somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মের নামে মানুষ হত্যা। এটা কি ধর্মের ব্যর্থতা নয়?

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশে ফ্রিজে গরুর মাংস রাখার অভিযোগে আখলাখ নামক এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরেছে কিছু উগ্রপন্থি হিন্দু। তার ২২ বছর বয়সী ছেলেকেও পিটিয়ে আহত করেছে। এ সবই ধর্মের গোড়ামির জন্য। ভুক্তভোগীর পরিবার দাবী করেছে তাদের বাড়ীতে গরুর মাংস ছিল না, ছিল খাসির মাংস।
আমার প্রশ্ন হলো- গরুর মাংস থাকলেই বা কি সমস্যা? তাদের ঈদ তারা গরুর মাংশ খাবে না খাসির মাংস খাবে, সেটা ওদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারা তো আপনাকে খাওয়ায় নি? তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা ধর্মান্ধতা বা ধর্মের গোড়ামীতে। এই গোড়ামি বা মৌলবাদীতাই সব নষ্টের মূলে।
তবে বাংলাদেশে এর বিপরীতে হিন্দু ঘরবাড়ী মন্দিরে হামলা হয় নি। এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের কথা।
কারন আমরা এর পূর্বে দেখেছি, ভারতে কোন সাম্প্রদায়িক হামলা হলে, সেটার আগুন বাংলাদেশেকেও পুড়িয়েছে । কারন এদেশের হিন্দুরা ভারতের হিন্দুদের জাত ভাই। এছাড়া কোন কারন নাই। যেহেতু জাত ভাই সেহেতু ওদের না পেলেও এদের মারো।
১৯৯২ সালে উন্মাদ, উগ্রপন্থি হিন্দুরা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে এবং মুসলিমদের উপড় চালায় অকথ্য নির্যাতন। তাদের অভিযোগ ছিল- মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির ছিল। যার ফলে নৃশংসতার স্বীকার হয়ে বিলীন হয়ে যায় শত বছরের পুরনো মসজিদটি।
২০০২ সালের গুজরাটের দাঙ্গায় কয়েক হাজার ডানুষ মারা যায়। এছাড়া ভূমিহীন হয়ে যায় হাজারো মানুষ। যাদের অধিকংশ ছিল মুসলিম। এটাও ছিল ধর্মের দোহাই দিয়ে। এই ঘটনাগুলো ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপড় অকথ্য নির্যাতনের খড়গ। এই নির্মমতার স্বীকার কিছু নিরপরাধ মানুষ। যারা জানতও না বাবারি মসজিদ বা গুজরাট কোথায়?এই মানুষগুলো কি দোষ ছিল?তাদের দোষ একটাই তারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কাফের। এরা হীন বল। তাই এদের মারা যায়েজ।
তাছাড়া ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়কার চিত্রটাও দেখতে পারি। সে সময় হাজার হাজার হিন্দু মুসলিম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল। তারা শুধু ধর্মের কারনে হয়েছিল ভিটেছাড়া, উদ্বাস্তু। তাদের চিরচেনা বাড়ীটাই হঠাৎ করে হয়ে গেছে অন্যের। সারা জীবনের পরিচিত মুখগুলোই হঠাৎ করে অপরিচিত হয়েছিল। এসবই হয়েছে শুধু ধর্মের কারনে। ধর্মই মানুষের ভেতরের পশুটাকে বের করে এনেছিল।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায়শই হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। ২০১৩ সালে শ'য়ে শ'য়ে হিন্দু মন্দির, বাড়িঘর ভাংচুর করেছে নিছকই কিছু গুজবের ভাত্তিতে। পত্রিকার পাতা খুললেই এ ধরনের খবর অহরহ চোখে পড়ে। এটা কিসের জন্য। ধর্মের জন্যই তো? নাকি নয়?

২০১২ সালের রামুর সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনার কথা মনে আছে তো? সেদিন সেখানে প্রায় ১২ টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৪০ টি বাড়ী পুড়িয়ে দেয়া হয়। সেখানে গুজব ছিল কোরান অপমাননার। কে জানি কোরআন অপমাননা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল আর তাতেই ধর্মান্ধ কট্টরপন্থী মুসলিমরা এই বিভৎস ঘটনার জন্ম দিয়েছিল। অসহায় সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের সেখানে কিছুই করার ছিল না। সেখানে ছিল শুধু উন্মত্ত মুসলিমদের উল্লাস, আগুনের লেলিহান শিখা আর বৌদ্ধদের অসহায় আর্তনাদ। এ সবই ধর্মান্ধতার ফসল।
বৌদ্ধরা নাকি খুবই নিরীহ আর শান্তিপ্রিয় জাতি। অথচ ২০১২ সালে মায়ানমারে তারাই রোহিঙ্গাদের উপড় চালিয়েছিল অবর্ননীয় নির্যাতন। ধর্মান্ধতার বিষাক্ত ছোবলে তারাও হয়ে উঠেছিল একেকটা মানুষ খেকো হিংস্র জন্তু। সেখানে ছড়িয়ে পড়েছিল জাতিগত দাঙ্গা। যার স্বীকার হয়েছিল মুসলিমরা। কয়েক শত মানুষ তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিল এর যাতাকলে পড়ে। উদ্বাস্তু হতে হয়েছে কয়েক হাজার মুসলিমকে। এটাও শুধু ধর্মের কারনে। সেখানেও শুধু গুজবের উপড় ভিত্তি করে এই অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
আজকের তথাকথিত সভ্য খ্রিস্টানরাও ছিল উগ্রপন্থি। এটা এখনো বিদ্যমান হয়তোবা একটু কম। তারা একসময় গুজব রটিয়ে হাজার হাজার মানুষকে মেরেছিল শুধু ধর্মের কারনে। হাজার হাজার মহিলাকে মেরেছিল ডাইনি অপবাদ দিয়ে। তাছাড়া ক্রুসেডের যুদ্ধের কথা নিশ্চয় সবাই জানেন।

ধর্মান্ধতার করাল গ্রাস থেকে কোন ধর্মের মানুষই রেহাই পায় নি। সব দেশের সংখ্যালঘুরাই হয়েছে নির্যাতনে স্বীকার। প্রতিটি ধর্মই ভিন্ন ধর্মের মানুষের উপড় দিয় স্টীম রোলার চালিয়েছে। এটা অতীতেও ঘটেছে, এখনও ঘটতেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে বলে মনে হয়।
এটা কি ধর্মের ব্যর্থতা? আপাত দৃষ্টিতে তাই মনে হয়। অনেকেই বলবেন- এগুলো করেছে কিছু সুযোগ সন্ধানী, নিকৃষ্ট মানুষ। এখানে ধর্মের কি দোষ? আমার প্রশ্ন - এরা নিরীহ মানুষের উপড় অত্যাচার করেছে কিসের জন্য? ধর্মের জন্যই তো, নাকি? মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃস্টি করেছে ধর্মই। তাহলে ধর্ম এখানে কিভাবে দায় এড়াতে পারে?
ধর্ম হাজার মাইল দুরের মানুষকে আপন করেছে অথচ পাশের বাসার মানুষটাকে করে দিয়েছে পর। যে ধর্ম মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখায় না, সেই ধর্ম দিয়ে কি লাভ? এটা তখনেই বন্ধ হবে যেদিন পৃথিবীর সব মানুষের একটাই ধর্ম হবে, সেটা হলো মানবতা।
সর্বোপরি- মানব ধর্মই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:১৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×