somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শবনম কাহিনী ২ - প্রায়শ্চিত্ত!

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অলস বিকাল বেলা। সাড়ে চারটা বাজে। আরাম করে নিজের রুমে বসে কাচ্চি বিরিয়ানি খাচ্ছি। দুপুরের খাবার খেতে এমনতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। রুমের বাইরে শুনি হটাত হইচই। থানায় এসব হইচই খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। পাত্তা দিলাম না। খাওয়া শেষ করে এসির টেম্পারেচার তা একটু কমিয়ে দিয়ে আয়েস করে একটা বেনসন ধরালাম। সিগারেটা আজকাল বেশিই খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। নিজে না কিনলে যা হয় আরকি! হিসাব থাকে না। বাইরে থেকে এসে রুমে ঢুকলেই দেখতাম আস্ত কার্টুন টেবিলের নিচে রাখা। প্রথম দিকে অসস্তি লাগত এখন আর গায়ে লাগে না। এথিকস বলে কিছু আছে নাকি এখন? ব্যাটা মরে অনেক আগেই ভূত হয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। পুরা দেশ টাই পঁচে গেছে আমি ভাল থেকে কি হবে? এই দেশে ভাল মানুষের কোন দাম নেই। চিল্লাচিল্লি একটু বেড়ে গেল মনে হয় বাইরে। ২ টা এস আই আছে বাইরে। ওরাই সামলাক। ৩ মাস হল এই থানায় এসেছি। একটা দিন ও শান্তি পেলাম না। শুধু হাউকাউ আর হাউকাউ!

এক
দরজা খুলে শাড়ি পড়া এক মহিলা দৌড়ে আমার কাছে এসে ম্যাওপ্যাও শুরু করল। কি মুস্কিল? একে আমার রুমে ঢুকতে দিল কে? সমস্যা কি এর? পিছনে পিছনে দেখি এস আই রবিউল এসে হাজির।
-কি হয়েছে এর? কেস কি?
-ইয়াবা কেস বস। হারামজাদা কে কয়েকদিন ধরে ট্র‍্যাক করতেছি আমরা। রেগুলার ইয়াবা কিনে। ৩২ নম্বর এর সামনে গাড়ি সহ ধরছি। ২০০ পিস ইয়াবা পাইছি গাড়িতে। ড্রাইভার টারে ধরতে পারি নাই। গাড়ি রাইখা দৌড় দিছে। মাদারচুদ। হাতের কাছে একবার পাইয়া নেই।
-এই মহিলা কে?
-কয় তো হারামজাদার বউ।
-ড্রাইভারের?
-না।
-কি বলে?
-কয়, আমার জামাই এ সব কিছু জানে না। ওরে নাকি কে ফাসায়া দিছে।
-এর জামাই রে ভিতরে নিয়ে একটু আদর আপ্যায়ন কর, দেখ কি বলে?
-করছি বস। হালারপুত প্রথমে কয় না। উপ্রে ছাদে ঝুলাইয়া যখন কিছু আদর দিছি তখন কয় আর কোন দিন করব না। বাসায় নাকি পার্টি আছে। সেজন্য কিনছে।
-মাল করে কি?
-কয় তো কোন ঢাকার প্রাইভেট ভার্সিটির প্রফেসার।
মেজাজটা সাথে সাথেই খারাপ হয়ে গেল। এই বাইনচুত গুলির জন্যই দেশের এই অবস্থা।
-কোন পলিটিকাল লিংক আছে?
-৪ ঘন্টা হয়ছে এখন পর্যন্ত কোন ফোন পাইনি।
-আবার রুমে ঢুকাও। খুব ভাল মত জিজ্ঞেসাবাদ কর। বাকি গুলার খোঁজ নাও।
-ঠিক আছে বস। তয়, বস মাইয়া টারে কি করুম?
-কন মাইয়া?
-হালারপুতের গাড়িতে পাইছি। পিছনের সিটে এইটার সাথে বইসা ছিল।
-কি রকম মাইয়া?
-কয় তো প্রাইভেট ভার্সিটি তে পড়ে। ভাব চক্কর তো ভাল মনে হয় নি। প্রথমে ধমকাইছি স্বীকার করে না। কইসা এক টা থাপ্পর দিয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলছি। তখন কানতে কানতে কয় খ্যাপ মারা পার্টি। ইউনিভার্সিটির কার্ড আছে। স্টুডেন্ট। মাগি পার্ট টাইম খ্যাপ মারে। আরেক ইয়াবা খোর। পার্টির জন্য নাকি এই হালারপুত ভাড়া করছে আজকে। এই গাড়িতে করে নিয়া বাসায় যাচ্ছিল। এটাই নাকি প্রথম বার না। আগেও এই ভাবে এই মাগিরে ভাড়া করছে। কক্সবাজারেও নাকি কয়েকবার ট্রিপ মারছে।

মনের অজান্তেই মহিলার সামনেই মুখটা খারাপ হয়ে গেল।
-মাদারচুদ রে নিয়া ইচ্ছা মত সাইজ কর। ওর পার্টি ওর পিছন দিক দিয়া ঢুকাইয়া দে। কুত্তার বাচ্চা। মাগিবাজি করে বেড়ায় আবার স্টুডেন্ট পড়ায়! কি বাল ছাল পড়ায় একটু বাইর কর। না পারলে আমারে দে। আজকে ওরে আমি পড়াই!
সত্যি দেখি হাতটা নিসপিস করছে। মাঝে মাঝে আমি একদম রাগ কনট্রল করতে পারি না।
-বস আপনি রেস্ট নেন। আমি থাকতে আপনি কষ্ট করবেন ক্যান? আমি দেখতাছি হালারপুত ক্লাসে কেমনে পড়ায়?

