বন্ধু এসেছিলো বাসায়। জিজ্ঞেস করলাম, ইফতার কবে করাবি? বন্ধু বললো, 'শীঘ্রই তোকে দাওয়াত দেবো'। জিজ্ঞেস করলো মুরগির গোস্ত খাই কিনা। বললাম, তুই যেহেতু গোস্ত খাস না, আমিও খাব না; শুধু ছোলা-পেয়াজু-চপ আর মুড়ি দিয়ে ইফতার করবো তোর বাসায় একদিন। তাহলেই হবে। এক কেজি বেগুন কিনেছিলাম, মায়ের ইচ্ছায় ফেরার পথে বন্ধুকে সেটা দিয়ে দিলাম চপ বানিয়ে খাওয়ার জন্য। একটা বেগুন দিয়ে চপ আমরা এখানেও বানিয়ে খেলাম। মায়ের হাতের চপ, টমেটো সস আর কাসন দিয়ে।
স্কুলের বন্ধুদের গ্রুপে বললাম একটা ইফতার পার্টি করা যাক। পার্টি করা যায় সব ধর্মের সবাইকে নিয়ে। কিন্তু ইফতার মাহফিলে তো অন্য ধর্মাবলম্বীরা অংশ নিতে পারে না। বন্ধুরা মত দিলো ২৭ রোজার পর করলে ভালো হয়। কারণ তখন সবাই ঢাকা থেকে বাড়ি আসবে, বেশী মানুষ একসাথে বসে ইফতার করা যাবে।
কলেজের এক বন্ধু সেদিন ফোন দিয়েছে ইফতারের কিছুক্ষণ আগে। ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছিলাম চায়ের কথা। মা তাড়া দিয়ে বললো, 'চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে'। কথার মাঝে চায়ের কাপটায় চুমু দিয়ে ফেললাম বন্ধুকে লাইভে রেখেই। পরক্ষণেই বন্ধুকে বললাম, 'দোস্ত, খেয়াল ছিলো না যে তুই রোজা আছিস। তোকে দেখিয়ে খেয়ে ফেললাম। সরি'। বন্ধু বললো, 'আরেহ ধুর! এটা কোনো ব্যাপার না। আমিতো একটু পরেই রোজা ভেঙে খাবো। তুই তো রোজা নাই। তুই খা।' ঢাকা গেলেই বন্ধুর বাসায় যাই, থাকিও মাঝে মাঝে। আন্টির হাতের ইফতার আইটেম মিস করছি এবার। রোজার মাসেও তিনি আমার জন্য দুপুরে রান্না করতেন। আমি তা কোনোদিন ভুলতে পারবো না। আংকেল-আন্টি খাটি ধার্মিক। আংকেল ছিলেন সরকারের যুগ্মসচিব। তিনিও যথেষ্ট আদর করেছেন।
আগে না চাইলেও ইফতারের দাওয়াত পেতাম, ঈদের দাওয়াত পেতাম। পূজায় দাওয়াত না দিলেও অনেকে বাসায় আসতো, আবার কৌটা ভরে ভরে নাড়ু-খই দিয়ে আসতো বাবা তাঁর মুসলিম বন্ধুদের বাসায়। নাড়ু আর খই বানাতে বানাতে মায়ের খবর হয়ে যেত। তবু মুখ ফুটে কোনোদিন কিছু বলেনি। বাবা কবি বাবু ফরিদী মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করতেন, মা-ও তাঁর ইচ্ছাপূরণ করতেন।
সেই দিনগুলি কোথায় যে হারালো!
এটাই আমার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, এটাই আমাদের সংস্কৃতি। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দেবে না, বিদ্বেষ ছড়াবে না। যারা ধর্ম মানে না, তারাও তাদের মতো থাকবে। কাউকে জোর করা যাবে না। স্রষ্টা চাইলে নাস্তিকদের মনেও একদিন ধর্মের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত হতে পারে। ধর্ম নিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই করা যাবে না। এই বাংলাদেশ সবার, কোনো সম্প্রদায়ের একার না।
জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ২:২৩