( এই পোস্টটি এড়িয়ে গেলে ফেসবুকে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন আপনি নিজেই। কাজেই, পুরোটা পড়ুন এবং অবশ্যই শেয়ার করুন।)
একটি মেয়ে, বয়সে আমার জুনিয়র। পরিচয়টা হয় কর্মক্ষেত্রে। মাঝে মাঝে পত্রিকায় ক্যাম্পাস বিষয়ে লিখতো/ লিখে। টি-২০ বিশ্বকাপের সময় দলবেঁধে মিরপুরে খেলা দেখতে যাওয়ার সময় পরিচয়। সেদিন আমার সাথে পরিচিত হয়ে ও পত্রিকায় আমার লেখার প্রতি ওর ভালোলাগার কথা জানিয়েছিলো। এরপর ফেসবুকেও বন্ধু হই আমরা। সেটা বেশ আগের কথা। এরপর আর তেমন একটা দেখা হয়নি। শুধু ফেসবুকে মাঝে মাঝে ওর লাইক পেতাম। মেসেজ হিস্টোরি বলে, ইংরেজি নতুন বছরের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছিলো। সেটাই এক এবং একমাত্র আলাপ ফেসবুকে।
এরপর হঠাৎ করেই আজ মেয়েটির আইডি থেকে আমাকে নক দেয়া হলো। প্রথমেই একটি লিংক দিয়ে অনুরোধ করা হলো, সেখানে গিয়ে তার ছবিতে আমি যেন একটা লাইক দেই। যেহেতু মেয়েটিকে আমি ও আমরা ভালো মেয়ে বলেই জানি, (সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ছাত্রী), সুতরাং লিংক দেখে সন্দেহ হলেও সেই লিংকে গেলাম। গিয়ে দেখি, ফেসবুকের log in পেইজের মতো একটা পেইজ, আমার আইডি ও পাসওয়ার্ড চাচ্ছে! আমি তো ফেসবুকে অলরেডি লগড ইন আছিই, আবার কেন লগ ইন করতে বলবে? এক্ষেত্রে অধিকাংশই ধরে নেবে, যেহেতু ছবির জন্য লাইক চাচ্ছে, তাই হয়তো প্রতিযোগিতার আয়োজকরা আলাদা আলাদা আইডি থেকেই যে ভোট পড়ছে, সেটা নিশ্চিত হতেই এই ব্যবস্থা করেছে, অর্থাৎ এই সিকিউরিটি চেকের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু, আমি ওদের দলে নই। আমার খটকা লাগলো এবং আমি আর লগ ইন করলাম না।
এরপর, আজ সন্ধ্যায় সেই একই আইডি থেকে আবার নক দিলো। মেয়েটি আমাকে "তুমি" সম্বোধন করে একটা "হেল্প" করতে পারবো কিনা জানতে চাইলো। প্রথম কথা, মেয়েটির সাথে আমার যে অল্প কয়বার আলাপ হয়েছে, তার কোনবারই সে আমাকে "তুমি" করে বলেনি। আজ ব্যতিক্রম দেখে সন্দেহ বাড়লো। জানতে চাইলাম, কি হেল্প? মেয়েটি জানালো, এখনি তার ৩ হাজার টাকার খুব দরকার, কালকেই নাকি আবার ফেরত দিতে পারবে। ততক্ষনে আমি নিশ্চিত, যে চ্যাট করছে, সে ঐ মেয়েটি নয়। আমিও মজার ছলে বললাম, "মাত্র ৩ হাজার টাকা? সুন্দরীরা চাইলে ৩ লাখও দিতে পারি। লাগবে?" (একটু হাসুন) । মেয়েটি বললো, "দাও"। আমি জানতে চাইলাম কিভাবে? সে জানালো "বিকাশ করে"। আমি আরেকটু 'সহানুভূতি আর প্রেম' এর অভিনয় করে জানতে চাইলাম, "নম্বর বলো। কত লাগবে? যা লাগবে তাই বলো, লজ্জা করোনা।"
