রাত প্রায় বারটা বাজে। ঘরের লাইট নিভিয়ে বেডে শুয়ে পড়েছি ঘুমিয়ে পড়ার জন্য, সকালবেলা অফিসে যেতে হবে। ঠিক সেই সময়ই ফোনটা এলো মোবাইলে। অন্ধকার ঘর, বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা কাছে নিয়ে নামটা স্ক্রীনে পড়ার পরই স্তব্ধ হয়ে রইলাম। রিংটোন বেজেই চলছে। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছি আমি, ধরব কি ধরব না ভেবে ঠিক করতে পারছি না। মোবাইল ধরা হাতটা কাঁপছে। এতদিন পর আবার সেই নাম্বারটা দেখে বুকের মাঝেও কালবৈশাখীর ঝড় উঠল। অবচেতন মনেই হয়ত রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো সেই পরিচিত একটা কন্ঠস্বর, এতটুকুও বদলায়নি, সেই আগের মতোই আছেঃ
-ফোন ধরছিলে না কেন? কতক্ষন ধরে রিং বাজছিল।
-কি হবে ধরে?
-কালকে সকালবেলা তোমার বাসায় আসব। কোথাও যাবে না। আমি এসে যেন দেখি তুমি বাসায়ই আছো।
-কেন?
আমার প্রশ্নের উত্তর দেবার আগেই লাইনটা কেটে গেল। এতটা দিন পরে হুট করে ও কেনই বা ফোন দিল আর কালকে বাসায় থাকতে বলল কিছুই বুঝলাম না। আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে তো চলেই গিয়েছিল, আবার কেন দেখা করতে চাইছে? ভালোবাসা তো এখন আমার কাছে দুঃসহ এক আবেগ, যেটা আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। ফোনটা রেখে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে হঠাৎই আমি উপলব্ধি করলাম এই ভাঙ্গা হৃদয়ের প্রতিটি টুকরো যেন আজও ওকে বেহায়ার মতো প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসে। এই নশ্বর পৃথিবীতে কারও ভালোবাসা না পেয়ে হয়ত কোন এক ভাবে বেঁচে থাকা যায়, কিন্তু কাউকে ভালো না বেসে ভালো ভাবে বেঁচে থাকা যায় না.....................
এক
সকালবেলা ঘরে ঢুকেই নীলা সোজা খাটে যেয়ে বসল আগের মতো। পা দোলাতে দোলাতে আমাকে জিজ্ঞেস করলোঃ
-আমাকে এখনই বিয়ে করতে পারবে? এই মুর্হুতে?
প্রস্তাবটা শুনে আমি হতম্ভব হয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে আছি, বলে কি এই মেয়ে?
-এখন মানে এখন। মাত্র পাঁচমিনিট সময় দিলাম তোমাকে। চিন্তা ভাবনা করে বলো পারবে কিনা?
নীলার হঠাৎ এই প্রস্তাব শুনে আমার মাথায় এখন একসাথে অনেক কিছু চর্কির মতো ঘুরতে শুরু করল। কেমন যেন দ্রুতই সবকিছুই তালগোল পাঁকিয়ে যাচ্ছে! কিছুই বুঝতে পারছি না কি বলব নীলাকে।
-আগেরবারও অপশন দিয়েছিলাম। তখনও কিন্তু তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পার নি। ঠিক একবছর পর আসলাম। এর পরেরবার যে অপশন আমি তোমাকেই দিব, সেটা তুমি কিভাবে ভাবলে?