আমাদের কথা বার্তা শুনে মহিলা ধপ করে আমার টেবিলের সামনে রাখা একটা চেয়ারে বসে পড়ল।
মুখ রক্ত শুন্য হয়ে সাদা গেছে। হোক। আমার কি?
নিজের জামাই রে সামলাইতে পারে না। এখন আসছে থানায় বাল ছিড়তে! ইচ্ছা করছে থাবরাইয়া সব কয়টা দাঁত ফেলে দেই। যখন শরীরের গরম থামান দরকার তখন কিছু করেনি এখন আসছে থানায় প্রেম পিরিতি দেখাতে। এর প্রেম পিরিতির আমি খ্যাতা পুরি। হাবিলদার এসে জিডির খাতা খুলে নাম এন্ট্রি করবে নাকি জিজ্ঞেস করল। মহিলা কে নাম জিজ্ঞেস করলাম।
-ইসরাত শবনম।
নামটা শুনে হঠাৎ একটু অবাক হয়ে মহিলার দিকে তাকালাম। এত কিছু পর এই নাম আমি ভুলি কি করে! চেহারাটাও মনে পড়ে গেল। স্বাস্থ্য একটু ভাল হয়েছে আর চোখে চশমা দিয়েছে। এই জন্যই প্রথমে চিনতে পারি নি। শবনম! অনেকদিন পরে মুখের ভিতরে তিতা তিতা লাগছে। কত দিন হবে? চার পাঁচ বছর তো হবেই। সময় কত দ্রুত চলে যায়? নির্ঘাত আমাকে চেনেনি। চিনবে কিভাবে? আমি এখন পুলিশ, মানুষ না। মানুষ হলে হয়ত চিনতে পারত। মাথার সামনের দিকের চুল পড়ে টাক বের হয়েছে। ঘুষের টাকার ভূড়িও বের হয়েছে।
-আমার রুমে ঢুকেছেন কেন?
-আমার হ্যাজবেন্ড কে থানায় ধরে এনেছেন কেন?
নতুন করে বেহায়াপনা শিখেছে দেখি? সামনে দাড়িয়ে সব কথা শুনল আর এখন বলে কি? এই মেয়ে তো কঠিন চীজ, ভূলে গিয়েছিলাম। আমার সাথে ত্যাদরামি। বের করছি!
-আমার হাজবেন্ড…
আবার শুরু করছিল কিন্তু এবার আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল।
-কি বলছিলেন আপনার হাজবেন্ড নিয়ে?
আপনারা অন্য কারো সাথে মিলিয়ে ফেলছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
তাই, আচ্ছা, তোমার জামাই তাহলে ফেরেশতা! দাঁড়াও আসমানে খবর পাঠাচ্ছি।
-রবিউল, মাইয়া টারে আমার রুমে পাঠাও।
শবনম একটু উত্তেজিত হয়ে বললঃ
-আমাকে বলেছে মাঝে মাঝে পার্টি দিতে হয় স্ট্যাটাস মেইন্টেইন করার জন্য। ওর ফ্রেন্ডরা আসে। একটু আকটু হট ড্রিংক্সস করে। বেশী কিছু না।
স্ট্যাটাস এর মায়রে বাপ! মেজাজ টা এমন গরম হয়ে গেল যে ইচ্ছা করছে একটা থাপ্পর দিয়া শবনমের কানপট্টি ফাটায়া ফেলি। জামাই খ্যাপ মারা পার্টি ভাড়া করে মৌজ ফুর্তি করে আর বউ জানেনা! নখরামি করার আর জায়গা পায় না। তাও আবার পুলিশের সাথে? নির্ঘাত আমাকে মগা পুলিশ মনে করছে। এরে একটু স্ক্র টাইট দেবার সময় হয়েছে।

