এক ব্যক্তি হযরত ঈসা (আ এর নিকট উপস্থিত হয়ে নিবেদন করল, আমি আপনার সঙ্গে থাকার বাসনা পোষন করি। হযরত ঈসা (আ সম্মত হলেন। লোকটি তাঁর সাথে চলা শুরু করল। কোন এক শহরের উপকন্ঠে গিয়ে উপস্থিত হলে তথায় তাঁহারা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে উপবেশন করলেন। সঙ্গে ছিল তিন খানা রুটি। দুই জনে দুই খানা রুটি আহার করলেন। এক খানা রুটি অবশিষ্ট রইল। সঙ্গী লোকটিকে তথায় রেখে হযরত ঈসা (আ কার্যান্তরে কোন এক স্থানে গমন করলেন। ফিরে এসে অবশিষ্ট রুটি খানি দেখতে না পেয়ে সঙ্গীটিকে জিঞ্জাসা করলেন, রুটি খানি কে নিল ? সঙ্গীটি উত্তর করল জানি না। অত:পর তাঁরা সামনের দিকে অগ্রসর হলেন। সামনে পড়ল একটি নদী। হযরত ঈসা (আ নদী কে ল্য করে বললেন, আল্লাহর হুকুমে রাস্তা হয়ে যাও। সঙ্গে সঙ্গে নদীর উপর একটি কাঁচের ন্যায় স্বচ্চ রাস্তা তৈরী হয়ে গেল। তাঁরা উভয়েই উক্ত রাস্তা দিয়ে হেঁটে নদী পার হলেন। নদী পার হয়ে তিনি সঙ্গী লোকটিকে পুনরায় বললেন ,যে মহান রাব্বুল আল আমীন তোমাকে এতো বড় একটি মুজিজা দেখালেন ,সেই মহান রাব্বুল আল আমীনের শপদ করে বল রুটি খানি কে নিয়েছে? সঙ্গীটি পুনরায় উত্তর করল আমি জানি না। তাঁরা পুনরায় সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। কিছু দূর অগ্রসর হতেই সামনের দিকে দেখতে পেলেন, দুইটি শাবক সঙ্গে করে একটি হরিণী আসতেছে। হযরত ঈসা (আ একটি শাবক কে ডাকতেই শাবক তাঁহার সম্মুখে এসে উপস্থিত হলো। তিনি তৎণাৎ শাবক টিকে যবাহ করে উহার মাংস ভুনিয়া নিলেন এবং দুই জনে তৃপ্তি সহকারে ভোজন করিলেন। অত:পর হযরত ঈসা (আ অভূক্ত শাবকটির অস্থিচর্মের প্রতি ল্য করে বললেন, আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে যাও। তৎণাৎ শাবকটি জীবিত হয়ে তাহার গন্তব্য পথে চলে গেল।। হযরত ঈসা (আ আবার লোকটিকে বললেন, যে মহান রাব্বুল আল আমীন তোমাকে এতো বড় একটি মুজিজা দেখালেন ,সেই মহান রাব্বুল আল আমীনের শপদ করে বল রুটি খানি কে নিয়েছে? সঙ্গীটি পূর্ববৎ উত্তর করল আমি জানি না। আবার তাঁহারা সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। সামনে পড়ল মরু ভূমির বিশাল বালু রাশি। হযরত ঈসা (আ অনেক গুলো বালু একত্রিত করে বালু গুলো কে উদ্দেশ্য করে বললেন, আল্লাহর হুকুমে স্বর্ণে পরিণত হয়ে যাও। একত্রিত সব গুলো বালু স্বর্ণে পরিণত হলে,তিনি স্বর্ণ গুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করলেন। অত: পর সঙ্গীটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এর এক ভাগ আমার , এক ভাগ তোমার এবং বাকী ভাগটি যে ব্যক্তিটি রুটি নিয়েছে তার। উহা শুনে সঙ্গীয় লোকটি স্বর্ণের লোভ সংবরণ করতে না পেরে বলে উঠিল, রুটি খানি আমার কাছে আছে। এই বলে তিনি লুকানো রুটিটি বাহির করে দেখালেন। ইহা শুনে হযরত ঈসা (আ বললেন, সমস্ত স্বর্ণই আমি তোমাকে দিয়ে দিলাম। এই বলে হযরত ঈসা (আ সঙ্গীটি কে রেখে একাএকি সামনের দিকে অগ্রসর হলেন। সঙ্গীটি এতো গুলো স্বর্ণ কি করবে স্থির করতে না পেরে স্বর্ণের পার্শ্বে বসে রইল। একই পথ দিয়ে তিন ুধার্ত বন্ধু খাবার ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে যাওয়ার সময় দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি অনেক গুলো স্বর্ণের পাশে বসে আছে। তিন বন্ধু তৎণাৎ চিন্তা করল, এই মরু প্রান্তরের মধ্যে যদি লোকটিকে মেরে স্বর্ণ গুলো নিয়ে যাই ,তাহলে কেউ টের পাবে না। যেমন কথা তেমন কাজ। তিন বন্ধু স্বর্ণের লোভে লোকটিকে মেরে ফেলল এবং তাদের মধ্যে এক জনকে খাবার ক্রয়ের জন্য বাজারে পাঠাল। বাকী দুই জন স্বর্ণ পাহারা দেওয়ার জন্য থেকে গেল। স্বর্ণ পাহারা কাজে নিয়োজিত দুই বন্ধু চিন্তা করল,খামাখা তাকে স্বর্ণের ভাগ দিয়ে লাভ কি ? যদি সে ফিরে আসার সাথে সাথে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে মেরে ফেলি তাকে আর ভাগ দিতে হবে না। আমরা আমাদের ভাগে বেশী স্বর্ণ পাব। এদিকে বাজারে যাওয়া বন্ধুটিও চিন্তা করল,কষ্ট করে বাজারে এলাম আমি আর স্বর্ণের ভাগ পাবে তিন জন তা হয় না। যদি খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে নিয়ে যাই তাহলে তারা এই বিষ মিশানো খাবার খেয়ে মারা যাবে। তখন আমই সব স্বর্ণের মালিক হয়ে যাব। এই কথা ভেবে সে নিজে খাবার খেয়ে বাকী সব খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে নিয়ে গেল। স্বর্ণ পাহারারত দুই বন্ধু পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খাবার নিয়ে আসা বন্ধুটি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল। তার পর চিন্তা করল আগে খাবার খেয়ে শক্তি বৃদ্ধি করে নিই। তার পর স্বর্ণ ভাগ করব। তারা বিষ মিশানো খাবার খেতে শুরু করল। কিছু খাবার খাওয়ার পর পরই তাদের দেহে বিষ ক্রিয়া শুরু হয়ে গেল এবং স্বর্ণের পার্শ্বেই তারা মরে পড়ে রইল। হযরত ঈসা (আ ফিরিবার পথে যখন সেই স্থানে এসে উপনীত হলেন, দেখতে ফেলেন স্বর্ণ গুলো তিন ভাগে বিভক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং তার পাশে পড়ে আছে চারটি মৃত দেহ। তখন তিনি মৃত দেহ গুলোকে উদ্দেশ্য করে বললে, বন্ধুগণ এরই নাম দুনিয়ার মোহ।