somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট্ট ভাইটা (গল্প)

১৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঃজীবনটা বিশ্রী। অসম্ভব বাজেভাবেই বিশ্রী। যারা 'Life is beautiful' বলে বলে গলায় ফেনা তুলে তারা আসলে একধরণের আইরনি করে। Life is not fair. Life is never fair! ফেয়ারই যদি হইতো এই নিস্পাপ ফুটফুটে বাচ্চাটা মৃত্যুর সাথে এমন পাঞ্জা লড়তো না!
--ভাই, সবর দাও। হয়তো এর মাঝে ভালো কিছু নিহিত আছে।
ঃতোর ভালো কিছুর গুল্লি মারি! আমাকে কেন তুলে নিচ্ছে না! আমিই না কত আজেবাজে কাজ করি! কত ফালতু মানুষের সাথে মিশি। কিন্তু, ও তো এর ধারেকাছেও নাই। ও তো বাচ্চা একটা! তবুও কেন ওর মধ্যে এই ফাউল অসুখটা বাসা বাঁধবে!"
চুপ করে গেলাম। কী উত্তর দিব বুঝতে পারছিলাম না। আবীর, ওর ছোট ভাই। বয়স কতইবা হবে আর। এইতো ৫ বা ৬ বৎসর! কী অদ্ভুত মায়াময় আদুরে চেহারা ওর। সবার সাথেই কী আশ্চর্য সদ্ভাব! সবার প্রতি তার তদারকিটাও ছিলো দেখার মতো। বিভিন্ন বিষয়ে কেমন জানি 'বড় মানুষী' কথাবার্তা!
ওর বড় ভাইয়াকে, আমার প্রিয় বন্ধুটিকে, 'ভালুক' নামে ডাকতো। আমি গেলে আমাকে বিভিন্ন সুন্দর অভিযোগ শুনতে হতো... "ভালুব্বাইয়াটা তোমাল বন্টু (বন্ধু) না!?"
- হু, বন্ধু তো।
"তুমি ওকে মালা কলতে পালো না?"
-কী মানা করতাম?
"ছাইপাঁশ লা খাইতে! যদি কিসু হয়ে যায়!"
- কী হবে?
"ঐ যে মুখে লাম লেওয়া যায়না! "
-আচ্ছা, আমি মানা করে দিব!
যখনই ওদের বাসায় যেতাম, দেখতাম এই আবীর কলকল শব্দে সারা ঘর মাতিয়ে রাখছে! দেখেই যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে এমন একটা শিশু! ওকে দেখলেই পৃথিবীতে সত্যি সত্যিই ANGEL আছে এই ভাবনাটা আপনার মাথায় আসবেই!
একদিন মাহির আমার কাছে হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো, "দোস্ত, কী করব বল আমায়! ভাইটারে আমি এভাবে ছেড়ে যেতে দিবো না আমি! শালার অসুখটার আমি চৌদ্ধগুষ্ঠি বাজাই দিবো... এই জেনেটিক ডিস অর্ডারটা আমার হইবার পারলো না! কী করতাম! What should I do? বল না, প্লীজ! কী করলে ও ভালো হয়ে যাবে? what the bloody thing should I do!? আমি আমার এই ফালতু জীবনটা চাইনা। আমি আমার বাচ্চা ভাইটারে সুস্থ দেখতে চাই..."
আমার বন্ধুটা হরহর করে অনেক কথাই বলে যাচ্ছিলো আর যাচ্ছিলো। চোখ দিয়ে সমানতালে টপাটপ পানি ঝরছিলো। আমি তো জানি ও ওর ছোট্ট ভাইটার জন্য, দরকার হলে, একদম হাসিমুখেই নিজের জীবনটা স্যাক্রিফাইস করতে পারে। ওর লাইফের সবচেয়ে দূর্বলতম স্থান হলো এই ছোট্ট ফুটফুটে ভাইটা। কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপারটা হলো, আবীরের বেটা থ্যালাসেমিয়া মেজর(Beta thalassemia major) হয়েছে। বিশ্বে প্রতিলাখে ১ জনের অসুখটা হয়! এবং খুব নগণ্য সংখ্যকই সারভাইভ করতে পারে!!
শেষবার যখন ওকে দেখতে যাই, দেখলাম চেহারাটা একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চুপচাপ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমাকে দেখে আগেকার মতো হাসি দিয়েই বললো, "নিলব (নীরব) ভাইয়া, আম্মুটা না খালি খালি কাঁদে। আব্বুটা আর ভালুব্বাইয়াটা কচোলেট আলে না। আমাল কি 'ক্যাভডেরি কচোলেট' খাইতে ইচ্ছে কলে না?
আমি যখন আল্লার কাছে চলি যাবো তখন সব ক্যাভডেরি তোমরা খাইয়ো! হুহ!"
বললাম, "কি বলো বাবুই! তুমি ভালো হয়ে ইস্কুলে যাবা কয়েকদিন পর। এত তাড়াতাড়ি কেন আল্লার কাছে যাবে!"
:আমি বুঝিতো! আমি বুঝি! আমার যে ব্যথা হয়! ডাক্তাল আংকেলরা কি কতাগুলা ফুটায় দেয়!..."
ও আরো অনুযোগ অভিযোগ করেই যাচ্ছিলো। মাহির আর না পেরে, চোখ মুছতে মুছতে কেবিন থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলো।কোনো শব্দ মুখ দিয়ে বের হতে চাচ্ছিল না আমার। আমার মত শক্ত হৃদয়ের মানুষটারও যে সেদিন অশ্রু ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিলো!
বললাম, "বাবুই, এইসব তো তোমাকে ইস্কুলে তাড়াতাড়ি নেওয়ার জন্যই করা হচ্ছে! দেখবা, খুব তাড়াতাড়ি তুমি ভালো হয়ে যাবা, খুব তাড়াতাড়ি! তোমার জন্য ক্যাডবেরি চকোলেট আমি আনবো"
এরপর ও আর কথা বলেনি আমার সাথে। খালি ওর আম্মুকে "আম্মু, পেটে ব্যথা, পেটে ব্যথা বলে কিছুক্ষণ কেঁদেছে!... "
সেদিন কী বার ছিল মনে নেই। কিছু কিছু বিষয় মনে না আসাটাই ভালো। মনে এলেই হৃৎপিণ্ডটা চ্যাঁৎ করে উঠে না চাইলেই.... তবুও... কেন জানি চলে আসে চুপটি করেই...
আমার বন্ধুটা আবীরের চলে যাওয়ার পর একদম কেমন জানি হয়ে গেছে! আগের মতো এদিকে আর আসেনা। আড্ডাও দেওয়া হয় না সে আগের মতো। একদম অবিশ্বাস্য চুপচাপ! নিশ্চুপ অবগুণ্ঠনে যেন নিজেকে ঢেকে নিয়েছে। ওদের বাসায় গেলে বুকটা খালি হু হু করে উঠে। বাগানের সবচেয়ে সুন্দর ফুলটা ঝরে গিয়ে একেবারে বিবর্ণ হয়ে গেছে যেন...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×