somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করলেই কি শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত হবে?

০৪ ঠা মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষকের গুলিতে ছাত্র আহত সিরাজগঞ্জে! অবশ্যই এটা একটা অন্যায় কাজ। তবে যেদিন থেকে শিক্ষকদের হাত থেকে বেত কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকে কিছু ছাত্র এমনকি কর্মচারীরাও বেয়াদব হয়ে উঠেছে। তারা উঠতে-বসতে শিক্ষকের সাথে খারাপ আচরণ করে, বেয়াদবি করে, আদাব-সালাম দেয় না। অথচ বাবা-মায়ের পরেই কিন্তু শিক্ষাগুরুর অবস্থান!

বেয়াদবির শাস্তি দাপ্তরিকভাবে দেওয়াই শ্রেয়। এজন্য গার্জিয়ান ডেকে সতর্ক করা যায়, আবার বহিষ্কারও করা যায়। কিন্তু দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠান প্রধান সেই বেয়াদবদের পক্ষে অবস্থান নেন নানা কারণে ও সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে। তখন বিচার না পেয়ে শিক্ষকের মনে ক্ষোভের জন্ম হয়। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে সন্তানতুল্য ছাত্রকে গুলি করাটাকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না।

একজন শিক্ষক কমর্মকর্তা হয়েও আমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে দীর্ঘদিন ধরে বাসস্থান ও কর্মস্থলে অপমানিত-নির্যাতিত-অবিহেলিত হয়ে আসছি। ফরিদপুরে আমাদেরকে অন্যায়ভাবে নির্যাতনে রাখা হয়েছে। বোয়ালমারীতে কর্মস্থলে একের পর এক মিথ্যা শোকজ দিয়ে বিরূপ মন্তব্য প্রদান করা হয়েছে। সেই বিরূপ চূড়ান্ত শুনানিতে সচিব মহোদয় দ্বারা অবলোপন হলেও মাঝখান দিয়ে চলে গেছে জীবন ও সার্ভিস লাইফের মহাগুরুত্বপূর্ণ যৌবনের পাঁচ-সাতটি বছর।

ক্যারিয়ারের শুরুতেই কর্তৃপক্ষ থেকে বিমাতাসুলভ আচরণ পেলে দেশের জন্য ভালো কিছু করার আগ্রহ-উৎসাহ মরে যায়, যে কারণে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি-সাংবাদিকতা ছেড়ে এই পেশায় এসেছিলাম। ভালো পদায়ন তো পেলামই না, এমনকি নিজ জেলায় বাসস্থানের কাছের কলেজ থেকেও আমাকে অন্যায়ভাবে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে বেতন বন্ধ রাখা হয়েছিলো বছরখানেক।
যিনি বিরূপ মন্তব্য দিয়েছিলেন, সেই সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবদুছ সাত্তার মজুমদার স্যার প্রায় আড়াই বছর ঘরে বসে বেতন পেয়েছেন (ও,এস,ডি ছিলেন), তারপর বিভাগীয় প্রধান হয়ে অবসরে গেছেন। কোন বিচার আমি পাইনি। তাঁর সময় থেকে আজ পর্যন্ত যিনি উপাধ্যক্ষ ছিলেন, তিনি জনাব এস,এম নজরুল ইসলাম স্যার, সহযোগী অধ্যাপক থেকে আজ পি,আর,এল-এ গেলেন। প্রায় এক বছর আগেও কলেজে অধ্যক্ষ পদটি শূন্য হলেও সেই তথ্য তিনি উপরে পাঠাননি, এখানে এতদিন অধ্যক্ষ পদায়ন দেওয়া হয়নি। গত এক বছরে কোন কমিটিতেই তিনি আমাকে দায়িত্ব দেন নী। অনেকের ভাষ্য আমি দুর্নীতি-অন্যায় সহ্য করবো না বলেই আমাকে শুধু শ্রেণি কার্যক্রমে ব্যস্ত রাখা হয়, কোন কমিটিতে রাখা হয় না।

কলেজের সকল সিদ্ধান্ত জানামতে DDO এর ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তিনি একাই নিয়ে থাকেন, কোন জেনারেল মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। তিনিসহ অনেক শীক্ষক-কর্মচারীই কলেজের ভেতরে সরকারি বাসায় থাকেন, অথচ সে কথা বেতন বিলে উল্লেখ না করে বাসাভাড়ার টাকা পুরোটাই তুলে নেন।

