somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর সকল বাবারা ভালো থাকুক।

১৬ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রানা সাহেব অসুস্থ বেশ কিছুদিন থেকে, কী হয়েছে সেটা কোনোভাবেই ধরা পড়ছে না। অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে, অনেক টেস্ট করা হয়েছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা দেখে ইন্ডিয়া যাবার প্ল্যান করলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে এই চিকিৎসার খরচ বহন করতে করতে এখন নিম্নবিত্তের নিচে নেমে গেছেন, এর চেয়ে নিচে নামার কোন অপশান থাকলে সেখানেই থাকতেন। বড় ছেলের সাথে ইদানিং খুব একটা কথা হয়না, সে বিজি থাকে অনেক কিছু নিয়ে তবে তিনি বুঝতে পারেন নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে ছেলেটা যদিও বুঝতে দেয় না। নিজে তো বাবা, তাই সব বোঝেন।

প্রতি ঈদে ছেলে বাড়ি আসলে নতুন কাপড়ের সাথে যাবতীয় বাজার করে নিয়ে আসে, যদি জিজ্ঞেস করা হয় তোর নিজের জন্য কিছু কিনিস নাই? হেসে বলে, হ্যা খুব সুন্দর একটা পাঞ্জাবি কিনেছিলেন কিন্তু তাড়াহুড়া করে আসার সময় লন্ড্রি থেকে আনতে ভুলে গেছি বাবা। রানা সাহেব ধরে ফেলেন কারণ তার ছেলে মিথ্যা বলতে শেখেনি, আর বললেও ধরা পড়ে যায়। তাই তিনি না বোঝার ভান ধরেন, কারণ সে নিজেই ইস্ত্রি করে নিজের কাপড়। ছেলেটা নিজের কাজ নিজে করতে এত পছন্দ করে ভাবলে গর্ব হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিছুই আয় করতে পারেন না নয়তো ছেলেকে নিয়ে নিজ হাতে পাঞ্জাবি কিনে দিতেন। খুব ইচ্ছে সুস্থ হয়ে আসার পর ছেলেকে নিয়ে ইচ্ছেমত ঘুরবেন আর পছন্দের ৭টা পাঞ্জাবি কিনে দিবেন। ৭ শব্দটা ছেলের অনেক পছন্দের কেন জানি।

অবশ্য ছেলে তো পাগল টাইপের, দেখা যাবে সবগুলা পাঞ্জাবি টোকাই ছেলে বা চায়ের দোকানের ছেলেদেরকে দিয়ে দিবে। একবার তো তার এক বান্ধবী খুব পছন্দ করে তাকে একটা পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলো। তারপর সে সেটা পরে বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার পথে রিক্সাওয়ালা মামা নাকি বলেছিলো তার ছেলের নাকি এমন একটা পাঞ্জাবির খুব শখ কিন্তু অনেক দাম তাই দিতে পারেন নাই। ছেলে আমার পাঞ্জাবি খুলে সেই রিক্সাওয়ালাকে প্যাকেট করে দিয়ে রিক্সাওয়ালার শার্ট পড়ে মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। তারপর মেয়ে নাকি ব্রেকপা না কি জানি করেছিলো। আমি তো হেসে কুল পাইনা আর ছেলে বলে আব্বা আপনি আমার কষ্ট না বুঝে হাসতেছেন।

রানা সাহেব মনে মনে বলে পাগল ছেলেটা তোকে আমি না বুঝলে কে বুঝবে বল। পাগলামির ভেতরে যে ভালোবাসাটা আছে এটা সবাই বুঝেনা, দরকারও নেই সবার বোঝার, যারা বুঝবে তারা ঠিকই টেনে নিবে। তবে ছেলে আমার কাছে টানার মানুষ না, সে দূর থেকে মানুষকে ভালোবেসে, ভালো রাখতেই ভালোবাসে। রানা সাহেব ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসেন। কাল ফ্লাইট আছে সব ভালো করে গুছিয়ে নিতে হবে। ছেলের ফোন আসে তার ফোনে ফোন ধরতেই ছেলে সালাম দিয়ে একটু গম্ভীরভাবে কথা বলা শুরু করে। রানা সাহেব বুঝে ফেলেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে ছেলের। কথা শেষ হলে বুঝতে পারেন ছেলের খুব জরুরী একটা কাজের জন্য টাকা জোগাড় করতে পারেনি।

রানা সাহেব জানেন ছেলে নিরুপায় না হলে এভাবে টাকার কথা বলবেনা। কারণ এর আগে কখনও বলেনি। রানা সাহেব চিকিৎসার জন্য যাবেন এটা ছেলেকে বলেনি কারণ বললেই বাড়তি টেনশান করবে তাই। ৭বছর আগের কথা মনে পড়ল। ছেলে কাউকে না জানিয়ে বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলো। তারপর রানা সাহেব অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ছেলে সেই স্কলারশিপ ক্যান্সেল করে দিয়েছিলো যা উনি জেনেছেন অনেক পরে এক বন্ধুর মাধ্যমে। যদিও কিছু বলেন নাই কারণ পাগলা ছেলেকে বলে আসলে কিছু হবেনা। তাই ভাবলেন এবার না হয় ছেলের জন্য কিছু একটা করি যেহেতু তেমন কিছুই করতে পারেন নি। বিকাশ করে ছেলেকে টাকা পাঠালেন আর বললেন আরো লাগলে জানাতে। রানা সাহবের মধ্যে কেমন অদ্ভুত একটা ভালোলাগা কাজ করছে। কেমন জানি হালকা লাগছে পাখির পালকের মত। এক সপ্তাহ পর ছেলে বাবাকে ফোন দিয়েছে একটা খুশীর খবর জানানোর জন্য।

মা ফোন ধরতেই বাবাকে চাইলো সেই পাগল ছেলেটা। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে একটা ভিক্ষুক মামার চোখের অপারেশান করিয়েছে। এখন উনি তার প্রথম কন্যা সন্তানকে নিজের চোখে দেখতে পারবেন, চোখে না দেখার কষ্টটা ছেলেটা বোঝে কারণ সে নিজেও সে পথে হেটে যাচ্ছে এক পা দু পা করে আর তাই বন্ধুরা তাকে শুভ্র বলে ডাকে।

এই ডাকটা শুনলেই কেমন জানি একটা মন খারাপ এসে ভর করে কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেয়না ......... মা অনেকক্ষণ চুপ থাকার পরে একটা শব্দ উচ্চারণ করলো তারপর দুইপাশে পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর নিস্তব্ধতা নেমে আসল! ভয়ংকর এক নিস্তব্ধতা। সে নিস্তব্ধতায় মিশে আছে ভালোবাসা, ভালোরাখা।

#পৃথিবীরসকলবাবারাভালোথাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৫:৪০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×