আমাদের প্রিয় এই দেশে হাজারো প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার মতো একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেছে, নাম তার 'বিদ্যানন্দ'। লাখ লাখ দুঃস্থ, অসহায়, গরিবদুঃখী মানুষ এই প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা পেয়ে আসছে। বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন হাজারো কর্মী। সেখানে নেই ধর্ম-জাত-গোত্রের বিভাজন, সবাই সমান এবং সবাইকেই সমান সহায়তা দেওয়া হয় বলেই জেনেছি।
কিন্তু একটি বিশেষ মৌলবাদী চক্র শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। সাথে যুক্ত হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বীরাও। তারা বলছে, এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা প্রবাসী বাংলাদেশী কিশোর দাস একজন হিন্দু, তাই এখানে টাকা দেওয়া যাবে না! ঈদকে সামনে রেখে এই প্রচারণা যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে! হিন্দু প্রধান প্রতিষ্ঠানে নাকি যাকাত দেওয়া যাবে না!
কেন ভাই? হিন্দু প্রধান বলেই সেখানে অর্থ দান করা যাবে না কেন? এত হিন্দুবিদ্বেষ কেন? আপনারা কি জানেন এই কিশোর দা একজন বিদেশিনী খৃস্টানকে বিয়ে করেছেন? জানেন কি, শুধু মানুষের সেবায় জীবন অতিবাহিত করতে চান বলে তাঁরা সন্তান পর্যন্ত না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন? ব্যাক্তিগতভাবে তাঁকে আমি চিনি না, কিন্তু এমন প্রচার তো জাতীয় পত্রিকাতেও পেয়েছি, মিথ্যা ভাবি কী করে? তাহলে এবার বলেন, আপনার অর্থ নিয়ে তাঁরা তা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা ছাড়া আর কী করবেন? সন্তান তো নাই যে তার জন্য রেখে যাবেন গোপনে! বাবামা বৃদ্ধ, তাঁদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই। আপনাদের এই ধর্মের ধোয়া তুলে ভালো কাজকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা দেখে বিদ্যানন্দ অনেকদিন ধরেই গরুর মাংস পর্যন্ত খাবারে দেয়, কোরবানিতে গরুর চামড়া তাঁরা দান করে। তো কিশোর দাস কি আসলেই গোঁড়া হিন্দু আছেন যে তাঁকে তাঁর ভালো কাজে বাধা দিতে হবে?
থাকলেই বা কী? আপনারা যখন বিদেশী সাহায্য সংস্থার ত্রাণ নেন, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে যে টাকা আমাদের সরকার পায় বিদেশীদের থেকে, তা তো মূলত ঐ ইহুদি-খৃস্টান ও নাস্তিকদেরই! তখন লজ্জা করে না ওসব নিতে? বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ, সবচেয়ে বেশি সাহায্যদাতা দেশ জাপানের মানুষরা কোন ধর্মের? চীনের মানুষরা কোন ধর্মের? তাঁদের দান নেওয়ার সময় কেন ধর্ম দেখেন না? আবার যখন ইউরোপে যান শরনার্থী হয়ে, তখন কাদের টাকায় আপনার ভাতার টাকা আসে, পেটে খাবার জোটে, আপনাকে আশ্রয় কারা দেয়? লজ্জা করে না ভাই তাঁদের দানের টাকায় আয়েশি জীবনযাপন করতে?
ভালো মানুষদের ভালো কাজকে উৎসাহিত করুন। বিদ্যানন্দের মতো অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আছে আমাদের। যদি সেখানে কোনো দুর্নীতি-অনিয়ম থাকে, আপনি তা নিয়ে কথা বলতে পারেন। তা না করে নিজেরাই এমনকি রোজার মাসেও সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দুর্নীতি করে তারপর শুধু ধর্মের অজুহাত তুলে ভালো কাজকে বাধা দিবেন? এটা কি হাস্যকর হয়ে যায় না?
দেব দুলাল গুহ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৪৮