মেয়েটি বিকাশ নাম্বার দিলো (নাম্বারটি হলোঃ 01957021970) এবং জানালো, এটা পারসোনাল বিকাশ অ্যাকাউন্ট। সে আর বলতে? আমি বিড়ালের মতো বললাম, "এখনি পাঠাচ্ছি। কত পাঠাবো? কার নামে একাউন্ট?" মেয়েটি 'যত পারি' পাঠাতে বললো! আমি আবারও জানতে চাইলাম, "কার নামে একাউন্ট? এটা না জানলে দেয়া যাচ্ছে না। দোকানদার নাম চায়..." মেয়েটার আইডি থেকে আমাকে "গাধা" সম্বোধন করে বললো, "বিকাশ এর নাম লাগে না গাধা" আমি কিছুক্ষণ চুপ রইলাম। এরপর সে আমাকে সুন্দর করে একটা 'গালি' দিয়ে বললো, "দিসো মাল্লু?" আমি বললাম, "দূরে গিয়া মর "
মেয়েটি কিছুদিন আমাদের এখানে কাজ করলেও ওর নাম্বার আমার কাছে নেই। অফিসে ফোন দিয়ে এক বড় ভাইকে বিষয়টি জানালাম, যিনি মেয়েটিকে চেনেন এবং খুব সম্ভবত মেয়েটির নাম্বার তাঁর কাছে আছে। এবার চলুন হিসেবটা মিলাই। প্রথমে মেয়েটির আইডি কেউ হ্যাক করেছে। যেকোন উপায়েই হোক, করেছে। ছবিতে লাইক দেয়ার কথা বলে হয়তো করতেও পারে, যেভাবে আমারটা হ্যাক করার চেষ্টা করেছে। আমি ঐ লিংকে আইডি পাসওয়ার্ড দিলেই আমার আইডি হ্যাক হতো। আমি ফাঁদে পা দেইনি দেখে, হ্যাকার বিকাশেই টাকা আদায়ের ধান্দায় নামে। যেহেতু মেয়েটির আইডিতেও আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, সে প্রতিষ্ঠানে "contributor" হিসেবে কাজ করার কথা বলা আছে, সেহেতু হ্যাকার ধরেই নেয় আমাদের মাঝে "তুমি" বলার সম্পর্ক। যেহেতু আমাদের প্রাইভেট আলাপ হয়নাই বললেই চলে, তাই ফেসবুকে চ্যাটিং হিস্টোরি দেখে হ্যাকারের বোঝার উপায়ও ছিলো না আমাদের সম্পর্কটা তুই-তুকারি, নাকি তুমির, নাকি আপনির। এরপর কী হয়েছে, আপনাদেরকে আর খুলে বলা লাগবে বলে মনে হয়না। এভাবে শুধু আমার সাথেই নয়, নিশ্চই আরও অনেকের সাথেই হ্যাকার মেয়েটির আইডি ব্যবহার করে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, হ্যাক করছে অন্য আইডিও! অতএব, সাবধান। এই ধরণের প্রতারণার ফাঁদে পা দিবেন না। ফেসবুকের পাসওয়ার্ড সবজায়গায় এন্ট্রি করবেন না। ফেসবুকে কোন অ্যাপই নতুন করে পাসওয়ার্ড এন্ট্রি করতে বলে না।শুধু allow করতে বলে। আর বড় ও শক্ত পাসওয়ার্ড দিন। দুই-তিনমাস পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
এখন বলুন তো, এই হ্যাকারের কী করা যায়? আমার লিস্টে যারা আছেন, তাঁরা পোস্টটি ছড়িয়ে দিন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানান। বিকাশ নাম্বার যেহেতু আছে, হ্যাকারকে খুঁজে বের করা... তবুও হয়তো যাবে না, কারণ? ভুয়া রেজিস্ট্রেশন! তারানা হালিম সফল হবেন কবে জানিনা, তবে তাঁকে সফল হতেই হবে। এভাবেই একটি চক্র ডিজিটাল জালিয়াতি শুরু করেছে। এদেরকে রুখতে হবে।
[যেহেতু মেয়েটির এখানে দৃশ্যত কোন দোষ নেই বলেই মনে হচ্ছে, (ভুল করে না জেনে ফাঁদে পা দেয়া এবং লিস্টের বন্ধুদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলাকে দোষ হিসেবে না ধরে) তাই মেয়েটির পরিচয় গোপন রাখা হলো। তবে মেসেজের ছবি তোলা আছে আমার কাছে। আইনি ব্যবস্থা নিতে কাজে লাগলে আমার কাছে চাইবেন]
-দেব দুলাল গুহ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