দুই
রবিউল মাইটারে রুমে নিয়ে এসেছে। কড়া মেকাপ। উগ্র মেয়েলি সেন্টের গন্ধে রুম টা ভরে গেল। এত টাইট ড্রেস পড়ছে যে পুরো শরীরের আঁকবাক ভাঁজ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আরে, এইটারেই তো থানার শ্বশুরবাড়ি তে আগে ঢুকান দরকার! বিয়ের আগেই এই মেয়েরে শ্বশুরবাড়ি কি জিনিস চেনানো দরকার। এই মেয়ের আজকে খবর আছে! বেশ কয়েকদিন ধরে থানায় কোন পার্টি হয় না। পার্টি কি কত প্রকার সেটা এই মেয়ে আজকে টের পাবে!
-নাম কি তোর?
-ফারিয়া। ফারিয়া হক।
-যা জিজ্ঞেস করব সোজা উত্তর দিবি! ভংচং করবি তো তোর খবর আছে!
-পার্টি কখন আর কথায় হয়? চোখ গরম করে তাকালাম।
-সন্ধ্যার সময় থেকে শুরু হয়। রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত চলে। ধানমন্ডির X রোডের X বিল্ডিং এর পাঁচ তলার ১৪ নাম্বার ফ্লাটে। এখানেই পার্টি টা বেশি হয় তবে আরও কয়েক টা জায়গা আছে। সব গুলি জায়গা আমি চিনি না। আমাকে বিভিন্ন লোকেশন থেকে তুলে নেয়। আমি নিজে কখন একা যাইনা। নিষেধ আছে।
শবনম মেয়েটার কাছে আরেকবার অ্যাড্রেস টা শুনল। শোনার পর মুখটা দেখি কাল হয়ে গেছে। মজা তো কেবল শুরু! রবিউল দেখি মেয়ে টারে হাল্কার উপর ডলা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। আমার কিছু করতে হবে না। স্টার্ট বাটন চাপ দিলেই মাইক স্টার্ট হয়ে যাবে!
-পার্টিতে এই রকম স্যার রা কয়জন থাকে?
-৪ জন। আমি সবসময় ৪ জনই দেখেছি।
-তোর সাথে আরো মেয়ে থাকে?
-ঠিক নাই। একেক সময় একেক রকম। আমাকেও সব সময় ডাকে না।
-পার্টি রেট কত নিস? ঠিক ঠাক মতো কথা বলবি। নাইলে ধরে এমন ডলা দিব তোরে যে পার্টি রেট তো পার্টি রেট তোর বাপের ম্যারেজ ডেট পর্যন্ত মনে পড়ে যাবে।
-৫০০০ টাকা আর তার সাথে কিছু টিপস দেয়
-কতদিন ধরে তুই এই সব পার্টিতে যাস?
-৮/৯ মাস ধরে। আমাদের ইউনিভার্সিটির এক সিনিয়র আপু পরিচয় করে দিয়েছে। আগে উনিই যেতেন। রিছেন্টলি বিয়ের পর আমাকে কাজটা দিয়ে উনি শুনেছি এসব বাদ দিয়েছেন।
-ইয়াবার কাহিনি কি? কে কে খায়?
-পার্টিতে ড্রিংক্স করার পর সবাই উনারা ইয়াবা খায়। আমাদের ও খাওয়ায়। এটা খাবার কিছুখন পর সবাই হট হয়ে যায়। তারপর আমাদের উপর উঠে।
সাবাস! আমি ব্যাপক মজা পাচ্ছি। এক ফাঁকে শবনমের মুখটা দেখে নিলাম। মাথা নিচু করে আছে। আজকে শবনমের খবর আছে! ওর সব নখরামি আজকে আমি টিপে টিপে বের করব!
-এদের সাথে তুই নাকি কক্সবাজারে ও কয়েকবার ট্রিপ মারসছ। সত্যি নাকি?
-জী। দুই তিন মাস পরে পরে উনার কক্সবাজারে প্লেজার ট্রিপ দেয়। আমাদের কাউকে না কাউকে উনাদের সাথে যেতে হয়। না গেলে অনেক রাগ করে। পরে সহজে আর পার্টিতে ডাকে না।
-এই লম্পট প্রফেসরের সাথে লাস্ট কবে গিয়েছিলি?
-গত মাসের ১০ তারিখে। উনার সাথে উনার এক বন্ধুও ছিল। উনিও প্রফেসর। দুই দিন তিন রাত ছিলাম। প্লেনে গিয়েছি, প্লেনে এসেছি।
এত মালদার পার্টি দেখি? তো কোন হোটেলে ছিলি?
-হোটেল সায়মন এ।
হোটেল সায়মনের নামটা শুনে মনটা জানি কেমন কেমন লাগছে? কত দিন কক্সবাজারে যাই না। শালার পুলিশের চাকরির মায়রে বাপ। ছুটিই তো পাইনা। একটু রিলাক্স করব, ফুর্তি ফার্তা করব সেই উপাই টাও নেই। জনগনের সেবার খ্যাতা পুরি। মেজাজটা আস্তে আস্তে গরম হচ্ছে। শবনমের দিকে ঘুরলাম। দেখি এই মেয়ে কি বলে?
-এই মেয়ে কি সত্যি কথা বলছে? গত মাসের ১০ তারিখে আপনার হ্যাজবেন্ড কোথায় ছিল? বাসায়? আপনার সাথে? ঠিক করে বলেন। আমি কিন্তু সব জায়গায় খোঁজ নিব। হোটেলে ফোন দিব।

এতক্ষণ হাউকাউ করা পার্টি এখন চুপ। চুপ থাকলে তো হবে না। কষে একটা ধমক দিলাম। ইতরামি, আমার সাথে ইতরামি। সোজা আঙুলে কোন দিন ঘি উঠে না। আঙুল তো আমি অনেক আগেই বাঁকা করেছি।
-কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন? কথা না বললে আমি কিন্তু আপনার আদরের জামাইরে এখানে এনে এমন ডলা দিব যে সুর সুর করে সব কথা বের হয়ে আসবে। এই কেস আমি অনেক অনেক দূর নিব। চিন্তা করবেন না।

ডেস্পারেট ভংগিতে আমার দিকে তাকাল শবনম। এরকম অসহায় আর ডেস্পারেট ভংগির সাথে আমরা পুলিশরা অনেক পরিচিত।
আমি কিন্তু আপনার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি!
শবনম এবারও চুপ করে থাকলো।
-আপনার ভাব চক্কর দেখে তো মনে হচ্ছে ও সত্যি কথা বলেছে। শেষ পর্যন্ত দুই জন মিলে এত টুক একটা মেয়ের সাথে! ছি ছি!
শবনম এখন ও চুপ। দেখি কতখন চুপ থাকতে পারে?
-কি জামাইরে বেড রুমে ঢুকতে দেন না, নাকি বেড রুমে ঢুকলে বেডে উঠতে দেন না? নাকি বেডে উঠলেও………..
আর সহ্য করতে পারল না শবনম। ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল-
-অসভ্য অস্লিল কথা বলছেন কেন?
-সভ্য শ্লীল কথা শুনতে চাইলে শান্তি নিকেতনে চলে যান। এখানে থানায় এসেছেন কেন?

