বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ ও স্থায়িত্বের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে বাংলাদেশের মিডিয়া। আশ্চর্যজনক হলেও বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বৈরাশাসকদের পৃষ্ঠাপোষকতা করে আসছে। দেশের গণতন্ত্রের গলা টিপে মেরে ফেলে যখন বাকশাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তখনও চারটা পত্রিকার সাংবাদিকরা বাকশালের প্রশংসা করে নির্লজ্জের মতো করে খবর ছাপাতেন।
এই মিডিয়াগুলোর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ঘরনার এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটা বড় শ্রেণী হচ্ছে সুবিধাভোগী দালাল, যারা পতিতার চেয়েও নিকৃষ্ট। সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের জন্য এরা দেশের স্বার্থ হাসিমুখে জলাঞ্জলি দিতে পারে। এদের জন্য আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটা আদর্শ সংগঠন, যারা নিজেরা যেমন লুটপাট করে, সমমনা আশেপাশের সবাইকেই লুটপাট করার সুযোগ করে দেয়। এই মিডিয়া হাউজ গুলো ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ বিগত বহু বছর ধরে একটা কাজ খুব নিষ্ঠার সাথে করে আসছে। সেটা হচ্ছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এমন কোনো পত্রিকা বা নিউজ চ্যানেল ছিল না যেখানে তারেক জিয়ার দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রচার করতে করতে মানুষকে বিরক্ত করে না তুলছিল। তাদের প্রচার মাধ্যমগুলো দেখলে মনে হতো তারেক জিয়া একাই বাংলাদেশের সমস্ত টাকা লুটপাট করে নিয়ে গিয়েছে। অথচ সেই আওয়ামী লীগের আমলেই তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে না পারার কারণে একজন বিচারপতি তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছিল। সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরানতা জন্য এই বিচারপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং শুনেছিলাম সেই বিচারপতি প্রাণভয়ে দেশ থেকেও নাকি পালিয়ে চলে গিয়েছিলেন। খাম্বা থেকে শুরু করে এমন কোনো কিছু নেই যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি নামে অভিযোগ উঠায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার প্রচার মাধ্যম। অথচ আদালতে তার বেশিরভাগ কেস এখন দেখা যাচ্ছে যে যে পুরোপুরি মিথ্যাচার আর ভ্রান্ত।
অথচ এইসব মিডিয়া আর এইসব পদলেহনকারী সাংবাদিকরা বিগত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারবর্গের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেশ থেকে লুটপাট করার পরেও একটা টু শব্দ ও করেনি। এরা যে জানতো না এটা বললে পাগলও বিশ্বাস করবে না। এরা সম্পূর্ণ সুস্থ মাথায় স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধিতে এই সমস্ত সত্য কথা জনগণের কাছ থেকে লুকিয়ে এসেছে।
অন্তরে বাকশালী মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে তারেক জিয়া। তারা জানে যে খালেদা জিয়ার নামে দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি, দেশ বিক্রি করে দেওয়া এসব কোনো কিছুই জনগণকে বিশ্বাস করানো যাবে না। জিয়াউর রহমানের নামেও এই সমস্ত মিথ্যাচার করে কোনো লাভ হবে না। কিন্তু এই দুইজনের অনুপস্থিতিতে বিএনপির একসময় যিনি হাল ধরবেন, সেই তারেক জিয়ার নামে এখন থেকেই যদি জনগণকে এমন বিষিয়ে না তোলা হয়, তাহলে বাবা মায়ের মতো জনগণের কাছেও তারেক জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুণ বেশি হবে। যেটা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য কোনোভাবেই সুখকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না।
এই সদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা করে বহু আগে থেকেই আওয়ামী লীগ তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী মিডিয়া হাউস এবং সাংবাদিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে তারেক জিয়া নামে লেলিয়ে দিয়েছে একাধারে বানোয়াট মিথ্যাচার এবং দুর্নীতি নামে অসম্ভব সব কল্পকাহিনী একের পর এক সাজিয়ে জনগণের কাছে উপস্থাপণ করার জন্য।
বাংলাদেশের মানুষজন এসব সংবাদপত্র কিংবা টিভি চ্যানেলগুলিতে এই সমস্ত বানোয়াট দুর্নীতির কাহিনী পড়ে ও শুনে অনেকেই তারেক জিয়ার দুর্নীতির সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করেন। অথচ তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা এখন পর্যন্ত কোনোটাই প্রমাণিত না। অথচ সেই ঘটনা এমনকি আদালতে তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করে দিলেও সংবাদপত্র কিংবা টিভি চ্যানেলগুলো কখনোই সেটা জনগণের কাছে প্রকাশ করেনি। আর ঠিক এখান থেকে বুঝতে পারা যায় বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও মিডিয়া হাউজগুলো কিংবা টিভি চ্যানেলগুলোর উদ্দেশ্য কতটা দূষিত এবং নোংরাভাবে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট।
তারেক জিয়ার প্রতি আওয়ামী লীগের বিদ্বেষ রীতিমত পরিকল্পনা করে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশীদের মধ্যে তীব্র জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেম তৈরি করেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগ খুব ভালো করেই জানে যে যতদিন পর্যন্ত দেশের মানুষের মধ্যে এই জাতীয়তাবোধ পুরোপুরি ধ্বংস করে না দেওয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত এই দেশকে ভারতের একটা তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা যাবে না।