নীলার এতক্ষন আমাকে যা বলল সবগুলিই নির্ভেজাল সত্য কথা। গতবার যখন নীলা একই প্রস্তাব দিয়েছিল আমাকে, তখন আমি হুট করেই বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হতে কিছুটা ইতস্ততঃ করছিলাম। কেবল দুইমাস হলো জীবনের প্রথম চাকরি পেয়েছি। বাসা ভাড়া নিতে পারিনি, তখনও মেসেই থাকি। চাকরীও পারমানেন্ট হয়নি। বেতনও শুরুতে খুব একটা ভালো নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে। বাবা মা ভাই বোন সবাই গ্রামে থাকে। সেখানেও টাকা পাঠাতে হয়। জীবন মাত্র একটা কিন্তু বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। হুট করে হ্যাঁ কিছুতেই যেন বলতে পারছিলাম না। বুকের ভিতর দোনমন্যতা নিয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম নীলার দিকে অনেকক্ষন। কোন কুলক্ষনেও ভাবিনি এই মেয়ে এরপরই এত বড় একটা অঘটন ঘটাবে। কিছুই না বলে হাসিমুখে আমার মেস থেকে চলে গেল। পরের পাঁচদিন কোন খোঁজখবর নেই ওর। আমি পাগলের মতো আঁতিপাঁতি করে আমার পরিচিত সবজায়গায় খুঁজে ফিরছি। কোন হদিসও নেই। মোবাইল ফোনটাও ইচ্ছে করেই বন্ধ রেখেছে। আমার প্রায় মাথা খারাপ অবস্থা। নীলা কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুই জানি না। পাঁচদিন পরে হুট করে একটা মেসেজ পেলাম নীলার কাছ থেকে। মেসেজটা পড়ার সাথে সাথেই আমার মাথায় সারা আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়ল।
-আমি বিয়ে করে ফেলেছি। তুমি এখন আরও বেশী বেশী করে ভাবো। সারাদিন বসে বসে ভাবতে থাকো। আমার এত চিন্তা ভাবনা করার সময় নেই। বিয়ে করতে ইচ্ছে করছিল, তাই করে ফেলেছি। তোমার প্রয়োজন না থাকতে পারে কিন্তু আর কতদিন আমি একা থাকব? তুমি তো বুঝতেই চাইলে না।
পাঁচমিনিট পরে নীলা এক লাইনের আরেকটা মেসেজ পাঠাল। কলিকাতার একটা গানের প্রথম লাইনঃ
-আর কতরাত একা থাকবো?
কলিকাতার কোনো কিছু আমার এমনিতেই পছন্দ নয়। এখন গানের এই লাইনটা শুনে মেজাজ পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেল। আগুন ধরে গেল মাথায়। শালার নটী গায়িকা! এইসব গান না গেয়ে রাস্তায় যেয়ে দাড়ালেই তো পারতো! গানের সাথে সাথে কিছু এক্সট্রা ইনকামও হতো!
সুতরাং দ্বিতীয়বার ওয়েট করার প্রশ্নই উঠে না। এতটা পাগল আমি হইনি এখনও। যেই চরম শিক্ষা হয়েছে প্রথমবার, এই মেয়েকে নিয়ে কোন রিস্ক নেয়া যাবে না। নীলা চাইলে পারে না এমন কিছু নেই। বাসায় লুংগি আর টিশার্ট পড়ে আছি এখন। যা পড়ে আছি সেটা পড়ে তো আর বিয়ে করতে যাওয়া যাবে না। ড্রেস পরিবর্তন করার সময়টুকু চাইলাম নীলার কাছে। বাথরুম থেকে ড্রেস পরিবর্তন করে এসে দেখি উনি লাল টকটকে লিপষ্টিক লাগাচ্ছে ঠোটে। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যায় না। বুকের ভিতর ভিষন জ্বালাপোড়া করে। মেয়ে বেশী ফর্সা না কিন্তু মাথা খারাপ টাইপের ফিগার। আর ওর যা হাসি! উফ, একটা হাসি দিলেই পুরো হৃদয়টা ঠান্ডা হয়ে যায়।
প্রথমবার এই হাসি দেখেই পাগল হয়ে আমি নীলার প্রেমে পড়ি। ওর হাসিটা সুন্দর, তবে যেন তার চেয়েও অদ্ভুত কিছু আছে এর মাঝে। হঠাৎই অনুভব করলাম ওর হাসি যেন আমাকে প্রবল ভাবে নীলার কাছে যাবার জন্য ডাকছে। শুধু ওর দিকে একপলক তাকাতেই এক তীব্র ভালোলাগা বুকে অনুভব করলাম। আর সেই সঙ্গে বুকে একটা তীব্র ভয়ও জেগে উঠল, ও যদি আমার না হতে চায়? সহসা অচেনা এক চঞ্চলতা আর অজানা এক অস্থিরতা এসে মুহুর্তেই আচ্ছন্ন করে ফেলল আমাকে। কাউকে ভালোবাসা বাসির জন্য অনন্তকালের প্রয়োজন নেই, শুধু একটি মুহুর্তই যথেষ্ট। হৃদয়ের সেই দুর্বলতম মুহুর্তে আমি হুট করেই ওর প্রেমে পড়লাম। আর এটাই হলো প্রথম দেখায় আমার নীলার প্রেমে পড়ার সুতীব্র আকুতি।
ওর হাসিগুলি যেন ঘোরের মতো মনে হয় আমার কাছে। যতক্ষন ও আমার কাছে থাকে আমি যেন ঘোরের মধ্যে থাকি। নীলা যাই করে আমি তার কোন প্রতিবাদ করতে পারি না। কোনদিন ওর কিছুতে না বলার সাহস কখনও হয়নি আমার। আমি শুধুই চাইতাম ও আমার পাশে বসে সুন্দর করে হাসবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো! আমার মনের এই লুকায়িত ইচ্ছাটার কথা কিভাবে কিভাবে যেন পাজিটা জেনে ফেলেছিল। অথচ আমি কখনই ওকে এটা বলিনি। আর এটা জানার পর থেকেই কারনে অকারনে ও আমার সামনে শুধু হাসতো। আর আমিও নীলার প্রেমের ছোট ছোট জাল থেকে আরও বড় জালে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে যেতাম...
