somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেয়েও না পাওয়া

০৩ রা জুন, ২০১১ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

ভোরের ঠাণ্ডা বাতাসের অনুভূতিই অন্য রকম । ভোরের বাতাস গায়ে লাগলে মন এবং শরীর দুটোই পবিত্র পবিত্র লাগে । সেই ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে দিয়ে রিয়ান হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে । বাতাসের বেগে ওর পাঞ্জাবি হাওয়ায় উড়ছে । রিয়ান মাথার টুপিটা ঠিক করে পড়ে নিলো । তারপর হাঁটার বেগ বাড়িয়ে দিল । কিছুক্ষণ যেতেই রাস্তায় একটা ছবি পড়ে থাকতে দেখল রিয়ান । কি মনে করে ছবিটা হাতে তুলে নিলো । একটা মেয়ের ছবি । প্রায় ওর সমান বয়সেরই হবে । ওর নিজের বয়স নয় (৯) । এই মেয়ে ওর থেকে বড় কখনোই হবে না । বয়স বেশি হলে সাত বা আট হবে । পবিত্র একটা মুখ মেয়েটার , হাসিটায় একটা অপার্থিব রকমের সচ্ছলতা । লম্বা চুলের একগুচ্ছ গালের উপর পড়ে আছে । রিয়ান ওর চোখ ছবিটা থেকে ফেরাতে পারেনা । তারপর এদিক ওদিক তাকাল ছবিটার মালিকের খোঁজে । ধারে কাছে কাউকে দেখা গেলো না । নিজের অজান্তেই রিয়ান ছবিটাকে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল । ছবিটাকে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে আবার হাঁটা দিল । কোন এক অজানা কারণেই রিয়ানের মনে অজানা অনুভূতির একটা ধীর্ঘ স্রোত বয়ে যেতে থাকল ।

২.

সন্ধ্যাবেলা রিয়ান পড়তে বসেছে । মা ওকে পড়াচ্ছিলেন । মা একটু রান্নাঘরে যাবার সুযোগেই রিয়ানের ছবিটার কথা মনে পড়ল । রিয়ান জলদি করে ওর পাঞ্জাবির পকেট থেকে ছবিটা বের করে আনল ।
তারপর অপলক দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল । কোনভাবেই চোখ ফেরানো যায় না ছবিটা থেকে । কিন্তু চোখ ফেরাতে হল । মা রান্নাঘর থেকে চলে এসেছেন । তাই রিয়ান ছবিটাকে ওর হাতের কাছে থাকা বাংলা বইয়ের ভেতর তাড়াতাড়ি করে লুকিয়ে ফেলল । মা আবার অঙ্ক কষানো শুরু করেছেন ।

৭ টা আপেল আর ১০ টা কমলালেবু একটা ঝুড়িতে ............ কিন্তু রিয়ানের মন এখন ওর বাংলা বইয়ের কোন এক পাতায় ।


৩.

১২ বছর পরঃ আজ রিয়ানের বয়স ২১ বছর । রিয়ানের বাবার অবস্থা ভাল না । তাই রিয়ানের পরিবার থেকে চাপ জলদি বিয়ে করার জন্য । অবশ্য পাত্রী ঠিকই করা ছিল । শুধু জানার ছিল রিয়ানের মতামত । রিয়ানের না করার কোন কারণ ছিল না । তবে ওই ছবিটা রিয়ানের মনে একটু কষ্ট দিয়েছিল । ছোটবেলায় রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া ওই ছবিটার কথা আজ ১২ বছর পরও রিয়ান ভুলতে পারেনি । কি জানি কি একটা যাদু করে দিয়েছে ছবিটায় । কিন্তু ওই ছবিকে ভুলতে হবে। কোনোদিন যাকে দেখা হয় নাই তাকে আর যাই হোক ভালবেসে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া যায় না , কে জানে ওই মেয়ে এখন কোন দেশে কোন জায়গায় আছে ! মেয়ের বাড়ি যেতে আরো কিছুটা সময় বাকি আছে । এই ফাকে রিয়ান ছবিটাকে শেষবারের মত দেখে নিতে চাইল । ছবিটাকে হাতে নিলো । এখনও সেই আগের মতই সুন্দর রয়ে গেছে ছবিটা । সেই হাসিটা এখনও ওই নিষ্পাপ মুখে লেগে আছে । চুলগুলো এখনও আগের মতই লাবণ্যময় । রিয়ান এই প্রথম ছবিটার সাথে কথা বলল ।