আমাকে তো এই কলেজে যোগদানই করতে দিচ্ছিলেন না সাত্তার স্যার, নজরুল স্যার, খুরশিদ, স্যার, খায়রুল স্যার, আহসানুজ্জামান রানা গং! কারণ সাবেক অধ্যক্ষ এটাকে জামায়াতের স্কট ঘাঁটি বানিয়েছিলেন। ছিলো না জাতির জনক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি, পালিত হতো না জাতীয় শোক দিবসসহ কোন জাতীয় দিবস। কলেজটিতে এক সময় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও এখন বিজ্ঞানে ১ম বর্ষে ৭ জন আর ২য় বর্ষে মোটে ৩জন শিক্ষার্থী আছে। অন্যান্য বিভাগের অবস্থাও খারাপ। একশ' এর মতো শিক্ষার্থী নিয়ে চলচহে উপজেলা সদরের একমাত্র সরকারি কলেজটি! আমি গত ৫ বছরে তেমন একটা কমিটি না পেলেও একজন মুক্তিযোদ্ধা ও কবির সন্তান হিসেবে কলেজে জাতির জনক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি স্থাপন করিয়েছি, বইমেলা, পিঠা-উৎসব থেকে শুরু করে প্রায় সব জাতীয় দিবসই মোটামুটিভাবে উদযাপিত হয়; যদিও চিহ্নিত কিছু শিক্ষক-কর্মচারী সেসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন না, শিক্ষার্থীরাও খুব কম থাকে। অবাক ব্যাপার হচ্ছে, এসব নিয়ে আমি একাই কথা বলি, এমনকি স্থানীয় নেতৃত্ব কিংবা সাংবাদিকরাও এসব বিষয়ে চুপ থাকেন! এক সাংবাদিকের ছেলে তো কোনোদিন ক্লাস না করেও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিতে পেরেছেন! নানা অসঙ্গতি-দুর্নীতি-অন্যায়ের বিরুদ্ধে বারবার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখে আমি কোন সুবিচার পাইনি। কলেজে প্রায় অর্ধযূগ হলো কোন তদন্তও হয় না।

এমনটা যখন অবস্থা, তখন শিক্ষা ক্যাডারের জন্য নতুন বিপদের নাম পাবলিক ভার্সিটির অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম মনিটরিং। শুধু ভাইভা দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা দ্রুত প্রমোশন পেয়ে একি সময়ে পিএসসির অধীনে কয়েক ধাপে পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়ে চাকরিতে যোগদান করে অনেক দেরীতে স্থায়ী হয়ে অনেক দেরীতে প্রমোশন পায়। ৩৫ তম বিসিএস যোগদান করে আমি এখনো লেকচারার, অথচ আমার ব্যাচের প্রশাসন-পুলিশ-কৃষি ইত্যাদি ক্যাডাররা প্রমোশন পেয়ে গেছেন। আগামী ৩ বছরেও প্রমোশন পাব কিনা সন্দেহ! এখন আমারও পরে ভার্সিটিতে যোগদান করা বন্ধু বা ছোট ভাইটি প্রমোশন পেয়ে এসে আমার উপর ছড়ি ঘোড়াবেন! এমনিতেই পার্শ্বপ্রবেশের কারণে এই ক্যাডার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তারপর এই নতুন দুশ্চিন্তা আমাদের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। জানি না, কী পাপ করেছিলাম যে এমন ভুল করেছি এই পেশায় এসে!

আমি সচিবালয়ে বা মাউশিতে পদায়ন চাচ্ছি না। আমাকে নায়েম অথবা ঢাকা কলেজ অথবা রাজেন্দ্র কলেজে যদি কেউ পদায়ন দিতো! আরও ভালোভাবে দেশের ও দশের সেবা করার সুযোগ পেতাম। দেশের সেরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সেরা রেজাল্ট করে এখন প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে পচে মরছি। পাঁচ বছর তো হলো, আর কতকাল? নিয়ম অনুযায়ী ৩ বছর পরপর বদলি হওয়ার কথা। অথচ ফরিদপুরে একেক জন ২৩-২৭ বছর ধরেও একই কলেজে চাকরি করছেন! সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি সব, যারা আবার আবাসনসহ নানা অবৈধ ব্যবসার সাথেও জড়িত! আমাকে তাঁরা ফরিদপুর ফিরতে দিবেন না, এত বড় পরিবর্তন লিখে লিখে আনার পরেও। কারণ আমি ফিরলে অনেকের বাড়তি ইনকাম, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে টিউশন করানো, নীতিবহির্ভুত কাজ করতে বাধ্য করা, পরীক্ষার হলে নকল করা ও অর্থের বিনিময়ে তা করতে দেওয়া ইত্যাদি বিষয় আমি কিছু না বললেও সমস্যার মুখে পড়বে। গোটা দেশের অবস্থাই যখন এমন, তখন শিক্ষাক্রম শুধু চেঞ্জ করে কি ভালো কিছু আশা করা যাবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×