আলমিরা খুলে টাকা বের করলাম। কাজী সাহেব তো আর আমার মামা বা চাচা নন যে ফ্রি ফ্রি বিয়ে পড়িয়ে দেবে। তাছাড়া নীলাকে নিয়ে আমার আরেকটা গোপনতম ইচ্ছে আছে। বিয়ের পর ওকে আমি একটা নীল রঙ্গের কাতান শাড়ী কিনে দেব। ও এই নীল শাড়ীটা পড়ে আমার ভালোবাসার নীলাপরী হয়ে যখন আমার সামনে এসে দাঁড়াবে, তখন আমি সাহস করে ওকে জড়িয়ে ধরব। নীলা আমাকে ইচ্ছেমতো বকা দিয়ে বলত, আমি নাকি একটা আস্ত ভীতুর ডিম। ওর হাত ধরতেও নাকি সাহস পাই না। আমি ওকে ভালোবসে জড়িয়ে ধরতে চাই, আমার হাহাকারে ভরা শুন্য এই হৃদয়ের ওকে আশ্রয় দিতে চাই। ওর মনের মতো সাহসী প্রেমিক পুরুষ হতে চাই!
দুই
সাত সকালবেলা এত তাড়াতাড়ি আমাদেরকে দেখে কাজী সাহেবও কিছুটা অবাক হয়ে গেলেন। আমাদের দুইজনেরই তাড়াহুড়ো দেখে কাজী সাহেব সাথে সাথেই বিয়েটা পড়িয়ে দিলেন। বিয়ের পরপরই ম্যারেজ রেজিস্টার খাতায় সাইন করার জন্য যখন আমার সামনে দেয়া হলো, আমি নিজের দুই চোখকেও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বর আর কনের জায়গায় আমাদের দুইজনের নাম দেখে বাম হাতে চিমটি কেটে নিশ্চিত হলাম, আমি কোন দিবা স্বপ্ন দেখছি না। নিজের নামের পাশে সাইন করার সময় হাত কিছুটা কাঁপছিল। প্রথম বিয়ে বলে কথা! খাতাটা নীলার সামনে দিতেই ও আমার হাত থেকে কলমটা নিয়ে গটগট করে সাইন করে দিল আর আমার দিকে তাকিয়ে ওর সেই ভূবন ভুলানো হাসিটা উপহার দিল আমাকে। ওর সেই ভালোবাসা মাখা হাসিটা দেখে আমি গত একবছরের সব দু:খকষ্টগুলি সহসাই ভুলে গেলাম। আমি ওকে ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না। গত একটা বছরের প্রতিটা সেকেন্ড আমি কি জাহান্নামের মধ্যে দিয়ে পার করেছি আর কতটা অভিমান বুকের ভিতর পাথর চাপা দিয়ে বেঁচে ছিলাম সেটা শুধুই আমি আর আমার সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
তিন
বকশি বাজারের কাজী অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। নীলা পাশে এসে দাঁড়িয়েই আমার ডানহাতটা জড়িয়ে ধরলো। আমি অসীম নীল আকাশের দিকে তাকালাম। আহ, জীবনটা আসলেই কি সুন্দর! কি যে ভালবাসি আমি নীলাকে, ওর জন্য মনে হয় পায়ে হেঁটেই আমি খোদ এভারেস্ট পর্বতেও উঠে যেতে পারবো হাসি মুখে। জীবনের এই মাহেন্দ্রক্ষনে এসে নিজেকে আজ পরিপূর্ন একজন পুরুষ মনে হচ্ছে!
হাসি মুখে নীলা জানতে চাইলোঃ
-এখন কি করবো আমরা?
