনে দাঁড়াবার মতো যোগ্যতা আমার নেই। তাই আমার ভয় হয় যদি তুমি আমাকে ভালোবেসে কষ্ট পাও। তাই আমি এক অর্থে তোমার কাছ থেকে পালিয়ে গেলাম। তোমার মতো একটি সুন্দর মেয়ের জীবনে আমার মতো কলুষিত হৃদয়ের একটি ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হবে এটা ভাবতেও পারিনা আমি। আমি বাজে ধরনের ছেলে। আর বাজে হয়েই আমি থাকতে চাই। আমি চাইনা কেউ আমাকে ভালোবাসুক। সবাই আমাকে যেন ঘৃনা করে। যদি আমি কখনও চলে যাই কেউ যেন আমাকে ভেবে কষ্ট না পায়। এটাই চাই আমি। কিন্তু আমি দুর থেকে তাদের প্রত্যেককে ভালোবেসে যাবো। তাই অযথা পিছুটান রেখে লাভ কি। তোমার কথা আমার যতদিন মনে থাকবে আমি দুর থেকে তোমার সুখ কামনা করে যাবো। তুমি ভালো থেকো সবসময়।" ট্রেনের হুইসেলের শব্দে চমকে ওঠে ছেলেটি। কখন যে চোখে পানি এসেছে খেয়ালই করেনি। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে ভেতর থেকে। মনে পড়ে সেই কথাটি,
" দুঃখ ওড়াই এক তুড়িতে
স্বপ্ন পোড়াই যত্ন করে
চাঁদকে নাচাই হাতের উপর
জোছনা ছড়াই ইচেছ মতন
এই শহরে আমি।"

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