হাতের ইসারায় হাবিলদার কে ডেকে ফারিয়া কে নিয়ে যেতে বললাম। চোখে পানি চলে এসেছে শবনমের। এটাই তো চাই! মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ টা একবার দেখলো। আহ, একেবারে কপি বুক অ্যাকশন। যা ভেবেছি তাই হতে যাচ্ছে। মোবাইল বের করে রেকর্ডিং টা অন করলাম। হে হে, একে আমি ভাল মতো ফাঁসাবো। শুভর আজকের দিনটা শেষ পর্যন্ত শুভ ভাবেই শেষ হবে দেখছি! দেখি শবনম কতদূর যেতে পারে! যত দূর যাবে ততই মজা। আসল মজা এখনই শুরু হবে। শবনম মরিয়া হয়ে বললঃ
-পুরো ব্যাপার টা সামলাতে কত খরচ করতে হবে?
আমি বুঝে ও না বুঝার ভান করলাম।
-খরচ? কিসের খরচ?
-আপনার। থানার। সবার। যা খরচ লাগে। আমি ঝামেলা টা এড়াতে চাচ্ছি।
সাবাস, শবনম। ইচ্ছে করছে উঠে যেয়ে একবার শবনমের সাথে হ্যান্ডসেক করে আসি। বুকের পাটা লাগে এ এস পির রুমে বসে তার রেট জিজ্ঞেস করার জন্য। শবনম আমাকে আমার জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো মুগ্ধ করল। জীবনে যে কত কিছু মিস করেছি এই মেয়েই তার জলজান্ত প্রমান। শালার পুরো জীবনটাই ব্যর্থ! এই রকম মেয়ে কারো বাসায় থাকলে আর কিছু লাগে নাকি! সো হট! আরেক টু খেলি। শবনমের সাথে খেলতে ভালোই লাগছে এখন!
-আপনি কি আমাকে ঘুষ সাধছেন? আপনার সাহস তো কম না দেখি? এই রকম কথা বলার জন্য আমি এখন আপনাকে অ্যারেস্ট করতে পারি এটা জানেন?
শবনম এখন পুরোপুরি কনফিউজড। আমতা আমতা করে বললঃ
-না না আপনি সেটা ভাবছেন কেন? আমি জাস্ট আপনারা এত কষ্ট করছেন সেজন্য বলছিলাম।
-কি উলটা পাল্টা কথা বলছেন। কষ্ট কিসের? এটা তো আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। জনগনের সেবা করাই তো আমাদের একমাত্র কাজ।

শবনম আমার মুখে পুলিশের দায়িত্বের কথা শুনে বেকুব মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আহ, কি আনন্দ! খরচ পাতির কথা শুনে রবিউল এক বার রুমে উঁকি দিল। আমি ডাকি নাকি সেজন্য! আমার থানায় টাকা পয়সা নেগছিয়েশনের দায়িত্ব ওর। উপরে নীচে সব কিছু ওকেই সামলাতে হয়। শবনমের সাথে আমার কথা বার্তা শুনে দেখি রবিউল ও বেকুব হয়ে গেল। সাধারণত এর আগেই আমি কেস ওর কাছে ট্রান্সফার করে দেই। হাতের ইসারায় ওকে আমি চলে যেতে বললাম। এই কেস আমার। এটা আমিই সামলাব।

তিন
আমার মাথার কোয়াড কোর প্রসেসর এখন ফুল স্পীডে চলছে। শবনম আর ওর ইতর জামাই টারে কি করা যায় তার সব রকম অপশন চিন্তা করছি। দেনা পাওনা অনেক বেশী। অল্পতে পোষাবে না।

হাবিলদার কে ডেকে শবনম কে এক গ্লাস পানি দিতে বললাম। মেয়ের মনে হয় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মেয়ে পানি খাক আর আমি এই ফাঁকে আরো বিনোদনের ব্যবস্থা করি।

রবিউলের রুমে যেয়ে দেখি দরজা বন্ধ করে রেখেছে। সর্বনাশ। ফারিয়া মেয়েটাকে তো এদিকেই পাঠিয়েছিলাম। এই ভর বিকেল বেলা দরজা বন্ধ করে রবিউল কি পার্টি শুরু করে দিল নাকি? ঠক ঠক করে দরজা নক করলাম। শবনমের জামাই এর কেস নিয়ে এমনতেই ঝামেলার মধ্যে আছি সেখানে যদি আবার এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হয় তাহলে খবর আছে। সাংবাদিকরা আর কিছু না হোক পুলিশ কে নিয়ে লেখার সময় সারা জীবনের সব রস ঢেলে দেয়। এই সব লেখা পড়লে পিত্তি পর্যন্ত জ্বলতে থাকে। ইচ্ছা হয় দুই একটা কে থানায় এনে…….। যাই হোক সাথে সাথেই দরজা খুলে দিল। ভিতরে ঢুকে দেখি কোন মেয়ে নেই। যাক বাঁচা গেল। রবিউল কে শবনমের জামাই এর বাকি তিন আকাম কুকামের পার্টনার সহ এদের সাথে যে মেয়ে গুলি খ্যাপ মারতো সব গুলিকে যে ভাবেই হোক আজকে রাতের মধ্যে থানায় ধরে নিয়ে আসতে বললাম।