২০০১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল তখন সেই নির্বাচনে জেতার জন্য দলীয় কার্যক্রমের মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন তারেক জিয়া, বিশেষ করে ইয়ং জেনারেশনকে সাথে নিয়ে উনি দেশের মানুষের খুব কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন এবং উনার গ্রহণযোগ্যতাও যে অত্যন্ত বেশি দেশের মানুষের কাছে সেটা খুব সহজে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা বুঝে ফেলেছিল। তাদের কাছে এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট ছিল যে যতদিন পর্যন্ত তারেক জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা দেশের মানুষের কাছে নষ্ট করে না দেয়া যাবে, ততদিন পর্যন্ত বিএনপিকে কোনোভাবে ভেঙে ফেলে ধ্বংস করে দেওয়া যাবে না। কারণ জিয়াউর রহমানের ছেলের প্রতি জনগণের আস্থা ও মনোবল কোনোভাবে নষ্ট কিংবা ধ্বংস করে দেওয়া যাবে না।
আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেল তাদের সমমনা বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোকে দিয়ে খুব সচতুর উপায়ে একগাদা বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনী তৈরি করে সেটা প্রতিদিন প্রতি ঘন্টা ট্যাবলেট এর মতো করে দেশে জনগণকে খাওয়ানো শুরু করলো। জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করলো যে তারেক জিয়া প্রচন্ড দুর্নীতি পরায়ণ। তারেক জিয়া দুর্নীতি নিয়ে মিডিয়াগুলো যেভাবে একটানা অনেক বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংবাদ পরিবেশন করে গিয়েছিল, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে বিগতপূর্ণ বছর ধরে তাদের সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে কোনো সংবাদ বা রিপোর্ট তৈরি করা নিয়ে।
সুতরাং দেশে মানুষজনকে এখন স্পষ্টভাবে অনুভব করতে হবে যে এই মিডিয়া এবং টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্র এগুলো আসলে একটি পার্শ্ববর্তী দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বহু বছর ধরে কাজ করে আসছে। সুতরাং এদের প্রচারিত কোনো তথ্য সংবাদ বা রিপোর্ট কোনোভাবে গ্রহণ করা উচিত হবে না।
তারেক জিয়া রাজনীতিতে একেবারে কাঁচা কিংবা রাজনীতিক ব্যক্তি হিসেবে তৈরি হোননি এটাও প্রচার করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিল। অথচ এই ছাত্র আন্দোলনের সময় তারেক জিয়া রাজনীতিতে কতটা অভিজ্ঞ সেটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এই পুরো ছাত্র আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি ছাত্রদের পাশে থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গিয়েছে। কিন্তু এই ব্যাপারে তারেক জিয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল যে এটা কখনোই প্রচার করা যাবে না যে বিএনপি ছাত্র সংগঠনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই আন্দোলনে কাজ করেছে। এবং ৫ ই আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের পরেও বিএনপি এক মুহূর্তের জন্য এই বিজয়কে নিজেদের বলে দাবি করেনি। যদিও তারা এই ছাত্র আন্দোলনে উত্তালভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। এই বিজয় তাদেরও একটা পাওনা। শতশত বিএনপি নেতাকর্মী মৃত্যু ও আহত হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে ছাত্রদের আন্দোলনকে সফল করার জন্য বিএনপি কতটা অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করে গিয়েছে তারেক জিয়ার নির্দেশে।
বর্তমানে তারেক জিয়া তা দলের ভেতরে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমনের জন্য যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন সেটা সহজে চোখে পড়ে। সৎ ও চরিত্রবান একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে জনগণের একেবারে কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দলের ভেতরে অগ্রহণযোগ্য কাজগুলোকে কঠোর হস্তে দমন করা হচ্ছে, এমনকি এইজন্য দলের অনেক উঁচু পর্যায়ে নেতাকর্মীকেও কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, দখল ইত্যাদি কাজে বিএনপির রাজনৈতিক দল হিসেবে যে কোনো সমর্থন নেই সেটা স্পষ্টভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আর এর পিছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন স্বয়ং তারেক জিয়া।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা কিংবা দুইবারে বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না ইত্যাদি গণদাবিকে উনি প্রথম থেকেই স্পষ্ট উচ্চারণে দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
মাটি ও মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করা বিএনপির সামনে চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে এখন সময় এসেছে স্থায়ীভাবে জনগণকে পাশে নিয়ে লম্বা সময়ের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। দেশের মানুষের চাহিদা আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে পুরোপুরি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে আবার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আর এই কাজটার জন্যই তারেক জিয়াকে একেবারে সামনের কাতারে এসে দলের হাল শক্তভাবে নিজের হাতে নিয়ে নিতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের আদর্শ, দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি অতলান্তিক ভালোবাসার আহ্বানগুলো আবারো প্রতিষ্ঠা করার।
বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো করেই জানে, স্বাধীনতার যুদ্ধের পরে থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলো রাষ্ট্রনায়ক দেশের হাল ধরেছিলেন, তাদের মধ্যে একমাত্র নিখাদ দেশপ্রেম নিয়ে দেশকে সামনের দিকে জনগণকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করে সফলভাবে দেশের উন্নয়ন কাজ জিয়াউর রহমানই করতে পেরেছিলেন। আর তার অসমাপ্ত কাজগুলো এখন সম্পূর্ণ করার পুরোপুরি দায় দায়িত্ব তার বড় ছেলে তারেক জিয়ার কাঁধে এসে পড়েছে। উনি যদি এই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে না পারেন, তাহলে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বিএনপি জনগণের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ যুনাইদ
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৭