" এই মেয়ে তুমি কোথায় ? তুমি এত সুন্দর কেন ? এখন দেখতে তোমাকে কেমন লাগে ? তুমি কি আরো সুন্দর হয়েছ ? নাকি একটু মোটা হয়ে গিয়েছ ? তুমি কি জানো কেউ একজন তোমার একটা ছবি ১২ বছর ধরে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে ? ওই ছবির কথা একবারও মনে পড়ে না ? একবার না হয় ছবিটা নিতে আসতে তাহলে তোমাকে বলতে পারতাম আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম ৯ বছর বয়সেই । কিন্তু কি আর করার তুমি তো তুমিই । তুমি ছবি নিতে আসলে না , আর আমারও প্রেম নিবেদন করা হল না । আজ কিছুক্ষণ পর আমার বিয়ে । তাই তোমাকে এখন থেকে আর দেখতে পারবনা । তোমাকে এখন থেকে আমার গোপন ট্র্যাঙ্কে থাকতে হবে । " কথাগুলো বলে রিয়ান ছবিটাকে ট্র্যাঙ্কে রেখে দিয়ে কন্যাপক্ষের বাড়ির দিকে রওনা দিল । মনের মধ্যে থেকে গেলো এক অজানা অতৃপ্তি ।

৪.
দুই বাচ্চার মা বাবা , একটা চালের ব্যবসা সাথে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের বাসা । এই হল রিয়ান এবং জেনিয়ার সংসার । সব কিছুই আছে তবুও কিছু একটা নেই ওদের মধ্যে । নেই সেই বুঝাপড়াটা , নেই সেই ভালবাসাটা । সপ্তাহে একদিন ঝগড়া না করলে ওদের হয় না । গত সপ্তাহে ঝগড়া এমন পর্যায়ে পৌছায় যে একজন আরেকজনকে আঘাত করতে শুরু করেছিল । তাই দুইজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ওদের তালাক হয়ে যাওয়াই ভাল । এতে দুজনেরই সুবিধা হয় । কেউই আর ঝামেলায় থাকবেনা । যার যার জীবন নিজের মত করে থাক । তবে ৭ বছরের সংসার জীবনে যে ওরা একবারও একজন আরেকজনকে বুঝতে পারলনা তা নিয়ে দুজনেরই আফসোস হয় । কিন্তু কি আর করা ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন । আজ জেনিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে । ওর কাপড় গোছাচ্ছে ব্যাগে । সাথে বাচ্চা দুইটার কাপড়ও । ঘরের কোনোকোনোয় যা কিছু ছিল তার সবকিছু ব্যাগে গোছাচ্ছে । আজ রিয়ানের মনে হল ঘরের সব জিনিস জেনিয়ার , রিয়ান সারাজীবন কিছুই কামাই করেনি । সব খোঁজে শেষ হওয়ার পর জেনিয়া রিয়ানের গোপন ট্র্যাঙ্কের সন্ধানও পেল । লুকিয়ে লুকিয়ে জেনিয়া ট্র্যাঙ্কটা খুলে ফেলল । অবাক বিষয় এই যে ট্র্যাঙ্কে কোন তালা দেয়া নেই । হয়তো তেমন মূল্যবান কিছু নেই এই জন্য তালাহীন । সব কিছু ঘাটতে লাগল জেনিয়া । একটা পুরানো কবিতার বই , একটা ছেরা খাতা , স্কুলের ম্যাগাজিন এবং আরো অনেক কিছু । জেনিয়া কখনও জানত না যে রিয়ান কবিতা এত পছন্দ করে ।ওর লেখা কবিতাগুলো পড়ে জেনিয়া মুগ্ধ হয়ে গেলো । যে মানুষটা এত সুন্দর কবিতা লেখতে পারে , সে কিভাবে জেনিয়াকে এত কষ্ট দিতে পারে জেনিয়া সে কথা চিন্তা করতে থাকে আর ট্র্যাঙ্কে আবার হাত লাগায় । এবার একটা ছোট খাম পায় । খামটা আঠা দিয়ে লাগানো । মনে হয় অনেক পুরানো জিনিস । খামের ভেতর একটা ছোট মেয়ের ছবি । মুখটা অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে জেনিয়ার কাছে । কোথায় যেন দেখেছে ! আরে ! জেনিয়া দৌড়ে রিয়ানের কাছে গেলো ।
" রিয়ান , এই রিয়ান । তুমি কোথায় ? আমার ছোটবেলার এই ছবি তুমি কোথায় পেলে ? আর এতদিন ধরে এটা তোমার ট্র্যাঙ্কে কি করছিল ? " বলে জেনিয়া তার চুলগুলো গালের উপর থেকে সরিয়ে দিল ।

© নীল
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১১ সকাল ৭:০০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×