আপাতত কাজ শেষ। আমার এখন রেষ্ট নেবার সময়। কিন্তু কোথায় নিব? রুমে উঁকি দিয়ে দেখি শবনম আমার অফিসের টেবিলে মাথা রেখে ব্যাপক কান্নাকাটি করছে। এত দূর থেকে শব্দ শোনা যাচ্ছে। এর একটু প্রাইভেসী দরকার। রুমে ঢুকে সিগারেট আর লাইটার টা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। শবনমের কোন খবরই নাই। মেয়েটা মনে হয় ব্যাপক শক পেয়েছে। বদমাশ জামাই টা যে ওকে দিনের পর দিন ঠকিয়ে এসেছে, বন্ধু বান্ধব নিয়ে মৌজ ফুর্তি করে বেরিয়েছে সেটা এখন টের পেয়েছে। শবনম কে আমি যতদূর চিনি ও জানি, যদি এই সময়ের মধ্যে কোন ব্যাপক পরিবর্তন না হয়ে থাকে ও এত সহজে ওর সাথে বেঈমানি করা ছেড়ে দেবে না। আমি নিশ্চিত ওর জামাই এর খবর আছে। আমার কাজ এখন সত্যিই খুব সোজা। শুধু এই সব কয়টার চরিত্র ল্যাংটা করে শবনমের সামনে নিয়ে আসতে হবে। এই জন্যই তো সব কয়টাকে থানায় ধরে আনতে বলেছি। সব কয়টার বিশেষ করে, ওর জামাইটার ইন্টারোগেশন সময় শবনম কে অবশ্যি ওই রুমে ঢুকাতে হবে। যে দৃশ্য দেখতে পাবো আর শুনতে পাবো বিশেষ করে, শবনমের যে চেহারা দেখতে পাবো তাতে নিশ্চিত আগামি এক বছরের বিনোদন হয়ে যাবে। হাত ঘড়ি দেখলাম, সাড়ে পাঁচটা বাজে। রবিউলের হিরোইক এ্যাকশন শেষ হতে মিনিমাম ২ থেকে ৩ ঘন্টা লাগবে। আয়েস করে একটা ঘুম দিতে পারলে মন্দ হতো না! থানার একটা টোকাই কে ডেকে গেষ্ট রুমটা ঝেড়ে পরিষ্কার করতে বল্লাম। এই ফাঁকে আমি বারান্দায় যেয়ে একটা সিগারেট খেয়ে আসি। হাবিলদার একটা ডেকে শবনম কে ডিস্টার্ব করতে মানা করলাম। বেচারি এখন একটু একা থাক। কিসের মধ্যে দিয়ে ও এখন যাচ্ছে সেটা ওর কান্নাকাটি দেখেই কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। এই মেয়ে যে কান্নাকাটি করতে পারে সেটাই আমার জন্য চরম বিস্ময়ের। তবে ও খুব শিগগরি রিকভারি করে ফেলবে। এই ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। ও আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসুক। জামাইটার প্রতি জমানো ফ্যাসিনেশন কাটুক ততক্ষনে আমি একটা সুন্দর করে ঘুম দিয়ে নেই!

চার
রবিউল আমাকে বেকুব বানিয়ে দিয়ে আধা ঘন্টার মধ্যেই বাকি তিন লম্পট আর তার সাথে আরও তিন টা মেয়ে ধরে থানায় নিয়ে আসলো। কেবল ঘুমটা লেগে এসেছে। রবিউল এসে আমার কাঁচা ঘুম টা ভাংগালো। মেজাজটা গরম হয়ে গেল সাথে সাথেই। কে ওকে এমন কুইক হিরোইক এ্যাকশন দেখাতে বলেছে? রাগ করলেও রবিউল কে কিছু বলা যাবে না। ও এই থানায় আমার ডান হাত। তাছাড়া কালকে একটা কাজের প্লান আছে মাথায়, ওকে আমার লাগবে। কাহিনী কি জিজ্ঞেস করলাম, এত তাড়াতাড়ি কি ভাবে ধরলো? রবিউল দেখি ব্যাপক ত্যাঁদর, প্রথমেই ধানমন্ডির ওই ১৪ নাম্বার ফ্লাটে হানা দেয়। যেয়ে দেখে পার্টি আজকে আগেই ষ্টার্ট করে দিয়েছে। শবনমের জামাইয়ের খবর পায়নি তখনো। রুমে যেয়ে দেখি তিন জনই ইনটক্সিকেটেড। নেশায় চোখ ঢুলু ঢুলু করছে। রবিউল কে পানি থেরাপি দিতে বললাম। সেন্স আসুক না হলে কথা বলে কোন লাভ হবে না। আর রাত আট টার আগে আমাকে ডাক দিতে মানা করলাম। ঘুম টা ক্লিয়ার করা দরকার। মাথা জ্যাম থাকলে কোন কাজ হবে না।

পাঁচ
আট টার আগেই আমার ঘুম ভেংগে গেল। হাত মুখ ধুয়ে রবিউলের রুমে গেলাম। ইন্টারোগেশন শুরু করা দরকার। আগে প্রত্যেক টাকে ভালো মতো ছালা থেরাপি দিতে বললাম। ইন্টারোগেশন সময় অনেকেই দেখি ত্যানা প্যাচায়। মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যায়। তাই আমি এই নিয়ম করেছি। এটা দেবার পর বাবুরা প্রশ্ন করার আগেই সব বলে দেয়। একটা ছোট কাগজে কি কি বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে তার একটা লিস্ট লিখে দিলাম। শবনমের জামাই য়ের জন্য আলাদা লিস্ট। এই লম্পট টার কাছে আমি অনেক কিছু শুনতে ও শবনম কে শোনাতে চাই। থেরাপি দিয়ে রিমান্ড রুমে নেবার পর আমাকে জানাতে বললাম। আমার রুমে যেয়ে দেখি শবনম চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে আছে। ওর সাথে কথা বলা দরকার।
-আপনার হ্যাজবেন্ড কে একটু পরে জিজ্ঞেসাবাদ করা হবে। আমার মনে হয় আপনার সবকিছু জানা ও শোনা উচিত। উনি আপনাকে দেখতে পারবেন না। আলাদা ব্যবস্থা আছে। আপনার কোন আপত্তি আছে?
-না। আমি ওই সময় অবশ্যই থাকতে চাই। আমার আসল ঘটনা জানতে হবে।
সাবাস শবনম। আমি জানতাম তুমি জানতে চাইবে। সেই জন্য আমি সব রকম ব্যবস্থা নিব। বেল টিপে দুই কাপ চায়ের ব্যবস্থা করতে বললাম। চা খেতে খেতে আসল কাজের সময় হয়ে যাবে আশা করি।

