ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ, স্প্রাইটসহ দেশে প্রচলিত সব ড্রিংককেই আস্তে আস্তে এরা বয়কটের কাতারে ফেলে দিচ্ছে।
কী নাম তাদের সেই নতুন ড্রিংকের? আমি নাম বলতে চাইছি না। তবে বিভিন্ন পোস্টে দেখবেন সবুজ রঙের সেই ড্রিংকের বোতলে লেখা আছে ফিলিস্তিনিদের ১.৫ টাকা করে দেওয়ার কথা। আজ যাকে মাথায় তুলে রাখছে কোকাকোলাকে ফেলে, সেই মোজোকেও বয়কটের ডাক একদিন তারা দেবে। তাদের ড্রিংকটাকে পুরোদমে বাজারে আসতে দেন! তারপর খেলাটা দেখবেন। আসলেই যে এই টাকা ফিলিস্তিনে যাচ্ছে, তার কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই।
আসলে এটা একটা মার্কেটিং স্ট্রাটেজি। বাংলাদেশে কোনোদিন হালাল সাবান বলতে কিছু ছিলো না। হালাল বলে সাধারণ অ্যারোমেটিক সাবানকে মার্কেটে এনে কিছুদিন খুব ব্যবসাসফল হয়েছিলো একটি প্রতিষ্ঠান। তারপর আবার সেই সাবান হারিয়ে গেছে। কেয়ার কথাই ধরুন না!
বয়কট রব তুলে যাদেরকে উপরে তুলে আনা হচ্ছে, তারাও একদিন এমন হারিয়ে যাবে। এই বয়কট গোষ্ঠীই যখন বুঝতে পারবে বেশি টাকা দিয়ে নিম্নমানের খাবার খাচ্ছে, তখন তারাই একে বয়কট করে আবার কোক, সেভেন আপ, পেপসি, ফান্টা, স্প্রাইটে ফিরে আসবে।
এই সাময়িক আপদকালীন সময়ে কোক, সেভেন আপ, স্প্রাইটও সবাইকে জানানোর সুযোগ পেলো যে তারাও এই দেশেই উৎপাদিত হয়। এই দেশের মানুষ সেইসব কোম্পানিতে কাজের বিনিময়ে অর্থ পায়, যা দিয়ে তাদের সংসার চলে। কিন্তু এই সুযোগে তারা কি তাদের পণ্যের মান আরও বাড়াতে পারে না? একই কোক বর্ডার ক্রস করে ভারতে খেয়ে দেখুন, স্বাদে অনেক পার্থক্য। তাই আমি মনে করি এই সময়ে কোক গং তাদের পণ্যের মান আরও বাড়াতে পারে। তারা চাইলেই দাম আরও কমিয়েও লাভ রাখতে পারে।
১.৭৫ লিটার কোক কিছুদিন আগে কিনলাম ১২০ টাকা দিয়ে, সাথে একটা প্লাস্টিকের বড় গ্লাস দিলো। গত সপ্তাহে একই বোতল একই দামে কিনলাম, গ্লাস দিলো না। ফলে, এটা ভাবার অবকাশ নাই যে বয়কটকারীরা খুব একটা সফল। ইতিপূর্বে কোকে শুকরের রক্ত মেশায় বলেও একটা গুজব রটানো হয়েছিলো। তাও বেশিদিন টেকেনি। মানুষ কোক খাচ্ছে।
তবে আমি সারাজীবন কোক খেয়ে যাব। কেন জানেন? স্বাদের কারণে তো বটেই, আরও একটা বড় কারণ আছে। এই যে কোক স্টুডিওর মাধ্যমে এত দারুণ সব গান কোক আমাদের উপহার দিচ্ছে, তার জন্য। পহেলা বৈশাখে যেমন 'তাঁতি' নামে গানটা রিলিজ দিলো। তাতে বাংলার তাঁতশিল্পকে তুলে আনা হয়েছে, পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বের সাথে। তাঁত বানানোর মেশিনের খটখট শব্দ থেকেই গানের মূল রিদমটা নেওয়া হয়েছে। সে কী অপূর্ব অসাধারণ সঙ্গীতায়োজন! কীভাবে তাঁতের জামদানি বানানো হয় তাও দেখানো হয়েছে। এসব কারণে হলেও আমি আমার কষ্টার্জিত অর্থে কোক কিনে খাবো।
যারা বয়কট করছে, তারা আসলে টাকা খরচ করে ড্রিংকস খায় বলে আমার মনে হয় না। আসলে তারা চায় না বাংলায় গান-বাজনা হোক। এটাই অন্যতম একটা বড় কারণ তাদের কোক বয়কট করার। কারণ কোক স্টুডিওর পিছনে কোক অনেক খরচ করে। দেশের শিল্পীদেরকে অন্ন জোগাচ্ছে কোক। অন্যদিকে ঐ বয়কট গোষ্ঠী চায় এদেশে গান-বাজনা না হোক, শিল্পীরা না খেয়ে মরুক। অথচ, পাকিস্তানেও কিন্তু কোক স্টুডিও আছে। সেখানকার কেউ কিন্তু কোক বয়কট করেনি! সুতরাং, এই বয়কট গেইমের সাথে আসলে ধর্মের সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে ব্যবসার। দেব দুলাল গুহ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০