-প্রথমেই নিউমার্কেটে যাবো তবে আগে খেতে হবে। সকালবেলা নাস্তা খাবার সময়ও দিলে না তুমি। ভালোই খিদে পেয়েছে। তাছাড়া, অনেকদিন হলো তোমাকে ভালো কোন ট্রিট দেই না। চলো ষ্টার এ যেয়ে খেয়ে আসি।
ষ্টার রেস্টুরেন্ট হলো নীলার সবচেয়ে পছন্দের খাবার জায়গা। না করার প্রশ্নই উঠে না। নিজেই এগিয়ে যেয়ে রিকশা ডেকে ভাড়া ঠিক করে ফেলল। রিক্সায় উঠার আগেই ওর সুন্দর হাসিটা আবার দেখতে পেলাম। আহ! এই জীবনে বেঁচে থাকা সত্যি দারুন আনন্দের।
নিউমার্কেটে টুকটাক বিভিন্ন কিছু কিনে রিকশায় করে দুইজনই আমার বাসায় ফিরছি। কতোদিন হলো ওর সাথে এভাবে ঘোরাঘুরি করি না। ওর ডানহাতটা আমার দুইহাতের মধ্যে শক্ত করে ধরে রেখেছি। একবার নিজেরই ভুলে ছেড়েছি, আর কখনও এই হাত ছেড়ে দেব না।
-রেডিমেইড ব্লাউসটা মনে হয় ভালো ভাবে ফিট হবে না!
-না হলে নেই! পড়বে না, কি দরকার ব্লাউজ পড়ার? আমার জন্য নীলশাড়ীটা পড়লেই যথেষ্ট!
সারা সময় ও হাসে আর এবার আমি দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম। নির্ঘাত কঠিন একটা ঝাড়ি খাবো। অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটল। নীলা অবাক চোখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।
-তোমার কিভাবে এতো সাহস হলো?
-আমি জানিনা, সত্যই জানি না।
-তোমার এতো সাহস আগে থাকলে তো, এই একবছর দুইজনের কাউকেই এতো কষ্ট করতে হতো না।
হঠাৎ মনে পড়তেই জিজ্ঞেস করলাম নীলাকেঃ
-ঐ ছেলেটাকে ছেড়ে আসলে কেনো?
-ও একটা আস্ত রোবট। সারাদিন মনে হতো আমি একটা রোবটের সাথে সংসার করছি। তাও বিয়ের কথা ভেবে চেস্টা করেছিলাম তোমার ভালোবাসা ভুলে যেতে। একবছর অনেক লম্বা সময়। তবুও পারলাম না। হৃদয়ের মাঝে একজনকে সযতনে রেখে আরেকজনকে নিয়ে তো আর সারাজীবন সংসার করা যায় না!
নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সত্য কথাই বলছে। কেন যেন এই বিষয়ে ওকে আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। হয়তো ওকে আর কিছু বলবও না। নীলাকে আমি আবার ফিরে পেয়েছি, এটাই যথেষ্ট আমার জন্য। আমি ওকে সত্যই ভালোবাসি, একদম পাগলের মত। আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস যেমন সত্য, তেমনি নীলার জন্য আমার বুক ভরা ভালোবাসাও সত্য।
সত্যিকারের ভালোবাসা হলো কাউকে জয় করা নয় বরং নিজেরেই পছন্দের মানুষের কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করা। কোন বাহ্যিক দৃষ্টি দিয়ে এর গভীরতা মাপা যাবে না, মাপতে হবে হৃদয়ের পবিত্রতম আবেগ দিয়ে। নিজের মনের মানুষের কাছে হেরে যাওয়া কখনও কষ্টের, আবার কখনও আনন্দের। মানুষ কতই না ত্যাগ স্বীকার করে ভালোবাসার মানুষকে একান্তই কাছে পাবার জন্য। আবার এই ভালোবাসার জন্যই কত কিছুই না জীবন থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় যেটার জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও হয় না।
জীবনে চলার পথে কি কি পেয়েছি আমরা সেটা হামেশাই ভুলে যাই, কিন্তু কি কি হারিয়েছি সেটা কেন যেন বার বার মনে পড়ে ব্যাকুল হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করে তোলে। কি লাভ অতীতের দুঃসহ স্মৃতি মনে করে বর্তমান আর ভবিষ্যতকে কলুষিত করার! বরং ফেলে আসা কষ্টগুলি তাতে আবার তরতাজা হয়ে উঠে, বিভিষিকাময় করে তুলে আবার নতুন করে সাজান গুছানো জীবনটাকে.....................