জিজ্ঞেসাবাদের জন্য আলাদা রুম আছে। রুম টা দুই ভাগ। এক ভাগে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয় আর তার ঠিক পিছনে গ্লাস দিয়ে আড়াল করা আরেক টা জায়গা আছে। শবনম কে নিয়ে আমি এই আড়াল করা জায়গায় এলাম। অলরেডি লম্পট টাকে রুমে নিয়ে এসে চেয়ারে বসানো হয়েছে। মাথার উপরে ১০০ পাওয়ারের ৪ টা লাইট জলছে। হাত পিছনে বাধা। রবিউল শুরু করলো। আজকে থেকে আস্তে আস্তে পিছনে যাচ্ছে, যেমন টা আমি চেয়েছিলাম। লম্পট টা ঝাড়ি খেয়ে বলা শুরু করলো। কিছুটা শুনে আমি বেকুব! বলে কি হারামজাদা? টাকা পয়সা মানুষের থাকতেই পারে তাই বলে এত জঘন্য চরিত্র। এ দেখি আজন্ম পাপি! মেয়ে মানুষ নিয়ে নষ্টামি তো আজকে থেকে নয়। বহু পুরানো অভ্যাস। পার্টির এই মেয়ে গুলি ছাড়াও আরো অনেক মেয়ে সে রেগুলার ভাড়া করে। ধানমন্ডির ওই বাসায় যত আকাম কুকাম করে বেড়ায়। সব মিলিয়ে ৯ টা মেয়ের নাম বলল। ফোন নাম্বার ও দিল। এই ৪ টা বাদে আরো ৫ টা। এত দেখি সিংহ পুরুষ! শবনম একে সামলায় কিভাবে? অবশ্য শবনমও আরেক সিংহি! বাসায় না জানিয়ে কিভাবে এসব করে বেড়ায় জিজ্ঞেস করতেই বলল আরেকটা মোবাইল আছে। ওটা দিয়েই এইসব ডিলিংস চলে। কথায় বলে না চোরের উপর বাটপার থাকে। ধানমন্ডির ফ্লাট নিজেদের। বাসার সবাই জানে ওটা ভাড়া দেয়া আছে। সাবাস! ইয়াবা রেছেন্টলি শুরু করেছে। কার কাছে জানি শুনেছে ইয়াবা খেলে আসল পুরুষ হওয়া যায়! এনার্জি ও নাকি বেশি পাওয়া যায়। অনেক মেয়ের সাথে থাকতে হয়। এটা ছাড়া সবাই কে তো সামলাতে পারবে না। ঘুরে শবনম কে দেখলাম একবার। চুপ করে দাঁড়িয়ে একমনে শুনে যাচ্ছে। চোখ বেয়ে জল পড়ছে। আমার হাতের মুঠিটা শক্ত হয়ে যাচ্ছে। একবার শবনম বলুক না, এটাকে আমি নিজের হাতে জবাই করে দেবো। শবনমের চোখের জল দেখে আমিই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। ওর স্ত্রী এসব জানেন কিনা বলতেই বলল, না, সব সময় সর্তকতা মেনে চলা হতো। বাকি তিন জন কে ওর স্ত্রী ভালো করেই চেনে, পারিবারিক সর্ম্পক আছে। সবার বাসায়ই একই অবস্থা। লাইফ তো একটাই তাই যেভাবে ইচ্ছে এঞ্জয় করা উচিত বলে রবিউল কে আবার উপদেশ ও দিল! যখন ইংল্যান্ড এ পড়তে গিয়েছিলো তখনই লাইফ ষ্টাইল চেঞ্জ করেছে। মেয়ে নিয়ে ঘাটাঘাটির অভ্যাস নাকি সেখান থেকেই হয়েছে। এটা শুনার পর দেখি শবনম বিড়বিড় করে কি জানি বলছে। স্পষ্ট বুঝা গেল না। এ্যাকশান শুরু হয়ে গেছে তাহলে! টানা ১৫ মিনিট জিজ্ঞেসাবাদ করা হলো। হান্টার দিয়ে ছালা থেরাপি ভালোই দিয়েছে রবিউল। কোন ত্যানা পেচায় নি সরাসরি উত্তর দিয়েছে। বুঝা যাচ্ছে থানার আদর আগে টেস্ট করেনি। এটার কাছ থেকে যা যা জানার মোটামুটি বলে দিয়েছে। আপাতত এতেই চলবে। এটার জিজ্ঞেসাবাদ শেষ হবার পর শবনম কে জিজ্ঞেস করলাম বাকি তিন জনের টাও শুনতে চায় নাকি? আমার দিকে তাকিয়ে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রাজি হলো না। কি আর করার। আমি তো আরও শুনাতে চেয়েছিলাম। না শুনলে কি করব?
রুম থেকে বের হয়ে এসে শবনম কে জিজ্ঞেস করলাম যে, আনফিশিয়ালি, এসব কথাবার্তার একটা রেকর্ড রাখা হয়, ও চাইলে আমি একটা কপি দিতে পারবো। পরে যদি ওর হ্যাজবেন্ড স্বীকার না করে তখন প্রমান করা যাবে। শবনম আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বললঃ
-লাগবে না। আমি যা শুনেছি এটাই যথেষ্ট। আপনার আর কষ্ট করতে হবে না। যা করেছেন সেটাই অনেক।

আমি চুপচাপ কোন কথা না বলে শবনম কে আমার রুমে নিয়ে এসে বসতে বললাম। ও হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রাজি হলো না।
-আমার গাড়ি তো আপনারা থানায় ধরে নিয়ে এসেছেন। সহজে ছেড়ে দিবেন মনে হয় না! এত রাতে আমি বাসায় যাব কিভাবে? থানার একটা গাড়ি কি ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে? শুধু বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে?
শবনমের দিকে তাকিয়ে খারাপ লাগছে। বেচারির খুবই বাজে সময় যাচ্ছে। থানার গাড়ি দেয়া কোন ব্যাপার না, কিন্তু গাড়ি গুলির অবস্থা ভালো না। সরকারি মাল, সবাই ব্যবহার করে। অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে। শবনম কে অপেক্ষা করতে বলে আমি গেলাম গাড়ির ব্যবস্থা করতে। ফিরে এসে দেখি রুমে চুপ করে বসে আছে। আমার সাথে আসতে বললাম।

