কোন এক দেশে এক সময় মহাপরাক্রমশালী এক বাদশা ছিল। এক দিন তিনি সৈন্য-সামন্ত সমভিব্যহারে বায়ু পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে জাঁকজমকপূর্ণ মহামূল্যবান পোশাক পরিচ্ছেদ পরিধান করে ভ্্রমনে বের হলেন। সুসজ্জিত ও সুদ সৈন্য সামন্তের পরনেও ছিল রাজকীয় পোশাক। রাজার মন গর্ব ও অহংকারে পূর্ণ থাকায় সাধারণ ও দীনহীন লোকদের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে মানুষের ফসলের উপর দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন।পথে কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তার সৈন্য সামন্তরা তাদের কে কঠিন শাস্তি প্রদান করতে লাগলেন। বাদশাহর চলার পথে অসহায়,বিকলাঙ্গ,গরীব মিসকীন পড়লে তাদেরকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য সৈন্য সামন্তরা কড়াকড়ি আরোপ করতে লাগলেন। কিছুদূর অগ্রসর হতে-ই হযরত আজরাইল (আ নিতান্ত দীনহীন এক ফকিরের বেশে বাদশার সম্মুখে দাঁড়ালেন এবং সসম্মানে বাদশাকে সালাম করলেন। বাদশা ঘৃণাভরে তার সাথে কোন কথা বললেন না। এমনকি সালামের জওয়াবও দিলেন না। হযরত আজরাইল (আ তখন অগ্রসর হয়ে তাহার অশ্বের লাগাম চেপে ধরলেন। বাদশাহ ক্রোধান্নিত হয়ে চিৎকার করে বললেন - বেয়াদব শ্রীঘ্র - ই আমার অশ্বের বল্গা ছেড়ে দাও , নয়তো এুনি তোমার ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলব। হযরত আজরাইল (আ বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বললেন: বাদশাহ নামদার আপনার সমীপে আমার বিশেষ একটি প্রয়োজন আছে। অনুগ্রহ পূর্বক থামুন এবং আমার নিবেদন শুনুন। বাদশাহ অগত্যা সম্মত হয়ে বললেন: আচ্ছা তবে বল ,কি বলতে চাও? হযরত আজরাইল (আ বাদশাহের কানের সাথে স্বীয় মুখ লাগিয়ে বললেন: আমি এই মুহূর্তে আপনার রূহ কবয করতে চাই। ইহা শ্রবণ করা মাত্র বাদশার আতœা শুকিয়ে গেল,মুখমন্ডলের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মুখের ভাষা হারিয়ে গেল। অতিকষ্টে বললেন: আমাকে সামান্য সময়ের জন্য অবসর দিন । আমি পরিবার পরিজন থেকে বিদায় নিয়ে আসি। হযরত আজরাইল (আ বললেন: না, তা হবে না। তিনি তৎাৎ বাদশার রুহ কবয করে নিলেন। বাদশার দেহ অশ্বপিষ্ঠ হতে ভূমন্ডলে পড়ে গেল। । হযরত আজরাইল (আ তথা হতে চলে গেলেন। তার রুহ কবয করে আসমানে উপস্থিত হলে আসমানের অন্যান্য ফেরেশতা গণের মধ্যে এক জন তাহাকে জিজ্ঞাসা করে ছিল: হে আজরাইল (আ আজ পর্যন্ত তো আপনি কোটি কোটি লোকের প্রাণ হরণ করেছেন। তাদের মধ্যে কাহারো প্রাণ হরণ করতে গিয়ে কোন দিন কাহারো উপর আপনার কোন দয়া হয়েছে কিনা। আজরাইল (আ বললেন : হ্যাঁ, হয়েছে। এক দিন এক গর্ভবর্তী স্ত্রীলোক এক বিজন অরণ্যের মধ্যে অসহায় অবস্থায় পতিত ছিল। চার পাশে কয়েকশ মাইলের মধ্যে কোন জনবসতি ছিল না।বন ছিল হিংস্র জন্তু জানোয়ারে ভরপুর। সাপ বিচ্ছু কীট পতঙ্গে বন ছিল ঢাকা। প্রতি কদমে কদমে ছিল বিপদ আর বিপদ। সেখানে তার একটি পুত্র সন্তান ভুমিষ্ট হয়। তৎণাৎ উক্ত প্রসূতী রমনীর রুহ কবয করার জন্য আমার উপর নির্দেশ হল। নির্দেশ প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আমি স্ত্রীলোকটির প্রাণ সংহার করে সদ্য প্রসূত শিশুটিকে নিশ্চিত গভীর অরণ্যের জন্তু জানোয়ারের মুখে ফেলে দিলাম। তখন নি:সহায় শিশুটির জন্য আমার হৃদয়ে বিশেষ দয়ার উদ্রেগ হয়ে ছিল। তখন ফেরেশতাটি বললেন : এখন যে বাদশার রুহ কবয করে আনলেন, এই পরাক্রমশালী বাদশাহ - ই সেই নি:সহায় শিশু। মহান রাব্বুল আল আমীন সেই অসহায় শিশুটিকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ঐ বনের এক হিংস্র বাঘীনীর হৃদয়ে দয়ার সৃষ্টি করলেন। বাঘীনীটি অসহায় শিশুটিকে না খেয়ে নিজের দুধ প্রাণ করাতে লাগলেন।ধীরে ধীরে বাঘের দুধ প্রাণ করে শিশুটি বড় হতে লাগলেন। বড় হয়ে একদা বাঘীনীর সাথে অরণ্যের বাহিরে চলে আসলেন। এক দল শিকারী বাঘ শিকার করতে বনের কাছে গেল। যখন তারা বাঘীনীকে শিকার করতে চাইল তখন বাঘীনী দৌড়ে বনের ভিতর প্রবেশ করল কিন্তু ছেলেটি ধরা পড়ে গেল। শিকারী গণ শিশুটিকে পেয়ে তাদের সাথে নিয়ে আসলেন। লালন পালন করে বড় করলেন এবং সে এক সময় দেশের বাদশা হলেন। গর্ব এবং অহংকারে ভূলে গেলেন তার অতীত জীবনের কথা। ইহা শুনে হযরত আজরাইল (আ বললেন: সেই মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করিতেছি, তিনি যাকে ইচ্ছা দয়া করে থাকেন এবং তার দয়ার উপর দয়া নেই।