চার
বাসায় ঢুকার পর নীলা আমাকে বেডরুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। ড্রেস চেন্জ করে শাড়ীটা পড়বে মনে হয়। আমাকে ড্রইংরুমে অপেক্ষা করতে বলল। সোফায় বসে টিভিটা ছেড়ে দিলাম। চ্যানেল চেঞ্জ করতে যেয়ে দেখি কার্টুন নেটওর্য়াকে নায়ক বেনটেন ধাসুম ধুসুম করে ইচ্ছেমতো মারামারি করছে। ইস, ওর মতো যদি আমার একটা ঘড়ি থাকতো? ফেলে আসা গত একবছরের সবকিছু যদি একবার পাল্টে দিতে পারতাম! আর নীলার দেয়া প্রথম সেই সুযোগটা যদি আবার পেতাম তাহলে তখনই গ্রহন করে নিতাম!
খুট করে একটা শব্দ হলো, নীলা মনে হয় দরজা খুলে দিয়েছে! এইবার শুরু হবে আসল ধাসুম ধুসুম! পাক্কা একবছরের আসলের সাথে এর সুদটাও বেশ বড় হয়ে গেছে! এখন আর ওকে ভয় কিসের? পুরোটা এবার কড়ায় গন্ডায় আদায় করব নীলার কাছ থেকে।
টিভিটা বন্ধ করে বেডরুমে এসে ঢুকলাম। নীলার দিকে তাকাতেই প্রায় মাথা ঘুরে পড়ে যাবার মতো অবস্থা আমার! পাজিটা ঠিক ঠিক ব্লাউজ পড়েনি। আমি আগে থেকেই জানি নীলার পক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নাই। আমার দিকে তাকিয়ে ওর ট্রেডমার্ক হাসি দিয়ে বললোঃ
-রেডিমেইড ব্লাউজটা কোন ভাবেই ফিট হচ্ছে না। পড়তেই পারলাম না। আমার না অনেক লজ্জা লজ্জা লাগছে!
ওকে দেখে মনে হলো না ও কোন লজ্জা পাচ্ছে। নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সহসাই পৃথিবীর সবকিছু ভুলে গেলাম। ওর খুব কাছে যেয়ে বললামঃ
-নীলা আমি তোমাকে ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি।
নীলা চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ
-খবরদার আমাকে বেশি ভালোবাসবে না। বেশি ভালোবাসায় আমার অ্যালার্জী আছে!
-তোমার অ্যালার্জীর আমি খ্যাতা পুরি। অনেক সহ্য করেছি আর না। বিয়ের পর মেয়েদের বেশি প্রশয় দিতে হয় না, দিলেই মাথায় উঠে বসে।
গভীর ভালোবাসায় ওকে আমি বুকে টেনে নিলাম। নীলা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললঃ
-আবার কি?
-একটা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি আছে এখনও!
-কোনটা?
দুইহাত দিয়ে ওর মাথা উঁচু করে বললামঃ
-তোমার লাল টুকটুকে ঠোঁটে আমি আমার ভালোবাসার পরশ এঁকে দিতে চাই!
পাঁচ
নীলা বিছানায় শুয়ে আমার দিকে একরাশ দুষ্টামি চোখে নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমার মুখে এখন বিশ্বজয়ের হাসি। শেষ বিকালের সোনালী মিষ্টি রোদেলা আলোগুলি যেন জানালার ফাঁক গলে গলে আছড়ে পড়ছে আমাদের দুজনেরই গায়ে।
নীলার বাঁধভাঙ্গা হাসিতে উদ্ভাসিত চারিদিক। বিকালের শেষ হয়ে আসা আলো সাক্ষী হয়ে রইলো একটি নতুন সূর্যাস্তের আর একজোড়া প্রাণের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ইতিহাসে।
উৎর্সগঃ
মূল গল্পটা ব্লগার কথার ফুলঝুরিকে যেহেতু উৎর্সগ করা হয়েছিল, এটাতেও সেটা পরিবর্তন করলাম না। উনি এখন নিয়মিত ভাবেই ব্লগে অনিয়মিত। ভবিষ্যতে এই ধরনের অব্লগীয় কর্মকান্ড নিয়মিত চালালে উনাকে উৎর্সগের ব্যাপারে অন্যরকম চিন্তাভাবনা করা হবে।
এই ব্লগে আমার লেখা প্রথম গল্প এটা, যদিও পরে পোস্ট করা হয়েছিল। এটার জন্য আমার হৃদয়ে আলাদা একটা সফট কর্নার আছে। তাই এটাকে ঘষেমেজে আবার নতুন বোতলে ঢেলে দিলাম আর মূল্যায়নের দায়ভার যথারীতি আমার সম্মানিত পাঠকদের কাছেই রেখে গেলাম।
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীলআকাশ, মার্চ, ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৭