নীল রংয়ের নিশান পেট্রল গাড়িটা দেখে একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল তবে মুখে কিছু না বলে পিছনের সীটে গাড়িতে উঠে বসল। গাড়ি ছাড়ার আগে উইন্ডো গ্লাস টা নামিয়ে বললঃ
-গাড়িটা নিশ্চয়ই ব্যক্তিগত! জনগনের সেবা করে তো বেশ ভালোই আছেন দেখি। ভালো, খুব ভালো!
আমি চুপ করে শবনমের চলে যাওয়া দেখলাম। এই মেয়ে এক ফোটাও বদলায় নি। প্রশ্নই উঠে না। যাবার আগে যেভাবে আমাকে দিয়ে গেল সেটাই বলে দিচ্ছে ও দ্রুত রিকোভার করছে আর রিকোভারী পিরিওড শেষ হলেই ওর জামাইয়ের খবর আছে। সাদা কাগজে আমি এটা লিখে, ডেট সহ সই পর্যন্ত করে দিতে রাজি আছি। জীবন থেকে নেয়া বাস্তব অভিজ্ঞতা! ভুল হবার প্রশ্নই উঠে না!

ছয়
পরের দিন, সন্ধ্যার সময়। বাইরে থেকে ঘুরে কেবল রুমে এসে বসেছি। আয়েস করে কফি খাচ্ছি। ক্যাপিচিনো কফি। থানার উল্টা দিকের দোকানটা থেকে আসে। রোজ সন্ধ্যার সময় থানার অফিসারদের ফ্রি ফ্রি ক্যাপিচিনো কফি খাওয়ায়। অর্ধেক টা খাওয়া হয়েছে এই সময় আমার “নুর জেহান” এসে হাজির। একদিনে ভালোই রিকোভার করেছে দেখি! হাল্কা সাজগোজও করেছে। জিজ্ঞেস না করেই সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়ল। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালো, আমিও তাকিয়ে আছি।
-আমার হ্যাজবেন্ডের নাম থানায় এন্ট্রি করেন নি কেন? আপনার প্লান কি?
প্রশ্নের ষ্টাইল শুনে বেকুব হয়ে গেছি। কিভাবে এই ইনফরমেশন বের করলো? শালা নিজের লোকজন যদি বেইমানি করে তাহলে আমি কই যাই? কোন উত্তর না দিয়ে আমি চুপ করে আছি।
শবনম এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ কফি খাচ্ছি।
-শুভ, দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসুন। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমি এমন চমকে উঠলাম যে আরেকটু হলেই হাত থেকে কফির কাপটা পড়ে ভেংগে যেত। সর্বনাশ, এই মেয়ে কিভাবে এটা বের করলো? জীবনে তৃতীয় বারের মতো শবনম নিয়ে আমি মুগ্ধ হলাম। আস্তে উঠে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ওর সামনে আমার চেয়ারে বসলাম।
-অবাক হচ্ছেন? আমাকে নিয়ে তো আপনার অন্ততঃ অবাক হবার কথা না।
ঠিক বলেছে। She is always full of surprises, a complete package. You will never know what comes next!
-কবে জেনেছেন? গতকালকে না আজকে খোঁজ খবর নিয়ে বের করেছেন?
-সেটা ইম্পরট্যান্ট কোন বিষয় না। আপনি ওকে নিয়ে কি করতে চাচ্ছেন সেটা শুনতে চাচ্ছি!
আমার মনে অতি সূক্ষ্ম একটা চিন্তা এক ঝলক দিয়ে চলে গেল। এটা কি সম্ভব? তবে শবনমের পক্ষে কোন কিছুই অসম্ভব না। আজকে ওকে বেশিই ঠান্ডা দেখছি। কাহিনী নিশ্চিত খারাপ। কালকে যা শুনেছে তাতে সব ফ্যাসিনেশন মনে হয় অলরেডী কর্পূরের মতো উবে গেছে। আগে দেখি ও কি বলে?
-কি, মোবাইল বের করে রেকর্ডিং করবেন না?
আমার প্রায় মাথায় হাত অবস্থা। গতকালকে কিভাবে ও টের পেল? বাপরে বাপ! কোন বাপ একে জন্ম দিয়েছিল? লম্বা একটা স্যালুট দিয়ে আসা দরকার! পরাজিত সৈনিকের মতো সারেন্ডার করে মোবাইল টা বের করে ওর সামনে টেবিলে রাখলাম। কোন কথা বলাই বিপদ এখন!

সূক্ষ্ম একটা হাসি মুখে নিয়ে শবনম আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকটা হটাত মোচড় দিয়ে উঠল। একটা সময় ছিল যখন ওর এরকম একটা হাসির জন্য আমি হেঁটে প্যারিস যেয়ে অ্যাইফেল টাওয়ারের উপর উঠে সেখান থেকে লাফ দিতেও রাজি ছিলাম। এটা কি করলে তুমি শবনম? কাকে তুমি বেছে নিয়েছিলে? কেন? কোথায় আমি তোমাকে রাখতাম আর এখন কোথায় তুমি? বুক থেকে বের হয়ে আসা বড় দীর্ঘ শ্বাষটা বুকের মাঝেই চাপা দিয়ে দিলাম। চুপ করে আছি আমি।

