একবার আমাদের মসজিদের ইমাম ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিলেন। শুক্রবারের খুতবায় অন্যদেরকেও এ কাজে উদ্বুদ্ধ করলেন। তিনি খাবার খেতেন আমাদের ঘরে। মাঝেমধ্যে দু'তলার একটি কক্ষে ঘুমাতেনও। আমার সাথে দেখা হতো কেবল খাওয়ার সময়।
একদিন খাবার টেবিল থেকে তিনি উঠে গেলেন। কারণ তিনি টের পেয়েছেন— তরকারিতে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়েছে। তার সামনেই নাকি আলুভর্তা মাখানো হচ্ছিলো ভারতীয় বড় পেঁয়াজ দিয়ে। অন্য বাড়ি থেকে তরকারি আনার পর তিনি খেলেন।
বিষয়টি আমার কানে এলো।
রাতের বেলা ইমাম সাহেবের কক্ষে গেলাম। বললাম— হুজুর, যে-জাজিমটিতে শুয়ে আছেন, সেটির তুলা ইন্ডিয়ান। যে-পাঞ্জাবী পরে আছেন, সেটির ইয়ার্ন ভারতীয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে-ভাত খেলেন, সেটি ইন্ডিয়ান মাহিন্দ্র ট্রাক্টর দিয়ে ফলানো। আমি কি এখন জাজিমটি ফেলে দেবো? আঙুল ঢুকিয়ে ভাতগুলো পেট থেকে বের করে আনবো? কোরাইশদের সাথে এতো বিরোধ থাকার পরও নবী কোরাইশদের পণ্য বয়কট করতে পারেন নি। আপনি খুতবায় যে-বইটি ব্যবহার করেন, খুতবাতুল আহকাম, সেটিরও মূল কিতাব ভারতের। কাবা শরিফের ইমাম ভারতীয় বাসমতি চাল খান। আরবের খেজুর বাগানগুলোর সিংহভাগ শ্রমিক ভারতের। আমার ঘরে কয়েক লাখ টাকার ইসলামি কিতাব আছে যা ভারত থেকে আনা, এগুলো কি পুড়িয়ে ফেলবো? আমার হাতে যে কোরানটি দেখতে পাচ্ছেন, আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলির অনুবাদ, এটি দিল্লি থেকে আনা, ফেলে দেবো? আপনাকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের বুদ্ধি কে দিয়েছে?
ইমাম সাহেব কিছুক্ষণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রইলেন। তারপর বললেন— "আসলে অমুক দরবার শরীফের তমুক হুজুর আমাকে ইন্ডিয়ান জিনিস খেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু বিষয়টা যে এতো জটিল আমি বুঝি নি।"
দেশটা গোল্লায় যাওয়ার একটি বড় কারণ হলো— এখানে মানুষ নিজের আক্কেলের চেয়ে অন্যের আক্কেলে চলতে বেশি পছন্দ করে। অমুকে এটা করতে বলেছে, তাই আমাকেও এটি করতে হবে— এই হলো বাঙালি মুসলমানের আন্ধাগলির শেষ রাস্তা। নিজের মগজটা কিছুতেই খাটাতে চায় না। হুজুগ ও বাস্তবতার ভেতর কোনো পার্থক্য করতে জানে না।
লিখেছেন: Mohiuddin Mohammad