somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নষ্ট সমাজ ব্যবস্থাঃ একজন কুখ্যাত শিল্পপতির মৃত্যু ও মজুদদার (ইহতিকার) এর আসল পরিনতি

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদের জন্য ব্যবসাকে করেছেন হালাল এবং সুদকে করেছেন হারাম। ব্যবসাকে আল্লাহ তাআলা হালাল বা বৈধ বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত জীবিকাকে সর্বোত্তম বলেছেন।

ব্যবসা বলতে কোনো হারাম ব্যবসা না, হালাল পন্যের হালাল ব্যবসাকে বুঝায়। ইসলামে মজুতদারি করা এবং অযথাই পণ্যের দাম বাড়িয়ে জুলুমের মাধ্যমে লোকজনের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা পুরোপুরি হারাম ও নিষিদ্ধ। স্বাভাবিকভাবে পণ্য মজুত করে ব্যবসা-বানিজ্যের উদ্দেশ্যে বেঁচা-কেনা করা সাধারণত হালাল বা বৈধ। ব্যবসার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হলো মৌসুমী পণ্য কিনে রেখে বেচা-কেনা করা যাবে।

কিন্তু কেউ যখন মৌসুমী পণ্য এই নিয়তে কিনেছেন যে, তিনি জানেন বাজারে এর সংকট তৈরি হবে। বাজারে সংকট তৈরির উদ্দেশ্যেই তিনি পণ্য কিনে মজুত করবেন আর বাজারে সংকট তৈরি হলে এ পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে আর এর দামও বাড়বে অনেক বেশি। তখন তিনি কম কম করে বেশি দামে বাজারে তা বিক্রি করবেন। এভাবে বাজারে সংকট তৈরির উদ্দেশ্যে পণ্য মজুত করা হয় তবে তা বৈধ হবে না। কারণ তখন এটি ব্যবসায় অন্তর্ভূক্ত হবে না। ওই ব্যক্তি অপরাধী ও কবিরাহ গুনাহগার হবেন। হাদিসে এসেছে:
"রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মজুদদার খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায় তাহলে চিন্তিত হয়ে পড়ে, আর যদি মূল্য বেড়ে যায় তাহলে আনন্দিত হয়।" (মিশকাত শরীফ)

এভাবে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় হালাল খাদ্যসামগ্রী গুদামজাত করে কিংবা মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোকে ইসলামের পরিভাষায় ‘ইহতিকার’ বা মজুতদারি বলা হয়। ইসলামে মজুদদার ব্যক্তিকে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এই বিষয়ে হাদিসে এসেছে অনেক সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে:
১. ‘যে ব্যক্তি বাজারে পণ্যের অভাবের সময় পণ্য মজুদ করে রাখে সে বড় পাপী।’ (মুসলিম)
২. ‘আমদানিকারক রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর মজুদদার হয় অভিশপ্ত।’
৩. ‘বিভ্রান্ত লোকই শুধু মজুদদারী করে।’ (ইবনে মাজাহ)
৪. ‘যে মুসলিম সম্প্রদায়ের খাদ্যদ্রব্য চল্লিশ দিন যাবত মজুদ করে রাখবে আল্লাহ তাকে দূরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দিয়ে শাস্তি দিবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
৫. ‘যে ব্যক্তি চল্লিশ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ করবে তার সঙ্গে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’
৬. ‘মূল্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদ রাখে, সে ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট।’ (মিশকাত)

সম্প্রতি বাংলাদেশের একটা শিল্প প্রতিষ্ঠানের (সিটি গ্রুপ) কর্ণধার স্ট্রোক করে মারা গিয়েছেন এবং তাকে নিয়ে দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় প্রশংসা করে বড় বড় করে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি পরায়ণ বিভিন্ন পত্রিকায় ও মিডিয়াতে তাকে নিয়ে গাল ভরা বক্তৃতা দেওয়া হচ্ছে। যেই দেশে এরশাদ মারা যাওয়ার পরে তাকে ভালো মানুষ বলা হয়েছে, সেখানে সবই সম্ভব!

সত্যি কথা বলতে কি, বিগত কয়েক বছরে এই দেশের অসহায় সাধারণ মানুষদেরকে হয়রানি মাধ্যমে ব্যবহার্য বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের দাম দুই গুন তিন গুন করে কিনতে বাধ্য করেছিল এই ভদ্রলোকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আজকে দেশে সয়াবিন তেলের দাম কিংবা চিনির দাম এত উচ্চমূল্য হওয়ার পেছনে এই লোকের অবদানের কথা কোনোভাবে অস্বীকার করা যায় না।

আজ উনি মারা গিয়েছেন। মানুষের পকেটের টাকা মেরে অনেক অবৈধ টাকা রোজগার করেছিলেন। কিন্তু উনি ভুলে গিয়েছিলেন "কাফনের কাপড়ের কোনো পকেট থাকে না"। অজস্র অসহায় গরীব মানুষের চোখের জলে মিশ্রিত রোজগারের টাকা উনি এভাবেই লোপাট করেছেন দিনের পর দিন ।

কী লাভ এই হারাম টাকা রোজগার করে? মরতে তো হবেই! আজ পর্যন্ত কেউ কি বাঁচতে পেরেছে? নমরুদ কিংবা ফিরআউন?

সেই সাড়ে তিন হাত মাটির নিচেই তো এই হারাম মজুদদারকে যেতে হয়েছে। সাদা কাফনের কাপড়ে কোনো পকেটে নেই যে হারাম টাকাগুলো উনি কবরে নিয়ে যেতে পেরেছেন যেন কবরে বসে ফুর্তি করতে পারেন!

এই সমস্ত মৃত্যু সাধারণ মানুষদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। ক্ষণিকের জন্য আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দেন যে সময় শেষ হলে সবাইকে এই মাটির নিচে আসতে হবে এবং তখন কোন দম্ভ করা চলবে না। এবং প্রত্যেকেই তার পাপের জন্য বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি ফেরত দেওয়া হবে। যত বড়ই নিজেকে আপনি মনে করেন না কেন!

আশা করছি, মুনকার নাকিরের জওয়াব সাওয়াল হওয়ার পরেই এই সমস্ত হারাম টাকার প্রতিটার পই পই করে হিসাব নেওয়া হবে।‌ হারাম এক পয়সার জন্যও একে মাপ করা হবে না, য ছিল এর বৈধ হিসাবের বাইরে! রাসূল বলেছেন:
"আর যে যুলুমকে উপেক্ষা করা হবে না তা হলো বান্দাদের একের প্রতি কৃত অন্যের যুলুম। আল্লাহ তাদের একজনের কাছ থেকে অন্যজনের ক্বিছাছ গ্রহণ করবেন।" (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯২৭, হাদীছ হাসান)

এই দেশের কোটি কোটি মানুষের ক্বিছাছ আপনি কী দিয়ে শোধ করবেন হাশরের ময়দানে?

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, ডিসেম্বর ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:২০
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×