-মাঝে মাঝেই তো আপনাদের বিভিন্ন এ্যাকশন নিউজ দেখি পত্রিকাতে ইয়াবা নিয়ে।
এটা কি ইংগিত দিল শবনম? মাই গড! জীবনে চতুর্থ বারের মতো শবনম কে নিয়ে আমি মুগ্ধ হলাম। ক্লাস, একেবারে জেনুইন ক্লাস। আমি কালকেই যা ভেবে ছিলাম। বলেছিলাম না ইতরটার কপালে খারাপি আছে। আমাকে কি কম প্যারা দিয়েছিল? সেই স্মৃতি ভূলি কি করে কিন্তু চার জন? মাথা নাড়লাম। সম্ভব না।
-চার জন একটু বেশী হয়ে যায়? হইচই পড়ে যাবে!
-বাকি তিন টাকে নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই।
যাক বাঁচা গেল। এটা কোন ব্যাপারই না। এটা তো অলরেডী প্লান করা। আজকে রাতে এমনিতেই লম্পট টা ইতিহাস হয়ে যেত! শবনম ১১০% কনফার্ম করলো, এই আরকি!
শবনমের প্রোপজাল শুনে আমি দাঁত বের করে হাসি দিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা দুই জন কোন এক বিষয়ে একমত হতে পারলাম। খারাপ কি?
-আপনাদের খরচ আর দায়িত্ব নিয়ে গত কালকে আমাকে টীজ করেছেন। আপনার দেখি সাহস হয়েছে খুব! আমাকে ঘাটাবেন না। আগের বারের কথা ভুলে গেছেন, এত তাড়াতাড়ি?
মাথা নাড়লাম দুই দিকে, ভূলিনি। কি করে ভূলি। যত টুকু ভূলে ছিলাম ওকে দেখে আবার সব মনে পড়ে গেছে।
-গতকালকে যা বলেছিলাম সেটা আজকের জন্যও প্রযোজ্য। আপনি এমনিতেই ফ্রি করে দিতেন সেটা আমি জানি। অনেকদিন পর ওকে বাটে পেয়েছেন, অনেক পুরানো হিসাব। কিন্তু একা পারবেন না। বাকিদের তো খরচ লাগবে, তাইনা?
সত্য কথা। এসব এক্সক্লুসিভ কাজ ফ্রি ফ্রি হয়না। আমি যদি করাতাম তবে অন্য দিক দিয়ে পুষিয়ে দিতাম। শবনমের সাথে আরগুমেন্ট করে কোন লাভ নেই।
-সব কিছু সুন্দর করে সামাল দিবেন । আমি কিন্তু আপনার পারফরমেন্স চেক করবো।
লাষ্ট কবে শবনম আমার সাথে এত সুন্দর করে কথা বলেছে মনে করতে পারলাম না। আমাকে তো শুধু রাখতো কঠিন ঝাড়ির উপর!
-ঠিক আছে আপনি যেরকম চান।
সুন্দর করে একটা হাসি দিল শবনম। তারপর বললঃ
-আমি কিছুই চাই না, জানিও না। এটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি শুধু একটা চেক সাইন করে রেখেছি। এই নিন। এ্যামাউন্টটা বসিয়ে দিয়েছি আমার পক্ষে সর্বোচ্চ যা সম্ভব।
চেকটা হাতে নিয়ে দেখলাম একটা ছোট সাদা কাগজ চেকের সাথে ষ্টাপল করা। এটা আবার কি? উল্টে দেখলাম একটা মোবাইল নাম্বার লেখা। মুখ উচু করে শবনমের দিকে তাকালাম।
-আমার মোবাইল নাম্বার। একসময় তো এটা খুঁজতে খুঁজতে প্রায় কেয়ামত বানিয়ে ফেলেছিলেন।
কিছু না বলে চেকটা ভালো করে দেখলাম। সব ঠিক আছে শুধু প্রাপকের নাম লিখে নাই। এমাউন্ট পাঁচ লাখ। ভালো এমাউন্ট দিয়েছে। এত লাগতো না।
-বেশী দিয়ে ফেলেছেন। ইচ্ছে করলে কমিয়ে দিতে পারেন। অর্ধেকেই আমি সামলে নিতে পারবো।
-যেটা আছে সেটাই থাক। কম লাগলে অন্য কোথাও খরচ করব ফেলবেন।
-শুধু শুধু বেশী দিচ্ছেন কেন?

কিছু না বলে শবনম উঠে দাড়ালো। মনে হয় চলে যেতে চাইছে। যাক। দরজার কাছে যেয়ে আমার দিকে ঘুরে বললঃ
-এটা আমার মোহরানার টাকা। কাছে রাখতে ঘৃণা লাগছে। বাকিটা আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন, কিন্তু আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না, প্লীজ।

জীবনে প্রথম বারের মতো শবনম আমাকে প্লীজ বলল, আমি কিভাবে ওকে ফিরিয়ে দেই? এটা কি আসলেও আমার পক্ষে সম্ভব?
আর একটা কথাও না বলে দরজা খুলে শবনম চলে গেল। আর আমি ওর চেকটা হাতে নিয়ে আমার অফিসের চেয়ারে অবাক হয়ে বসে আছি। জীবন টা আসলেই কত অদ্ভুত, কত রকমের ট্যুইস্ট, কখন যে কি ঘটবে আমরা কেউই জানি না। আজকে যে রাজা বাদশাহ কালকে তার হয়তো অস্তিত্বও নেই। এরই মাঝে বেঁচে থাকাটা একেবারে মন্দ নয়, কি বলেন?


এর আগের পর্বগুলি পড়ে আসুন এখান থেকে:
গল্প - শবনম কাহিনী ১ - কুসুম কুসুম প্রেম (প্রথম পর্ব)
গল্প - শবনম কাহিনী ১ - কুসুম কুসুম প্রেম (শেষ পর্ব)

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, সেপ্টেম্বর, ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৫
৪২টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×